জার্মানির বিখ্যাত কবি ও নাট্যকার ফ্রেডরিক শিলারের প্রেমপত্র প্রসঙ্গে ফ্রেডরিক শিলারের পরিচয়, ফ্রেডরিক শিলারের দেশ, ফ্রেডরিক শিলারের খ্যাতি, ফ্রেডরিক শিলারের প্রেম, ফ্রেডরিক শিলারের প্রেমিকা ও ফ্রেডরিক শিলারের মূল প্রেমতর সম্পর্কে জানব।
কবি ও নাট্যকার ফ্রেডরিক শিলারের প্রেমপত্র
ঐতিহাসিক প্রেমপত্র | ফ্রেডরিক শিলারের প্রেমপত্র |
পরিচিতি | জার্মানির বিখ্যাত কবি ও নাট্যকার |
দেশ | জার্মানি |
প্রেমিকা | লোতি |
প্রেমপত্র রচনা | ৩ রা আগষ্ট, ১৭৮৯ খ্রি |
জার্মানির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও নাট্যকার শিলার। তিনি বিশ্বসাহিত্যের একজন সর্বোত্তম দরদী শিল্পী। তার চরিত্র ছিল পবিত্রতার শ্রেষ্ঠ উপাদানে গড়া এবং তাঁর লক্ষ্যও ছিল আদর্শের উচ্চমার্গে উপনীত হওয়া। দৈহিক দুর্বলতা সত্ত্বেও তিনি জীবনে ও শিল্পে সেই আদর্শের রূপায়নের জন্য সচেষ্ট ছিলেন। এই সুন্দর সুপুরুষ, কয়েকটি প্রেমাভিজ্ঞতার পর ফ্রাউ ফন কালবের প্রভাব থেকে অবশেষে আপনাকে মুক্ত করেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই ফ্রাউ ফন লেঙ্গেফেল্ড-এর দুটি প্রতিভাময়ী কন্যার রূপে বিমোহিত হন। তাঁদেরই একজন লোতি-র সঙ্গে ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বিয়ে হয়।
লাইপজিগ থেকে লোতিকে লেখা তার পত্র –
৩ রা আগষ্ট, ১৭৮৯
প্রিয়তমা লোতি, একি সত্য? যে কথা স্বীকারে আমার সাহসে কুলাচ্ছিল না, ক্যারোলিন কি সেই কথাই তোমার হৃদয় খুঁড়ে আবিষ্কার করেছে আর আমার প্রত্যাশার জবাব মিলেছে। অহো, পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর থেকে আমার হৃদয়ে যে ভাব অঙ্কুরিত হয়েছিল তা এতদিন গোপন রাখতে বাধ্য হওয়ায় কী যে কষ্ট হয়েছে আমার! অনেক সময়, যখন আমরা এক সঙ্গে বসবাস করতাম, আমি আমার সমস্ত শক্তি সংগ্রহ করে তোমার কাছে এসেছি তোমাকে সব বলব বলে, কিন্তু সর্বদাই আমার সে শক্তি ও সাহস ব্যর্থ হয়েছে। অকস্মাৎ আমি যেন তাতে একটা অবুঝ স্বার্থপরতা খুঁজে পেতাম, মনে হতো, বোধ হয় আমি শুধু আমার আপন সুখের কথাই ভাবছি – আর তাতেই আমি পিছিয়ে পড়তাম। আমার নিকট তুমি যা তোমার নিকট আমি যদি তা হতে পারতাম, তাহলে আমার হৃদয় বেদনা হয়ত তোমাকে বিব্রত করত আর আমার অকপট স্বীকারোক্তি দ্বারা আমি আমাদের পারস্পরিক বন্ধুতার সম্পর্ক বিনষ্ট করে ফেলতাম। সেক্ষেত্রে আমার তখন যা ছিল অর্থাৎ তোমার অকৃত্রিম ভগিনীসুলভ বন্ধুতা তাও হারিয়ে ফেলতাম। কিন্তু, তথাপি এই মনোভঙ্গির মধ্যেও এমন মূহূর্ত আসত যখন আমার হৃদয়ে আবার আশা জেগে উঠত নতুন করে। মনে হত, আমাদের পারস্পরিক মিলন উভয়কে যে সুখের অধিকারী করবে দুনিয়ার আর সব কিছুর উর্ধ্বে তার স্থান। তখন আমার মনে হত, এর বেদিমূলে জীবনের আর সব কিছু উৎসর্গ করাও মহৎ ও সার্থক। আমাকে ছাড়া তুমি সুখী হতে পার, কিন্তু আমার মধ্যমে তুমি কদাচ অসুখী হতে না। এই চেতনা আমাতে জাগ্রত ছিল আর তার উৎসেই গড়ে উঠেছে আমার সমগ্র আশার বনিয়াদ।
