প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর মিত্রপক্ষ ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত সেন্ট জার্মেইন সন্ধি প্রসঙ্গে সন্ধি স্বাক্ষর ও সন্ধির শর্তাবলী সম্পর্কে জানবো।
সেন্ট জার্মেইন সন্ধি
ঐতিহাসিক ঘটনা | সেন্ট জার্মেইন সন্ধি |
সময়কাল | ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ |
স্বাক্ষরকারী | অস্ট্রিয়া ও মিত্রপক্ষ |
প্রেক্ষাপট | প্রথম বিশ্বযুদ্ধ |
ভূমিকা:- ভার্সাই সম্মেলন বা প্যারিসের শান্তি সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যুক্ত সাম্রাজ্য-এর বিলুপ্তি ঘটে এবং এই বিলুপ্ত সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের উপর বেশ কিছু নতুন রাষ্ট্রের হয়। প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে এইসব নতুন রাষ্ট্রগুলির স্বীকৃতির প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।
সেন্ট জার্মেইন সন্ধি স্বাক্ষর
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ই সেপ্টেম্বর পরাজিত অস্ট্রিয়ার সঙ্গে মিত্রপক্ষের সেন্ট জার্মেইন সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
সেন্ট জার্মেইন সন্ধির শর্তাবলী
এই সেন্ট জার্মেইন সন্ধির বিভিন্ন শর্ত গুলি হল –
- (১) অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির যুগ্ম সাম্রাজ্যকে ভেঙে হাঙ্গেরিকে বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং জার্মান-অধ্যুষিত অস্ট্রিয়াকে একটি ক্ষুদ্র প্রজাতান্ত্রিক রাজ্যে পরিণত করা হয়।
- (২) জার্মান-অধ্যুষিত অস্ট্রিয়া যাতে ভবিষ্যতে জার্মানির সঙ্গে সংযুক্ত না হতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়। স্থির হয় যে, অস্ট্রিয়া জার্মানির সঙ্গে এমন কোনও চুক্তি বা সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না, যাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অস্ট্রিয়ার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়।
- (৩) অস্ট্রিয়াকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে অস্ট্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত সাইলেশিয়া, সুদেতান অঞ্চল এবং বোহেমিয়া ও মোরাভিয়া প্রদেশ দুটি একত্রিত করে চেকোশ্লোভাকিয়া নামে একটি নতুন রাষ্ট্র গঠিত হয়।
- (৪) স্নাভ-প্রধান বসনিয়া, হারজেগোভিনাকে অস্ট্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে সার্বিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে গঠিত হয় নতুন রাষ্ট্র যুগোশ্লাভিয়া।
- (৫) অস্ট্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে দক্ষিণ টাইরল, ট্রিয়েস্ট, ট্রেনটিনো, ইস্ট্রিয়া এবং ডালমাশিয়ার সন্নিহিত কয়েকটি দ্বীপ ইতালিকে দেওয়া হয়।
- (৬) গ্যালিশিয়া পোল্যান্ডকে এবং বোকিভিলা ও ট্রানসিলভানিয়া রুমানিয়াকে দেওয়া হয়।
- (৭) অস্ট্রিয়া তার সমস্ত ঔপনিবেশিক ও বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা মিত্রপক্ষকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
- (৮) অস্ট্রিয়ার সেনাসংখ্যা ৩০ হাজারে সীমাবদ্ধ করা হয় এবং তার যুদ্ধোপকরণ ও যুদ্ধজাহাজগুলির সংখ্যা হ্রাস করা হয়। ভবিষ্যতে তার সেনানিয়োগও নিষিদ্ধ হয়।
- (৯) অস্ট্রিয়ার নৌ-বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়। জলপথে অভ্যন্তরীণ শান্তিরক্ষার জন্য অস্ট্রিয়া মাত্র তিনটি জাহাজ রাখার অনুমতি পায়।
- (১০) যুদ্ধসৃষ্টির অপরাধে অস্ট্রিয়া ক্ষতিপূরণ দিতে স্বীকৃত হয়।
- (১১) দানিয়ুব নদীর নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত ব্যাপারে অস্ট্রিয়া কিছু শর্ত মেনে চলতে সম্মত হয়।
উপসংহার:- জার্মানির উপর যেমন ভার্সাই সন্ধি চাপিয়ে দেওয়া হয়, অনুরূপভাবে অস্ট্রিয়ার উপরেও সেন্ট জার্মেইন সন্ধি চাপিয়ে দেওয়া হয়।
(FAQ) সেন্ট জার্মেইন সন্ধি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে।
১০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া ও মিত্রপক্ষ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।