সিন্ধু লিপি বা হরপ্পী লিপির উদ্ভব, ব্যবহারের সময়, পাঠোদ্ধার, লেখার দিক, সাদৃশ্য, প্রতীক সংখ্যা, ভাষা নির্দেশ, প্রতীক আবিষ্কার, প্রতীক শনাক্ত, স্বতন্ত্র চিহ্ন সংখ্যা, পরিণত হরপ্পা যুগে ব্যবহার ও হরপ্পা পরবর্তী যুগে ব্যবহার সম্পর্কে জানবো।
ভারতের প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার সিন্ধু লিপি প্রসঙ্গে সিন্ধু লিপির উদ্ভব, সিন্ধু লিপির ধরণ, সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধার সম্পর্কে, সিন্ধু লিপি ব্যবহারের সময়, ব্রাহ্মী লিপির পূর্বসূরি সিন্ধু লিপি, সিন্ধু লিপি লেখার দিক, সিন্ধু লিপির সাদৃশ্য, সিন্ধু লিপি থেকে ব্রাহ্মী লিপির উদ্ভব, সিন্ধু লিপির প্রতীক আবিষ্কার ও সিন্ধু লিপির প্রকাশ।
হরপ্পা সভ্যতার সিন্ধু লিপি
লিপির ধরণ | লিপির পাঠোদ্ধার হয়নি |
সময়কাল | ২৬০০–১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ |
লেখার দিক | ডান দিক থেকে বাম দিকে |
ভূমিকা:- ২৬০০ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত বর্তমান পাকিস্তান এবং পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম ভারত -এর অংশবিশেষে অবস্থিত সিন্ধু নদীর তীরে অবস্থিত সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতীকের কতগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্ট্রিংকে সিন্ধু লিপি বা হরপ্পী লিপি বলা হয়।
সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধার
বহু চেষ্টার পরেও সিন্ধু লিপির অর্থোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এর ভাষাটি অজানা এবং কোনো দ্বিভাষী উদাহরণ নেই বলে অর্থোদ্ধার অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার।
সিন্ধু লিপির উদ্ভব
প্রাচীন হরপ্পাতে ব্যবহৃত কিছু প্রতীক থেকে সম্ভবত এর উদ্ভব হয়েছিল।
সিন্ধু লিপির ব্যবহারের সময়
এই লিপিটি সম্ভবত হরপ্পা সভ্যতার পরিণত পর্যায়ে ব্যবহৃত হত।
লোগো সিলেবিক লিপি সিন্ধু লিপি
প্রধান চিহ্নের সংখ্যা ৪০০ টিরও বেশি, যা প্রতিটি অক্ষরের জন্য একটি ফোনোগ্রাম হওয়ার জন্য খুব বড় সংখ্যা বলে মনে করা হয়। তাই লিপিটিকে সাধারণত লোগো সিলেবিক বলে মনে করা হয়।
সিন্ধু লিপির সীলমোহর প্রকাশ
আলেকজান্ডার কানিংহাম ১৮৭৩ সালে প্রথম সিন্ধু লিপিতে লেখা একটি পাথরের সীলমোহরের স্কেচ প্রকাশ করেন।
ব্রাহ্মী লিপির পূর্বসূরী সিন্ধু লিপি
কোনো কোনো লিপি বিশারদ মনে করেন যে, সিন্ধু লিপি ভারতের ব্রাহ্মী লিপির পূর্বসূরী। কিন্তু বেশির ভাগ লিপি বিশেষজ্ঞের মতে ব্রাহ্মী লিপি, আরামাইক লিপি থেকে এসেছে।
সিন্ধু লিপি লেখার দিক
লিপিটি ডান দিক থেকে বাম দিকে লেখা হত। তবে কিছু ব্যতিক্রম ছিল, যেখানে লিপিটি বাম থেকে ডানে বা বুস্ট্রোফেডন মোডে লেখা হয় তাও জানা যায়।
সিন্ধু লিপির সাদৃশ্য
প্রাচীন সিন্ধু লিপি প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার হায়ারোগ্লিফিক লিপি এবং সুমেরীয় সভ্যতার কিউনিফর্ম লিপির মতোই চিত্রলিপি।
সিন্ধু লিপির প্রতীক সংখ্যা
মূল প্রতীকের সংখ্যা প্রায় ৪০০-৬০০, যা সাধারণ লোগোভিত্তিক ও সিলেবলভিত্তিক লিপিগুলির প্রতীক সংখ্যার মাঝামাঝি। তাই বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ লিপিটিকে লোগো-সিলেবলীয় হিসেবে মেনে নিয়েছেন।
সিন্ধু লিপির ভাষা নির্দেশ
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে লিপিটির গাঠনিক বিশ্লেষণ একটি সংশ্লেষণাত্মক ভাষা নির্দেশ করে। কিন্তু অনেকগুলি লিপি উপসর্গ বা প্রত্যয়ের মত শব্দের শুরুতে বা মাঝে দেখতে পাওয়া যায়।
সিন্ধু লিপি থেকে ব্রাহ্মী লিপির উদ্ভব
কানিংহাম, এফ রেমন্ড এ্যালিসিন এবং অন্যান্য লিপি বিশারদদের মতে, এই লিপি থেকেই ব্রাহ্মীলিপির উদ্ভব হয়েছিল।
সিন্ধু লিপির প্রতীক আবিষ্কার
পরবর্তী সময়ে প্রায় ৪০০০ প্রতীক আবিষ্কার হয়েছে।
সিন্ধু লিপির প্রতীক শনাক্ত
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইতাভাথাম মহাদেবান ৩৭০০ সীল পরীক্ষা করে ৪১৭টি স্বতন্ত্র প্রতীক শনাক্ত করেছেন।
সিন্ধু লিপির স্বতন্ত্র চিহ্ন সংখ্যা
