ইঙ্গ-রুশ মৈত্রী বা ইঙ্গ-রুশ কনভেনশন

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত ইঙ্গ-রুশ মৈত্রী বা ইঙ্গ-রুশ কনভেনশন প্রসঙ্গে পটভূমি হিসেবে ইঙ্গ-জাপান চুক্তি, ইংল্যান্ডের রুশ ভীতি হ্রাস, মিত্রতা স্থাপনে আগ্রহ, ইংল্যান্ডের উপলব্ধি, জার্মান ভীতি, ফ্রান্সের মধ্যস্থতা, খসড়া প্রস্তুত, ইঙ্গ-রুশ চুক্তি স্বাক্ষর, বিবাদ নিস্পত্তির চুক্তি ও চুক্তির শর্তাবলী সম্পর্কে জানবো।

ইঙ্গ-রুশ মৈত্রী বা ইঙ্গ-রুশ কনভেনশন

ঐতিহাসিক ঘটনাইঙ্গ-রুশ মৈত্রী
সময়কাল১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ
স্বাক্ষরকারীইংল্যান্ডরাশিয়া
মধ্যস্থতাকারীফ্রান্স
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ
ইঙ্গ-রুশ মৈত্রী বা ইঙ্গ-রুশ কনভেনশন

ভূমিকা :- ত্রিশক্তি চুক্তি বা ত্রিশক্তি আঁতাত -এর তৃতীয় তথা শেষ পদক্ষেপ ছিল ইঙ্গ-রুশ মৈত্রী। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে এই মৈত্রী স্থাপিত হয়।

ইঙ্গ-রুশ মৈত্রী বা ইঙ্গ-রুশ কনভেনশনের পটভূমি

ইঙ্গ-রুশ মৈত্রীর পটভূমি ছিল নিম্নরূপ। –

(১) ইঙ্গ-জাপান চুক্তি

ফ্রান্স ও রাশিয়া এবং ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড চুক্তিবদ্ধ হলেও রাশিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের সম্পর্ক ভালো ছিল না। আফগানিস্তান, পারস্য, তিব্বত ও মাঞ্চুরিয়া নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিবাদ ছিল। দূর প্রাচ্যে রুশ অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-জাপান মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

(২) ইংল্যান্ডের রুশ ভীতি হ্রাস

ইতিমধ্যে ১৯০৪-১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে রুশ-জাপান যুদ্ধে রাশিয়া ছোটো দেশ জাপানের কাছে পরাজিত হলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে রাশিয়ার মর্যাদা যথেষ্ট হ্রাস পায়। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় বিপ্লব শুরু হয়। এর ফলে রাশিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। দূর প্রাচ্যে রুশ অগ্রগতির সম্ভাবনা দূর হয় এবং ইংল্যান্ডের রুশ-ভীতি কমে যায়।

(৩) মিত্রতা স্থাপনের আগ্ৰহ

দূর প্রাচ্যে পরাজিত হওয়ার পর রাশিয়া পুনরায় বলকান অঞ্চলে সম্প্রসারণের নীতি গ্রহণ করে। এর ফলে এই অঞ্চলে জার্মানিঅস্ট্রিয়ার সঙ্গে তার বিরোধের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই কারণে রাশিয়া ইংল্যান্ডের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

(৪) ইংল্যান্ডের উপলব্ধি

এই সময় ইংল্যান্ডও রুশ মৈত্রীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। ইংল্যান্ড বুঝতে পারে যে, তার সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের প্রতিবন্ধক রাশিয়া নয়, জার্মানি।

(৫) জার্মান ভীতি

এই সময় জার্মানি মধ্য প্রাচ্যে তার প্রভাব বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হয় এবং এই উদ্দেশ্যে বার্লিন-বাগদাদ রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করে। জার্মানির এই উদ্যোগকে ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয় নি। উভয় দেশেই এই জার্মান-বিদ্বেষ বা ভীতি দুই দেশকে কাছাকাছি আসতে সাহায্য করে।

(৬) ফ্রান্সের মধ্যস্থতা

ফ্রান্স ছিল দুই দেশের মিত্র। এই অবস্থায়, ফরাসি বিদেশমন্ত্রী ডেলক্যাসে মধ্যস্থের ভূমিকা নেন।

ইঙ্গ-রুশ চুক্তির খসড়া প্রস্তুত

ব্রিটিশ কূটনীতিক হ্যারল্ড নিকলসন সেন্ট পিটার্সবার্গে যান এবং সেখানে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইজভোলস্কি-র সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ইঙ্গ-রুশ চুক্তির খসড়া তৈরি করেন।

ইঙ্গ-রুশ চুক্তি স্বাক্ষর

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে আগস্ট ইঙ্গ-রুশ কনভেনশন (Anglo-Russian Convention) বা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বিবাদ নিষ্পত্তির চুক্তি

ইঙ্গ-ফরাসি চুক্তির মতোই এই কনভেনশনও ছিল স্বাক্ষরকারী দুই দেশের মধ্যে বিবাদ নিষ্পত্তির চুক্তি মাত্র। এতে কোনও সামরিক ধারা সন্নিবিষ্ট ছিল না।

ইঙ্গ-রুশ মৈত্রী বা ইঙ্গ-রুশ কনভেনশনের শর্তাবলী

এই চুক্তি দ্বারা-

  • (১) উভয় স্বাক্ষরকারী দেশ আফগানিস্তান ও তিব্বতের স্বাধীনতা রক্ষায় সম্মত হয়।
  • (২) উভয় দেশই পারস্যের স্বাধীনতা রক্ষা এবং সেখানে বিভিন্ন জাতির বাণিজ্যিক অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়।
  • (৩) স্থির হয় যে, দুই দেশ পারস্যে নিজ নিজ প্রভাব বলয় স্থির করে নেবে।
  • (৪) পারস্যকে তিনভাগে বিভক্ত করে দক্ষিণ পারস্যে ব্রিটিশ প্রভাব, উত্তর পারস্যে রুশ প্রভাব রক্ষার ব্যবস্থা করা হয় এবং মধ্য পারস্যের নিরপেক্ষতা রক্ষা করা হয়।

উপসংহার :- ইঙ্গ-রুশ মৈত্রীর মাধ্যমে ত্রিশক্তি চুক্তি বা ত্রিশক্তি আঁতাত গড়ে ওঠে। অন্যদিকে ত্রিশক্তি মৈত্রী বা ট্রিপল অ্যালায়েন্স ছিল এর বিরোধী শক্তি জোট। ১৯১৪ সালে এই দুই জোটের মধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

(FAQ) ইঙ্গ-রুশ মৈত্রী বা ইঙ্গ-রুশ কনভেনশন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কখন কাদের মধ্যে ইঙ্গ-রুশ কনভেনশন গড়ে ওঠে?

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার।

২. ইঙ্গ-রুশ কনভেনশনে কোন দেশ মধ্যস্থতা করে?

ফ্রান্স।

৩. ইঙ্গ-রুশ কনভেনশনের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কি ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

Leave a Comment