ক্ষুদিরাম বসু -র জন্ম, পিতামাতা, নামকরণ, শিক্ষা, বিপ্লবী আলোচনায় যোগদান, অনুশীলন সমিতিতে যোগদান, গুপ্ত সমিতিতে যোগ, কারাবরণ, স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাব, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ, রাজনৈতিক সভায় বিক্ষোভ প্রদর্শন, কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টা, আলিপুর বোমা মামলা, ক্ষুদিরামের বিচার ও তাঁর ফাঁসির মঞ্চে শহীদ হওয়া সম্পর্কে জানবো।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহীদ ক্ষুদিরাম বসু প্রসঙ্গে ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম, ক্ষুদিরাম বসুর পিতামাতার নাম, ক্ষুদিরাম বসুর শিক্ষা, ক্ষুদিরাম বসুর রাজনৈতিক জীবন, ক্ষুদিরাম বসুর কারাবরণ, ক্ষুদিরাম বসুর স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাব, ক্ষুদিরাম বসুর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগদান, ক্ষুদিরাম বসুর কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা ও চেষ্টা, ক্ষুদিরাম বসুর আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযোগ, স্বাধীনতা সংগ্ৰামে ক্ষুদিরাম বসুর অবদান, ক্ষুদিরামের বিচার ও ক্ষুদিরামের ফাঁসি।
ক্ষুদিরাম বসু
ঐতিহাসিক চরিত্র | ক্ষুদিরাম বসু |
জন্ম | ৩ ডিসেম্বর, ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দ |
পিতামাতা | ত্রৈলোক্যনাথ বসু, লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী |
পরিচিতি | ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ও প্রথম শহীদ |
মৃত্যু | ১১ আগস্ট, ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা :- দেশের কনিষ্ঠ ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ক্ষুদিরাম বসুর জীবনদান দেশজুড়ে স্বাধীনতা লাভের আন্দোলনকে তীব্র করে তুলেছিল এবং দেশবাসীর মধ্যে দেশপ্রেমের অনুভূতি গড়ে উঠেছিল। ক্ষুদিরাম বসু স্বাধীনতা ইতিহাসে অগ্নি পুরুষ নামেও পরিচিত।
ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম
১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ -এর মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে ক্ষুদিরাম বসু জন্ম গ্ৰহণ করেন। বর্তমানে এটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা।
ক্ষুদিরাম বসুর পিতামাতা
তার পিতা ছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ বসু আর মায়ের নাম ছিল লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। ক্ষুদিরামের পিতা কর্মসূত্রে ছিলেন নাড়াজেলের তহসিলদার, তিন কন্যার পরে ক্ষুদিরাম তাদের প্রথম পুত্রসন্তান।
নামকরণ
মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী পুত্রকে তার বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের (চালের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে পরবর্তীকালে তাঁর নাম রাখা হয়ক্ষুদিরাম।
ক্ষুদিরাম বসুর শিক্ষা
গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষার পর তমলুকের ‘হ্যামিল্টন’ স্কুল ও তারপর ১৯০৩ সালে মেদিনীপুরের ‘কলেজিয়েট’ স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি শিক্ষা লাভ করেন।
ক্ষুদিরাম বসুর বিপ্লবী আলোচনায় যোগদান
১৯০২ এবং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতা মেদিনীপুরে স্বাধীনতার জন্য জনসমক্ষে ধারাবাহিক বক্তব্য রাখেন এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গোপন অধিবেশন করেন।কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম এই সমস্ত বিপ্লবী আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
ক্ষুদিরাম বসুর অনুশীলন সমিতিতে যোগদান
তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করে বারীন্দ্র কুমার ঘোষের কর্মতৎপরতার সংস্পর্শে আসেন। তিনি ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন।
ক্ষুদিরাম বসুর গুপ্ত সমিতিতে যোগ
- (১) ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। এর নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন হেমচন্দ্র দাসের সহকারী।
- (২) অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলীর জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। ক্ষুদিরাম সত্যেন্দ্রনাথের সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান।
ক্ষুদিরাম বসুর কারাবরণ
ভারতে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী পুস্তিকা বিতরণের অপরাধে গ্রেপ্তার হন। ১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম থানার কাছে বোমা মজুত করতে থাকেন এবং সরকারি আধিকারিকদেরকে আক্রমণের লক্ষ্য স্থির করেন।
স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাব
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও স্বদেশী আন্দোলন ক্ষুদিরামের মতো স্কুলের ছাত্রদেরও প্রভাবিত করে এবং পরিণামে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে সত্যেন বসুর নেতৃত্বে এক গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেন।
ক্ষুদিরাম বসুর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো ও ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত লবণে বোঝাই নৌকা ডোবানোর কাজে ক্ষুদিরাম অংশগ্রহণ করেন।
বিপ্লবী ইশতেহার বিলি
