পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন

এক সময়ের বিখ্যাত পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন প্রসঙ্গে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের কারণ, রোমান সাম্রাজ্যের পতনে সম্রাটদের অযোগ্যতা, রোমান সাম্রাজ্যের পতনে অর্থনৈতিক সংকট, রোমান সাম্রাজ্যের পতনে দুর্বল বৈদেশিক নীতি, রোমান সাম্রাজ্যের পতনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও রোমান সাম্রাজ্যের পতনে বৈদেশিক আক্রমণের প্রভাব সম্পর্কে জানব।

৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন

ঐতিহাসিক ঘটনা বা গল্পপশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন
সময়কাল৪৭৬ খ্রি
কারণঅর্থনৈতিক সংকট, অযোগ্য সম্রাট, বৈদেশিক আক্রমণ প্রভৃতি
শেষ সম্রাটরোমুলাস অগাস্টুলাস
প্লেগ মহামারি১৬৭ খ্রি
গলফ্রান্স
পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন

ভূমিকা :- রোমান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় যে, তৃতীয় শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই রোমান সাম্রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম ভাগকে আলাদা করে শাসন করার প্রবণতা দেখা যায়। চতুর্থ শতকও এর ব্যতিক্রম নয়। এই শতকে কোনো কোনো সম্রাট দুটি ভাগকে একসঙ্গে শাসন করলেও কার্যত রোমান সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যই হয়ে উঠেছিল প্রকৃত রোমান সাম্রাজ্য। এটি পরবর্তীকালে বাইজানটাইন সাম্রাজ্য নামে পরিচিত হয়। তবে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যে কেন্দ্রীভূত শাসনের অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে। পশ্চিমের রোমান অভিজাতরা ইতালি, স্পেন ও গল দেশে পৃথকভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে বহুধাবিভক্ত বিশাল পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য জার্মান জাতিগুলির মুক্তক্ষেত্রে পরিণত হয়।

পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের কারণসমূহ

পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের কারণ অনুসন্ধান করতে ঐতিহাসিক মহলে প্রচুর লেখালেখি ও গবেষণা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নানা মত রয়েছে। পম্পেই নগরীর উৎখননকার্যের ফলে এবং জুভেনাল (Juvenal) ও মার্শালের (Martial) ব্যঙ্গাত্মক কাব্যে রোমান সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের ছবি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রোমান সাম্রাজ্যের পতন সম্পর্কে ঐতিহাসিক মহলে নানা বিতর্ক সত্ত্বেও একথা বলা যায় যে, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকের সূচনাকাল ছিল রোমান সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রে এক স্থবির সময়, ২৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই রোমান সাম্রাজ্য সংকটের কালে প্রবেশ করেছিল। এই সংকট ও পতনের জন্য দায়ী ছিল নানা কারণ। যেমন –

(ক) পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের সার্বিক অস্থিরতা

রোমান সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধের সংকট, সম্রাট-সেনেট বিরোধ, বর্বর জাতির আক্রমণ, সামরিক পদাধিকারীদের অতিসক্রিয়তা প্রভৃতি রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পথ প্রশস্ত করে।

(খ) সম্রাটদের অযোগ্যতা ও উত্তরাধিকার সংকট

সম্রাট অগাস্টাস সিজারের পরবর্তীকালে রোম সাম্রাজ্যে তেমন কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন সম্রাট দেখা যায় নি। তা ছাড়া উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সম্রাটদের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি না থাকায় প্রায়শই গৃহযুদ্ধের সংকট তৈরি হয়। এই গৃহযুদ্ধে জয়ী হয়ে যাঁরা সম্রাট হতেন তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। ফলে সাম্রাজ্যের ভিত্তিও নড়বড়ে হয়ে যায়।

(গ) পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যে সেনাপতিদের প্রাধান্য

থিওডোসিয়াসের পুত্র হনোরিয়াস যখন পশ্চিম রোমের রাজা হন তখন তিনি ছিলেন নাবালক। তাঁর অভিভাবকরূপে সেনাপতি স্টিলিকো পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। আর পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের নাবালক রাজা আর্কাডিয়াসের অভিভাবকরূপে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন সেনাপতি রুফিনাস। ভ্যান্ডাল উপজাতি বংশোদ্ভূত স্টিলিকো ছিলেন উচ্চাভিলাষী। তিনি রোম-এর বেশিরভাগ পূর্বাঞ্চলকে পশ্চিম রোমের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চেয়েছিলেন। নানা কারণে স্টিলিকো এবং রুফিনাসের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। সেই সুযোগে রোমে বর্বর জাতিগুলির আক্রমণ সংঘটিত হয়। সেনাপতিদের আধিপত্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বিস্তারের ফলে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

