সেন রাজা বিজয় সেন প্রসঙ্গে রাঢ় অঞ্চল দখল, মিথিলার আক্রমণ প্রতিরোধ, গৌড় অধিকার, বঙ্গ অধিকার, কামরূপ জয়, কলিঙ্গ ও মগধ দখল, বাংলার অরাজকতা দূরীকরণ, বাংলার সীমান্ত সুরক্ষা, গুণকীর্তন ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
সেন রাজা বিজয় সেন
রাজা | বিজয় সেন |
রাজত্ব | ১০৯৫ – ১১৫৮ খ্রি: |
বংশ | সেন বংশ |
প্রতিষ্ঠাতা | সামন্ত সেন |
শ্রেষ্ঠ রাজা | বল্লাল সেন |
শেষ রাজা | লক্ষ্মণ সেন |
ভূমিকা :- হেমন্ত সেনের পুত্র বিজয় সেন রাঢ়দেশের একটি ক্ষুদ্র রাজ্যকে নিজ যোগ্যতায় এক সাম্রাজ্য-এ পরিণত করেন। বিক্রমপুর তাম্রপট ও দেওপাড়া লিপি থেকে তার সম্পর্কে জানা যায়। পাল বংশের সভাকবি উমাপতি ধর দেওপাড়া লিপি রচনা করেন।
বিজয় সেন কর্তৃক রাঢ় অঞ্চল দখল
তিনি শূর বংশীয় এক রাজকন্যাকে বিবাহ করে শক্তি বৃদ্ধি করেন। রামপাল-এর মৃত্যুর পর পাল সাম্রাজ্য-এর দুর্বলতার সুযোগে তিনি সাম্রাজ্য সীমা বৃদ্ধি করেন। দক্ষিণে উড়িষ্যা রাজ অনন্তবর্মন চোড়গঙ্গের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে, তিনি সমগ্র রাঢ় অঞ্চলে নিজ আধিপত্য স্থাপন করেন।
সেন রাজা বিজয় সেন কর্তৃক মিথিলার আক্রমণ প্রতিরোধ
তিনি মিথিলার রাজা নান্যদেবকে কয়েকটি যুদ্ধে পরাস্ত করে উত্তর বাংলায় মিথিলার আধিপত্য স্থাপনের সম্ভাবনা দূর করেন। তিনি কোটাটবীর রাজা বীরসেনকে পরাস্ত করেন। বিজয় সেন কৌশাম্বীর সামন্ত রাজা দ্বোরপবর্ধনকেও পরাস্ত করেন বলে দেওপাড়া লিপিতে বলা হয়েছে।
বিজয় সেনের গৌড় অধিকার
এর পর তিনি গৌড় বা উত্তর বাংলার রাজা মদন পালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাকে গৌড় থেকে মগধ-এ বিতাড়ন করেন। দেওপাড়া লিপি থেকে জানা যায় যে, গৌড়দেশ বিজয় সেনের অধিকারে আসে। তবে গৌড়দেশের ওপর বিজয় সেন চূড়ান্তভাবে জয়লাভ করতে পারেননি। তাঁর বংশধরেরা এই কাজ সম্পন্ন করেন।
সেন রাজা বিজয় সেনের বঙ্গ অধিকার
উত্তর বাংলা বা গৌড় হতে বিজয় সেন বঙ্গ বা পূর্ব বাংলার দিকে দৃষ্টি দেন। ভোজ বর্মনকে পরাস্ত করে তিনি বঙ্গ বা পূর্ব বাংলা অধিকার করেন।
বিজয় সেনের কামরূপ জয়
পূর্ব বাংলা হতে তিনি কামরূপ রাজ্য বা আসামের একাংশ জয় করেন। অনেকের মতে, বিজয় সেন কামরূপ জয় করার পরিবর্তে কামরূপ রাজ্যের আক্রমণ প্রতিহত করেন।
সেন রাজা বিজয় সেন কর্তৃক কলিঙ্গ ও মগধ দখল
দক্ষিণে কলিঙ্গের কিছু অংশ তিনি জয় করেন। এর পর পশ্চিমে মগধ বা বিহারের দিকে তিনি দৃষ্টি ফেরান। বাংলা থেকে এক নৌবহর গঙ্গার খাত বেয়ে মগধ অভিযান করে এবং মগধের কিছু অংশ এই বাহিনী অধিকার করে বলে দেওপাড়া লিপি থেকে জানা যায়।
বাংলার অরাজকতা দূরীকরণে বিজয় সেনের অবদান
পাল যুগের শেষে বাংলায় যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয় বিজয় সেন তা দূর করেন। সেন বংশের সাম্রাজ্যের সূচনা তিনিই করেন। প্রায় ৬০ বছর কাল বাংলায় তিনি স্থিতি ও শান্তি রক্ষা করেন।
বিজয় সেন কর্তৃক বাংলার সীমান্ত সুরক্ষা
তিনি বাংলার সীমান্তকে পূর্বে ব্রহ্মপুত্র, দক্ষিণে কলিঙ্গ, পশ্চিমে কোশী-গণ্ডক অঞ্চলে স্থাপনের চেষ্টা করে সীমান্তকে সুরক্ষিত করেন।
সেন রাজা বিজয় সেনের গুণকীর্তন
কবি উমাপতি ধর দেওপাড়া প্রশস্তিতে তাঁর বহু গুণ কীর্তন করেছেন। কবি শ্রীহর্ষ তার সম্পর্কে বিজয় প্রশস্তি করেছেন। যদিও গোপাল-এর মত বিজয় সেন অরাজকতার অবসান ঘটান, তথাপি তিনি গোপালের মত সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত হননি। তিনি বল প্রয়োগ দ্বারা ক্ষমতা দখল করেন।
বিজয় সেনের মৃত্যু
১১৫৮ খ্রিস্টাব্দে বিজয় সেনের মৃত্যুর পর তার পুত্র বল্লাল সেন সেন রাজবংশের সিংহাসনে আরোহন করেন।
উপসংহার :- পাল রাজারা বাঙালীর যত কাছের লোক ছিলেন এবং তাদের নামে যেরূপ লোকগীতি তৈরি হয়, সেন বংশের রাজারা ততটা বাঙালীর প্রিয় ছিলেন না। তারা ব্রাহ্মণ্য স্মৃতি শাস্ত্র দ্বারা উচ্চতর শ্রেণীর সাহায্যে রাজ্য পরিচালনা করেন। সাধারণ বাঙালীর সঙ্গে তাদের নাড়ীর যোগ বেশী ছিল না।
(FAQ) সেন রাজা বিজয় সেন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সেন বংশ।
সামন্ত সেন।
বিজয় সেন।
লক্ষ্মণ সেন।