২০১৫ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক এবং এপিগ্রাফার ব্রায়ান ওয়েলস অনুমান করেছিলেন যে, প্রায় সিন্ধু লিপিতে ৬৯৪ টি স্বতন্ত্র চিহ্ন ছিল।
পরিণত হরপ্পা যুগে সিন্ধু লিপির ব্যবহার
- (১) আনুমানিক ২৬০০-১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিন্ধু লিপি সাধারণত সমতল, আয়তক্ষেত্রাকার স্ট্যাম্প সিলের পাশাপাশি মৃৎপাত্র, সরঞ্জামৎ এবং অলঙ্কার সহ অন্যান্য অনেক বস্তুর উপর লিখিত বা খোদাই করা পাওয়া যায়।
- (২) পোড়ামাটির, বেলেপাথর, সাবানপাথর, হাড়, খোল, তামা, রৌপ্য এবং সোনার মতো বিভিন্ন উপকরণে খোদাই, চিসেলিং, এমবসিং এবং পেইন্টিং সহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে চিহ্নগুলি লেখা হয়েছিল।
- (৩) ইরাভাথাম মহাদেবন উল্লেখ করেছেন যে, এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সিন্ধু লিপির সীলমোহর এবং খোদাইকৃত বস্তুর প্রায় ৯০ শতাংশ পাকিস্তানের সিন্ধু নদী এবং তার উপনদীর তীরে যেমন – মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা এবং অন্যান্য স্থানে পাওয়া গেছে।
শেষ হরপ্পান যুগে সিন্ধু লিপির ব্যবহার
- (১) শেষ হরপ্পান যুগের ঝুকর পর্বটি ছিল বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশকে কেন্দ্র করে। যদিও এই পর্বের সীলমোহরগুলিতে সিন্ধু লিপির অভাব রয়েছে।
- (২) সিন্ধু লিপির টেক্সট বহনকারী সিল এবং মৃৎপাত্র উভয়ই হরপ্পান যুগের শেষের দিকের দাইমাবাদ সংস্কৃতির সাথে যুক্ত স্থানে পাওয়া গেছে।
হরপ্পা পরবর্তী যুগে সিন্ধু লিপির ব্যবহার
- (১) মধ্য ভারত, দক্ষিণ ভারত এবং শ্রীলঙ্কায় হরপ্পান যুগের শেষের দিকের মেগালিথিক লৌহ যুগ -এর সাথে সম্পর্কিত অসংখ্য মৃৎপাত্র এবং হাতিয়ারে খোদাই করা চিহ্ন রয়েছে।
- (২) এই চিহ্নগুলির মধ্যে রয়েছে ব্রাহ্মী এবং তামিল-ব্রাহ্মী লিপির শিলালিপি। তবে অ-ব্রাহ্মী গ্রাফিতি চিহ্নগুলিও রয়েছে যা সমসাময়িকভাবে তামিল ব্রাহ্মী লিপির সাথে বিদ্যমান ছিল।
- (৩) সিন্ধু লিপির মতো এই অ-ব্রাহ্মী চিহ্নগুলির অর্থ সম্পর্কে কোনও পণ্ডিতদের ঐক্যমত নেই। নৃতত্ত্ববিদ গ্রেগরি পসেহল যুক্তি দিয়েছেন যে, নন-ব্রাহ্মী গ্রাফিতি প্রতীকগুলি হল সিন্ধু লিপির টিকে থাকা এবং বিকাশ প্রথম সহস্রাব্দ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।
- (৪) ১৯৬০ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক বি. বি. লাল দেখতে পান যে, মেগালিথিক চিহ্নগুলির একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সিন্ধু লিপির সাথে ভাগ করা হয়েছিল। কারণ, সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা এবং পরবর্তী প্রাচীন প্রস্তর যুগ -এর মধ্যে সংস্কৃতির একটি সাধারণতা ছিল।
- (৫) এপিগ্রাফিস্ট ইরাভাথাম মহাদেবন যুক্তি দিয়েছেন যে মেগালিথিক গ্রাফিতি প্রতীকগুলির ক্রমগুলি তুলনীয় হরপ্পান শিলালিপিগুলির মতো একই ক্রমে পাওয়া গেছে এবং এটি প্রমাণ করে যে দক্ষিণ ভারতের লৌহ যুগের লোকেরা যে ভাষা ব্যবহার করেছিল তা হরপ্পার শেষের যুগের সাথে সম্পর্কিত বা অভিন্ন ছিল।
সিন্ধু লিপির প্রকাশ
১৯৭০ -এর দশকে ভারতীয় শিলালিপিকার ইরাভাথাম মহাদেবন ৪১৯ টি তালিকাভুক্ত সিন্ধু শিলালিপির একটি করপাস এবং কনকর্ডেন্স প্রকাশ করেন।
উপসংহার :- পণ্ডিতরা সিন্ধু উপত্যকার লিপিকে ব্রাহ্মী এবং তামিল-ব্রাহ্মী লিপির সাথে তুলনা করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন যে তাদের মধ্যে মিল থাকতে পারে। প্রত্নতাত্ত্বিক জন মার্শাল এবং অ্যাসিরিওলজিস্ট স্টিফেন ল্যাংডন সিন্ধু লিপি থেকে উদ্ভূত ব্রাহ্মীর একটি আদিবাসী উৎসের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “সিন্ধু লিপি” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।
সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।
(FAQ) সিন্ধু লিপি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
সিন্ধু লিপি বা হরপ্পী লিপি।
চিত্রলিপি।
ডান দিক থেকে বাম দিকে।
সিন্ধু লিপি।
সিন্ধু লিপি