১৯১৪-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রকৃতি প্রসঙ্গে টমসনের মন্তব্য, প্রথম সর্বাত্মক যুদ্ধ, বিপুল পরিমাণ সৈন্যের যোগদান, মারণাস্ত্রের ব্যবহার, ভয়াবহতা, নিহত, আহত, যুদ্ধের আওতায় মানুষ, বেসামরিক মানুষের মৃত্যু, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, ধ্বংসাত্মক ও ব্যয়বহুল যুদ্ধ সম্পর্কে জানবো।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রকৃতি
ঐতিহাসিক ঘটনা | প্রথম বিশ্বযুদ্ধ |
সময়কাল | ১৯১৪-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ |
বিবাদমান জোট | ত্রিশক্তি মৈত্রী ও ত্রিশক্তি চুক্তি |
ত্রিশক্তি মৈত্রী | জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি |
ত্রিশক্তি চুক্তি | ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া |
ভূমিকা:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সবদিক থেকেই ছিল বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধ ১৯১৪-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চার বছর স্থায়ী হয়। ব্যাপকতা ও রণনীতি – সব দিক থেকেই এই যুদ্ধ পূর্ববর্তী সমস্ত যুদ্ধ থেকে স্বতন্ত্র ছিল।
টমসনের মন্তব্য
ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন বলেন যে, এই বিশ্বযুদ্ধ চার বছর তিনমাস ধরে চলেছিল এবং নানা বিষয়ে এর অভিনবত্ব ছিল।’
প্রথম সর্বাত্মক যুদ্ধ
এই যুদ্ধ ছিল বিশ্বের প্রথম ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’। জল-স্থল-অন্তরীক্ষ – সর্বত্রই এই যুদ্ধ বিস্তার লাভ করে এবং ইউরোপ-এর সীমা অতিক্রম করে সুদূর প্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে এর বিস্তার ঘটে। পৃথিবীর প্রায় সব সভ্য জাতিই এই যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং যুদ্ধ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
(১) বিপুল পরিমাণ সৈন্যের যোগদান
এই যুদ্ধে যে বিপুল পরিমাণ সৈন্য যোগদান করে পূর্ববর্তী কোনও যুদ্ধে তা করে নি।
(২) মারণাস্ত্রের ব্যবহার
এই যুদ্ধে বিপুল পরিমাণ ও নানা ধরনের মারণাস্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বোমারু বিমান, সাবমেরিন, ভারী কামান, ট্যাঙ্ক, বোমা, বিষাক্ত গ্যাস, তরল আগুন ও রোগজীবাণু প্রভৃতির ব্যবহার পৃথিবীতে এক ভয়াল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ইতিপূর্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আর কখনও এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করা হয় নি।
(৩) ভয়াবহতা
এই যুদ্ধের ভয়াবহতা বিশাল সংখ্যক মানুষকে স্পর্শ করেছিল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি ছাড়াও অন্যান্য দেশের জনগণও এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(৪) নিহত
কেবল সামরিক ব্যক্তিবর্গই নয়, অসামরিক মানুষরাও এর দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই যুদ্ধে ৬৫ কোটি মানুষ জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে ১৩ কোটি – প্রতি ৫ জনে ১ জন যুদ্ধক্ষেত্র বা ক্ষতের কারণে মারা যায়।
(৫) আহত
আনুমানিক ২২ কোটি মানুষ – প্রতি ৩ জনে ১ জন আহত হয়, এবং এর মধ্যে ৭০ লক্ষ স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে যায়। যুদ্ধের কয়েক বছরের মধ্যে বহু আহত মানুষের মৃত্যু ঘটে।
(৬) মৃত্যুর সংখ্যা
অধ্যাপক ল্যাংসাম বলেন যে, ১৭৯০ থেকে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীতে যত যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে (নেপোলিয়ন -এর যুদ্ধ, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ, স্যাডোয়ার যুদ্ধ বা অস্ট্রো-প্রাশিয় যুদ্ধ, মার্কিন গৃহযুদ্ধ, বুয়োর যুদ্ধ, রুশ-জাপান যুদ্ধ, বলকান যুদ্ধ প্রভৃতি) সেগুলির একত্রে মৃত্যু সংখ্যার তুলনায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল দ্বিগুণ।
(৭) যুদ্ধের আওতায় মানুষ
বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ জনগণ এই যুদ্ধের আওতায় আসে এবং এর মধ্যে মিত্রপক্ষের মৃত্যুসংখ্যা ছিল দুই-তৃতীয়াংশ।
(৮) বেসামরিক মানুষের মৃত্যু
এই যুদ্ধে সেনাদের মৃত্যুর চেয়ে বে-সামরিক জনগণের মৃত্যুসংখ্যা ছিল অনেক বেশি। খাদ্যাভাব, রোগ, মহামারী, গণহত্যা ও পারস্পরিক আক্রমণের ফলে বে-সামরিক জনগণের মৃত্যুসংখ্যা এত বৃদ্ধি পায়।
(৯) ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
এই যুদ্ধে ধনসম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়। যুদ্ধের ব্যয়ভার ছিল বিপুল। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মোট দৈনিক খরচ ছিল ২৪ কোটি ডলার এবং যুদ্ধের মোট ব্যয় হয় ২৭ হাজার কোটি ডলার।
(১০) ধ্বংসাত্মক ও ব্যয়বহুল যুদ্ধ
গির্জা এবং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানও যুদ্ধের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় নি। ঐতিহাসিক ল্যাংসাম বলেন যে, এই বিশ্বযুদ্ধ ছিল সর্বাপেক্ষা ধ্বংসাত্মক ও ব্যয়বহুল।
উপসংহার:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল ‘মানব ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বিয়োকান্ত নাটক’। এই যুদ্ধ আন্তর্জাতিক অর্থনীতির উপর বিরাট আঘাত হানে এবং বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দেয়।
(FAQ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯১৪-১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ।
ত্রিশক্তি মৈত্রী বা ট্রিপল অ্যালায়েন্স এবং ত্রিশক্তি চুক্তি বা ত্রিশক্তি আঁতাত
জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইতালি।
ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া।