(ঘ) পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি

রোমান সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তার এই সাম্রাজ্যের পতনকে অনিবার্য করেছিল। তিনটি মহাদেশব্যাপী এই সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটায় এর কেন্দ্রীয় শাসন শিথিল হয়ে পড়ে। তা ছাড়া যাতায়াতের সমস্যার কারণে দূরবর্তী অঞ্চলে কোনো বিদ্রোহ দমন করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।

(ঙ) বর্বর জাতিগুলির পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যে আক্রমণ

নানা সংকটে দীর্ণ রোমান সাম্রাজ্যকে বর্বর জাতিগুলির আক্রমণ মোকাবিলার সমস্যায় ভুগতে হয়েছিল। বিভিন্ন জার্মান জাতিগোষ্ঠী যেমন – গথ, ফ্রাঙ্ক, আলামান্নি, ভ্যান্ডাল প্রভৃতি নানা সময়ে রোমান সাম্রাজ্যে আক্রমণ চালায়। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে হুনরা রোমান প্রদেশগুলিতে লুঠপাট চালায়। এ ছাড়া হুনসহ গথ, ভ্যান্ডাল, আলামান্নি, অ্যালান প্রভৃতি বর্বর জাতিগুলি পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের ইতালিসহ বিভিন্ন প্রভিন্সে প্রবেশ করে কৃষিক্ষেত্র, ফলের বাগান, শিল্পক্ষেত্র ইত্যাদি ধ্বংস করে দেয়। তারা কয়েকবার রোম অবরোধ করে লুণ্ঠনও চালিয়েছিল।

(চ) পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যে অর্থনৈতিক বিপর্যয়

রোমান সাম্রাজ্যের পতনে অর্থনৈতিক বিপর্যয় বিশেষভাবে দায়ী ছিল। আলেকজান্ডার সেভেরাসের মৃত্যুর পর থেকে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যে চরম অবক্ষয় ঘটতে থাকে। রোমান সাম্রাজ্যে প্রচলিত মুদ্রার অবক্ষয়, শিল্প ও বাণিজ্যের অবনতি, ভূমিদাস প্রথার বিস্তার, সামন্ততান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর উন্মেষ, অর্থনৈতিক উৎসগুলির ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি রোমান সাম্রাজ্যের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। এর পাশাপাশি ২০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে বহিরাগত আক্রমণসহ নানা কারণে রোমান সাম্রাজ্যে করের বোঝা বাড়ানো হয়। জোর করে রাজস্বসহ অন্যান্য কর আদায় করার ফলে সাধারণ নাগরিকরাও ক্ষিপ্ত হতে থাকে। ফলে ক্রমশ প্রশাসনিক কাঠামোও দুর্বল হতে থাকে। নিরাপত্তার কারণে রোমের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিপর্যয় দেখা দেয়। ভারত, আরব, আবিসিনিয়া ও কনস্ট্যানটিনোপল-এর বণিকরা এশীয় বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। এইভাবে রোম এক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়।

(ছ) বিশাল পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যে সামরিক বিপর্যয়

রোমান সেনাবাহিনীর নানা দুর্বলতা ও ত্রুটি রোমান সাম্রাজ্যকে পতনের পথে নিয়ে যায়। নানা অঞ্চল ও জাতি থেকে সৈন্য সংগ্রহ করা হলে, তাদের মধ্যে রোমান জাতীয়তাবাদের অভাব দেখা যায়। তা ছাড়া সম্রাটরা সবসময় সামরিক আধিকারিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন না বা তাঁদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন না। ফলে সেনাবাহিনীর দুর্বলতা হয়ে উঠেছিল রোমান সাম্রাজ্য পতনের অন্যতম কারণ।

(জ) পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যে সাম্রাজ্যবাদী প্রতিক্রিয়া

