ভারতের সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰাম

ভারতের সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰাম প্রসঙ্গে ভারতের সর্বত্র সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের বিস্তার, সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের প্রথম কেন্দ্র মহারাষ্ট্র, উপলক্ষ বঙ্গভঙ্গ, চিরোলের মন্তব্য, রিজলির মন্তব্য, সরকারি দমননীতি, সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের ফলে বঙ্গভঙ্গ রদ, দমননীতি সত্ত্বেও সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰাম অব্যাহত ও সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের বিস্তার লাভ সম্পর্কে জানবো।

ভারতের সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰাম

ঐতিহাসিক ঘটনাসন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰাম
সূত্রপাতমহারাষ্ট্র
বঙ্গভঙ্গ১৯০৫ খ্রি:
সুরাট বিচ্ছেদ১৯০৭ খ্রি:
বঙ্গভঙ্গ রদ১৯১১ খ্রি:
ভারতের সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰাম

ভূমিকা :- কংগ্রেসের আভ্যন্তরিক বিরোধ বাইরের প্রচণ্ড আন্দোলনেরই অনিবার্য পরিণতি। বঙ্গভঙ্গ উপলক্ষে সারা বাংলাদেশ-এ ও সমগ্র ভারতবর্ষ-এ যে সংগ্রামের আগুন জ্বলছিল, তাতে দক্ষিণপন্থীদের আপস-নীতির কোনো স্থান ছিল না, তাই সেই সংগ্রাম কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী নেতৃত্বকে অব্যবহার্য বলে বিসর্জন দিয়ে সক্রিয় ব্রিটিশ বিরোধিতা ও বিপ্লবের পথ গ্রহণ করে।

সারা ভারতের সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের বিস্তার

এই সংগ্রাম বঙ্গভঙ্গের মত কোনো স্থানীয় সমস্যাকে কেন্দ্র করে কোনো স্থান বা সময়ের গণ্ডির মধ্যে আর আবদ্ধ থাকতে পারে না, এই সংগ্ৰাম এখন বাংলাদেশের গণ্ডি পার হল এবং সমগ্র ভারতবর্ষের বিস্তৃত ক্ষেত্রের মধ্যে প্রবেশ করে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হল।

ভারতে সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের প্রথম কেন্দ্র মহারাষ্ট্র

মহারাষ্ট্রে যে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবের আগুন প্রথম জ্বলতে আরম্ভ করেছিল ক্রমশ তার বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত সারা ভারতবর্ষকে গ্রাস করবার জন্য ছুটে চলেছে এবং ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হবার পরেও তা দাউ দাউ করে জ্বলেছে। বামপন্থী বা চরমপন্থী নেতৃত্ব ছিল সেই সংগ্রামের মুখপাত্র।

সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের উপলক্ষ বঙ্গভঙ্গ

বঙ্গভঙ্গ না হলেও সেই সংগ্রাম অনিবার্যভাবেই বাংলাদেশে ও ভারতবর্ষে দেখা দিত। বঙ্গভঙ্গ তাতে ইন্ধন যুগিয়েছিল মাত্র। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ব্রিটিশ বিরোধী ও বৈপ্লবিক চরিত্র নিয়ে যে সংগ্রামের আরম্ভ, তার পক্ষে বঙ্গভঙ্গ ছিল কেবল একটা উপলক্ষ মাত্র, কারণ নয়।

ভারতে সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰাম সম্পর্কে চিরোলের মন্তব্য

সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিক ভ্যালেন্টাইন চিরোল-এর কথায়, কংগ্রেসের ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে সেই সংগ্রামের রূপই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহাসিক ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সেই সংগ্রামের রূপ এই ভাবে অঙ্কিত করিয়াছেন,

“বাইরে যা ঘটছিল তারই প্রতিচ্ছবি হল কংগ্রেসের এই অধিবেশনের (১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের সুরাট কংগ্রেসের) পরিণতি। ‘স্বরাজ’-এর ধ্বনি জনগণ অন্তর দিয়ে গ্রহণ করে এবং তা ব্রিটিশ ভারতের প্রত্যেকটি প্রদেশে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। কলকাতার বিখ্যাত কালী মন্দিরে এক বিরাট সভায় ‘স্বদেশী‘র প্রতিজ্ঞা গৃহীত হয়। সর্বত্যাগী হিন্দু-সন্ন্যাসীরা জনগণের অন্ধ বিশ্বাসের সুযোগ গ্রহণ করে এবং আইন ব্যবসায়ীদের প্রত্যেকটি সভা পাশ্চাত্য গণতান্ত্রিক আদর্শে এক-একটি সক্রিয় রাজনীতিক প্রচার-কেন্দ্র হয়ে উঠে। স্কুল-কলেজের ছাত্রদের লেখা-পড়া বন্ধ করে পথে বের করা হয়, তারা দেশভক্তরূপে প্রচারের গাড়িতে চেপে ‘স্বরাজ’-এর ধ্বনি তুলতে থাকে, অথবা বিদেশী দ্রব্য বর্জনের জন্য পিকেটিং আরম্ভ করে। …এই ভাবে অগ্নিবর্ষী বক্তৃতা ও সংবাদপত্রে জ্বালাময়ী রচনা প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ জনসাধারণের উত্তেজনা চরমে তোলেন। তাঁরা হিন্দুধর্মের কাহিনীর সাথে রাশিয়ার ‘এ্যানার্কিস্ট’ মতবাদের সমন্বয় সাধন করতেও সমান দক্ষ ছিলেন। ধ্বংসের দেবতা শিব ও হত্যাকারীদের সাথে বোমার সমন্বয় সাধিত হয় এবং দেশীয় ও ব্রিটিশ সরকারী কর্মচারীরা উভয়েই সেই হত্যাকারীদের শিকার হয়ে উঠে। আর সেই হত্যাকাণ্ডই ধর্ম ও স্বদেশ প্রেমের নিদর্শন বলে গণ্য হতে থাকে। এমনকি উচ্চ শ্রেণীর যুবকরাও দেশভক্তির নামে একত্র হয়ে লুণ্ঠনের দ্বারা অর্থ সংগ্রহ করতে আরম্ভ করে।”

সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰাম সম্পর্কে রিজলির মন্তব্য

১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বড়লাটের কাউন্সিলে নূতন সংবাদপত্র আইনের খসড়া উপস্থিত করে ভারত সরকারের আইন সচিব স্যার হার্বাট রিজলি আতঙ্কে অস্থির হয়ে বিশেষত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের নিম্নোক্ত চিত্রটি অঙ্কিত করেন,

“প্রতিদিন সংবাদপত্রে সরাসরি বা প্রকারান্তরে ঘোষণা করা হচ্ছে যে, ভারতের সকল ব্যাধির একমাত্র ঔষধ হল বিদেশী শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ। আর সেই স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে দেশের যুবকদের বীরত্বপূর্ণ কাজ, আত্মত্যাগ ও শহীদের মৃত্যু বরণ করে, অর্থাৎ কোনো না কোনো বৈপ্লবিক কর্মের দ্বারা। হিন্দুর ধর্মগ্রন্থ, প্রাচীন ও আধুনিক ইতিহাস, এবং বিশেষত ইউরোপীয় বৈপ্লবিক সাহিত্য মন্থন করে সশস্ত্র অভ্যূত্থানের পক্ষে দৃষ্টান্ত খুঁজে বের করা হচ্ছে। সেই সকল দৃষ্টান্তের দ্বারা দেখান হয়ে থাকে যে সফলতা অবশ্যম্ভাবী। সার্কাসিয়া, স্পেন ও দক্ষিণ আফ্রিকায় যে গেরিলা যুদ্ধ হয়েছিল, সেই গেরিলা যুদ্ধের পদ্ধতি, ম্যাৎসিনির রাজনীতিক নরহত্যার মতবাদ, করণ-এর বৈপ্লবিক মতবাদ, রুশীয় ‘নিহিলিস্ট’দের ক্রিয়াকলাপ, গীতায় অর্জুনের সাথে কৃষ্ণের কথোপকথন – এদের সকলই ভাবপ্রবণ মনে আগুন জালিয়ে দেবার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঠিক এই মুহর্তে আমরা একটা ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র মামলায় ব্যস্ত আছি। ব্যাপক সন্ত্রাস সৃষ্টি দ্বারা সরকার ও ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ করাই ছিল এই ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য। এদের সংগঠন খুবই ব্যাপক ও কার্যকরী, এদের সংখ্যা অগণিত, এদের নেতৃবৃন্দ অতি গোপনে কর্ম পরিচালনা করে থাকেন এবং অল্পবয়সী অনুচরগণ নেতৃদের কথা অন্ধের মত মেনে চলে। বর্তমানে তারা রাজনীতিক নরহত্যার পদ্ধতি অনুসরণ করছেন।”

ভারতে সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের বিরুদ্ধে সরকারের দমন নীতি

সুরাটের ঘটনার পর নরমপন্থীরাই কংগ্রেস দখল করে থাকেন। শাসকগণ এই বিচ্ছেদের সুযোগ পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে। তারা একদিকে কংগ্রেসের সংগ্রাম বিরোধী দক্ষিণপন্থী নেতৃত্বকে আরও কাছে টানতে থাকে এবং অপর দিকে চরমপন্থীদের উপর পূর্ণোদ্যমে দমন নীতি প্রয়োগ করে।

‘মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার’ প্রবর্তন

চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থী নেতৃত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী করবার উদ্দেশ্য নিয়েই সরকার ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ‘মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার‘ প্রবর্তিত হয়। এই শাসন সংস্কার ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের শাসন সংস্কারের সামান্য বর্ধিত সংস্করণ ছাড়া অন্য কিছু নয়। এই সংস্কার অনুসারে পরোক্ষ ভাবে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে থেকে বেছে কয়েকজনকে বড়লাটের পরামর্শ পরিষদে গ্রহণ করা হয় এবং প্রাদেশিক পরিষদে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সদস্যদের সংখ্যাধিক্য সৃষ্টির ব্যবস্থা হয়। কিন্তু শাসকদের পরামর্শদান ব্যতীত এই পরিষদগুলির অন্য কোনো ক্ষমতাই ছিল না।

মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কারের প্রতি ঘৃণা

এই অন্তঃসারশূন্য সংস্কারকে চরমপন্থীরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন, কিন্তু দক্ষিণপন্থীরা এই সংস্কারকেই “প্রকৃত ও আন্তরিক” বলে বরণ করে তাকে নিজেদের চেষ্টার ফল বলে জাহির করেন। তাঁরা এই সংস্কারের জন্য আনন্দের সাথছ ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বড়লাট সাহেবকে রাজভক্তিমূলক অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।

সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের ফলে বঙ্গভঙ্গ রদ

প্রচণ্ড দমননীতি সত্ত্বেও গণ-আন্দোলন ও বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা দমন করতে না পেরে ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে যখন বঙ্গভঙ্গ রদের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে তখনও কংগ্রেস সভাপতি বিষণ নারায়ণ দাস একে “আধুনিক ভারতের নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রামের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য জয়” হিসাবে ঘোষণা করেন।

বঙ্গভঙ্গ রদ সম্পর্কে কংগ্রেস সভাপতি বিষণ নারায়ণ দাসের মন্তব্য

“এই সিদ্ধান্তের ফলে বৃটিশ শাসনের প্রতি ভারতের প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয় শ্রদ্ধায় ও ভক্তিতে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে এবং ব্রিটিশের রাজনীতি জ্ঞানের প্রতি ভারতবর্ষে পুনরায় বিশ্বাস ও কৃতজ্ঞতার জোয়ার বইছে।”

ইংরেজ সরকারের নতুন প্রেস আইন প্রয়োগ

বড়লাট লর্ড মিন্টে নতুন ব্যবস্থা পরিষদের উদ্বোধন কালে আরও কঠোর দমননীতি দ্বারা স্বদেশী আন্দোলন ও বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা চূর্ণ করবার সঙ্কল্প ঘোষণা করেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ৯ই ফেব্রুয়ারী সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করবার জন্য নূতন প্রেস-আইন প্রয়োগ করা হয়।

সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের বিরুদ্ধে রাজনীতিক মামলা দায়ের

১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকেই সরকার উন্মত্তের মত দমন-নীতি প্রয়োগ করতে আরম্ভ করেছিল। একমাত্র বাংলাদেশেই ১৯০৮ থেকে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে কমপক্ষে ৫৫০টি রাজনীতিক মামলা দায়ের করা হয়।

ভারতে দমনমূলক আইনের বন্যা

চরমপন্থী নেতৃবৃন্দকে বিনা বিচারে আটক করবার জন্য ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে কুখ্যাত ‘১৮১৮ খ্রীষ্টাব্দের তিন নং আইন’ পুনঃপ্রবর্তিত হয়, ঐ বছরই ‘রাজদ্রোহ মূলক জনসভা আইন’, ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ‘বিস্ফোরক দ্রব্য আইন’, ‘প্রেস আইন’ প্রভৃতি দমনমূলক আইনের বন্যা সারা ভারতবর্ষকে প্লাবিত করে।

দমননীতি সত্ত্বেও সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰাম অব্যাহত

এই সকল দমনমূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও ব্রিটিশ বিরোধী প্রচার ও আন্দোলন অব্যাহতভাবে চলতে থাকে, বরং এই উৎপীড়নের ফলে তা আরও উদ্দাম হয়ে উঠে। কলকাতার ‘যুগান্তর পত্রিকা‘, ‘সন্ধ্যা’ ও ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকার প্রচার সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়।

বন্দেমাতরম পত্রিকায় সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক আহ্বান

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের লালা লাজপৎ রায় ও সর্দার অজিত সিংকে আটক করা হলে বাংলার বৈপ্লবিক সংগ্রামের মুখপত্র ‘বন্দেমাতরম’ পত্রিকায় পাঞ্জাবের জনসাধারণের প্রতি এই বৈপ্লবিক আহ্বান জানান হয় –

“বক্তৃতা ও কাব্য রচনার দিন শেষ হয়েছে, আমলাতন্ত্র আমাদের যুদ্ধে আহ্বান করেছে। আমরা সেই আহ্বান গ্রহণ করছি। পাঞ্জাবের ভাই সব! সিংহের জাতি! যারা লাজপৎ রায়কে ছিনিয়ে নিয়েছে তারা তোমাদের ধূলিসাৎ করে দিতে চায়, তোমরা তাদের দেখিয়ে দাও, যে লাজপৎ রায়কে তারা ছিনিয়ে নিয়েছে, একশত লাজপৎ তাঁর শূন্য স্থান গ্রহণ করবেন। শতগুণ বেশী উচ্চৈঃস্বরে ধ্বনিত হউক – জয় হিন্দুস্থান”।

ভারত জুড়ে অত্যাচার ও গ্ৰেপ্তারের বন্যা

  • (১) ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণকুমার মিত্র, অশ্বিনীকুমার দত্ত, শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী, সুবোধচন্দ্র মল্লিক এবং আরও পাঁচজন নেতা বিনাবিচারে বন্দী হন। দুটি প্রবন্ধ রচনার জন্য বাল গঙ্গাধর তিলককে ছয় বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। মাদ্রাজের জননায়ক চিরম্বরম পিল্লাই, হরিসর্বোত্তম রাও এবং অন্ধ্রের বহু লোককে আটক করা হয়।
  • (২) ভারতের প্রত্যেকটি প্রদেশের উপর দিয়ে অত্যাচার ও গ্রেপ্তারের বন্যা বইতে থাকে। কিন্তু এতেও শাসকদের আতঙ্ক দূর হল না, বরং তা দিন দিন বেড়ে চলে। এই আতঙ্ক এতদূর বেড়েছিল যে, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রধান সেনাপতি লর্ড কিচনার সারা ভারতবর্ষে সামরিক আইন জারি করবার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের বিস্তার লাভ

কিন্তু এত উৎপীড়ন সত্ত্বেও ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম ও বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা কিছু মাত্র হ্রাস পেল না, তা ক্রমশ দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করে বিদেশী শাসনকে ধ্বংস করে ফেলতে উদ্যত হল।

উপসংহার :- এইভাবে মহারাষ্ট্রে প্লেগ-ব্যাধিকে উপলক্ষ করে যে বিপ্লবের আগুন প্রথম জ্বলতে আরম্ভ করেছিল, তাই পরে মনুষ্যরূপী প্লেগ কার্জনের বর্বরসুলভ আক্রমণকে উপলক্ষ করে বাংলাদেশ ও সমগ্র ভারতবর্ষে বিস্তৃত হয়ে পরাধীন ভারতের অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ রঞ্জিত করে তুলল। ভারতের পরাধীন মানুষ সেই বিপ্লব প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে তার শ্রেষ্ঠতম ঐতিহাসিক অবদানস্বরূপ পূর্ণ স্বাধীনতার বাণী সর্বপ্রথম শুনতে পেল।

(FAQ) ভারতের সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰাম সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সন্ত্রাসবাদী বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের সূচনা হয় কোথায়?

মহারাষ্ট্র।

২. সুরাট বিচ্ছেদ ঘটে কোন সালে?

১৯০৭ সালে।

৩. মর্লে মিন্টো শাসন সংস্কার আইন প্রবর্তিত হয় কখন?

১৯০৯ সালে।

৪. বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় কখন?

১৯১১ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment