ভারতের অন্যতম মনীষী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাণী ও উক্তি প্রসঙ্গে উপদেশমূলক বাণী, শিক্ষা সংক্রান্ত বাণী, অনুপ্রেরণামূলক বাণী, ধর্ম সংক্রান্ত বাণী, দেশ ভক্তি সংক্রান্ত বাণী এবং উক্তি ও বাণী হিসেবে তাঁর উপদেশ সম্পর্কে জানবো।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষামূলক বাণী, কর্মমূলক বাণী, অনুপ্রেরণামূলক বাণী, দেশভক্তি মূলক বাণী, সমাজকল্যাণমূলক বাণী, পারিবারিক জীবনের প্রতি বাণী, ধর্ম বিষয়ে বাণী।
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাণী
বিষয় | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাণী |
মনীষী | ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় |
উপাধি | বিদ্যাসাগর |
বিখ্যাত উক্তি | আমার মা আর বাবা-ই কাশীর বিশ্বেশ্বর ও অন্নপূর্ণা। |
ভূমিকা :- বিধবা বিবাহের সমর্থক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর ভারত -এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি “বিদ্যাসাগর” উপাধি লাভ করেন।
শিক্ষা, কর্ম , সমাজ, দেশভক্তি , ইত্যদি সম্পর্কে বিদ্যাসাগরের বাণী
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষামূলক বাণী ও উক্তি
- (১) বিদ্যা হলো সব থেকে বড় সম্পদ, বিদ্যা শুধু আমাদের নিজেদের উপকার করে না বরং প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে গোটা সমাজের কল্যাণ সাধন করে।
- (২) সদা সত্য কথা কহিবে। যে সত্য কথা কহে সকলে তাহাকে ভালোবাসে।
- (৩) দুঃখ ছাড়া জীবন নাবিক ছাড়া নৌকার মতো।
- (৪) যাহার যে অবস্থা, সে যদি তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহা হইলে তাহাকে কাহারও নিকট অপদস্থ ও অপমানিত হইতে হয় না।
- (৫) তোমার অবস্থা যত মন্দ হউক না কেন অন্যের অবস্থা এত মন্দ আছে যে তাহার সহিত তুলনা করিলে, তোমার অবস্থা অনেক ভাল বোধ হইবেক।
- (৬) অন্যে যখন আমাদের প্রশংসা করে, তৎকালে বিনীত হওয়া কর্তব্য।
- (৭) যদি কেহ আপনি আপনার প্রশংসা করে, কিংবা আপনার কথা অধিক করিয়া বলে, অথবা কোন রূপে ইহা ব্যক্ত করে যে, সে আপনি আপনাকে বড় জ্ঞান করে, তাহা হইলে, সে নিঃসন্দেহে উপহাস্যাস্পদ হয়।
- (৮) পরের মন্দচেষ্টায় ফাঁদ পাতিলে, আপনাকেই সেই ফাঁদে পড়িতে হয়।
- (৯) যাহাদের অভিপ্রায় সৎ ও প্রশংসনীয় এরূপ লোক অতি বিরল এবং শুভ ও শ্রেয়স্কর বিষয়ে বাধা ও ব্যাঘাত জন্মাইবার লোক সহস্র সহস্ৰ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কর্মমূলক বাণী ও উক্তি
- (১) মানুষ যতই বড় হয়ে যাক না কেন তাকে সর্বদা তার অতীত কে মনে রাখা দরকার, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার।
- (২) যে ব্যক্তি শ্রমবিমুখ হইয়া আলস্যে কালক্ষেপ করে তাহার চিরকাল দুঃখ ও চিরকাল অভাব থাকে।
