শাহজাহানের চরিত্র ও কৃতিত্ব প্রসঙ্গে কাফি খাঁর অভিমত, হেইগ-এর অভিমত, ব্যক্তিগত গুণাবলী, যোদ্ধা শাহজাহান, প্রশাসক শাহজাহান, মনসবদারি ব্যবস্থার উন্নয়ন, হিন্দুদের প্রতি শাহজাহানের উদারতা, সংস্কৃতিবান পুরুষ শাহজাহান ও শিল্পানুরাগী শাহজাহান সম্পর্কে জানবো।
মোগল সম্রাট শাহজাহানের চরিত্র ও কৃতিত্ব প্রসঙ্গে শাহজাহান সম্পর্কে কাফি খাঁ ও উলসলি হেগের অভিমত, শাহজাহানের ব্যক্তিগত গুণাবলী, শাহজাহানের হিন্দুদের প্রতি উদার ব্যবহার, যোদ্ধা শাহজাহান, প্রশাসক শাহজাহান, সংস্কৃতিবান পুরুষ শাহজাহান, শাহজাহানের মনসবদারি ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শাহজাহানের শিল্পানুরাগ।
শাহজাহানের চরিত্র ও কৃতিত্ব (Character and Achievements of Shah Jahan)
বিষয় | শাহজাহানের চরিত্র ও কৃতিত্ব |
রাজত্বকাল | ১৬২৮-১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ |
পূর্বসূরি | জাহাঙ্গীর |
উত্তরসূরি | ঔরঙ্গজেব |
অবদান | তাজমহল, ময়ূর সিংহাসন নির্মাণ |
ভূমিকা :- শাহজাহান -এর চরিত্র ও কৃতিত্ব নিয়ে পণ্ডিতরা একমত নন। মানুচি, বার্নিয়ার, পিটার মাপ্তি প্রমুখ ইউরোপীয় পর্যটক এবং ইউরোপ -এর ঐতিহাসিকদের অনেকেই তাঁকে নিষ্ঠুর, অত্যাচারী ও ব্যাভিচারী বলে বর্ণনা করেছেন। অপরপক্ষে ভারতীয় লেখকরা—বিশেষ করে সমকালীন ঐতিহসিক কাফি খাঁ ও আবদুল হামিদ লাহোরি তাঁকে আদর্শ মুসলিম শাসক বলে অভিহিত করেছেন।
কাফি খাঁর অভিমত
ঐতিহাসিক কাফি খাঁ-র মতে বিজেতা ও আইন-প্রণেতা হিসেবে আকবর উল্লেখযোগ্য, কিন্তু শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, রাজ্যশাসন, অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত ও শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে শাহজাহানের তুল্য কোনও সম্রাটকে ভারত -এ শাসন করতে দেখা যায় নি।
উলসলি হেইগ-এর অভিমত
কেম্ব্রিজ ঐতিহাসিক স্যার উলসলি হেইগ (Sir Woolseley Haig) শাহজাহানের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন।
ব্যক্তিগত গুণাবলী
বাল্যকালে তিনি উপযুক্ত শিক্ষকদের কাছে রাজোচিত নানা শিক্ষালাভ করেন। হিন্দি, তুর্কি, আরবি ও ফারসিতে তিনি যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি অনর্গল ফারসি বলতে পারতেন। সংগীত ও শিল্পকলার প্রতি তাঁর যথেষ্ট অনুরাগ ছিল। তিনি ছিলেন একজন যথার্থ সংস্কৃতিবান মানুষ। যুদ্ধবিদ্যাতেও তিনি পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
যোদ্ধা শাহজাহান
যোদ্ধা হিসেবেও তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। পিতার শাসনকালে তিনি মেবার ও দাক্ষিণাত্য অভিযানে সফলতা অর্জন করেন। তাঁর রাজত্বকালে মোগল সাম্রাজ্য সর্বোচ্চ ‘নিরাপদ’ সীমানা অর্জন করে।
প্রশাসক শাহজাহান
তিনি প্রশাসক হিসেবেও দক্ষ ছিলেন। আকবর -এর মতো প্রতিভাবান না হলেও তাঁর শাসনকালে দেশে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করত। অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় তিনি বহু পরিবর্তন আনেন।
মনসবদারি ব্যবস্থার উন্নয়ন
মনসবদারি ব্যবস্থাকে তিনি নবরূপে সজ্জিত করেন। মনসবদারদের বেতন কমিয়ে তাদের পদমর্যাদা অনুযায়ী সেনা রাখতে বাধ্য করেন। ভূমিরাজস্বের হারও তিনি বৃদ্ধি করেন।
হিন্দুদের প্রতি উদার
তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ শাসক ও নিরপেক্ষ বিচারক। ব্যক্তিগত জীবনে গোঁড়া সুন্নি মুসলিম হলেও, তিনি কখনোই হিন্দু-বিদ্বেষী ছিলেন না। বহু হিন্দু তাঁর দরবারে উচ্চ রাজপদে নিযুক্ত ছিলেন এবং তিনি বহু হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পারসিক ভাষায় অনুবাদ করান।
সংস্কৃতি
শাহজাহান ছিলেন সংস্কৃতিবান পুরুষ। শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিদ্যা ও বিদ্বানের প্রতি তাঁর স্বাভাবিক আকর্ষণ ছিল। আবদুল হামিদ লাহোরি, মির আবদুল কাশিম, আবদুল হাকিম প্রমুখ সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিকরা তাঁর রাজসভা অলংকৃত করতেন। বহু হিন্দু কবি, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদরা তাঁর রাজসভায় সমাদৃত হতেন।
শিল্পানুরাগ
স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা ও সংগীতের ইতিহাসে তাঁর শাসনকালএক স্মরণীয় অধ্যায়। দিল্লি, আগ্রা, লাহোর, কাশ্মীর, কাবুল প্রভৃতি নগরীকে তিনি নানাভাবে সজ্জিত করেন। দিল্লির দেওয়ানে-আম, দেওয়ানে-খাস, জামা মসজিদ, মতি মসজিদ, লালকেল্লা তাঁর স্থাপত্য-কীর্তির অপূর্ব নিদর্শন। তাঁর নির্মিত ‘তাজমহল’ ও ‘ময়ূর সিংহাসন’-এর খ্যাতি আজও অম্লান।
উপসংহার :- শিল্প, সাহিত্য,সংস্কৃতির অভাবনীয় উন্নতির কারণে অনেক ঐতিহাসিক তাঁর রাজত্বকালকে ‘মোগল আমলের সুবর্ণ যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “শাহজাহানের চরিত্র ও কৃতিত্ব” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) শাহজাহানের চরিত্র ও কৃতিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ঔরঙ্গজেব।
মোগল সম্রাট শাহজাহান।
পারস্যের নাদির শাহ।