হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা প্রসঙ্গে প্রেক্ষাপট, বিচার শুরু, মামলার অবসান, হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলার সময় সামশুল আলম হত্যার বিচার, ৪৬ জন বিপ্লবীর বিরুদ্ধে হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা, অভিযুক্ত বিভিন্ন বিপ্লবী দলের সদস্য ও ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবীদলের যুদ্ধোদ্যম সম্পর্কে জানবো।
হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা
ঐতিহাসিক ঘটনা | হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা |
সময়কাল | মার্চ, ১৯১০ খ্রি: |
অভিযুক্ত | ৪৬ জন বিপ্লবী |
অন্যতম বিপ্লবী | যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় |
ভূমিকা :- ১৯১০ খ্রীষ্টাব্দের ১১ই ফেব্রুয়ারী যশোহর জেলার ধূলগাঁও গ্রামে বিপ্লবীরা একটি ডাকাতি করে ৬১৭৫ টাকা সংগ্রহ করেন। এই ডাকাতি উপলক্ষে পুলিশ কাউকেও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় নি। এরপর মার্চ মাসে বিখ্যাত ‘হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা’র বিচার আরম্ভ হয়।
হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট
- (১) সামশুল আলমের হত্যার পর কলকাতা পুলিশ উন্মাদের মত চারদিকে খানাতল্লাস করে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়সহ ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।
- (২) এদের বিরুদ্ধে কয়েকটি বড় বড় ডাকাতি, গুপ্ত হত্যা, হত্যার সহযোগিতা, এবং সর্বোপরি ‘ভারত-সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধোদ্যম’-এর অভিযোগ আনা হয়।
- (৩) অভিযোগের মধ্যে পূর্বোক্ত বিঘাতি, রায়টা, মোরেহাল, হলুদবাড়ী প্রভৃতি স্থানের ডাকাতিগুলিও উল্লেখ করা হয় এবং অভিযুক্তদের মধ্যে ‘হলুদবাড়ী ডাকাতি মামলা’র ছয় জন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিও অন্তর্ভুক্ত হন।
হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলার বিচার শুরু
এই মামলার বিচার আরম্ভ হয় ১৯১০ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে, আর শেষ হয় ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে। অর্থাৎ অভিযুক্ত সকলকে এক বছর জেল হাজতে কাটাতে হয়েছিল।
হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলার অবসান
দীর্ঘ সময় ধরে বহু চেষ্টা করেও পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারে নি। অবশেষে বাধ্য হয়ে পুলিশ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে নিয়ে ‘হলুদবাড়ী ডাকাতি মামলা’র দণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জন ছাড়া অন্য সকলকে মুক্তি দান করে। এইভাবে সরকারের বহু-ঘোষিত ‘হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা’র অবসান ঘটে।
হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলার সময় সামশুল আলম হত্যার বিচার
- (১) এই ষড়যন্ত্র মামলা চলবার সময়েই সামশুল আলমকে হত্যার অভিযোগে ধৃত বীরেন্দ্রনাথ দত্তগুপ্তের বিচার চলে এবং বিচারে তার ফাঁসি হয়।
- (২) যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের উপরেও এই হত্যার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তিনি মুক্তিলাভ করেন।
৪৬ জন বিপ্লবীর বিরুদ্ধে হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা
সর্বসমেত ৪৬ জন বিপ্লবীর বিরুদ্ধে “সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধোদ্যম”-এর অভিযোগে ‘হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা’র বিচার আরম্ভ হয়েছিল। সরকার থেকে এই ষড়যন্ত্রের স্থান চিহ্নিত করা হয় হাওড়া জেলার শিবপুর এবং ব্রিটিশ ভারতের অনান্য স্থানকে।
হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত বিভিন্ন বিপ্লবী দলের সদস্য
অভিযুক্তদের বিভিন্ন বিপ্লবী দলের সভ্য বলিয়া ঘোষণা করা হয়। যথা – ‘শিবপুর দল, ‘কুরচি দল’, ‘খিদিরপুর দল’, ‘চিংড়িপোতা দল’, ‘মজিলপুর দল’, ‘হলুদবাড়ি দল’, ‘কৃষ্ণনগর দল’, ‘নাটোর দল’, ‘ঝাউগাছা দল’, ‘যুগান্তর দল‘, ‘ছাত্রভাণ্ডার দল’ এবং ‘রাজশাহী দল’।
ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবীদলের যুদ্ধোদ্যম
সরকারী মতে উপরি উক্ত ১২টি বিপ্লবীদল ঐক্যবদ্ধ হয়েই “সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধোদ্যম’-এর ষড়যন্ত্র করেছিল।
উপসংহার :- এই মামলা চলবার সময় অভিযুক্তদের মধ্য থেকে ললিতমোহন চক্রবর্তী আর যতীন্দ্রনাথ হাজরা রাজসাক্ষী হন। কিন্তু তাঁহাদের সাক্ষ্য বিচারকদের ও গোয়েন্দা পুলিশের বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় তাঁদেরকে রাজসাক্ষীর মর্যাদা দেওয়া হয় নি।
(FAQ) হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
মার্চ ১৯১০ সালে।
৪৬ জন।
ললিতমোহন চক্রবর্তী ও যতীন্দ্রনাথ হাজরা।