আকবরের ধর্মচিন্তায় ইসলামের স্থান

মুঘল সম্রাট আকবরের ধর্মচিন্তায় ইসলামের স্থান প্রসঙ্গে স্মিথের অভিমত, বাদাউনির অভিমত, মাহজরনামা ও ইসলামের সম্পর্ক, ইসলামের পথ থেকে সরে আসা, দীন-ই-ইলাহী ও ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক, আকবরের ইসলাম বিরোধী আইন প্রবর্তন, আকবরের ইসলাম ধর্ম ত্যাগ, বাদাউনী ও জেসুইট লেখকদের সমালোচনা, ইসলামের অনুরাগী আকবর, আকবরের গোঁড়া ইসলামীয় ধর্মমত ত্যাগ, দীন-ই-ইলাহী কোনো ধর্মমত নয়, ব্যক্তিগত আনুগত্যের বন্ধন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানবো।

মুঘল সম্রাট আকবরের ধর্মচিন্তায় ইসলামের স্থান

ঐতিহাসিক ঘটনা আকবরের ধর্মচিন্তায় ইসলামের স্থান
সম্রাট আকবর
মাহজরনামা ১৫৭৯ খ্রি:
দীন-ই-ইলাহী ১৫৮২ খ্রি:
মুঘল সম্রাট আকবরের ধর্মচিন্তায় ইসলামের স্থান

ভূমিকা :- ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। এই সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন আকবর। তিনি ভারতে সর্বধর্ম সমন্বয়ে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন।

স্মিথের অভিমত

স্মিথ বলেছেন যে, “দীন-ই-ইলাহী ছিল আকবরের বুদ্ধিহীনতার প্রধান স্তম্ভ; সম্রাটের অহংবোধের জ্বলন্ত উদাহরণ” (The Din-i-Ilahi was a monument of Akbar’s folly…a monstrous example of his vanity)। স্মিথের এই মন্তব্যের অর্থ ছিল যে, আকবর নির্বুদ্ধিতা ও অহমিকাবশত ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে নবধর্ম প্রচার করেন। তিনি একাধারে পোপ ও সম্রাটের ভূমিকা নেন।

বাদাউনীর অভিমত

  • (১) আকবরের সমকালীন ঐতিহাসিক আবদুল কাদির বাদাউনী তাঁর মুন্তাখাবা-ই-তারিখী গ্রন্থে বলেছেন যে, আকবর ইবাদতখানায় ধর্মতত্ত্ব আলোচনা এবং অন্য ধর্মের প্রবক্তাদের সঙ্গে আলাপে প্রবৃত্ত হয়ে সুন্নী ধর্মের প্রতি একনিষ্ঠতার অভাব দেখান।
  • (২) কারণ ইসলামের বিশ্বাসীরা একমাত্র ‘আল্লাহ’ ব্যতীত আর কোনো ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। অন্য ধর্মের অভিমতকে তারা ইসলামের বিচ্যুতি মনে করেন। অতঃপর আকবর সূর্য ও অগ্নির উপাসনা শুরু করেন। ইসলামে এই ধরনের উপাসনা একেবারেই নিষিদ্ধ।