সাম্রাজ্যবাদের বিকাশের ফলে রোম সাম্রাজ্যে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর ফলে রোমান নগরগুলিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। রোমান সম্রাটদের আমলে দাসপ্রথার ব্যাপকতা, সামাজিক শ্রেণিবিভাজন-সহ নানা প্রক্রিয়া সাম্রাজ্যকে পতনের মুখে ঠেলে দেয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল রোমান সম্রাট ও তাঁদের বংশধরদের লোভ ও ঔদ্ধত্য। এর ফলে রোমে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে নি এবং সাম্রাজ্য পতনের পথে অগ্রসর হয়।

(ঝ) ত্রুটিপূর্ণ বিদেশ নীতি

রোমান সম্রাটরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ত্রুটিপূর্ণ বিদেশ নীতি গ্রহণ করেন। বিশেষ করে সীমান্ত রক্ষার ব্যাপারে তাঁরা তেমন ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তাই বিভিন্ন উপজাতি বারবার রোমান সাম্রাজ্যকে আক্রমণ করেছে। অনেকক্ষেত্রেই সম্রাটরা এ ব্যাপারে সামরিক আধিকারিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি।

(ঞ) পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনে ধর্মীয় কারণ

রোমান সাম্রাজ্যে প্রথমদিকে বহুত্ববাদী পেগান ধর্মের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইন নিজে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে, সেই ধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেন। ফলে খ্রিস্টধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটে। খ্রিস্টানরা সম্রাটের বদলে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য দেখানোর কথা বলে। যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির কথা বলে। ফলে রোমান সাম্রাজ্যের প্রতি সাধারণ নাগরিকরা উদাসীন হয় এবং সাম্রাজ্যের ভিত্তি দুর্বল হয়। ঐতিহাসিক পেরি অ্যান্ডারসন অবশ্য বলেছেন যে, খ্রিস্টান চার্চের বাড়বাড়ন্ত ও সহজসরল আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি এবং ধর্মান্তরিত সাধারণ খ্রিস্টানরা রাষ্ট্রের দমনপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে চার্চের আশ্রয় নেয়। তখন তাদের জমিগুলি চলে যায় ধনী শ্রেণির হাতে। ফলে মানুষ রাষ্ট্র ও সম্রাট বিরোধী হয়ে ওঠে।

(ট) পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যে রোগের প্রকোপ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও নৈতিক অবক্ষয়

পতনোন্মুখ রোম সাম্রাজ্যের ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাত হেনেছিল রোগের প্রকোপ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও নৈতিক অবক্ষয়। এসময় ম্যালেরিয়া ও প্লেগ রোগের আবির্ভাব ও প্রকোপ নানাভাবে সাম্রাজ্যকে বিপর্যয়ের সম্মুখীন করে তুলেছিল। বিশেষ করে ইতালির নদী উপত্যকা, নিম্নভূমি ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ম্যালেরিয়ার ব্যাপক প্রকোপ দেখা যায়। বিভিন্ন লেখকের রচনায় ল্যাটিয়াম ও এট্রুরিয়ামে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সম্পর্কে জানা যায়। অন্যদিকে ১৬৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ প্লেগরোগ মহামারি রূপে দেখা দিয়েছিল। যার নানা খারাপ প্রভাব পড়েছিল রোমান সাম্রাজ্যে ও শাসনব্যবস্থায়। প্লেগ, ম্যালেরিয়া ইত্যাদির প্রকোপের কারণ অনুসন্ধান না করে সম্রাট ডেসিয়াস ও জুলিয়ান-এর আমলে খ্রিস্টানদের এসবের জন্য দায়ী করে রোমানরা হত্যা করতে শুরু করে। এইসব কারণ রোমান সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ছিল।

(ঠ) চতুর্থ শতকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যে স্থবিরতা

অবিরাম যুদ্ধে বারংবার বর্বর জাতিগুলির আক্রমণের কারণে রোমে অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে। ফলে সাহিত্য, শিল্পকলা ও বিজ্ঞানচর্চা প্রায় থমকে যায়। ইতালিবাসীরা তাদের ঐতিহ্য, পরম্পরা, নীতিজ্ঞান, ধর্মীয় সহনশীলতা, রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ প্রায় ভুলে যায়। শুরু হয় নৈতিক অবক্ষয়। রোমান কবি জুভেনাল খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে তাঁর রচনায় তৎকালীন সমাজের শাসক ও সম্ভ্রান্তশ্রেণির বিলাসী ও নীতিজ্ঞানহীন জীবনযাপনের প্রতি বিদ্রুপ করেছেন। রোমান কবি আসোনিয়াস, দার্শনিক অগাস্টাইন প্রমুখ চতুর্থ শতকের রোমান সাম্রাজ্যের করুণ সমাজচিত্র তুলে ধরেছেন।

