পার্বতী

শিব পত্নী পার্বতী প্রসঙ্গে তার জন্ম পরিচয়, শৈশব, পুতুল খেলা, পার্বতীর যৌবন সীমায় পদার্পণ, পার্বতীর বিবাহ বিষয়ে পিতা হিমালয়ের চিন্তা, পার্বতীর বিবাহ বিষয়ে নারদের উক্তি, পার্বতীর শিব পূজা, পার্বতীর পূজার সময় মদনের অপেক্ষা, ক্ষুণ্ণ মনে পার্বতীর গৃহে ফেরা, শিবের তপস্যায় পার্বতী , পার্বতীর নিকট ছদ্মবেশে শিবের আগমন, পার্বতীর নিকট শিবের আত্মপ্রকাশ ও পার্বতীকে বিবাহ করতে শিবের স্বীকৃতি সম্পর্কে জানবো।

দেবী পার্বতী প্রসঙ্গে দেবী পার্বতীর জন্ম পরিচয়, হিমালয় ও মেনকার কন্যা উমা, হিন্দু দেবী পার্বতী, আদি পরাশক্তি পার্বতী, হিন্দু ধর্মে সর্বোচ্চ দেবী পার্বতী, শিব-পার্বতীর অদ্ভুত বিবাহের কাহিনী, দেবী যোগমায়া বা পার্বতী ও দেবী পার্বতীর পূজা সম্পর্কে জানব।

শিব পত্নী পার্বতী

ঐতিহাসিক চরিত্রপাৰ্বতী
পরিচিতিশিব পত্নী
অন্য নামগৌরি, উমা
পিতাগিরিরাজ হিমালয়
মাতামেনকা
ভ্রাতামৈনাক
শিব পত্নী পার্বতী

ভূমিকা :- পর্বতরাজ হিমালয় ও তাঁর সাধ্বী স্ত্রী মেনকার অনেকগুলি সন্তান। মৈনাক তাদের ছোট। তিনি ইন্দ্রের ভয়ে সমুদ্রগর্ভে আশ্রয় লাভ করেন। রাজদম্পতী বহুকাল হতেই ভগবতীকে কন্যারূপে লাভ করবার জন্য তপস্যা করছিলেন। সুতরাং তাঁদের মনোবাসনা পূর্ণ করবার জন্য ও প্রেমের সাগর ভোলানাথের প্রেম অক্ষুণ্ণ রাখবার জন্য সতী মেনকার গর্ভে পার্বতী রূপে জন্ম গ্রহণ করলেন।

পার্বতীর জন্ম

শুভদিনে শুভক্ষণে, বহুদিনের আরাধ্যধন, ভোলানাথের তপস্যার ফল, সতী ভূমিষ্ঠ হলেন। আকাশ থেকে দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করলেন।

পার্বতীর শৈশব

শশিকলার মত দিন দিন তিনি বাড়তে লাগলেন। সৌন্দর্য শরীরে আর ধরে না, তার মুখের তুলনা নেই, তার চরণের তুলনা নেই, তার গতির তুলনা নেই, পৃথিবীর সৌন্দর্য্য বুঝি একস্থানে জমে আছে। চরণভঙ্গে স্থলপদ্ম ফুটে উঠত, নূপুরনিক্বণে কলহংস লজ্জা পেত।

পার্বতীর বিভিন্ন নাম

আদর করে কেউ ডাকত পার্বতী, কেউ ডাকত গৌরী, কেউ ডাকত উমা।

পার্বতীর পুতুল খেলা

সখাদের সঙ্গে পুতুলখেলায় পার্ব্বতীর কতই আনন্দ। মাটির শিবই তার পুতুল। কখনও সেই মাটির শিব নিয়ে খেলা করতেন, কখনও তার পূজা করতেন, কখনও তার বিবাহ দিতেন। এই পুতুল খেলায় তিনি সব ভুলে যেতেন

পার্বতীর যৌবন সীমায় পদার্পণ

ক্রমে ক্রমে পার্বতী যৌবন সীমায় পদার্পণ করলেন, সৌন্দর্য যেন উছলিত হয়ে উঠল। পূর্ব্বজন্মের বিদ্যা আপনিই এসে উপস্থিত হল। অধিক আগ্রহের সাথে পার্ব্বতী মাটির শিব পূজা করতে লাগলেন।

পার্বতীর বিবাহ বিষয়ে পিতা হিমালয়ের চিন্তা

কন্যার এইরূপ গুণ ও শিবপূজার এই আসক্তি দেখে মহাদেবকে যোগ্যপাত্র মনে করে হিমালয় তাকেই কন্যা সম্প্রদান করতে মনস্থ করলেন। কিন্তু পাছে তিনি অস্বীকার করেন এজন্য তিনি মহাদেবের কোন অনুমতি চাইতে সাহসী হলেন না।

পার্বতীর বিবাহ বিষয়ে নারদের উক্তি

একদিন নারদ এসে বলে গেলেন যে মহাদেবের সাথেই তার পার্ব্বতীর বিবাহ নিশ্চিত। হিমালয় কতকটা আশ্বস্ত হলেন।

পার্বতীর শিব পূজা

সঙ্গীদের সঙ্গে পার্বতী তপস্যানিরত স্বয়ং মহাদেবের নিকট যেতেন, তিনিও তাঁর পূজা গ্রহণ করতেন। মেনকা প্রথম প্রথম বারণ করলেও নারদের মুখে এই কথা শুনে তিনি ও হিমালয় স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পার্বতীকে শিবপুজার জন্য পাঠিয়ে দিতেন। পার্বতীর রূপ দেখে যদি মহাদেব মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং বিবাহের প্রস্তাব করেন। যাই হোক, পার্বতী এখন হতে প্রত্যহ সখীদের সঙ্গে শিবপূজা করতে যেতেন। এখন আর মাটির পুতুল নয় স্বয়ং শিবই তাঁর উপাস্য দেবতা।

তারকাসুরের অত্যাচার

এদিকে দেবতারা তারকাসুরের উৎপাতে বড়ই বিব্রত হয়ে পড়লেন। সকলেই নিজের নিজের অধিকার হতে বঞ্চিত হয়ে বিশেষরূপে লাঞ্ছিত হতে লাগলেন । ব্রহ্মার বরে সে অসুর অজেয়, কেউ তাকে বিনাশ করতে পারলেন না। এক দিন সকলে মিলে ব্রহ্মার নিকট উপস্থিত হয়ে নিজেদের দুঃখের কাহিনী বললেন।

তারকাসুর বধের উপায়

ব্রহ্মা বললেন “একমাত্র শিবের পুত্রই তাকে বিনাশ করতে পারবে, অন্য কোনো উপায় নেই। শিব এখন মহাধ্যানে নিমগ্ন, যদি গিরিরাজ কন্যা পার্বতীর সাথে তাঁর বিবাহ হয়, তাহলে এর প্রতিকার সম্ভব।”

আশা একমাত্র মদন

দেবতারা এখন সকলে মিলে মদনকে হিয়ালয়ে পাঠালেন। সকলের আশা মদনই শিবের ধ্যানভঙ্গ করে স্বকার্য্য উদ্ধার করবেন।

পার্বতীর পূজার সময় মদনের অপেক্ষা

একদিন পার্বতী যথারীতি শিবপুজার জন্য আগমন করেছেন। মদনও অবসর বুঝে উপস্থিত হয়েছে, সঙ্গে বসন্তও এসেছে। বসন্তের আগমনে হিমালয় নতুন শ্রী ধরল, মদন মোহন বেশে উপযুক্ত অবসরের প্রতীক্ষায় রইলেন।

মহাদেবের উদ্দেশ্যে পার্বতীর পুষ্পাঞ্জলি

পার্বতী মহাদেবের চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে পদ্মবীজের মালা তাঁর হস্তে দিচ্ছেন, ভক্তবৎসল মহাদেবও তা গ্রহণ করবার জন্য হস্ত প্রসারণ করেছেন এমন সময় মদন ফুলধনুকে সম্মোহন নামক শর যোজনা করলেন। মহাযোগী ক্ষণিক বিচলিত হয়ে পার্বতীর মুখের দিকে একবার চাইলেন।

ভস্মীভূত মদন

মহাদেব আত্মদমন করে নিজের চিত্তবিকৃতির কারণ নির্দ্দেশ করতে গিয়ে দেখেন সম্মুখে মদন। সঙ্গে সঙ্গে তৃতীয় নেত্র থেকে বেরিয়ে এল আগুন।  অগ্নিজালা সবেগে ছুটল, মুহূর্তে মদন ভস্মীভূত হল।

ক্ষুণ্ণ মনে পার্বতীর গৃহে ফেরা

দেবতারা আকাশে হাহাকার করে উঠলেন। অবিলম্বে সেই স্থান ত্যাগ করে মহাদেব চলে গেলেন, পার্বতী ক্ষুণ্ণ মনে গৃহে ফিরলেন।

শিবের তপস্যায় রত পার্বতী

পাৰ্বতী এখন বুঝলেন রূপে প্রেম সম্ভব না। বিনা সংযমে বিনা সাধনায় বিনা তপস্যায় প্রেম মিলে না; তাই এখন থেকে তিনি মহা তপস্যায় নিযুক্ত হলেন। বসনভূষণ ত্যাগ করে তিনি বল্কল ও চিরবসন ধারণ করলেন। অনাহার, অনিদ্রা কিছুতেই ভ্রূক্ষেপ নেই। শীতে আকণ্ঠ শীতল জলে দাঁড়িয়ে, দারুণ গ্রীষ্মে ভীষণ অগ্নি চারপাশে বেষ্টন করে যোগিনী যোগ করতে লাগলেন। মুখে শুধু শিবনাম, হৃদয়ে শুধু অভীষ্ট দেবতা হৃদয়দেবতার অভয়পদ চিন্তা। এইরূপে কত কাল গেল।

পার্বতীর অবস্থায় দুঃখিত হিমালয়

হিমালয় হতাশ হয়ে পড়লেন, তার সোনার পার্বতীর এই অবস্থা দেখে অত্যন্ত দুঃখিত হলেন।

পার্বতীর নিকট ছদ্মবেশে শিবের আগমন

মহাদেব আর স্থির থাকতে পারলেন না। ভক্তবৎসল ভোলানাথ এই তপস্যায় ভক্তের নিকট না এসে থাকতে পারলেন না। একদিন ছদ্মবেশে পার্বতীর নিকট এসে দেখা দিলেন।

পার্বতীর কাছে শিবনিন্দা

কথাপ্রসঙ্গে শিবকে পাবার জন্য পার্বতী তপস্যা করছেন, জানতে পেরে, তিনি পাৰ্বতীর ভক্তি পরীক্ষার জন্য কৃত্রিম বিদ্রূপের সাথে শিবের যথেষ্ট নিন্দা করলেন। “শিব সমস্ত দেবতার মধ্যে নিকৃষ্ট, তার সাথে বিবাহ হলে যথেষ্ট দুঃখভোগ করতে হবে, অন্য দেবতার সাথে বিবাহ হলে বিলক্ষণ সুখভোগের সম্ভাবনা” ইত্যাদি বলে পার্বতীকে পরীক্ষা করতে লাগলেন।

পার্বতীর নিকট শিবের আত্মপ্রকাশ

পার্বতী এই শিবনিন্দা সহ্য করতে না পেরে ক্রমশঃ উত্তেজিত হয়ে তাঁকে শাপ প্রদানে উদ্যত হলেন। মূহুর্তে ছদ্মবেশ অন্তর্হিত হল, তাঁর উপাস্য দেবতা, তাঁর হৃদয় দেবতা সম্মুখে বিরাজ করতে লাগলেন।

পার্বতীকে বিবাহ করতে শিবের স্বীকৃতি

শিব পার্বতীকে বিবাহ করতে স্বীকার করলেন। পার্বতীর তপস্যা শেষ হল।

উপসংহার :- হিমালয় ও মেনকা এই সংবাদে যারপরনাই আহ্লাদিত হলেন এবং শীঘ্রই বিবাহের আয়োজন করলেন। হিমালয় স্বয়ং কন্যা সম্প্রদান করলেন। দেবতারা মহানন্দে মহা উৎসব-এ যোগদান করলেন। ভোলানাথ পার্বতীর মাধ্যমে তাঁর হারানো সতীকে পেলেন।

(FAQ) পার্বতী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. পার্বতীর পিতা কে ছিলেন?

গিরিরাজ হিমালয়।

২. পার্বতীর মাতা কে ছিলেন?

মেনকা।

৩. পার্বতীর ভ্রাতা কে ছিলেন?

মৈনাক।

৪. পার্বতীর অন্য নাম কি ছিল?

গৌরি, উমা।

Leave a Comment