পাল রাজা ধর্মপালের কৃতিত্ব প্রসঙ্গে কূটনীতিক ও সমরকুশল, সাম্রাজ্য বিস্তার, কনৌজ দরবার, লুপ্ত ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, শিক্ষার উন্নতি, বৌদ্ধধর্মে অনুরক্তি, ধর্মসহিষ্ণুতা ও দেবপালের সাফল্যে তার ভূমিকা সম্পর্কে জানবো।
ধর্মপালের কৃতিত্ব
ঐতিহাসিক ঘটনা | ধর্মপালের কৃতিত্ব |
রাজা | ধর্মপাল |
রাজত্ব | ৭৭৫-৮১২ খ্রি: |
সাম্রাজ্য | পাল সাম্রাজ্য |
রাজধানী | মগধ |
প্রতিষ্ঠাতা | গোপাল |
শ্রেষ্ঠ রাজা | দেবপাল |
ভূমিকা :- গোপালের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ধর্মপাল বাংলার সিংহাসনে বসেন। পাল বংশের আঞ্চলিক রাজ্যকে তিনি এক সর্বভারতীয় সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। প্রাচীন যুগের বাংলায় যে সকল রাজার নাম পাওয়া যায় তাঁদের মধ্যে ধর্মপাল শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করতে পারেন।
কূটনীতিক ও সমরকুশল ধর্মপাল
তাঁর কূটনৈতিক ও সামরিক কৃতিত্বের কথা বলতেই হয়। শশাঙ্ক কনৌজ জয় করলেও তা অধিকারে রাখতে পারেননি। ধর্মপাল কনৌজ জয় করে তাঁর সামন্ত চক্রায়ুধকে কনৌজে বসিয়ে দেন।
ধর্মপালের সাম্রাজ্য বিস্তার
গুজরাটি কবি সোঢঢলের মতে, “তিনি ছিলেন উত্তরাপথস্বামিন”। খলিমপুর ও মুঙ্গের লিপির সাক্ষ্য থেকে মনে হয় যে, ধর্মপাল তার বিশাল সাম্রাজ্য নিজ বাহুবলেই বিস্তার করেন। কিন্তু ভাগলপুর লেখের সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, তাঁর ভ্রাতা বাকপাল ও তাঁর ব্রাহ্মণ মন্ত্রী গর্গের সহায়তায় তিনি সফলতা লাভ করেন।
ধর্মপালের সময় কনৌজের দরবার
ধর্মপাল উত্তর ভারতের নানা অঞ্চল জয় করে কনৌজে যে দরবারের অনুষ্ঠান করেন তাতে উত্তর ভারতের নানা অঞ্চলের রাজারা উপস্থিত হয়ে তাঁর প্রতি বশ্যতা জানান বলে খলিমপুর লিপিতে বলা হয়েছে। এই রাজাদের মধ্যে ছিলেন –
- (১) ভোজ (বেরার);
- (২) মৎস (জয়পুর ও আলওয়ার);
- (৩) মদ্র (মধ্য পাঞ্জাব);
- (৪) কুরু (পূর্ব পাঞ্জাব, থানেশ্বর);
- (৫) যদু (পাঞ্জাব);
- (৬) যবন (উত্তর পূর্ব ভারত অথবা সিন্ধুর মুসলিম রাজ্য);
- (৭) অবন্তী (রাজপুতানা);
- (৮) গান্ধার (পশ্চিম পাঞ্জাব) ইত্যাদি।
ধর্মপালের উদ্দ্যোগে লুপ্ত ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা
তৃতীয় গোবিন্দ উত্তর ভারত থেকে চলে গেলে ধর্মপাল তাঁর হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করেন। সম্ভবত তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাকে আর কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে হয়নি। ডঃ মজুমদারের এই অভিমত কোনো কোনো গবেষক স্বীকার করেন না।
শিক্ষার উন্নতিতে ধর্মপালের অবদান
ধর্মপালের রাজত্বকালে শিক্ষা, সংস্কৃতির বিশেষ উন্নতি হয়। ধর্মপাল মগধ-এ নিজ নামে বিক্রমশীলা বিহার স্থাপন করেন। ধর্মপালের অন্য নাম ছিল বিক্রমশীলদেব। তিনি সম্ভবতঃ ওদন্তপুরী বিহার স্থাপন করেন। তিনি সোমপুরী বিহার আংশিক স্থাপন করেন। এই সকল বিহারে বিদ্যাচর্চা, অধ্যাপনা ও ধর্মচর্চা হত।
বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মপালের অনুরাগ
পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্ম -এর অনুরাগী। বৌদ্ধধর্মের প্রতি ধর্মপালের অনুরক্তির জন্য তিনি “পরম সৌগত” বলে কোনো কোনো লিপিতে আখ্যাত হয়েছেন। তার লিপিতে ধর্মচক্রের চিহ্ন খোদিত দেখা যায়। বৌদ্ধ পণ্ডিত হরিভদ্র ছিলেন তার গুরু।
ধর্মপালের ধর্মসহিষ্ণুতা
পাল রাজা ধর্মপাল ভারতীয় সংস্কৃতির রীতি অনুসারে ধর্মসহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করতেন। তিনি নিজে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হলেও অন্যান্য ধর্মের প্রতি ন্যাহ্য ব্যবহার করতেন।
ধর্মপালের সময় ভারতের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র বাংলা
পাল রাজা ধর্মপালের আমলে বাংলার আর্থিক উন্নতি বিশেষভাবে ঘটেছিল। উন্নত কৃষি ও বাণিজ্য বাংলাকে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রে পরিণত করে। পাল যুগে বাঙলা সাহিত্য, চর্যাপদ, চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের বিকাশ ঘটে।
ধর্মপালের সার্বভৌমত্বের হানি
অনেকেই বলেন যে, নাগভট্ট প্রতিহারের কাছে পরাজয় ও রাষ্ট্রকূট তৃতীয় গোবিন্দের প্রতি বশ্যতা জ্ঞাপন ধর্মপালের সার্বভৌমত্বের হানি করে। যে সকল রাজা আগে তাঁর প্রতি বশ্যতা জানান তাঁরা আর তাঁকে অধিরাজ হিসেবে মান্য করতেন কিনা সন্দেহ।
দেবপালের সাফল্যে ধর্মপালের ভূমিকা
ডঃ মজুমদার অবশ্য ধর্মপালের পুত্র দেবপালের সাফল্যের কথা মনে রেখেই বলেছেন যে, ধর্মপাল রাষ্ট্রকূট শক্তির অপসারণের পর নষ্ট ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেন। পিতার সাম্রাজ্য না পেলে দেবপালের পক্ষে এত সাফল্য লাভ করা সম্ভব হত না।
উপসংহার :- ধর্মপাল বাংলার একটি প্রাদেশিক রাজ্যকে এক উত্তর ভারতীয় সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করেন। ডঃ মজুমদারের মতে, “ধর্মপালের রাজত্বকে বাঙালী জীবনের সুপ্রভাত” বলা চলে।
(FAQ) ধর্মপালের কৃতিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
গোপাল।
ধর্মপাল।
ধর্মপাল।
গুজরাটি কবি সোঢঢল, রামপালকে।
বৌদ্ধ ধর্ম।