সেন রাজা বল্লাল সেন প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক উপাদান, মগধ জয়, মিথিলা জয়, গ্ৰন্থ রচনা, কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তন, কৌলিন্য প্রথা সম্পর্কে সমালোচনা, স্বতন্ত্র শ্রেণি ও সমর্থক সৃষ্টি, সুবর্ণ বণিকদের মর্যাদা হরণ, ভেদনীতি, ভেদনীতির কুফল, শেষ জীবন, রক্ষণশীলতা ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
সেন রাজা বল্লাল সেন
রাজা | বল্লাল সেন |
রাজত্ব | ১১৫৮-১১৭৯ খ্রি: |
বংশ | সেন বংশ |
পূর্বসূরি | বিজয় সেন |
উত্তরসূরি | লক্ষ্মণ সেন |
ভূমিকা :- বিজয় সেনের মৃত্যুর পর ১১৫৮ খ্রিস্টাব্দে বল্লাল সেন পিতার সিংহাসনে বসেন। সম্ভবত পিতার রাজত্বকালে তার রাজ্য জয়ে তিনি সাহায্য করেন।
বল্লাল সেন সম্পর্কে উপাদান
নৈহাটী তাম্রপট হল বল্লাল সেনের রাজত্বকাল সম্পর্কে প্রধান ও প্রায় একমাত্র লিপি। বল্লাল চরিত কবি আনন্দ ভট্ট নবদ্বীপের শাসক বুদ্ধিমন্তখানের আদেশে রচনা করেন। এই গ্রন্থ অনেকাংশে কিংবদন্তির ওপর নির্ভর করে ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়।
রাজা বল্লাল সেনের মগধ জয়
সিংহাসনে বসার পর তিনি মগধ জয় করেন বলে সমকালীন সাহিত্যে উল্লেখ আছে। হয়ত তিনি মগধের শেষ শাসক গোবিন্দ পালকে ১১৬২ খ্রিস্টাব্দে পরাস্ত করে মগধ জয় করেন। ভাগলপুর লিপি ও বল্লাল চরিত থেকে তার মগধ জয় সমর্থিত হয়।
রাজা বল্লাল সেনের মিথিলা জয়
বল্লাল সেনের মিথিলা জয়ের প্রমাণ মিথিলায় সেন সম্বতের ব্যবহার দ্বারা প্রমাণিত হয়। সুতরাং বল্লাল সেনের আমলে রাঢ়, বারেন্দ্রী ও মিথিলা ছিল বল্লালের অধিকারে। সম্ভবতঃ বাগড়ী বা সুন্দরবন-মেদিনীপুর অঞ্চলও সেন রাজ্যভুক্ত ছিল।
গ্ৰন্থ রচনা
বল্লাল সেন ছিলেন সমাজ সংস্কারক ও ধর্ম সংস্কারক। তিনি দানসাগর ও অদ্ভুত সাগর নামে হিন্দু আচার পদ্ধতি ও ক্রিয়াকর্মের উপর দুটি গ্রন্থ রচনা করে যশস্বী হন। এই গ্রন্থ দুটির সাহায্যে তিনি হিন্দু সমাজে বর্ণাশ্রম প্রথমে মজবুত করার চেষ্টা করেন।
কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তন
তিনি তান্ত্রিক ধর্মমতের প্রতি অনুরাগী ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি হিন্দু সমাজের ব্রাহ্মণ, বৈদ্য ও কায়স্থের মধ্যে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করেন বলে কিংবদন্তী আছে। ডঃ নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, বল্লাল সেন ছিলেন ঘোর রক্ষণশীল। তিনি সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মধ্যে কৌলিনা প্রথা প্রবর্তন করে জাতিভেদ প্রথাকে তীব্র করেন।
কৌলিন্য প্রথা সম্পর্কে সমালোচনা
