ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন বা নব্যবঙ্গ আন্দোলন প্রসঙ্গে নব্যবঙ্গ দল, দলের সদস্য, সদস্যদের যুক্তিবাদী মন, যুদ্ধ ঘোষণা, ছাত্রদের প্রেরণা, সংস্কার কর্মসূচি, অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা, প্রচার কর্মসূচি, উগ্ৰ কার্যকলাপ, ডিরোজিও পদচ্যুতি, ডিরোজিওর মৃত্যুর পর আন্দোলন, নব্যবঙ্গ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ, আন্দোলনের সামাজিক ভিত্তি ও মূল্যায়ন সম্পর্কে জানবো।

নব্যবঙ্গ আন্দোলন বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন

ঐতিহাসিক ঘটনানব্যবঙ্গ আন্দোলন বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন
প্রাণপুরুষডিরোজিও
সদস্যকৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, প্যারীচাঁদ মিত্র, রামতনু লাহিড়ী
পত্রিকাপার্থেনন, এথেনিয়াম
উদ্দেশ্যজাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, মূর্তিপূজা, সতীদাহ ও প্রচলিত হিন্দুধর্মের সংস্কার
নব্যবঙ্গ আন্দোলন বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন

ভূমিকা :- ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাসে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বাক্ষর রেখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও এবং তাঁর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল (Young Bengal) দল।

নব্যবঙ্গ

ঊনিশ শতকের বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষায় প্রভাবিত হয়ে হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও -র নেতৃত্বে একদল যুবক যুক্তিবাদ, মু্ক্তচিন্তা, মানসিক স্বাধীনতা, সাহস ও সততার মাধ্যমে হিন্দুসমাজ ও ধর্ম সংস্কারের কাজে বিশেষ খ্যাতিলাভ করে । ডিরোজিও ও তাঁর অনুগামী যুবকগোষ্ঠী ‘নব্য বঙ্গ’ বা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ নামে পরিচিত

নব্যবঙ্গ দলের সদস্য

ডিরোজিও-র অনুগামীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, প্যারীচাঁদ মিত্র, কিশোরী চাঁদ মিত্র, রামতনু লাহিড়ী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, তারাচাঁদ চক্রবর্তী, শিব চন্দ্রদেব প্রমুখ।

নব্যবঙ্গ দলের সদস্যদের যুক্তিবাদী মন

পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে এসে এবং মিল, বেন্থাম, টম পেইন, রুশো, ভলতেয়ার প্রমুখ দার্শনিকের রচনা পাঠের ফলে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর তরুণ সদস্যদের মনে যুক্তিবাদ ও সামাজিক চেতনা জেগে ওঠে।

নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর বিদ্রোহ ঘোষণা

ডিরোজিওর নেতৃত্বে এই তরুণরা সমাজের পুরোনো সব কিছুরই সমালোচনা করেন এবং প্রচলিত হিন্দুধর্ম ও সামাজিক কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।

নব্যবঙ্গ আন্দোলন

নব্যবঙ্গ দলের আন্দোলন ‘নব্যবঙ্গ আন্দোলন’ (Young Bengal Movement) নামে পরিচিত। নব্যবঙ্গ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন ডিরোজিও।

ছাত্রদের প্রেরণা ডিরোজিও

ডিরোজিও ছাত্রদের অন্ধবিশ্বাস ত্যাগ করে যুক্তিবাদী ও সত্যসন্ধানী হওয়ার পরামর্শ দিতেন। তিনি ছিলেন ছাত্রদের বন্ধু ও পথপ্রদর্শক। শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ গ্রন্থে শিক্ষক ডিরোজিও সম্পর্কে লিখেছেন যে, “চুম্বক যেমন লৌহকে আকর্ষণ করে, তেমনি তিনিও বালকদিগকে আকর্ষণ করিতেন।”

