নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা হিসেবে অর্থনৈতিক সংকট, রুদের মন্তব্য, বেকারত্ব বৃদ্ধি, নেপোলিয়নের আতঙ্ক, সেনাদল ও সম্পদের ওপর চাপ, জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন, ক্যাথলিক জগতে ক্ষোভ, ইংল্যান্ডের অনুগত পোর্তুগাল, স্পেন দখল, স্পেনীয় ক্ষত, রাশিয়া অভিযানে ব্যর্থতা ও চতুর্থ শক্তিজোট গঠন সম্পর্কে জানবো।
নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা
মহাদেশীয় ব্যবস্থা | নেপোলিয়ন বোনাপার্ট |
সময়কাল | ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দ |
বিরোধী দেশ | ইংল্যান্ড |
ফলাফল | ব্যর্থতা |
ভূমিকা:- ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি অর্থনৈতিক অবরোধের নীতি গ্রহণ করে, যা মহাদেশীয় ব্যবস্থা নামে পরিচিত।এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ইংল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করতে গিয়ে তিনি নিজের পতন ডেকে আনেন।
নেপোলিয়নের পতনে ভূমিকা
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা উপেক্ষণীয় নয়। যেমন-
(১) অর্থনৈতিক সংকট
মহাদেশীয় ব্যবস্থা সমগ্র ইউরোপে এক ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করে এবং সর্বত্রই জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বৃদ্ধি পায়। সমগ্র ইউরোপের শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হয়, বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং বন্দরগুলি কর্মহীন হয়ে পড়ে।
(২) রুদের মন্তব্য
ঐতিহাসিক জর্জ রুদে-র মতে, এই ব্যবস্থা ফ্রান্স -এর পক্ষে ‘বুমেরাং’ হয়ে দাঁড়ায়, যা আক্রান্তের চেয়ে আক্রমণকারীরই বেশি ক্ষতি করে। এর ফলে ফ্রান্সে ঘোরতর অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়।
(৩) বেকারত্ব বৃদ্ধি
শ্রমিক ছাঁটাই ও বেকার সমস্যা এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। মূলহাউজে (Mulhouse) ৬০ হাজার শ্রমিকদের মধ্যে ৪০ হাজার শ্রমিক এবং লিয়ঁতে -২৫ হাজারের মধ্যে ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যায়।
(৪) নেপোলিয়নের আতঙ্ক
ক্ষুধার্ত মানুষকে নেপোলিয়ন ভয় পেতেন। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্ষুধার্ত জেকোবিন জনতার রুদ্র রূপ দেখেছিলেন। ১৮১১-১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে তার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনায় তিনি আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন।
(৫) সেনাদল ও সম্পদের ওপর চাপ
এই ব্যবস্থাকে কার্যকরী করতে গিয়ে নেপোলিয়নকে ইউরোপের উপকূল অঞ্চল -এর প্রায় ২০০০ মাইল এলাকা জয় করে তা রক্ষার জন্য ছোটাছুটি করতে হয়। এর ফলে ফরাসি সেনাদল ও সম্পদের উপর প্রবল চাপ পড়ে।
(৬) জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন
বহু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ দেশ জয় করার ফলে তাঁর বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি মসীলিপ্ত হয়। ইউরোপের অনিচ্ছুক দেশগুলিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়।
(৭) ক্যাথলিক জগতে ক্ষোভ
রোমের পোপ এই ব্যবস্থা মানতে অসম্মত হলে নেপোলিয়ন তাঁকে বন্দি করেন। এর ফলে সমগ্র ক্যাথলিক জগতে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার হয়। নেপোলিয়নের ভ্রাতা লুই হল্যান্ডে এই নির্দেশ কার্যকরী করতে অস্বীকৃত হলে তাঁকে সিংহাসনচ্যুত করা হয় এবং হল্যান্ডকে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যভুক্ত করা হয়।
(৮) ইংল্যান্ডের অনুগত পোর্তুগাল
ইংল্যান্ডের অনুগত পর্তুগাল এই নির্দেশ অগ্রাহ্য করলে নেপোলিয়ন স্পেনের বিনা অনুমতিতে স্পেনের ভিতর দিয়ে সেনাবাহিনী নিয়ে যান (১৮০৭ খ্রিঃ) এবং পর্তুগালে এই ব্যবস্থা কার্যকর করেন।
(৯) স্পেন দখল
ফেরার পথে স্পেনের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সুযোগ নিয়ে তিনি স্পেন দখল করেন এবং নিজ ভ্রাতা যোসেফ-কে সিংহাসনে বসান।
(১০) স্পেনীয় ক্ষত
সমগ্র স্পেনবাসী এই ‘জাতীয় অপমানের’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। পর্তুগাল ও ইংল্যান্ড স্পেনের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। এই যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন এবং তাঁর মর্যাদা বিপর্যস্ত হয়। তিনি নিজেই মন্তব্য করেন যে, ‘স্পেনীয় ক্ষত’-ই তাঁর পতন ঘটিয়েছে।
(১১) রাশিয়া অভিযানে ব্যর্থতা
রাশিয়া মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকৃত হলে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে জুন ৬ লক্ষ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী-সহ নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান শুরু হয় এবং সেখানে তাঁর ‘গ্র্যান্ড আর্মি’ পরাজিত ও বিধ্বস্ত হয়।
(১২) চতুর্থ শক্তিজোট গঠন
রাশিয়ায় পরাজয়ের সংবাদে প্রাশিয়া-য় প্রবল গণ-জাগরণ দেখা দেয়। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ, শক্তিজোট গঠিত হয় এবং তাঁর পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।
উপসংহার:- শত্রু ইংল্যান্ডকে জব্দ করতে গিয়ে তিনি নিজেই নতুন থেকে নতুনতর সংকটের আবর্তে পতিত হন এবং এই মহাদেশীয় অবরোধই হল তাঁর পতনের অন্যতম প্রধান কারণ। ঐতিহাসিক লজ বলেন, “মহাদেশীয় অবরোধ ছিল একজন কূটনীতিক হিসেবে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার সর্বাপেক্ষা বড়ো প্রমাণ।”
(FAQ) নেপোলিয়নের পতনে মহাদেশীয় ব্যবস্থার ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ইংল্যান্ডকে পর্যুদস্ত করার উদ্দেশ্যে যে অর্থনৈতিক অবরোধের নীতি গ্রহণ করেন তা মহাদেশীয় ব্যবস্থা বা কন্টিনেন্টাল সিস্টেম নামে পরিচিত।
ইংল্যান্ড।
১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে।