নরেন গোঁসাইয়ের হত্যা প্রসঙ্গে লাল ইস্তাহার, বন্দেমাতরম পত্রিকার বর্ণনা, ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের লেখনী, প্যারিসের পত্রিকার লেখনী ও নরেন গোঁসাইয়ের হত্যার গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
নরেন গোঁসাইয়ের হত্যা
ঐতিহাসিক ঘটনা | নরেন গোস্বামীর হত্যা |
হত্যাকারী | কানাইলাল দত্ত ও সত্যেন বসু |
সময়কাল | ১৯০৮ খ্রি: |
পূর্ব ঘটনা | আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা |
ভূমিকা :- আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালে মামলায় অভিযুক্ত কানাইলাল দত্ত ও সত্যেন বসু বাইরে থেকে পিস্তল সংগ্রহ করে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের হাসপাতালে যান এবং ১লা সেপ্টেম্বর নরেন গোস্বামীকে হত্যা করেন। হত্যার অভিযোগে তাদের দুইজনের পৃথক পৃথক বিচার করে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
নরেন্দ্র গোস্বামীর হত্যা উপলক্ষে লাল ইস্তাহার
কানাইলাল দত্ত কর্তৃক আলিপুর জেলের মধ্যে রাজসাক্ষী নরেন্দ্র গোস্বামীর হত্যা উপলক্ষে বিপ্লবীরা ‘স্বাধীন ভারত’ নামে একটি লাল ইস্তাহার প্রকাশ করেন। ইস্তাহারটি নিম্নরূপ –
“নরেন্দ্র যখন এক নূতন খেয়ালের বশে চরম দুর্বলতার লক্ষণ দেখাচ্ছিল এবং সম্পূর্ণরূপে আত্মসংযম হারিয়ে ফেলেছিল, তখনই আমাদের শয়তানতুল্য ব্যবসায়ী শাসকগোষ্ঠী আমাদের সমগ্র দেশের উপর এক ভয়ঙ্কর বজ্র নিক্ষেপ করবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। সেই মুহূর্তে আমাদের মহান বীর কানাইলাল নিজের সমস্ত শক্তি সংহত করে ভারতবর্ষ-এর অভাবনীয় শক্তির পরিচয় দানের উদ্দেশ্যে এবং এক মহাশক্তি জাগিয়ে তুলবার জন্য জাদুকরের বজ্র তৈরি করেছেন। তিনি যখন আলিপুর জেলের প্রত্যেকটি কক্ষ কম্পিত করে লৌহশৃঙ্খল আর দেয়ালঘেরা, সুরক্ষিত ব্রিটিশ জেলখানার মধ্যেই বিশ্বাসঘাতকের বুকের রক্তে ধরণী রঞ্জিত করেছেন, তখনই ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পেরেছে, বাংলার বুকে যে অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত হয়েছে তার মূলে কি বিস্ময়কর শক্তি নিহিত !”
নরেন্দ্র গোস্বামীর হত্যা সম্পর্কে বন্দেমাতরম পত্রিকার বর্ণনা
বিপ্লবীদের ‘বন্দেমাতরম্’ পত্রিকার ১৯০৮ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর সংখ্যায় নরেন্দ্র গোস্বামীর হত্যা সম্পর্কে লিখিত হয়,
“কানাই নরেন্দ্রের প্রাণ সংহার করেছে। যে অধম ভারতীয় তার সহকর্মীদের হস্তলেহন করেছে, সে যেন কোনোদিন প্রতিহিংসার হাত থেকে রক্ষা পাবার আশা না করে। প্রতিহিংসা পরায়ণতার ইতিহাসে প্রথম কানাইলালের নাম জ্বলন্ত অক্ষরে মুদ্রিত থাকবে। যে মুহূর্তে কানাই সেই প্রাণসংহারকারী গুলিটি ছুঁড়েছিলেন, সেই মুহূর্ত থেকেই তাঁর দেশের আকাশে প্রতিধ্বনিত হয়েছে কেবল সেই একটি কথা – বিশ্বাসঘাতকতার চরম শাস্তির কথা কখনও ভুলিও না।”
নরেন গোস্বামীর হত্যা সম্পর্কে ডা. ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের লেখনী
ডা. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত তার গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন যে, “গোস্বামীর মৃত্যু-শাস্তিতে ইউরোপীয় বৈপ্লবিকেরা বাহবা দিয়েছিলেন।
নরেন গোস্বামীর হত্যা সম্পর্কে প্যারিসের পত্রিকার বর্ণনা
প্যারিসের সোসালিস্ট বর্তমানে কমিউনিস্ট মুখপত্র ‘Humanite‘ (‘হুমানিতে’) লিখেছিল যে, “ভারতীয় বৈপ্লবিকরা যে প্রকারে শত্রুপুরীর মধ্যে থেকেও রক্ষীবেষ্টিত বিশ্বাসঘাতক স্বজাতিদ্রোহীকে শাস্তি দিয়ছছে, তা জগতের বৈপ্লবিক ইতিহাসে প্রথম। “
নরেন গোস্বামীর হত্যার গুরুত্ব
কানাইলাল ও সত্যেনের দ্বারা জেলের মধ্যে নরেন গোস্বামীর হত্যা কেবল ভারতের বিপ্লব প্রচেষ্টার ইতিহাসে নয়, সমগ্র বিশ্বের বিপ্লব-প্রচেষ্টার ইতিহাসে এক অতি বিস্ময়কর ঘটনা” বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
উপসংহার :- কানাইলাল বিংশ শতাব্দীর তৃতীয় শহীদ এবং সত্যেন্দ্রনাথ চতুর্থ শহীদ। সত্যেন্দ্রনাথ “ফাসির সত্যেন” রূপে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
(FAQ) নরেন গোঁসাইয়ের হত্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা।
কানাইলাল দত্ত ও সত্যেন বসু জেলের মধ্যে।
১৯০৮ সালে।