বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের বিস্তার সম্পর্কে গান্ধীজীর অভিমত, গোপন রিপোর্ট, বিস্তৃতি, নেতৃত্ব, ধর্মের ব্যবহার, মহারাষ্ট্রে আন্দোলনের বিস্তার, যুক্ত প্রদেশে আন্দোলনের বিস্তার, পাঞ্জাবে আন্দোলনের বিস্তার, দক্ষিণ ভারতে আন্দোলনের বিস্তার সম্পর্কে জানবো।
স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের বিস্তার প্রসঙ্গে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের প্রধান অস্ত্র বয়কট, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, মধ্যবিত্তদের অংশগ্রহণ, স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের বিস্তৃতি, মহারাষ্ট্রে স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের বিস্তার, যুক্তপ্রদেশে স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের বিস্তার, পাঞ্জাবে স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের বিস্তার ও দক্ষিণ ভারতে স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের বিস্তার সম্পর্কে জানব।
স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের বিস্তার
ঐতিহাসিক ঘটনা | স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের বিস্তার |
সূচনা | ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ |
কারণ | ব্রিটিশ সরকারের বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা |
নেতৃবৃন্দ | বাল গঙ্গাধর তিলক লালা লাজপৎ রায় লালা হংসরাজ সুব্রহ্মণ্যম আয়ার |
ফলাফল | বঙ্গভঙ্গ রদ |
ভূমিকা :- বয়কট ও স্বদেশী আন্দোলন অচিরেই সারা ভারত-এ পরিব্যাপ্ত হয় এবং তা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। লালা লাজপৎ রায় ইয়ং ইণ্ডিয়া’ (‘Young India’) গ্রন্থে লিখছেন যে, বাংলায় যা ঘটেছে, সারা ভারতে তার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
স্বদেশী আন্দোলন সম্পর্কে গান্ধীজীর অভিমত
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রত্যাগত মহাত্মা গান্ধী তাঁর ‘হিন্দ স্বরাজ’ পত্রিকায় লেখেন যে, স্বদেশীর আদর্শ বাংলা থেকে ভারতের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
স্বদেশী আন্দোলন সম্পর্কে গোপন রিপোর্ট
সরকারের এক গোপন রিপোর্টেও স্বীকার করা হয়যে, ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের শেষ ভাগে বয়কট ও স্বদেশীর আদর্শ এক সর্বভারতীয় রূপ লাভ করে।
স্বদেশী আন্দোলনের বিস্তৃতি
সরকারের রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে, যুক্তপ্রদেশের ২৩টি জেলা, মধ্যপ্রদেশের ১৫টি শহর, বোম্বাই প্রেসিডেন্সির ২৪টি শহর, পাঞ্জাবের ২০টি জেলা এবং মাদ্রাজের ১৩টি জেলায় এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
স্বদেশী আন্দোলনের নেতৃত্ব
- (১) বোম্বাই প্রদেশে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন বাল গঙ্গাধর তিলক, তাঁর কন্যা শ্রীমতী কেলকার, শ্রীমতী এ. ভি. যোশী, এস. এম. পরাঞ্জপে, বিষ্ণুগোবিন্দ বিজাপুরকর এবং মহাদেব রাজারাম বোদাস।
- (২) পাঞ্জাবে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন লালা লাজপৎ রায়, অজিত সিং, লালা হংসরাজ, জয়পাল, রাম গঙ্গরাম, চন্দ্রিকা দত্ত এবং মুন্সীরাম (স্বামী শ্রদ্ধানন্দ)।
- (৩) মাদ্রাজে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন সুব্রহ্মণ্য আয়ার, চিদাম্বরম পিল্লাই, আনন্দ চারলু ও টি. এম. নায়ার এবং দিল্লিতে সৈয়দ হায়দার রেজা।
স্বদেশী আন্দোলনে ধর্মের ব্যবহার
- (১) ১৯০৫ সালের আগস্ট – সেপ্টেম্বর মাসে বোম্বাই ও আমেদাবাদের মিল মালিকরা এক লক্ষ বেল কাপড় বিক্রি করেছিল, পূর্বে যা ছিল ছয়মাসের বিক্রির পরিমাণ।
- (২) লাহোর ও হরিদ্বারের পাণ্ডারা বিলিতি চিনিতে তৈরি মিষ্টিতে পূজো দিতে অস্বীকার করেন। পুণাতে ধর্মের দোহাই দিয়ে বিদেশি বর্জনের নোটিশ প্রকাশ্য স্থানে টাঙ্গানো হয়।
- (৩) পুরীতে একশ’ সাধু এক সভায় মিলিত হয়ে শপথ নেন যে তাঁরা সারা ভারতময় স্বদেশীর আদর্শ প্রচার করবেন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পাণ্ডারা মন্দির প্রাঙ্গণে এক সভায় বিলিতি দ্রব্য বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
- (৪) মুলতানে মন্দিরের পূজারিরা সংকল্প করেন যে, বিদেশি চিনিতে দেবতার নৈবেদ্য সাজানো হবে না। রাওয়ালপিণ্ডির ব্যবসায়ীরা প্রতিজ্ঞা করেন যে, তাঁরা আর বিদেশি চিনির ব্যবসা করবেন না।
মহারাষ্ট্রে স্বদেশী আন্দোলনের বিস্তার
স্বদেশী আন্দোলন মহারাষ্ট্রে ব্যাপক আকার ধারণ করে। যেমন –
(১) পিকেটিং
মহারাষ্ট্রে স্বদেশীর আদর্শ প্রচারে তিলক ও তাঁর দুই সহকর্মী খাপার্দে ও মুঞ্জে-র ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের উদ্যোগে বিলিতি বস্ত্রে আগুন লাগানো এবং বিলিতি পণ্যাগারের সামনে পিকেটিং চলতে থাকে।
(২) জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
বোম্বাই শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘স্বদেশী বস্ত্র প্রচারিণী সভা’। তাঁরা বোম্বাইয়ের শ্রমিক শ্রেণীকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। তাঁদের উদ্যোগে পুণায় কয়েকটি জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
(৩) অর্থ সংগ্রহ
‘মহারাষ্ট্র নাটক মণ্ডলী ও ‘পতঙ্কর সংগীত মণ্ডলী’ কলকাতার র সাহায্যার্থে একটি বিশেষ অভিনয়ের ব্যবস্থা করে এবং অর্জিত অর্থ অরবিন্দ ঘোষ -এর কাছে পাঠায়।
যুক্তপ্রদেশে স্বদেশী আন্দোলনের বিস্তার
যুক্তপ্রদেশের এলাহাবাদে প্রতিষ্ঠিত ‘অযোধ্যানাথ ন্যাশনাল হাইস্কুল’ কলকাতার জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
পাঞ্জাবে স্বদেশী আন্দোলনের বিস্তার
পাঞ্জাবে এই আন্দোলন যথেষ্ট প্রসারিত হয় এবং সেখানে স্বদেশী উদ্যোগে ব্যাঙ্ক ও বিমা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়।
দক্ষিণ ভারতে স্বদেশী আন্দোলনের বিস্তার
- (১) দক্ষিণ ভারতে অন্ধ্রের রাজমুন্দ্রি, কাঁকিনাড়া, মাসুলিপত্তম প্রভৃতি শহরে বঙ্গ ভঙ্গের বিরুদ্ধে সভা-সমিতি অনুষ্ঠিত হয়। এখানে এই আন্দোলন ‘বন্দেমাতরম্ আন্দোলন নামে পরিচিত ছিল।
- (২) ১৯০৭ সালে বিপিনচন্দ্র পাল দক্ষিণ ভারতে রাজনৈতিক প্রচারে এলে আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। মাসুলিপত্তমে ‘অন্ধ্র জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ এবং একটি জাতীয় কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় (১৯০৮ খ্রিঃ)।
- (৩) রাজমুন্দ্রিতেও একটি জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বদেশীর প্রেরণায় অন্ধ্রের মানুষ তেলেগু ভাষা, সাহিত্য ও ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
- (৪) মাদ্রাজের তিরুনেলভেলি জেলার তুতিকোরিন শহরে ব্রিটিশ- বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। এখানকার উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন সুব্রহ্মণ্য আয়ার, চিদাম্বরম পিল্লাই এবং সুব্রহ্মণ্য শিব।
- (৫)তাদের উদ্যোগে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে তুতিকোরিন থেকে কলম্বো পর্যন্ত স্টিমার চালানোর জন্য একটি স্বদেশী জাহাজ কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়।
উপসংহার :- এই স্বদেশী আন্দোলন ভারতের সর্বত্র বিস্তৃত হয় নি। বিহার, আসাম ও উড়িষ্যায় এর কোনও ছাপ পড়ে নি। কারণ, এই অঞ্চলের শিক্ষিত মানুষ বাঙালিদের ঈর্ষার চোখে দেখতেন। চাকরি ও অন্যান্য পেশায় বাঙালিদের আধিপত্য তাঁরা মানতে পারছিলেন না। তাঁরা পৃথক বিহার ও উড়িষ্যা রাজ্যের কথা চিন্তা করতে শুরু করেন।
(FAQ) স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনের বিস্তার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
লর্ড কার্জন।
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে।
বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপৎ রায়।