উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সুলতানি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে সম্প্রসারণ নীতি, সমগ্র ভারতের সাম্রাজ্য, সংহতি ও সম্প্রসারণ, দিল্লি সুলতানির সর্বভারতীয় চরিত্র দান, সমগ্র ভারতে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা, সম্প্রসারণের সামরিক ও অর্থনৈতিক কারণ সম্পর্কে জানবো।
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সুলতানি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ
বিষয় | উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সুলতানি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ |
সুলতান | আলাউদ্দিন খলজি |
রাজত্বকাল | ১২৯৬-১৩১৬ খ্রি: |
বংশ | খলজি বংশ |
পূর্বসূরি | জালালউদ্দিন খলজি |
উত্তরসূরি | কুতুবউদ্দিন মোবারক খলজি |
ভূমিকা :- মধ্যযুগের ভারত-ইতিহাসে আলাউদ্দিন খলজি সাম্রাজ্যবাদের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তাঁর মতো এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী শাসক সম্ভবত দিল্লির সিংহাসনে বসেন নি বললে অত্যুক্তি হবে না।
সুলতানি সাম্রাজ্যে আলাউদ্দিনের উচ্চ স্থান
তিনি বলবনের প্রদর্শিত পথ ধরে যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু সাফল্যের দিক থেকে বিচার করলে দিল্লির যে-কোনো সুলতানের চেয়ে আলাউদ্দিনের স্থান অনেক উচ্চে।
আলাউদ্দিন খলজির সম্প্রসারণ নীতি
তিনিই প্রথম নরপতি, যিনি দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ প্রায় ভারত ব্যাপী ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। সম্প্রসারণ সম্পর্কে আলাউদ্দিনের ধারণা মহতী ছিল। তিনিও আলেকজান্ডার-এর মতো বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত তীক্ষ্ণ বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ায় তিনি এই পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেছিলেন।
সমগ্ৰ ভারতে আলাউদ্দিন খলজির সাম্রাজ্য
সসাগরা বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ত্যাগ করলেও তিনি হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত সমগ্র ভারতে দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং ভারতের অধিকাংশ স্বাধীন রাজ্য তাঁর অধিকারে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আলাউদ্দিন খলজির উপাধি গ্ৰহণ
তিনি সসাগরা পৃথিবী বিজয়ের স্বপ্ন ত্যাগ করলেও, নিজ মুদ্রায় দ্বিতীয় আলেকজান্ডার’ রূপেই নিজেকে চিহ্নিত করেছিলেন। তাই আলাউদ্দিনের শাসনকালকে স্যার উলসি হেগ “The real imperial period of the Sultanate’ বলে অভিহিত করেছেন।
আলাউদ্দিন খলজির সংহতি ও সম্প্রসারণ নীতি
তিনি রক্তপিপাসু ছিলেন না। তাঁর সাম্রাজ্যবাদের পশ্চাতে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক আদর্শ ছিল। আলাউদ্দিনই একমাত্র সুলতান যিনি রাষ্ট্রের সংহতি ও সম্প্রসারণ তথা সাম্রাজ্যবাদ নীতিকে একই সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন এবং সাফল্য লাভ করেছিলেন। বলবন-এর মতো শাসকও একই সঙ্গে সংহতি ও সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করতে পারেন নি।
দিল্লি সুলতানির সর্বভারতীয় চরিত্র দানে আলাউদ্দিন খলজির অবদান
আলাউদ্দিন তাঁর ক্ষমতালাভের দু দশকের মধ্যেই গুজরাট, মালব, রাজস্থান প্রভৃতি বিস্তীর্ণ অঞ্চল এবং দাক্ষিণাত্যে সেতুবন্ধ-রামেশ্বরম পর্যন্ত ভূখণ্ডে তাঁর সাম্রাজ্যবাদের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দিল্লি সুলতানির এক সর্বভারতীয় চরিত্র দান করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সমগ্ৰ ভারতে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় আলাউদ্দিন খলজির অবদান
- (১) উত্তর ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের সংযোগ সাধন করাও ছিল তাঁর সাম্রাজ্যবাদের আদর্শ। আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যের আর একটি আদর্শ উত্তর ভারতে তিনি ছিলেন দিগ্বিজয়ী বীর।
- (২) আর দক্ষিণ ভারতে তিনি হলেন এক সার্বভৌম শক্তির আধার। প্রকৃতপক্ষে তিনি সমগ্র ভারতবর্ষে তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করার কর্মসূচি গ্রহণ করেন এবং সেকাজে তিনি সফল হয়েছিলেন।
আলাউদ্দিন খলজির সম্প্রসারণের সামরিক ও অর্থনৈতিক কারণ
- (১) আলাউদ্দিন কেবলমাত্র রাজ্যলোভে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের চেষ্টা করেন একথা ঠিক নয়। আলাউদ্দিনের এই সম্প্রসারণের পশ্চাতে সামরিক ও অর্থনৈতিক কারণও দায়ী ছিল। রাজপুতদের হাত থেকে রণথম্বোর ও চিতোর দুর্গ দখল না করা পর্যন্ত দিল্লির আধিপত্য ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত ছিল না।
- (২) দিল্লি থেকে গুজরাটের যোগাযোগের পথ ছিল রাজপুতনার মধ্য দিয়ে। গুজরাটের বন্দরের সঙ্গে সংযোগ রাখার জন্য উত্তর ভারতের বণিকদের কাফিলাগুলি রাজস্থানের মরু অঞ্চল দিয়ে পার হত। স্বভাবতই রাজপুত রাজার দিল্লির বশ্যতা স্বীকার না করলে দিল্লির অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ বিপন্ন হত।
উপসংহার :- তাঁর সাম্রাজ্যবাদ শুধুমাত্র নগ্ন-সাম্রাজ্যবাদ ছিল না। ড. এস. রায় ঠিকই বলেছেন যে, “Allauddin was the first Muslim imperialist and first great Muslim administrator of India”।
(FAQ) উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সুলতানি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
আলাউদ্দিন খলজি।
দ্বিতীয় আলেকজান্ডার।
আলাউদ্দিন খলজি।