মাহজরনামা ও ইসলামের সম্পর্ক

  • (১) ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে আকবর প্রকাশ্যে ইসলামের নিয়ম-কানুনগুলির প্রতি অনাস্থা জানাতে থাকেন। তিনি ফতেপুর সিক্রির মসজিদ থেকে নিজেই মাহজরনামা পাঠ করেন। মহজরনামার দ্বারা পাদশাহ নিজেকে ইমাম-ই-আদিল বলে ঘোষণা করেন।
  • (২) এই ঘোষণা দ্বারা আকবর ইসলামীয় আইনের চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকার রূপে তাঁর অধিকার স্থাপন করেন। স্মিথ বলেছেন যে, সম্রাট এর দ্বারা নিজ সিদ্ধান্তকে ‘অভ্রান্ত’ বলে প্রচার করেন। এজন্য মহজরনামাকে স্মিথ “আভ্রান্তবাদী ঘোষণা পত্র” (Infallibility Decree) বলে অভিহিত করেছেন।
  • (৩) একসময় রোমের পোপেরা ধর্মগুরু হিসেবে এবং ঈশ্বরের পার্থিব প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের চিহ্নিত করে যে অভ্রান্ততা দাবী করতেন আকবরের চিন্তাধারায় তার আভাস দেখা যায় বলে স্মিথ মনে করেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ইসলামের বিরোধী। ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দের পর আকবর বিশ্বাসী মুসলিম না হলেও আচরণে মুসলিম ছিলেন।

ইসলামের পথ থেকে সরে আসা

  • (১) ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দ থেকে আকবর ইসলামের পথ থেকে সরে যান বলে স্মিথ মন্তব্য করেছেন। বাদাউনী ও জেসুইট লেখকদের বিশেষত ফাদার মনসারেটের বিবরণের ওপর নির্ভর করে স্মিথ ওপরের সিদ্ধান্তে এসেছেন।
  • (২) বাদাউনীর মতে, আকবর ইসলামের স্বীকৃত নিয়ম ও প্রথাগুলি ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের পর ত্যাগ করেন। তিনি মধ্যরাত্রে “সূর্যের” নাম করতেন। তিনি কপালে ‘তিলক’ চিহ্ন মাঝে মাঝে রাখতেন।

দীন-ই-ইলাহী ও ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক

  • (১) তিনি দীন-ই-ইলাহি নামে এক নব ধর্ম প্রচার করেন যার দ্বারা সম্রাটের পুজো প্রচলিত হয়। দীন-ই-ইলাহীর অনুগামীদের সম্রাটের ছবি পাগড়ীতে রাখতে হত। তারা সম্রাটের জন্য ৪টি ত্যাগ করতে প্রতিশ্রুতি দিত – জীবন, সম্পত্তি, সম্মান ও ধর্ম।
  • (২) ইলাহিবাদীরা একটি আলাদা সম্প্রদায় হিসেবে পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ রেখে চলত। তারা পরস্পরের গৃহে পান-ভোজন করত। নিরামিষ খাদ্য খেত।

আকবরের ইসলাম বিরোধী আইন

বাদাউনী বলেছেন যে, আকবর ইসলাম বিরোধী কিছু আইন জারী করেন। যথা –

  • (১) তিনি ইসলামীয় চান্দ্রমাস ও চান্দ্র বৎসর অনুযায়ী কাল গণনা রদ করে সৌর বর্ষ অনুযায়ী কাল গণনা চালু করেন।
  • (২) তিনি দরবারে নওরোজ উৎসব চালু করেন।
  • (৩) তিনি সিজদা প্রথা দরবারে প্রবর্তন করেন।
  • (৪) বালকদের সুন্নৎ ১২ বৎসরের বয়সের পর এবং ঐচ্ছিক বলে ঘোষণা করেন।
  • (৫) গোমাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়।
  • (৬) পুরুষের শশ্রু রাখা ঐচ্ছিক করা হয়।
  • (৭) স্বর্ণ অলঙ্কার ধারণ ও রেশমী বস্ত্র পরিধান বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।
  • (৮) মুসলিম ধর্মশাস্ত্র পাঠের চেয়ে অঙ্ক, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা, ইতিহাস পাঠে উৎসাহ দেখান হয়।
  • (৯) বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়।
  • (১০) এমনকি বাদাউনী এই অভিযোগ করেন যে, আকবর ধর্মপ্রাণ গোঁড়া মুসলমানদের নির্যাতন করেন।

ইসলাম ধর্ম ত্যাগ

আধুনিক গবেষকদের মধ্যে রকম্যান ও স্মিথ প্রমুখ মনে করেন যে, আকবর পুরোপুরি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেন। কিন্তু মিসেস বিভারিজ বলেন যে, “আকবর কখনও তাঁর আদি ধর্ম বিশ্বাসের পথ পরিত্যাগ করেন নি। তবে তিনি ইসলামের মতামত সম্পর্কে সংশয়বাদী ছিলেন।” শিয়া গবেষক মহম্মদ হুসেন আজাদের মতে, আকবর যা করেন তা রাজনৈতিক কারণেই করেন। তিনি বিধর্মী ছিলেন না।

বাদাউনী ও জেসুইট লেখকদের সমালোচনা

বাদাউনী ও ফাদার মনসারেটের মতামতের ওপর পুরো নির্ভর করা যায় না। কারণ,

  • (১) বাদাউনী ছিলেন সঙ্কীর্ণচিত্ত, গোঁড়া মোল্লা। সম্রাটের উদার, ধর্মসহিষ্ণু নীতির তাৎপর্য বুঝার মত শিক্ষা ও মানসিক প্রসারতা তার ছিল না।
  • (২) বাদাউনী আকবরের প্রবর্তিত আইনগুলি ভালভাবে জানতেন না। কারণ তিনি দরবারের অভিজাত ছিলেন না। তিনি অনেকাংশে শোনা কথার ওপর নির্ভর করে লিখেছেন।
  • (৩) বাদাউনী ছিলেন ভয়ানক হিন্দু বিরোধী। আকবরের ধর্মসহিষ্ণুতা নীতিকে তিনি ইসলাম বিরোধী বলে ভুল করেন।
  • (৪) জেসুইট পাদ্রী মনসারেট প্রমুখও ছিলেন গোঁড়া খ্রীষ্টান। আকবর খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ না করায় তারা আকবরের উদার ধর্মনীতিকে নায্যভাবে বিচার করেন নি।

ত্রিপাঠীর অভিমত

ডঃ আর. পি. ত্রিপাঠী মন্তব্য করেছেন যে, “আকবরের ধর্মমত ও ধর্মনীতি সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হলে, বাদাউনী ও জেসুইট লেখকদের বিবৃতির ওপর নির্ভর করা নিরাপদ নয়। কারণ, তারা তথ্যগুলির যথার্থ মূল্যায়ন এবং পক্ষপাতহীন বিচার করতে অক্ষম ছিলেন।”

ইসলামের অনুরাগী আকবর

  • (১) ডঃ এম. এল. রায়চৌধুরীর মতে, আকবর হজ যাত্রীদের জন্য সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের বন্দোবস্ত করেন। তিনি প্রকাশ্যে ইসলামের বিরোধী কোনো কথা বলেন নি। আবদুল্লাহ বা উজবেগকে আকবর যে পত্র লেখেন তাতে তিনি নিজেকে ‘ইসলামের সেবক’ বলে দাবী করেন।
  • (২) আকবর দীন-ই-ইলাহীর অনুরাগীদের কাছে যে, ৪ প্রকার আনুগত্য চান, তা ইসলাম বিরোধী নয়। ইমাম আল গাজ্জালি তা অনুমোদন করেছেন। স্যার টমাস রো আকবরের পুত্র জাহাঙ্গীরের দরবারে আসেন। তিনি বলেন যে, আকবর মৃত্যুকাল পর্যন্ত মুসলমান হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
  • (৩) সুতরাং এই সকল যুক্তি প্রমাণের ভিত্তিতে বহু গবেষক মনে করেন যে “আকবর তাঁর জীবনকালে ইসলামের অনুরাগী ছিলেন।”

আকবরের গোঁড়া ইসলামীয় ধর্মমত ত্যাগ

  • (১) আকবর সুলহ-ই-কুল বা ধর্মসহিষ্ণুতা নীতিকে তার ধর্ম বিশ্বাসের প্রধান অঙ্গ মনে করতেন এতে সন্দেহ নেই। যদিও তিনি মুসলিম সংস্কৃতিকে ত্যাগ করেন নি, তবুও তিনি নিষ্ঠাবান ও গোঁড়া সুন্নী মুসলমান ছিলেন একথা বলা যায় না।
  • (২)  ইসলামের ৫টি মূল নীতি – কলমা, পাঁচওক্ত নমাজ, রমজানের উপবাস, জাকৎ, হজ যাত্রা আকবর নিষ্ঠাভরে পালন করতেন এমন কথা বলা যায় না। তাছাড়া ইসলামে বিশ্বাসী পয়গম্বর বা হজরতকেই একমাত্র আল্লাহের বাণীর প্রবক্তা মনে করেন।
  • (৩) সেক্ষেত্রে আকবর বিভিন্ন ধর্মের তত্ত্ব আলোচনা, সূর্য উপাসনা, মহজরনামা, দীন-ইলাহী দ্বারা খাঁটি ইসলামের পথ থেকে বিচ্যুত হন বলে অনেকে মনে করেন। তিনি ছিলেন সংস্কারক ও যুক্তিবাদী মুসলিম। কিন্তু গোঁড়া মুসলিমরা সংস্কারকদের ধর্মত্যাগী মনে করেন।

দীন-ই-ইলাহি কোনো ধর্মমত নয়

  • (১) এখন প্রশ্ন হল দীন-ই-ইলাহী কি নব ধর্ম ছিল? দীন-ই-ইলাহীর ধর্মমতের সঙ্গে প্রচলিত সুন্নি ধর্মমতের কি কোনো সম্পর্ক আছে? এই বিষয়ে গবেষকদের মধ্যে কোনো ঐক্যমত দেখা যায় নি। যদি সুন্নি মতের আলোকে বিচার করা হয় তবে দীন-ইলাহীতে ইসলামের স্বীকৃত ৫টি মূল আচরণ বিধি নেই।
  • (২) দীন-ইলাহীতে কোরাণের ও পয়গম্বরের উল্লেখ নেই। এজন্য গোল্ডজিহার (Goldziher) মন্তব্য করেছেন যে, “আকবরের প্রবর্তিত ধর্মমতকে সংস্কারপন্থী ইসলাম না বলে ইসলামের অস্বীকৃতিই বলা ভাল”। বাদাউনী এজন্য আকবরকে ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগকারী বলে ঘোষণা করেন।
  • (৩) আকবর ঈশ্বরের আদেশের অনুভূতি তত্ত্ব এবং মাহাদি রূপে পয়গম্বরের পুনরায় আবির্ভাবের তত্বকেও স্বীকার করেন নি। তিনি কেয়াম‍ৎ বা শেষ বিচারের তত্বকেও অস্বীকার করেন। কাজেই তার প্রবর্তিত দীন-ই-ইলাহীকে এক শ্রেণীর গবেষক ইসলামের বিচ্যুতি বলেই ব্যাখ্যা করেন।
  • (৪) অপরদিকে ডঃ আর. পি. ত্রিপাঠী, ডঃ এম. এল. রায়চৌধুরী প্রমুখের মতে, আকবর তার ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে গোঁড়া মুসলমান না হলেও সংস্কারবাদী ও সংশয়বাদী মুসলমান ছিলেন। তাঁর প্রবর্তিত দীন-ই-ইলাহী কোনো ধর্মমত ছিল না।
  • (৫) কারণ, এই তথাকথিত ধর্মমতের কোনো ধর্মশাস্ত্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ধর্ম প্রচারক ছিল না। দীন ইলাহীর যে আচরণ বিধির কথা জানা যায় তাতে এমন কিছু ছিল না যা ইসলামের মূল নীতির বিরোধী। তিনি তাঁর শিষ্যদের কাছে যে ৪ প্রকার আনুগত্য দাবী করেন তা ইমাম আল-গাজ্জালী অনুমোদন করেছেন।
  • (৬) নিরামিষ ভোজন, দান, আল্লা-হ আকবর কথাটির অর্থ ছিল আল্লাহ বা ঈশ্বর মঙ্গলময়। দীন-ই-ইলাহী মতের উপাসনার জন্য কোনো মন্দির বা মসজিদ নির্মিত হয়নি। ডঃ ত্রিপাঠীর মতে, দীন-ই-ইলাহী ছিল কতকগুলি নৈতিক আচরণ বিধির সমন্বয়।
  • (৭) যারা এই আচরণবিধি পালনের জন্য দীক্ষা নিতেন তাদের ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসের কোনো হানি তাতে হয় নি। আকবর কারও ওপরে তাঁর ধর্মমত জোর করে চাপান নি। তিনি সহজে সকলকে এই ধর্ম মতে দীক্ষা দিতেন না। শেষ পর্যন্ত দীন-ই-ইলাহীতে দীক্ষা প্রাপ্ত অনুরাগী শিষ্যের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ মতান্তরে ৭২।
  • (৮) বাদাউনী নিজেই স্বীকার করেছেন যে দীন-ই-ইলাহীতে দীক্ষা গ্রহণের জন্য আকবর বলপ্রয়োগ বা অর্থের প্রলোভন দেখান নি। যে প্রধান ২০ বা ২৫ সভাসদ দীন-ই-ইলাহীতে দীক্ষা নেন তাদের মধ্যে একমাত্র হিন্দু ছিলেন বীরবল, বাকি সকলেই ছিলেন মুসলিম সভাসদ। তারা সকলেই তাদের বিদ্যা, বুদ্ধি ও চরিত্র গুণের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। সুতরাং সম্রাটের দ্বারা তারা প্রভাবিত হন তা বলা যায় না।

