গৌড় রাজ্য প্রসঙ্গে শ্রেষ্ঠ শশাঙ্ক, তার রাজ্যবিস্তার, তার বিরুদ্ধে রাজ্যবর্ধনের যুদ্ধযাত্রা, তার বিরুদ্ধে হর্ষবর্ধনের যুদ্ধযাত্রা, গৌড় রাজ্যের রাজধানী, শশাঙ্কের রাজ্য সীমা ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।
গৌড় রাজ্য
ভূমিকা :- শিলালিপির সাক্ষ্য থেকে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীতে গৌড় গুপ্ত সাম্রাজ্য-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। বঙ্গদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাপ্ত কয়েকটি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন-এর পরে বঙ্গদেশ নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়৷
গৌড়ের শ্রেষ্ঠ রাজা শশাঙ্ক
- (১) গৌড়ের (উত্তর ও পশ্চিম বঙ্গ) রাজগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ছিলেন শশাঙ্ক। তিনি থানেশ্বরের পুষ্যভূতি বংশ-এর এবং কনৌজ-এর মৌখরী বংশ-এর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তাঁর পূর্ববর্তী বা পরবর্তী রাজগণ সম্বন্ধে কিছুই জানা যায় না।
- (২) এমন কি, তিনি কোন বংশোদ্ভূত ছিলেন তাও আমরা জানি না। তার রাজ্য লাভের বহু পূর্বে পরবর্তী গুপ্তদের অধীনে গৌড় মৌখরীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে।
- (৩) সম্ভবতঃ আদিতে তিনি ‘পরবর্তী’ গুপ্তগণের অধীনে সামন্ত রাজা ছিলেন, মহাসেন গুপ্তের ক্ষমতা হ্রাসের পর তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
গৌড়রাজ শশাঙ্কের রাজ্য বিস্তার
‘পরবর্তী’ গুপ্তদের ও মৌখরীদের শত্রুতা শশাঙ্ককে পশ্চিম দিকে রাজ্য বিস্তারের সুবর্ণসুযোগ এনে দেয়। মৌখরীদের শত্রু মালবরাজ দেবগুপ্তের সাথে সন্ধি করে শশাঙ্ক তাঁর সাথে যুক্তভাবে কনৌজ আক্রমণ করেন। মৌখরীরাজ গ্রহবর্মন নিহত হন এবং তাঁর মহিষী রাজ্যশ্রী (থানেশ্বররাজ প্রভাকরবর্ধনের কন্যা) কনৌজের এক কারাগারে আবদ্ধ হন।
গৌড়রাজ শশাঙ্কের বিরুদ্ধে রাজ্যবর্ধনের যুদ্ধযাত্রা
- (১) প্রভাকরবর্ধনের পুত্র ও উত্তরাধিকারী রাজ্যবর্ধন ভগিনীর উপর অবিচারের প্রতিশোধ নেবার জন্য এক বিশাল সৈনবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন। তিনি দেব গুপ্তকে পরাজিত করেন; কিন্তু শশাঙ্ক, সম্ভবতঃ বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে হত্যা করেন (৬০৬ খ্রীস্টাব্দ)।
- (২) এই বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনী পাওয়া যায় পুষ্যভূতি বংশের প্রতি সহানুভূতিশীল ‘হর্ষচরিত’ রচয়িতা বানভট্ট এবং হিউয়েন সাঙ-এর রচনায়। অতএব এর সত্যতা সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ আছে।
গৌড়রাজ শশাঙ্কের বিরুদ্ধে হর্ষবর্ধনের যুদ্ধযাত্রা
শশাঙ্ক কনৌজ জয় করলেও দীর্ঘকাল তা নিজ অধিকারে রাখতে পারেন নি। রাজ্যবর্ধনের কনিষ্ঠ ভ্রাতা এবং উত্তরাধিকারী হর্ষবর্ধন স্বভাবতই ভ্রাতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শশাঙ্কের সাথে তাঁর সম্পর্কের বিশদ বিবরণ জানা যায় না। হর্ষবর্ধন কামরূপের অধিপতি ভাস্করবর্মনের সাথে সন্ধি করেন।
কামরূপরাজের অধীনে গৌড়রাজ শশাঙ্কের রাজধানী
একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ (চিরুটি, মুর্শিদাবাদ জেলা, পশ্চিমবঙ্গ) কিছুকাল কামরূপরাজের অধীনে ছিল। সম্ভবতঃ কর্ণসুবর্ণের যে অধিপতিকে ভাস্করবর্মন পরাজিত করেছিলেন তিনি ছিলেন শশাঙ্কের একজন উত্তরাধিকারী।
গৌড়রাজের কাছে পরাজিত কামরূপের রাজপুত্র
আর একটি শিলালিপিতে বলা হয়েছে যে কামরূপের দুজন রাজপুত্র সুপ্রতিষ্ঠিতবর্মন এবং ভাস্করবর্মন গৌড়ের সেনাবাহিনী কর্তৃক পরাজিত ও বন্দী হন, কিন্তু পরে গৌড়রাজ নিজের সামন্ত রূপে তাঁদের কামরূপে প্রতিষ্ঠিত করেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে এই গৌড়রাজ ছিলেন শশাঙ্ক স্বয়ং।
গৌড়রাজ শশাঙ্কের রাজ্য সীমা
এটা নিশ্চিত যে হর্ষবর্ধন তাঁর ক্ষমতা খর্ব করতে পারেন নি। পূর্ব উপকূলে উড়িষ্যার গঞ্জাম পর্যন্ত তার রাজ্য বিস্তৃত ছিল।
গৌড়রাজ শশাঙ্কের মৃত্যু
৬৩৭-৩৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে শশাঙ্কের মৃত্যু হয়।
উপসংহার :- পুষ্যভূতি বংশের পক্ষপাতী কিংবদন্তিতে গৌড়রাজ শশাঙ্ক বৌদ্ধ ধর্ম বিদ্বেষী বলে বর্ণিত হয়েছেন। কিন্তু এই অভিযোগের সপক্ষে বিশেষ কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
(FAQ) গৌড় রাজ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের।
শশাঙ্ক।
কর্ণসুবর্ণ।