ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ফলাফল হিসেবে সামুদ্রিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, শোষণ, মূল্যবান ধাতু আমদানি, দারিদ্র্য বৃদ্ধি, পুঁজিপতি শ্রেণীর উত্থান, শিল্পে অগ্রগতি ও বিশ্ব অর্থনীতির উদ্ভব সম্পর্কে জানবো।
ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ফলাফল
ঐতিহাসিক ঘটনা | ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ফলাফল |
ফরাসি বিপ্লব | ১৭৮৯ খ্রি |
উত্থান | পুঁজিপতি শ্রেণি |
শিল্প বিপ্লব | ইংল্যান্ড |
বিশেষ অগ্ৰগতি | বস্ত্রশিল্প |
ভূমিকা :- এশিয়া মহাদেশ, নতুন বিশ্ব ও পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে ইউরোপীয়দের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ফলাফল ও তাৎপর্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেমন –
(ক) সামুদ্রিক বাণিজ্য বৃদ্ধি
- (১) পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ইউরোপীয়দের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে ইউরোপ-এর সঙ্গে আমেরিকার সামুদ্রিক বাণিজ্যের সূত্রপাত ঘটে। ফলে ইউরোপের বাণিজ্য আরও সমৃদ্ধ হয়।
- (২) ঐতিহাসিক জর্জ রুদের মতে, এই সময় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ডের সামুদ্রিক বাণিজ্য যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের অন্তত ৪০ শতাংশ বাণিজ্যই উপনিবেশগুলির সঙ্গে চলত।
(খ) শোষণ
বিভিন্ন প্রান্তে ইউরোপীয় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে উপনিবেশগুলিতে সীমাহীন শোষণ শুরু হয়। উপনিবেশগুলিকে ইউরোপের কাঁচামাল রপ্তানিকারক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলে সেখানে তীব্র অর্থনৈতিক শোষণ চালানো হয়। উপনিবেশের বাসিন্দাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের শোষণমূলক কর চাপানো হয়। এই শোষণের মাধ্যমে ইউরোপ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
(গ) মূল্যবান ধাতু আমদানি
- (১) অষ্টাদশ শতকে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ১১০০ মেট্রিক টন সোনা এবং ৫৭,০০০ মেট্রিক টন রুপা ইউরোপে আমদানি হয়। এই সোনা ও রুপার ৯/১০ অংশই বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতবদল হয়ে স্পেন ও পোর্তুগালের কাছ থেকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও হল্যান্ডের হাতে আসে।
- (২) এই বিপুল পরিমাণ সোনা ও রুপা আমদানির ফলে ইউরোপে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। মুদ্রাস্ফীতির ফলে সেখানে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে যা মূল্যবিপ্লব নামে পরিচিত।
(ঘ) দারিদ্র্য বৃদ্ধি
মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির ফলে ইউরোপের দরিদ্র মানুষের অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। খাদ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। খাদ্যদ্রব্যের মূল্য যথেষ্ট বাড়লেও সেই তুলনায় মজুর ও শ্রমিকদের মজুরি বাড়ে নি। ফলে ইউরোপের একশ্রেণির মানুষের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ সজ্জিত হলেও দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হয়।
(ঙ) পুঁজিপতি শ্রেণির উত্থান
দক্ষিণ আমেরিকার সোনা ও রুপা-সহ বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে সম্পদ আমদানির ফলে ইউরোপের একশ্রেণির বণিকদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ জমা হয়। তারা তাদের উদবৃত্ত অর্থ সরকারকে ধার দিত এবং শিল্পে বিনিয়োগ করত। এভাবে পুঁজিপতি বা ক্যাপিটালিস্ট শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।
(চ) শিল্পে অগ্রগতি
মূলধনের জোগান, নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিস্কার উপনিবেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি, উপনিবেশে পণ্য বিক্রির বাজারের প্রসার প্রভৃতির ফলে ইউরোপে শিল্পোৎপাদন ক্রমে বাড়তে থাকে। ইংল্যান্ডে শিল্পোৎপাদনের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যায়। এই বিপ্লব ক্রমে ফ্রান্স, জার্মানি, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশেও প্রসারিত হয়। সর্বাধিক অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় বস্ত্রশিল্পে।
(ছ) বিশ্ব অর্থনীতির উদ্ভব
এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় ইউরোপীয়দের বিভিন্ন উপনিবেশ গড়ে উঠলে এইসব অঞ্চলে তাদের অর্থনীতির প্রসার ঘটে। এভাবে সপ্তদশ শতকে ইউরোপে বিশ্ব অর্থনীতির উদ্ভব ঘটে।
উপসংহার:- ইউরোপীয় শক্তিগুলি উপনিবেশ দেশ গুলির উপর শোষণ ও নির্যাতন চালিয়ে সম্পদ আহরিত করে। শোষিত ও বঞ্চিত এই সব দেশের সম্পদের উপর নির্ভর করেই আধুনিক ইউরোপের উন্নত দেশগুলির সভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
(FAQ) ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার ফলাফল সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
পুঁজিপতি শ্রেণি।
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে।
বিপুল পরিমাণ সোনা ও রুপা আমদানির ফলে ইউরোপে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। মুদ্রাস্ফীতির ফলে সেখানে মূল্য বৃদ্ধি ঘটে, যা মূল্য বিপ্লব নামে পরিচিত।
বস্ত্রশিল্পে।