অধুনা কোনো কোনো গবেষক বলেন যে, কৌলিন্য প্রথা বল্লাল সেনের পরে উদ্ভূত হয়। কৌলিন্য প্রথা কুলুজিগুলির ওপর নির্ভরশীল। এই কুলুজিগুলি পরস্পর-বিরোধী এবং বল্লালের ৫-৬ শত বৎসর পরে রচিত হয়। সেন লিপিতে কৌলিন্য প্রথার ইঙ্গিত নেই। কিন্তু লোককথা ও কিংবদন্তী বল্লালের নামকে কৌলিন্য প্রথার সঙ্গে যুক্ত করেছে।
স্বতন্ত্র শ্রেণি ও সমর্থক সৃষ্টি
অনেকের মতে, কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তনের মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক, অভিসন্ধি ছিল। বাংলার যে সকল ব্রাহ্মণ বা অন্য শ্রেণী তাকে সমর্থন করত না তিনি তাদের সামাজিক অবনয়ন করে, যারা তাঁর সমর্থক ছিল তাদের কুলীন ঘোষণা করে স্বতন্ত্র শ্রেণী ও সমর্থক সৃষ্টি করেন।
সুবর্ণ বণিকদের মর্যাদা হরণ
হরিশ্চন্দ্র কবিরত্ন সম্পাদিত বল্লাল চরিতের বক্তব্য যদি সত্য হয় তবে বাংলার সাহা বা সুবর্ণবণিক সম্প্রদায় বল্লাল সেনের সঙ্গে সহযোগিতা না করায় তিনি জাতিবিভাষা করার সময় সুবর্ণ বণিকদের মর্যাদা হরণ করে নিম্ন জাতিতে পরিণত করেন।
ভেদনীতি
যখন দেশে বৈদেশিক আক্রমণের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। তখন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ না করে এরূপ ভেদনীতির দ্বারা বিভক্ত ও দুর্বল করা তাঁর উচিত হয়নি।
ভেদনীতির কুফল
তার এই ভেদ নীতির কুফল তাঁর পুত্র লক্ষ্মণ সেনকে ভোগ করতে হয়। বখতিয়ার খলজির বাংলা আক্রমণের সময় তিনি বাংলার সর্বসাধারণের সমর্থন ও সক্রিয় সাহায্য পান নি। তাই সমাজকে বিভক্ত ও দুর্বল করার পরিণাম ছিল ভয়াবহ।
শেষ জীবন
বল্লাল সেন শেষ জীবনে পুত্র লক্ষ্মণ সেনের হাতে রাজকার্য ছেড়ে দিয়ে গঙ্গাতীরে ধর্ম কর্মে মন দেন। কিন্তু তিনি ধর্মমতে বিশ্বাসী হলেও উদার, মানবতাবাদী চিন্তা নিয়ে সমাজ সংগঠন না করে প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাবের পরিচয় দেন।
রক্ষণশীলতা
দানসাগর ও অদ্ভূতসাগর গ্রন্থ রচনার মধ্যে তাঁর গোঁড়ামি, রক্ষণশীলতা ও আচার-সর্বস্বতা পরিস্থাপিত। সুতরাং বাংলায় ব্রাহ্মণ্য ধর্মের গোঁড়ামি ও জাতিভেদ প্রথাকে চালু করার জন্য বল্লাল সেনের দায়িত্ব অস্বীকার করা যায় না।
মৃত্যু
১১৭৯ সালে বল্লাল সেনের মৃত্যু হলে তার পুত্র লক্ষ্মণ সেন সেন রাজবংশের সিংহাসনে আরোহণ করেন।
উপসংহার:- ডঃ নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, বিজয় সেন কৌলিন্য প্রথা প্রয়োগ না করলেও রক্ষণশীলতা ও অস্পৃশ্যতা প্রচারের দায়বোধ এড়াতে পারেন না।
(FAQ) সেন রাজা বল্লাল সেন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সেন বংশ।
সামন্ত সেন।
বিজয় সেন।
লক্ষ্মণ সেন।
বল্লাল সেন।