তুমি হয়ত আর কারও নিকট নিজেকে নিবেদিত করতে পারতে, কিন্তু আর কেউ আমার থেকে অধিক অনাবিল ও পরিপূর্ণভাবে তোমাকে কখনও ভালবাসতে পারত না! আমার নিকট তোমার সুখ যতটা পবিত্র অন্য কারও নিকট তা হতো না এবং কোনো দিন হবেও না। আমার সমস্ত অস্তিত্ব আমার সত্তার গভীরে যা অস্তিত্বশীল, আমার নিকট যা সর্বাধিক মূল্যবান, সমস্তই আমি তোমার উদ্দেশে নিবেদন করলাম; আর জেনে রেখো, নিজেকে পবিত্রতর, মহত্তর করার আমার যে সাধনা তাও আরও বেশি করে তোমার যোগ্য হওয়ার জন্য, তোমাকে অধিকতর সুখী করার জন্য। আত্মার মহত্ব বন্ধুতা ও প্রেমের সম্পর্কের একটি অপরূপ ও অবিনশ্বর বন্ধন। যে হৃদয়বৃত্তি ও অনুভূতির উপর আমরা আমাদের প্রেম ও বক্তৃতাকে স্থাপন করি, তাদের মত এরাও অবিনশ্বর ও অনন্ত ।
তোমার হৃদয়ানুভূতিকে যা প্রতিহত করতে পারত এবার তা ভুলে এবং তোমার অনুরাগগুলোকে এবার আপন কথা বলতে দাও। ক্যারোলিন যে আশায় আমার হৃদয়কে পুলকিত করেছে, তা স্বীকার করো। বলো যে তুমি আমার হবে, বলো আমার সুখে তোমার কোনো ত্যাগের দুঃখ নেই। ওঃ, আমাকে শুধু ঐ প্রতিশ্রুতি দাও, শুধু একটিমাত্র শব্দই তার জন্য যথেষ্ট। আমাদের হৃদয় দুটি দীর্ঘকাল কাছাকাছি রয়েছে। এর মধ্যে যদি কোনো অবাঞ্ছিত বস্তু হৃদয়ে প্রবেশ করে থাকে তো তা বিয়ে করা; আত্মার স্বাধীন বন্ধনহীন অভিসারে কোনো কিছুকেই প্রতিবন্ধক স্বরূপ দাঁড়াতে দিয়ো না।
বিদায়, প্রিয়তমা লোতি! একটি প্রশান্ত মুহুর্তের জন্য আমি লালায়িত, যখন আমি তোমার নিকট আমার হৃদয়ানুভূতির ছবি আঁকব, যা প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ দিনগুলোতে আমাকে করেছে সুখী আবার অসুখীও। তোমাকে আমার এখনও কত বলার বাকী! চিরকালের এবং সর্বক্ষণের জন্য আমার মনের অস্থিরতা দূর করতে তুমি বিলম্ব করো না; তোমার হাতেই আমার জীবনের সকল আনন্দ আমি সঁপে দিলাম। আহা, কত দীর্ঘ কাল ধরে আমি তোমারই রূপে তোমারই মূর্তিতে তোমার ছবি এঁকে চলেছি! বিদায়, আমার হৃদয়ের অমূল্যধন! বিদায়!
শিলার
(FAQ) ফ্রেডরিক শিলারের প্রেমপত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
জার্মানির বিখ্যাত কবি ও নাট্যকার।
লোতি।
৩ রা আগষ্ট, ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে।