চরমপন্থী আন্দোলনের গুরুত্ব

চরমপন্থী আন্দোলনের গুরুত্ব হিসেবে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার, গণ আন্দোলনের প্রবর্তক, অহংবোধ ও আত্মনির্ভরশীলতা, লক্ষ্য – পূর্ণ স্বরাজ, প্রত্যক্ষ সংগ্রাম ও আন্দোলনের নানা পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো।

চরমপন্থী আন্দোলনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে চরমপন্থীদের সময়কাল, চরমপন্থী আন্দোলনের ফলে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার, চরমপন্থী আন্দোলনের লক্ষ্য পূর্ণ স্বরাজ, প্রত্যক্ষ সংগ্ৰামের ডাক, গণ আন্দোলনের প্রবর্তক, চরমপন্থী আন্দোলনের ফলে অহংবোধ ও আত্মনির্ভরশীলতা, চরমপন্থী আন্দোলনের ফলে নানা পদ্ধতির উদ্ভাবন সম্পর্কে জানব।

চরমপন্থী আন্দোলনের গুরুত্ব

ঐতিহাসিক ঘটনাচরমপন্থী আন্দোলনের গুরুত্ব
নেতৃবৃন্দের পরিচিতিচরমপন্থী
নেতৃবৃন্দবাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপৎ রায়, বিপিন চন্দ্র পাল, অরবিন্দ ঘোষ
লক্ষ্যব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতা
ভিত্তিহিন্দু ধর্ম, অতীত ইতিহাস ও পূর্ণ স্বাদেশিকতা
চরমপন্থী আন্দোলনের গুরুত্ব

ভূমিকা :- ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে চরমপন্থী পর্ব এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। নরমপন্থী রাজনীতির দুর্বলতার প্রতিবাদে চরমপন্থীরা ভারত-এ এক বলিষ্ঠ আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁদের কার্যকলাপ ব্রিটিশ সরকারকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল।

চরমপন্থী আন্দোলনের গুরুত্ব

নানা ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে চরমপন্থী আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন –

(১)নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার

নরমপন্থী কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদন সর্বস্ব বন্ধ্যা রাজনীতির যুগে জাতীয় কংগ্রেস ও জাতীয় আন্দোলনে তাঁরা এক নতুন প্রাণের সঞ্চারকরেন। জনসাধারণকে তাঁরা বোঝাতে সক্ষম হন যে, নরমপন্থী রাজনীতির কোনও ভবিষ্যৎ নেই। ডঃ এ. আর. দেশাই বলেন যে, “এই নতুন জাতীয়তাবাদ ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সংগ্রামী মনোভাব ও স্বাধীনতাবোধ সঞ্চার করেছিল।”

(২) গণ-আন্দোলনের প্রবর্তক

সীমাবদ্ধভাবে হলেও চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীরাই ভারতে প্রথম গণ-আন্দোলনের প্রবর্তক। কেবলমাত্র ধনী জমিদার নয়, শহুরে মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, চাকুরিজীবী, শিক্ষক, উকিল, ছোট ব্যবসায়ী, ছাত্র, গৃহবধূ এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে শ্রমিক ও কৃষকদেরও এই আন্দোলনের মধ্যে টেনে এনে চরমপন্থীরাই ভারতে প্রথম গণ আন্দোলনের সূচনা করেন।

(৩) অহংবোধ ও আত্মনির্ভরশীলতা

চরমপন্থী নেতারাই প্রথম জনসাধারণকে সাহসিকতা, আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মবিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ করেন। ডঃ এ. আর. দেশাই বলেন যে, “সংগ্রামী জাতীয়তাবাদই আমাদের জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে গৌরবময় অহংবাদ ও আত্মনির্ভরশীলতার চেতনা এনেছিল। এই নতুন জাতীয়তাবাদই ভারতীয় জনসাধারণকে এই শিক্ষা দিল যে, পীড়ন সহ্য না করে স্বরাজ অর্জন করা যায় না।”

(৪) লক্ষ্য: পূর্ণ স্বরাজ

কোনও প্রকার গোপনীয়তা না রেখে চরমপন্থী নেতারাই প্রথম ঘোষণা করেন যে, তাঁদের রাজনৈতিক আন্দোলনের উদ্দেশ্য কোনও প্রকার কিস্তিবন্দি সংস্কার বা ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন অর্জন নয়। তাদের লক্ষ্য ‘পূর্ণ স্বরাজ’— ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণমুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতা (‘absolute independence free from British control’)।

(৫) প্রত্যক্ষ সংগ্রাম

এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তাঁরা ব্রিটিশ সরকারের সদাশয়তার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না—সরকারের বিরুদ্ধে তাঁরা প্রত্যক্ষ সংগ্রাম-এর আহ্বান জানান এবং দেশবাসীর হাতে ‘স্বদেশী‘ ও ‘বয়কট‘ বা ‘নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের অস্ত্র তুলে দেন।

(৬) আন্দোলনের নানা পদ্ধতি

সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষকে জাতীয় আন্দোলনের মধ্যে ধরে রাখার জন্যও তাঁরা নানা পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। সমাজকল্যাণমূলক কর্ম, গঠনমূলক কার্যাবলী ও শরীরচর্চার আখড়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। অপরদিকে দেশাত্মবোধক গান, যাত্রা, উত্তেজক বক্তৃতা ও যাদু লণ্ঠনের মাধ্যমে গ্রাম ও শহরে স্বদেশী ভাবধারা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

উপসংহার :- পরবর্তীকালে মহাত্মা গান্ধীও এই সব আদর্শ ও হাতিয়ার গ্রহণ করে জাতীয় রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করেন।

(FAQ) চরমপন্থী আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. চরমপন্থীদের আদর্শ ও হাতিয়ার পরবর্তীতে কোন রাজনৈতিক নেতা গ্ৰহণ করেছিলেন?

মহাত্মা গান্ধী।

২. চরমপন্থীদেরলক্ষ্য কী ছিল?

পূর্ণ স্বাধীনতা।

৩. দুজন চরমপন্থী নেতার নাম লেখ।

বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায়, বিপিন চন্দ্র পাল।

Leave a Comment