শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলার অবস্থা প্রসঙ্গে বাংলার রাজনৈতিক ভাঙ্গন, হর্ষবর্ধন ও ভাস্করবর্মনের বাংলা দখল, জয়নাগের বাংলা দখল, বাংলার অরাজকতা, তিব্বতি আধিপত্য, শৈল শাসন যশোধর্মনের বাংলা দখল ও ললিতাদিত্যের বাংলা দখল সম্পর্কে জানবো।
শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলার অবস্থা
ঐতিহাসিক ঘটনা | শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলার অবস্থা |
রাজ্য | গৌড় |
রাজধানী | কর্ণসুবর্ণ |
রাজা | শশাঙ্ক |
ধর্ম | শৈব ধর্ম |
ভূমিকা :- গৌড়রাজ শশাঙ্ককে বাংলার প্রথম জাতীয় সম্রাট হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে থাকে। তবে শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলার রাজনৈতিক ঐক্য ভেঙে পড়ে।
বাংলায় রাজনৈতিক ভাঙ্গন
শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলা কজাঙ্গাল, পুণ্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ, তাম্রলিপ্ত, সমতট – এই সব বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ হয়ে যায়। বৌদ্ধ আর্যমঞ্জুশ্রী মূলকল্পের মতে, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বণিক যে যেভাবে পারে ক্ষমতা অধিকার করে।
বাংলায় গৌড়তন্ত্র
হত্যা, গৃহযুদ্ধ, দুর্বলের ওপর বলবানের অত্যাচার বাংলায় নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। বাংলার অরাজকতা ও কুশাসন যেন একটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়। উত্তর ভারত -এ বাংলার এই অরাজকতাকে গৌড়তন্ত্র অর্থাৎ গৌড় দেশের নিয়ম বলে ব্যঙ্গ করা হত।
হর্ষবর্ধন ও ভাস্করবর্মনের বাংলা দখল
- (১) বাংলার এই দুরবস্থার সুযোগে কিছু দিনের জন্য হর্ষবর্ধন পশ্চিম বাংলা ও কামরূপের ভাস্কর বর্মন পূর্ব বাংলা দখল করেন। শশাঙ্কের পুত্র মানবদেব তাঁর পিতার গৌরব রক্ষা করতে পারেননি।
- (২) হর্ষবর্ধন ও ভাস্করবর্মন বাংলার ঠিক কোন কোন অঞ্চল দখল করেন এই বিষয়ে মতভেদ আছে। ডঃ মজুমদারের মতে, পদ্মানদীর উত্তর ভাগ ভাস্কর বর্মার এবং দক্ষিণ ভাগ হর্ষের অধিকারে যায়। অধ্যাপিকা দেবাহুতি বলেন যে, এ বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
জয়নাগের বাংলা দখল
হর্ষবর্ধন বা ভাস্কর বর্মা বেশী দিন বাংলায় আধিপত্য রাখতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত জয়নাগ বলে এক ব্যক্তি ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দের পর গৌড় অধিকার করে বৈদেশিক অধিকার হতে বাংলাকে কিছুদিনের জন্য মুক্ত করেন। বাংলার বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া তার অধিকারে ছিল বলে মনে করা হয়।
বাংলায় অরাজকতা
জয়নাগের মৃত্যুর পর বাংলায় প্রায় এক শতক ধরে ঘোর অরাজকতা দেখা দেয়। ইতিমধ্যে হর্ষবর্ধনের মৃত্যু ঘটায় পূর্ব ভারতে ঘোর অরাজকতা দেখা দেয়।
বাংলায় তিব্বতী আধিপত্য
চীনা দূত ওয়াং-হিউয়েন সি তিব্বতীয়দের সাহায্যে পূর্ব ভারতে চীনা-তিব্বতী আধিপত্য স্থাপনে সচেষ্ট হন। স্মিথের মতে, তিব্বতের রাজা অং-সান-গাম্পো চীনাদের সাহায্যে আসামের একাংশ এবং উত্তর বাংলার কিছু অঞ্চল জয় করে নেন। তিনিই সম্ভবত ভাস্কর বর্মার বংশের উচ্ছেদ করেন। সমকালীন ইতিহাসে এদের “ম্লেচ্ছ” বলা হয়েছে। এই ম্লেচ্ছ বলতে তিব্বতীদের বোঝান হয়।
পরবর্তী গুপ্ত রাজবংশের বাংলা দখল
৭০২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিব্বতী আক্রমণের অবসান হয়। এর পর কিছুকাল পরবর্তী গুপ্ত রাজবংশ -এর আদিত্য সেনগুপ্ত ও তাঁর তিন উত্তরাধিকারী মগধ শাসন করেন।
বাংলায় শৈল শাসন
৭২৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শৈলবংশ পুণ্ড্রবর্ধন জয় করে। শৈলবংশ আদিতে হিমালয় অঞ্চলে বসবাস করত। বাংলায় শৈল শাসনের বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায়নি।
যশোধর্মনের বাংলা দখল
৭২৫-৩৫ খ্রিস্টাব্দ কনৌজ -এর যশোবর্মনের পশ্চিম বাংলা ও পূর্ব বাংলার কিছু অংশ জয় করেন। যশোবর্মনের এই বৈদেশিক আক্রমণ জয়ের কথা কবি বাকপতি রাজার গৌড়বহো কাব্যে পাওয়া যায়।
ললিতাদিত্যের বাংলা দখল
- (১) কাশ্মীরের মুক্তাপীড় ললিতাদিত্য যশোধর্মনকে পরাস্ত করে গৌড়দেশ অধিকার করেন। যদিও কলহন ললিতাদিত্যের বাংলা অধিকারের কোনো প্রত্যক্ষ মত দেননি, তিনি কয়েকটি ঘটনার কথা বলেছেন যার থেকে পরোক্ষভাবে ললিতাদিত্যের বাংলায় অধিকার স্থাপিত হয় বলে মনে করা যায়।
- (২) এই ঘটনা দুটি ছিল গৌড়দেশ থেকে এক হস্তিযুদ্ধ ললিতাদিত্যের সঙ্গে যোগ দেয় এবং গৌড়রাজ কাশ্মীরে যান ও ললিতাদিত্যের দ্বারা নিহত হন। মুক্তাপীড়ের পৌত্র জয়াপীড় বিজয়াদিত্য পঞ্চগৌড় জয় করেন।
- (৩) তিনি গৌড়রাজ জয়ন্তের কন্যাকে বিবাহ করেন এবং বাংলার পাঁচ সামন্ত রাজাকে পরাস্ত করে তার শ্বশুর জয়ন্তকে অধীনতা স্বীকারে বাধ্য করেন। তবে এ সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। সম্ভবত কামরূপে ভগদত্তবংশীয় রাজা হর্ষ পূর্ব বাংলার কিছু অংশ জয় করেন।
উপসংহার :- এই সকল বিজেতারা বাংলার ওপর স্থায়ী অধিকার স্থাপন করতে পারেননি। কিন্তু তাদের আক্রমণ ও লুণ্ঠনে বাংলা ছারখার হয়। বাংলার এই ভাঙা মঙ্গলচণ্ডীর যুগে মাৎস্যন্যায় দেখা দেয়।
(FAQ) শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
শশাঙ্ক।
কর্ণসুবর্ণ।
মেদিনীপুর লিপি, গঞ্জাম লিপি।
৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে।
শৈব ধর্ম।
মাৎস্যন্যায়।