- (৩) নিকৃষ্টের কর্তব্য আপন অপেক্ষা প্রধান ব্যক্তিদের সমাদর মর্যাদা করা। কিন্তু কাহারও নিকট নিতান্ত নম্র অথবা চাটুকার হওয়া অনুচিত।
- (৪) নিকৃষ্টকে যেমন প্রধানের সমাদর ও মর্যাদা করিতে হয়, নিকৃষ্টের প্রতি সেইরূপ করা প্রধানেরও অবশ্য কর্তব্য।
- (৫) আমরা স্বয়ং যে কর্ম নিষ্পন্ন করিতে পারি, অন্যের উপর সে বিষয়ে ভার সমর্পণ করা কদাচ উচিত নহে।
- (৬) কর্তব্য সাধিতে খল তোষামোদ করে।
বিদ্যাসাগরের অনুপ্রেরণামূলক বাণী ও উপদেশ
- (১) মাতা পিতার সেবাই শ্রেষ্ঠ পূজা এবং সন্তানের সর্ব প্রধান ও পবিত্রতম কর্তব্য।
- (২) আমাদের নিজেদের স্বার্থ দেখার আগে, সমাজ এবং দেশের স্বার্থ দেখা উচিত সেটাই হলো প্রকৃত বিবেক ধর্ম।
- (৩) বিপদকালে কাতর না হওয়া অত্যন্ত আবশ্যক। সেই সময়ে স্থির ও সতর্ক থাকা উচিত।
- (৪) কাহারও উপর দয়াপ্রকাশ করিলে, তাহা প্রায় নিস্ফল হয় না।
- (৫) সেই সাহিত্যকে আমরা সঠিক সাহিত্য বলবো যা মানুষের মধ্যে শুভবোধ জাগ্রত করবে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দেশভক্তি মূলক বাণী
- (১) আমাদের নিজেদের স্বার্থ দেখার আগে, সমাজ এবং দেশের স্বার্থ দেখা উচিত সেটাই হলো প্রকৃত বিবেক ধর্ম।
- (২) যে ব্যাক্তি যে দেশে জন্ম গ্রহণ করে সেই দেশের কল্যাণ সাধনের জন্য সর্বদা যত্নবান হওয়া তার প্রধান ধর্ম এবং তার জীবনের সর্ব প্রধান কর্ম।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সমাজকল্যাণমূলক বাণী ও উক্তি
- (১) সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক বােধ হইবে, তাহা করিব, লােকের বা কুটুম্বের ভয়ে কদাচ সংকুচিত হইব না।
- (২) অলৌকিক কোন শক্তির দ্বারা বা অদৃষ্টের দ্বারা মানুষের ভবিষ্যত নির্ধারিত হয় না। আর্থিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়লেও সংগ্রাম, প্রয়াস ও শিক্ষার মধ্য দিয়ে মানুষ বড় হতে পারে। বড় চরিত্র কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে।
- (৩) একজন মানুষকে তখনই সর্ব শ্রেষ্ঠ কৃতিত্বের অধিকারী বলা যায় যখন সে অন্যের কল্যাণ কর্মের জন্য কিছুটা সময় অতিবাহিত করতে পারে।
- (৪) আমি দেশাচারের দাস নহি। নিজের বা সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক বােধ হইবে, তাহা করিব লােকের বা কুটুম্বের ভয়ে কদাচ সঙ্কুচিত হইব না।”
- (৫) পরিশ্রম না করিলে স্বাস্থ্যরক্ষা ও সুখলাভ হয় না। যে ব্যক্তি শ্ৰম করে সে কখনও কষ্ট পায় না।
- (৬) বাল্যবিবাহের দোষ ও বিধবা-বিবাহের প্রথা প্রচলিত হইলে অসহ্য বৈধব্য যন্ত্রণা, ব্যভিচার দোষ ও ভ্রূণহত্যা পাপের নিবারণ ও তিন কুলের কলঙ্ক নিরাকরণ হইতে পারে।
- (৭) নারী জাতি এখনও দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হিসাবে বিবেচিত, এমন হলে সমাজের সার্বিক উন্নতি কখনও সম্ভব নয়।
- (৮) আমাদের সমাজ নানা ধরনের কু সংস্কারে পরিপূর্ণ । কু-সংস্কার মুক্ত সমাজ গঠনের জন সকল বুদ্ধিজীবীর কায়িক এবং মানসিক পরিশ্রম করা উচিৎ ।
পারিবারিক জীবনের প্রতি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাণী
- (১) এই সংসারে দাম্পত্য নিবন্ধন সুখই সর্বাপেক্ষা প্রধান সুখ।
- (২) মনের ঐক্যই প্রণয়ের মূল।
- (৩) যে পতির প্রণয়ের উপর প্রণয়িনীর সমুদায় সুখ নির্ভর করে, এবং যাহার সচ্চরিত্রে যাবজ্জীবন সুখীও অসচ্চরিত্রে যাবজ্জীবন দুঃখী হইতে হইবেক, পরিণয় কালে তাদৃশ্য পরিণেতার আচার ব্যবহার ও চরিত্র বিষয়ে যদ্যপি কন্যার কোন সম্মতি প্রয়োজন না হইল, তবে সেই দম্পতির সুখের আর কি সম্ভাবনা রইল।
- (৪) সংসারের যাবতীয় উত্তম বস্তু শ্রমলভ্য; সুতরাং শ্রম ব্যাতিরেক সে সকল বস্তু লাভ করিবার উপায়ন্তর নাই।
- (৫) স্নেহ অতি বিষম বস্তু।
- (৬) গৃহস্থাশ্রম সকল আশ্রমের মূল এবং সকল আশ্রম অপেক্ষা উৎকৃষ্ট । বিশেষতঃ পরমগুরু পিতা মাতার শুশ্রুষা করাই পুত্রের প্রধান ধর্ম ।
ধর্ম বিষয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাণী
- (১) শাস্ত্রের অর্থ না বুঝিয়া অথবা ভুল অর্থ বুঝিয়া কিংবা অভিপ্রেত সিদ্ধির নিমিত্ত স্বেচ্ছানুরূপ অর্থান্তর কল্পনা করিয়া, শাস্ত্রের দোহাই দিয়া যথেচ্ছাপ্রবৃত্ত বহুবিধবাকাণ্ড বৈধ বলিয়া প্রচার করিলে নিরপরাধ শাস্ত্রকারদিগকে নরকে নিক্ষিপ্ত করা হয়।
- (২) দরিদ্র ব্যক্তিদের অভুক্ত রেখে মাটির প্রতিমাকে ষোড়শোপচারে পূজা করাকে আমি যথার্থ মনে করি না।
- (৩) যথার্থ সাধুদিগকেও সঙ্গদোষে, বিপদে পড়িতে হয়।
- (৪) আমার মা আর বাবাই কাশীর বিশ্বেশ্বর ও অন্নপূর্ণা।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উপদেশ :- শিক্ষকের দায়িত্বপূর্ণ কর্তব্যভার গ্রহণ করিতে পারে এমন একদল লােক সৃষ্টি করিতে হইবে। তাহা হইলেই আমাদের উদ্দেশ্য সফল হইবে। মাতৃভাষায় সম্পূর্ণ দখল, প্রয়ােজনীয় বহুবিধ তত্ত্বে যথেষ্ট জ্ঞান, দেশের কুসংস্কারের কবল হইতে মুক্তি – শিক্ষকদের এই গুণগুলি থাকা চাই। এই ধরনের দরকারি লােক গড়িয়া তােলাই আমার সংকল্প।
(FAQ) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
পরমগুরু পিতা মাতার শুশ্রুষা করাই পুত্রের প্রধান ধর্ম।
মনের ঐক্যই প্রণয়ের মূল।
কর্তব্য সাধিতে খল তোষামোদ করে।
(ক) মাতৃভাষায় সম্পূর্ণ দখল।
(খ) প্রয়ােজনীয় বহুবিধ তত্ত্বে যথেষ্ট জ্ঞান, দেশের কুসংস্কারের কবল হইতে মুক্তি।
(ক) বিদ্যা হলো সব থেকে বড় সম্পদ, বিদ্যা শুধু আমাদের নিজেদের উপকার করে না বরং প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে গোটা সমাজের কল্যাণ সাধন করে।
(খ) সদা সত্য কথা কহিবে। যে সত্য কথা কহে সকলে তাহাকে ভালোবাসে।
(ক) মানুষ যতই বড় হয়ে যাক না কেন তাকে সর্বদা তার অতীত কে মনে রাখা দরকার, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার।
(খ) যে ব্যক্তি শ্রমবিমুখ হইয়া আলস্যে কালক্ষেপ করে তাহার চিরকাল দুঃখ ও চিরকাল অভাব থাকে।