ডিরোজিওর সংস্কার কর্মসূচি

ডিরোজিও ভারতীয় সমাজের ত্রুটিবিচ্যুতি দূর করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন এবং তাঁর ছাত্রদের মধ্যে দেশপ্রেম ও যুক্তিবাদ স্যারিত করেন। তিনি ছাত্রদের স্বাধীন চিন্তার অধিকারী হতে বলেন এবং কোনো কিছুই বিনা বিচারে গ্রহণ না করার পরামর্শ দেন।

ডিরোজিও প্রতিষ্ঠিত অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন

  • (১) তিনি ছাত্রদের মনে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার মানিকতলায় ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি বিতর্ক সভা প্রতিষ্ঠা করেন।
  • (২) এখানে ডিরোজিও-র ছাত্ররা প্রচলিত সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করত। জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা, মূর্তিপূজা, সতীদাহ ও প্রচলিত হিন্দুধর্ম তাঁদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল।

ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর প্রচার কর্মসূচি

  • (১) ডিরোজিও-র অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনের মুখপত্র ছিল ‘এথেনিয়াম’। ডিরোজিও ও তাঁর ছাত্ররা মিলে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ‘পার্থেনন’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। এতে স্ত্রীশিক্ষা, নারীস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্বন্ধে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
  • (২) ডিরোজিও-র উদ্যোগে প্রকাশিত ‘ক্যালাইডোস্কোপ’ পত্রিকা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। এ ছাড়া তিনি ‘হেসপেরাস’ ও ‘ক্যালকাটা লিটারারি গেজেট’ নামে দুটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।

ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর উগ্র কার্যকলাপ

  • (১) ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর সদস্যরা হিন্দুধর্মের রক্ষণশীলতাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। তাঁরা ব্রাহ্মণদের উপবীত ছিঁড়ে ফেলতে বলতেন এবং নিষিদ্ধ মাংস ভক্ষণ করতেন।
  • (২) ব্রাক্ষ্মণ পুরোহিতদের লক্ষ্য করে তাঁরা চেঁচিয়ে বলতেন— “আমরা গোমাংস খাই গো”। কালীঘাটের মন্দিরে মা কালীর উদ্দেশ্যে বলতেন ‘গুড মর্নিং, ম্যাডাম”। তাঁরা গঙ্গাজলের পবিত্রতা মানতেন না।

ডিরোজিওর পদচ্যুতি

ডিরোজিও-র অনুগামীদের হিন্দুধর্ম-বিরোধী বিভিন্ন মতামত ও কার্যকলাপ হিন্দুসমাজে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিক্রিয়াশীল ও রক্ষণশীল হিন্দুদের চাপে হিন্দু কলেজের কর্তৃপক্ষ ডিরোজিও-কে চাকরি থেকে পদচ্যুত করেন।

ডিরোজিওর মৃত্যু

এর কিছুদিন পর কলেরায় আক্রান্ত হয়ে এই মহামানব ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

ডিরোজিওর মৃত্যুর পর ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন

ডিরোজিও-র মৃত্যুর পরও এই আন্দোলন অব্যাহত থাকে।তাঁর ছাত্ররা আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যায়।

(১) ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনে ছাত্রদের উদ্যোগ

ডিরোজিও-র মৃত্যুতে তাঁর আদর্শের মৃত্যু হয়নি। তিনি স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ইয়ং বেঙ্গল নামে যে ছাত্রদল রেখে যান তাঁরাই পরবর্তীকালে ডিরোজিওর আন্দোলনকে সচল রাখেন। ভারতীয় নবজাগরণ-এ তাঁরা সকলে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেন। 

(২) ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনকারীদের পত্রিকা প্রকাশ

ডিরোজিও র অনুগামী ছাত্ররা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রকাশ করে তাঁদের মতাদর্শ প্রচার করেন। তাঁদের প্রকাশিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা হল ‘জ্ঞানান্বেষণ’, ‘এনকোয়ারার’, ‘বেঙ্গল স্পেকটেটর’, ‘হিন্দু পাইওনিয়ার’ প্রভৃতি।

(৩) ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনকারীদের সংগঠন প্রতিষ্ঠা