ক্ষুদিরাম বসু সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নির্দেশে ‘সোনার বাংলা’ শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করে গ্রেপ্তার হন।
ত্রাণকার্যে ক্ষুদিরাম বসু
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কাঁসাই নদীর বন্যার সময়ে রণপার সাহায্যে ত্রাণকাজ চালান।
রাজনৈতিক সভায় ক্ষুদিরাম বসুর বিক্ষোভ প্রদর্শন
মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত এক রাজনৈতিক সভায় সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় -এর মধ্যপন্থি রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
ক্ষুদিরাম বসুর উপর কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব
যুগান্তর বিপ্লবীদল ১৯০৮ সালে কলকাতার ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরামের উপর এই দায়িত্ব পড়ে।
ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী কর্তৃক কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টা
- (১) কর্তৃপক্ষ কিংসফোর্ডকে কলকাতা থেকে দূরে মুজাফ্ফরপুরে সেশন জাজ হিসেবে বদলি করে দিয়েছিলেন। ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী সেখানে উপস্থিত হন।
- (২) দুই যুবক ৩০ এপ্রিল স্থানীয় ইউরোপীয় ক্লাবের গেটের কাছে একটি গাছের আড়ালে অতর্কিত আক্রমণের জন্য ওত পেতে থাকেন।
- (৩) কিন্তু কিংসফোর্ডের গাড়ির মতো অন্য একটি গাড়িতে ভুলবশত বোমা মারলে গাড়ির ভেতরে একজন ইংরেজ মহিলা ও তাঁর মেয়ে মারা যান।
- (৪) বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীকে ধরার চেষ্টা করা হলে, তিনি নিজের রিভলবারের গুলিতে আত্মঘাতী হন।
- (৫) এই ঘটনার পর ক্ষুদিরাম ওয়ানি রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তিনি বোমা নিক্ষেপের সমস্ত দায়িত্ব নিজের উপর নিয়ে নেন।
আলিপুর বোমা মামলা
৩০ এপ্রিল, ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে মুজাফফরপুরে রাত সাড়ে আটটায় ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে বোমা ছুড়ে তিনজনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হয় (২১ মে ১৯০৮), যা আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত হয়।
ক্ষুদিরামের বিচার
বিচারে ক্ষুদিরামের ফাঁসির সাজা হয়। ক্ষুদিরামকে নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা লিখেছিলেন এবং অনেক গানও তখন রচিত হয়েছিল। যেমন, ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’।
ক্ষুদিরামের ফাঁসি
মজফফরপুর জেলেই ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাসির মঞ্চ ওঠার সময়ে তিনি হাসিখুশি ছিলেন। এই সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বৎসর ৭ মাস ১১দিন।
তিলকের সমর্থন
বাল গঙ্গাধর তিলক তার কেশরী পত্রিকায় প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু – এই দুজন নবীন যুবককে সমর্থন করে আওয়াজ তোলেন অবিলম্বে স্বরাজ চাই।
ক্ষুদিরাম বসু পুসা স্টেশন
ক্ষুদিরাম পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন যে ওয়াইনি রেল স্টেশনে তার বর্তমান নাম বদল করে হয়েছে ক্ষুদিরাম বসু পুসা স্টেশন।
উপসংহার :- স্বাধীনতার বেদীতে ক্ষুদিরামের জীবনের এই উৎসর্গ উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।বাংলা কাব্যে, সাহিত্যে, সঙ্গীতে ও ইতিহাসের পাতায় এই আত্মবলিদানের মধ্য দিয়েই বিপ্লবী ক্ষুদিরাম মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে আছেন।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “ক্ষুদিরাম বসু” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) ক্ষুদিরাম বসু সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
ভারতীয় বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ।
১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট।
ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি।
অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্রগুলি
- এম এস স্বামীনাথনপ্রখ্যাত ভারতীয় কৃষিবিজ্ঞানী ও “ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক” হলেন এম …
- মার্শাল ওয়ারেন নীরেনবার্গএকজন মার্কিন জীববিজ্ঞানী ও জেনেটিক কোড বিশেষজ্ঞ ছিলেন মার্শাল ওয়ারেন …
- জীবকপ্রাচীন ভারতের একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক জীবক মূলত আয়ুর্বেদ চিকিৎসার বিকাশে …
- জনাস সল্কবিখ্যাত আমেরিকান ভাইরোলজিস্ট এবং চিকিৎসক জনাস সল্ক পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কারের …
- পিয়ের লাপলাসএকজন বিখ্যাত ফরাসি গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিদ পিয়ের-সিমন লাপলাস (Pierre-Simon …
- ফিলিপ এডওয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ডএকজন প্রখ্যাত জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন ফিলিপ এডওয়ার্ড অ্যান্টন ভন লেনার্ড …
- জন বার্ডন স্যান্ডার্সন হলডেনএকজন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত গণিতজীবী, জেনেটিসিস্ট, এবং বায়োলজিস্ট জন বার্ডন স্যান্ডার্সন …
- জেমস স্যাডউইকপ্রখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জেমস স্যাডউইক (James Chadwick) ১৯৩২ সালে নিউট্রন …
- রাজচন্দ্র বসুএকজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সাহিত্যিক হলেন রাজচন্দ্র বসু …