ঐতিহাসিক স্থান সুবর্ণদ্বীপ প্রসঙ্গে বিভিন্ন গ্ৰন্থে সুবর্ণদ্বীপের কথা উল্লেখ, ভারতীয় আধিপত্য বিস্তার, সংস্কৃত চর্চা, চীনা পরিব্রাজকদের সংস্কৃত শিক্ষা, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব, ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিস্তার, ভারতীয় শিল্পকলার প্রভাব, ভারতীয় গণনা পদ্ধতি, হিন্দু রাজত্ব ও সুবর্ণদ্বীপে শৈলেন্দ্র বংশের শাসন সম্পর্কে জানবো।
ঐতিহাসিক স্থান সুবর্ণদ্বীপ
ঐতিহাসিক স্থান | সুবর্ণদ্বীপ |
অবস্থান | ভারত মহাসাগর |
উল্লেখ | অর্থশাস্ত্র |
সংস্কৃতচর্চা কেন্দ্র | শ্রীবিজয় |
রাজবংশ | শৈলেন্দ্র বংশ |
ভূমিকা :- সুবর্ণদ্বীপ বলতে মালয় উপদ্বীপ, যবদ্বীপ, বলীদ্বীপ, সুমাত্রা, বোর্নিও প্রভৃতি ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপগুলিকে বোঝায়। অতি প্রাচীনকাল থেকে ভারতবাসী বাণিজ্যের জন্য এই সব স্থানে যাতায়াত করত।
বিভিন্ন গ্ৰন্থে সুবর্ণদ্বীপের কথা উল্লেখ
কৌটিল্য-এর অর্থশাস্ত্রে সুবর্ণভূমির অগুরুর উল্লেখ আছে। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে লিখিত ‘মিলিন্দপন্হ’ নামক গ্রন্থে বাণিজ্যের জন্য সুবর্ণভূমি যাওয়ার কথা রয়েছে। গল্পের বই, বৌদ্ধজাতক এবং বৌদ্ধ সাহিত্যে সুবর্ণদ্বীপের নাম পাওয়া যায়। রামায়ণ-এ যবদ্বীপের উল্লেখ আছে।
সুবৰ্ণদ্বীপে ভারতীয় আধিপত্য বিস্তার
বিভিন্ন স্থানে প্রাপ্ত ‘শাসন’ থেকে এই নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যে ভারতীয় ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা সুবৰ্ণদ্বীপে সম্পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করেছিল। সব জায়গায় ভারতীয় লিপির ব্যবহার ছিল।
সুবৰ্ণদ্বীপে সংস্কৃতচর্চা
অধিকাংশ ‘শাসন’ই বিশুদ্ধ সংস্কৃতে লিখিত। এর থেকে সিদ্ধান্ত করা অযৌক্তিক নয় যে এখানে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা বেশ ভালোভাবেই হত। শ্রীবিজয় সংস্কৃত-চর্চার একটা বড় কেন্দ্র ছিল।
সুবৰ্ণদ্বীপে চীনা পরিব্রাজকদের সংস্কৃত শিক্ষা
- (১) খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে চীনদেশীয় পরিব্রাজক ইৎ সিং ভারতের পথে সংস্কৃতে ছয় মাস থেকে পদবিস্তা (সংস্কৃত ব্যাকরণ) শিক্ষা করেন। ফিরবার পথেও ওখানে কিছুদিন ছিলেন।
- (২) অল্পদিন চীনে অবস্থান করে ভারত থেকে নীত কতগুলি সংস্কৃত পুস্তক অনুবাদের জন্য আবার বিজয়ে আসেন। কারণ সেখানে অনেক সংস্কৃতজ্ঞ বৌদ্ধ পণ্ডিত ছিলেন। আরো অনেক চীন পরিব্রাজক শ্রীবিজয় থেকে সংস্কৃত শিখেছেন।
সুবৰ্ণদ্বীপে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব
এই সব স্থানে প্রথমে হিন্দুধর্ম এবং পরে বৌদ্ধ ধর্ম প্রভাব বিস্তার করে। পঞ্চ ও ষোড়শ শতাব্দীতে মুসলমান বিজয়ের আগে এই দুই ধর্মের প্রভাব যথেষ্ট পরিমাণেই ছিল। আজও বলীদ্বীপের অধিকাংশ লোক হিন্দু।
সুবৰ্ণদ্বীপে ব্রহ্মণ্যধর্মের বিস্তার
- (১) চার বর্ণের ভিত্তির উপর সেখানকার সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত। ৪০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়কার বোর্নিওতে প্রাপ্ত এক ‘শাসনে’ রাজা মূলবর্মা কর্তৃক অনুষ্ঠিত এক যজ্ঞের কথা আছে। সেই যজ্ঞে তিনি ব্রাহ্মণদের বহু সোনা দান করেছিলেন বলে তা ‘বহু সুবর্ণক যজ্ঞ’ নামে খ্যাত।
- (২) অপর ‘শাসনে’ রয়েছে তিনি ‘বপ্রকেশ্বর’ নামক পূণ্যক্ষেত্রে ব্রাহ্মণদের বিশ হাজার গো-দান করেন। অতএব ঐ সময়ে ব্রাহ্মণ্যধর্ম বোর্নিওতে যে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা সুস্পষ্ট।
সুবৰ্ণদ্বীপে ভারতীয় শিল্পকলার প্রভাব
বিষ্ণু, শিব, ব্রহ্মা, গণেশ, দুর্গা প্রভৃতি দেবদেবীর মূর্তি সুবর্ণদ্বীপে যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত বিভিন্ন মূর্তি থেকে ভারতীয় শিল্পকলার প্রভাব প্রমাণিত হয়।
সুবৰ্ণদ্বীপে ভারতীয় গণনা পদ্ধতি
ভারতীয় মাস ও আনুষঙ্গিক জ্যোতিষ গণনা এবং দূরত্বের পরিমাপক ভারতীয় প্রথাও ঐ অঞ্চলে চলতি ছিল।
সুবৰ্ণদ্বীপে হিন্দু রাজত্ব
খ্রিষ্টীয় প্রথম বা দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যে সুবর্ণদ্বীপের অন্তর্গত বিভিন্ন স্থানে হিন্দু রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
সুবৰ্ণদ্বীপে শৈলেন্দ্রবংশের শাসন
প্রথমে বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন রাজা ছিলেন। কিন্তু অষ্টম শতাব্দীতে প্রায় সমস্ত সুবর্ণদ্বীপ শৈলেন্দ্রবংশের রাজার অধীনে আসে। সম্ভবত কম্বোজ এবং চম্পাও শৈলেন্দ্ররাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উপসংহার :- কালিদাস নাগের মতে ফিলিপাইনও প্রায় দেড়শত বৎসরের জন্য এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রায় দেড় হাজার বৎসর সুবর্ণদ্বীপ ছোট-বড় হিন্দু রাজাদের অধীন ছিল।
(FAQ) ঐতিহাসিক স্থান সুবর্ণদ্বীপ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সুবর্ণদ্বীপ বলতে মালয় উপদ্বীপ, যবদ্বীপ, বলী, সুমাত্রা, বোর্নিও প্রভৃতি ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপগুলিকে বোঝায়।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে।
শ্রীবিজয়।
শৈলেন্দ্র বংশ।