বিশাল পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন 

আভ্যন্তরীণ বিবাদ, বাহ্যিক ক্ষয়ক্ষতি এবং দুর্ধর্ষ জাতিগুলির আক্রমণে রোমান সাম্রাজ্য পতনের পথে অগ্রসর হয়। বিভিন্ন জার্মান উপজাতির আক্রমণে বিপর্যস্ত রোম সাম্রাজ্য ইতালি ও গল-এর (ফ্রান্স) মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। ৪১০ খ্রিস্টাব্দে ভিসিগথ নেতা এলারিক এবং ৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে ভ্যান্ডালরা রোম আক্রমণ করে লুঠপাট চালায় এবং পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যকে বিপর্যস্ত করে তোলে। হুন নেতা অ্যাটিলা ৪৫১ খ্রিস্টাব্দে গল বিধ্বস্ত করেন। ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মান নেতা ওডোয়েসার শেষ রোমান সম্রাট রোমুলাস অগাস্টুলাসকে পরাজিত করলে রোমান সাম্রাজ্য বা পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের অবলুপ্তি ঘটে। তবে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টিকেছিল।

পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন না রূপান্তর সম্পর্কে বিতর্ক

তবে এই সাম্রাজ্যের পতন আদৌ পতন ছিল নাকি রূপান্তর ছিল তা নিয়ে গবেষক-পণ্ডিত মহলে নানা বিতর্ক বর্তমান। যেমন – (ক) একদল পণ্ডিত মনে করেন যে, পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন ছিল স্বাভাবিক ও অনিবার্য। (খ) অপর দলের মতে, এক্ষেত্রে কোনো পতনই ঘটে নি। (গ) এডওয়ার্ড গিবন রোমান সাম্রাজ্যের শেষ পর্যায়ের যৌক্তিক বিশ্লেষণ করে বলেছেন যে, রোমের পতন ছিল স্বাভাবিক ও অনিবার্য। (ঘ) অনেকে এই সাম্রাজ্যের পতনের কথা বাদ দিয়ে কীভাবে এই সাম্রাজ্য দীর্ঘকাল টিকেছিল তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে এ. পিগানিয়োল সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, রোমান সভ্যতার পতন স্বাভাবিক ছিল না। (ঙ) স্পেঙ্গলার অবশ্য এই মতের বিরোধিতা করেছেন। (চ) আর্নল্ড টয়েনবি-র মতে, রোমান সভ্যতা ধ্বংসের মতো কোনো ঘটনা ঘটে নি। (ছ) আলফোন্স ডপশ বলেছেন যে, রোমান সভ্যতার পতন ঘটে নি, রোমান সাম্রাজ্য পরবর্তী ক্যারোলিঞ্জীয় যুগে এই সভ্যতা প্রবাহমান ছিল। (জ) সুতরাং, বলা যায় যে, রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে নি, তার রূপান্তর ঘটেছিল মাত্র।

উপসংহার :- আভ্যন্তরীণ বিবাদ, বাহ্যিক ক্ষয়ক্ষতি এবং দুর্ধর্ষ জাতিগুলির আক্রমণে রোমান সাম্রাজ্য পতনের পথে অগ্রসর হয়। বিভিন্ন জার্মান উপজাতির আক্রমণে বিপর্যস্ত রোম সাম্রাজ্য ইতালি ও গল-এর (ফ্রান্স) মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। ফলে ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের অবলুপ্তি ঘটে। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের ফলে পৃথিবীর ইতিহাসে মধ্যযুগের সূচনা হয়েছিল।

(FAQ) পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে কখন?

৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে।

২. পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট কে ছিলেন?

রোমুলাস অগাস্টুলাস।

৩. পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কোথায় ছিল?

রোম।

৪. কোন হুন নেতা গল বিধ্বস্ত করেন?

হুন নেতা অ্যাটিলা, ৪৫১ খ্রিস্টাব্দে।

৫. পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য পরবর্তীতে কি নামে পরিচিত হয়?

বাইজানটাইন সাম্রাজ্য।

৬. পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে কখন?

১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে।

Leave a Comment