ডিরোজিও-র অনুগামী যুবকগণ কয়েকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘সাধারণ জ্ঞানোপার্জনী সভা’ (১৮৩৬ খ্রি.)। রাজনৈতিক কার্য পরিচালনা করার জন্য তারা ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি‘ প্রতিষ্ঠা করেন।

(৪) ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ

তাঁরা বিভিন্ন কুপ্রথা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। খ্রিস্টান পাদরিদের গোঁড়ামি, স্ত্রীপুরুষের মধ্যে সমতাহীনতা, দাসপ্রথা, নারী নির্যাতন, সংবাদপত্রের নিয়ন্ত্রণবিধি, মরিশাসে ভারতীয় কুলি প্রেরণ, ভারতীয় বিচার ও পুলিশ ব্যবস্থা, বেগার খাটানো, কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যাধিকার, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও অন্যান্য বিষয়ের অন্যায় ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁরা সোচ্চার ছিলেন।

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ

পাশ্চাত্য শিক্ষা, স্বদেশপ্রেম, যুক্তিবাদ প্রভৃতি থাকা সত্ত্বেও ডিরোজিও-র অনুগামী ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যরা ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। আবার তাঁদের উগ্র আধুনিকতার জন্য দেশবাসীও তাঁদের গ্রহণ করেননি। তাই ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার নানা কারণ ছিল। যেমন –

(১) ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের নেতিবাচক কর্মসূচি

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের কোনো গঠনমূলক কর্মসূচি ছিল না। তাদের কিছু চিন্তাধারা এবং কর্মসূচি ছিল নেতিবাচক। হিন্দুধর্ম বা পাশ্চাত্য সভ্যতা কোনোটি সম্পর্কেই তাদের কোনো স্বচ্ছ ধারণা ছিল না। হিন্দুধর্ম সম্পর্কে সবকিছু না জেনেই তাঁরা এই ধর্মের নিন্দায় সোচ্চার হয়েছিলেন। ফলে এই আন্দোলনের পেছনে কোনো জনসমর্থন ছিল না।

(২) ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের শহরকেন্দ্রিকতা

দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক বা যোগসূত্র ছিল না। অভিজাত পরিবারের কিছু শহুরে তরুণ বুদ্ধিজীবীর মধ্যেই এই আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিল। তাঁরা বক্তৃতা ও পুস্তিকার মাধ্যমে তাঁদের আন্দোলনকে সচল রাখতেন। ড. অনিল শীল-এর মতে, “তাঁরা গজদন্ত মিনারে বাস করতেন।”

(৩) ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন দরিদ্রদের প্রতি উদাসীনতা

দেশের দুর্দশাগ্রস্ত কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য তাঁরা কোনো আর্থিক নীতির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেননি। কৃষক ও শ্রমজীবীদের সমস্যাবলি সম্পর্কেও তাঁরা ছিলেন সম্পূর্ণ অজ্ঞ। 

(৪) ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনে সীমাহীন প্রগতিশীলতা

ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যরা সমাজের সীমাহীন প্রগতিশীলতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু এতটা প্রগতি সাদরে গ্রহণ করার মতো পরিবেশ তখনও সমাজে তৈরি হয়নি। তাই তাদের বক্তব্য জনসমর্থন লাভ করেনি।

(৫) ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনে মুসলিম সমাজের বিচ্ছিন্নতা

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের যাবতীয় কর্মপ্রয়াস পরিচালিত হয়েছিল হিন্দুধর্মকে কেন্দ্র করে। মুসলিম সমাজের সঙ্গে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের কোনো যোগ ছিল না।

(৬) ঐতিহ্যে প্রত্যাবর্তন

ডিরোজিও-র মৃত্যুর পর এই আন্দোলনের প্রাথমিক উচ্ছ্বাস স্তিমিত হয়ে পড়লে তাঁর অনুগামী বেশ কিছু যুবক আবার চিরাচরিত ঐতিহ্যে ফিরে যান। অনেকেই সরকারি চাকরি বা ব্যবসায় মন দেন।

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের সামাজিক ভিত্তি

  • (১) এই আন্দোলনের সামাজিক ভিত্তি ছিল খুবই সংকীর্ণ। এই গোষ্ঠীর সদস্যদের অধিকাংশ ছিলেন কোম্পানির সহযোগী গোমস্তা, বেনিয়ান বা দালাল হিসেবে বিত্তশালী হয়ে ওঠা বা ধনী ব্যবসায়ী বা জমিদার পরিবারের সন্তান।
  • (২) সদস্যদের সঙ্গে সমাজের খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, কৃষক বা গ্রামীণ জনসাধারণের কোনও সম্পর্ক ছিল না। এঁরা কলকাতায় বসে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা বা নিজেদের ব্যক্তিগত আচরণের দ্বারা সমাজে ঝড় তুলতে চেয়েছিলেন।
  • (৩) মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্ত শহুরে বুদ্ধিজীবী ছাড়া এঁদের আন্দোলন দ্বারা কেউই প্রভাবিত হয় নি—বরং তাঁদের অতি বিপ্লবী চরিত্রের জন্য তাঁরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তাঁদের আন্দোলন মূলত ‘এলিটিস্ট’ সমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের মূল্যায়ণ

ডিরোজিও ও তাঁর অনুগামীদের কাজকর্মের মূল্যায়ন সম্পর্কে সমকাল ও পরবর্তীকালে নানা মতপার্থক্য দেখা গেছে।যেমন –

  • (১) অনেকে তাঁদের সম্পর্কে ‘উচ্ছৃঙ্খল’, ‘কালাপাহাড়’, ‘সমাজবিচ্ছিন্ন উগ্র গোষ্ঠী’ প্রভৃতি মন্তব্য করেছেন। আবার অনেকে তাঁদের মধ্যে দেখেছেন ‘নবজাগরণের ঊষালগ্ন।
  • (২) কিশোরীচাঁদ মিত্র তাঁদের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া’-র সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর মতে এঁদের মধ্যেই ‘প্রথম পাশ্চাত্য সভ্যতা ও আদর্শের সূর্যালোক প্রতিফলিত হয়েছিল।
  • (৩) কৃষ্ণদাস পাল তাঁদের ‘দেশের ভবিষ্যৎ’ বলে অভিহিত করেন। অনেকে বলেন যে, তাঁরা হলেন হঠাৎ আলোর ঝলক—“এক প্রজন্মেই তাঁদের সব শেষ, তাঁদের কোনও পিতা এবং সন্তান-সন্ততি নেই”।
  • (৪) বিনয় ঘোষ তাঁদের কখনোই প্রগতিশীল বলতে রাজি নন। ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠী তাঁদের আন্দোলনের কোনও অর্থ খুঁজে পান নি। তাঁর মতে, ইয়ং বেঙ্গলরা হলেন ‘নকল নবিশের দল’—তাঁরা পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণ করেছিলেন মাত্র।
  • (৫) ডঃ সুমিত সরকার বলেন যে, সামান্য বুদ্ধিজীবী অংশ ছাড়া বাঙালি সমাজের বৃহত্তর অংশের ওপর এঁদের প্রভাব শূন্যের কোঠায়।

উপসংহার :- নানা ত্রুটি সত্ত্বেও জাতীয় জীবনে তাঁদের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তাঁরা যে একটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন, সে সম্পর্কে কোনও সন্দেহ নেই। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘A Nation in Making‘ গ্রন্থে বলেছেন যে, তাঁরা ছিলেন “বাংলার আধুনিক সভ্যতার প্রবর্তক—তাঁরা আমাদের জাতির পিতা, তাঁদের গুণাবলী চিরস্মরণীয়।”

(FAQ) ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. নব্যবঙ্গ দলের প্রাণপুরুষ কে ছিলেন?

হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও।

২. নব্যবঙ্গ দলের দুজন সদস্যের নাম লেখ।

রামতনু লাহিড়ী, রামগোপাল ঘোষ।

৩. ডিরোজিও কোন কলেজের শিক্ষক ছিলেন?

হিন্দু কলেজ।

৪. কে কখন অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন?

১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ডিরোজিও।

Leave a Comment