চম্পা

ঐতিহাসিক স্থান চম্পা প্রসঙ্গে এখানকার প্রধান প্রধান শহর, সংস্কৃত চর্চা, শৈব সম্প্রদায়, মন্দির, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবেশ, ভারতীয় সভ্যতার বিস্তার, সাল তারিখ গণনা ও চম্পা নগরে ভারতীয় সভ্যতার গৌরব ম্লান হওয়া প্রসঙ্গে জানবো।

ঐতিহাসিক স্থান চম্পা

ঐতিহাসিক স্থানচম্পা
প্রধান শহরচম্পাপুর, ইন্দ্রপুর
বিখ্যাত রাজাভদ্রবর্মা, ইন্দ্রবর্মা
অধিকাংশ সম্প্রদায়শৈব
বৌদ্ধ ধর্ম-এর প্রবেশখ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দী
ঐতিহাসিক স্থান চম্পা

ভূমিকা :- খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় বা তৃতীয় শতাব্দীতে চম্পা নগরে হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় বারোশ বছর হিন্দু রাজারা এখানে রাজত্ব করেন।

চম্পা নগরে সংস্কৃতচর্চা

বহু সংখ্যক সংস্কৃত ‘শাসন’ প্রাপ্তি থেকে মনে হয় সংস্কৃত চর্চা চম্পা নগরে ভালোভাবেই হত। এখানে সংস্কৃত কাব্য, ব্যাকরণ, দর্শন প্রভৃতির চর্চা হত।

প্রাচীন চম্পাদেশের প্রধান প্রধান শহর

হিন্দু রাজত্বের সময় চম্পাপুর, ইন্দ্রপুর, বিজয় প্রভৃতি চম্পাদেশে প্রধান প্রধান শহর ছিল। ঐ সব শহরে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সুন্দর স্মারক নির্মিত হয়েছিল।

চম্পা নগরের অধিকাংশ লোক শৈব

বহু শিব, উমা, কন্দ এবং গণেশ মূর্তি প্রাপ্তি থেকে এই সিদ্ধান্ত করা যেতে পারে যে কাম্বোজ-এর মতো চম্পার অধিকাংশ লোকও শৈব ছিল। অবশ্য বিষ্ণু, লক্ষ্মী ও ব্রহ্মার উপাসকও ছিল।

ভারতের চম্পা নগরের মন্দির

নবম শতাব্দীর প্রথমভাগে প্রথম ইটের তৈরি পার্বতী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে কাঠের মন্দির ছিল। আনুমানিক ৪০০ খ্রিস্টাব্দে রাজা ভদ্রবর্মা মন্দিরের জন্য বিখ্যাত মাইসন শহর স্থাপন করেন। ডঙ্গডুয়ঙ্গতে (প্রাচীন নাম ইন্দ্রপুর) যে বৌদ্ধ বিহারের নিদর্শন পাওয়া গেছে তা দশম শতাব্দীতে রাজা ইন্দ্রবর্মা কর্তৃক তৈরি হয়।

চম্পা নগরে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবেশ

অন্তত খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে বৌদ্ধ ধর্ম চম্পার প্রবেশ করে। সগদিয়া থেকে সঙ্গহুই, ভারত থেকে মারজীবক, ক্ষুদ্র ও কল্যাণরুচি প্রমুখ বিখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু তৃতীয় শতাব্দীতে চম্পায় যান।

হিন্দু চম্পা নগরে ভারতীয় সভ্যতার বিস্তৃতি

ট্রাকিউর (প্রাচীন নাম চম্পাপুর বা চম্পানগরী) মন্দিরে হরিবংশ ও পুরাণে বর্ণিত কৃষ্ণ ও বলরামের আখ্যান অবলম্বনে উৎকীরণ চিত্র অঙ্কিত রয়েছে। এই সমস্ত থেকে ভারতীয় সভ্যতার বিস্তৃতির বেশ প্রমাণ পাওয়া যায়।

চম্পা নগরের মৈত্রীভাব

কিন্তু চম্পায় কম্বোজ বা যবদ্বীপ-এর মতো কোনো বিখ্যাত মন্দির নেই। চম্পায় বিভিন্ন ধর্মমতাবলম্বীদের মধ্যে বরাবরই একটা মৈত্রীভাব বর্তমান ছিল।

প্রাচীন চম্পা নগরের দুটি প্রদেশ

হিন্দু রাজত্বের সময় চম্পার দুটি প্রদেশের নাম ছিল অমরাবতী ও পাণ্ডুরঙ্গ। ভারতবর্ষে বিখ্যাত অমরাবতী অন্ধ্রদেশের গুন্টুর জেলায় অবস্থিত। আর মহারাষ্ট্রে বিষ্ণুর নাম পাণ্ডুরঙ্গ।

চম্পা নগরে সাল তারিখ গণনা

সেকালে চম্পার শুক্ল প্রতিপদ থেকে মাস গণনা হত, অমাবস্যায় মাস শেষ এবং চৈত্র মাসের প্রথম দিন থেকে বছর গণনা হত। এই প্রথা বর্তমানেও অন্ধ্র ও মহারাষ্ট্রে বর্তমান।

হিন্দু চম্পা নগরে ভারতীয় সভ্যতার প্রভাব ম্লান

অতএব এই অঞ্চল থেকে চম্পায় গিয়ে হিন্দুরা উপনিবেশ স্থাপন করেছিল এই ধারণা করা অযৌক্তিক নয়। চীন দেশীয় আন্নামদের দ্বারা চতুর্দশ শতাব্দীতে চম্পা অধিকৃত হওয়ার ফলে ভারতীয় সভ্যতার প্রভাব ম্লান হয়।

উপসংহার :- খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের অন্যতম ষোড়শ মহাজনপদ অঙ্গ রাজ্যের রাজধানী ছিল এই চম্পা নগরী।

(FAQ) ঐতিহাসিক স্থান চম্পা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. চম্পা নগরে হিন্দু রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় কখন?

খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় বা তৃতীয় শতাব্দীতে।

২. চম্পার দুটি প্রধান শহরের নাম লেখ।

চম্পাপুর, ইন্দ্রপুর।

৩. চম্পানগরের দুজন রাজার নাম লেখ।

ভদ্রবর্মা, ইন্দ্রবর্মা।

৪. চম্পা নগরের অধিকাংশ লোক কার উপাসক ছিলেন?

শিব।

Leave a Comment