ব্যক্তিগত আনুগত্যের বন্ধন

অনেকে মনে করেন যে, দীন-ই-ইলাহী আসলে কোন ধর্মমত ছিল না। হিন্দু, মুসলিম প্রভৃতি সম্প্রদায়কে তাদের ধর্মমতের বাইরে সম্রাটের প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্যের বাঁধনে আনার জন্য তিনি এই ধর্মমত প্রবর্তন করেন। এটি ছিল তার রাষ্ট্রনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয়।

পার্সিভ্যাল স্পিয়ারের অভিমত

ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ার বলেছেন যে, “সম্রাট পুজো” (Emperor Cult) দ্বারা তিনি (আকবর) ভারতবর্ষে প্রথম একটি মুসলিম রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন যা অবাধে হিন্দু ও মুসলিমদের আনুগত্য পায় এবং যার আধিপত্য কেবলমাত্র সামরিক শক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না। যদি আকবর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর ধর্মনীতি চালু করেন তবে তার কাছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই ছিল মুখ্য।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

ডঃ আর. পি. ত্রিপাঠীর মতে, যদি আকবর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই দীন-ই-ইলাহী প্রচার করেন তার দ্বারা তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় নি। কারণ লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর মধ্যে মাত্র কয়েক হাজার লোক দীন-ই-ইলাহী গ্রহণ করার ফলে ‘সম্রাট পুজো’ জনসমর্থন লাভে বঞ্চিত হয়।

উপসংহার :- দীন-ই-ইলাহীর দ্বারা ‘আল্লাহ’ এবং ‘সম্রাট’ এই দুই-এর প্রতি একান্ত অআনুগত্য দাবীর দ্বারা আকবর তাঁর প্রতি অনুগামী এক বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের পরিমণ্ডল গঠন করেন। ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পর আকবর এই ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।

(FAQ) মুঘল সম্রাট আকবরের ধর্মচিন্তায় ইসলামের স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কে মাহজরনামা ঘোষণা করেন?

আকবর।

২. মাহজরনামা ঘোষণা করা হয় কখন?

১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দে।

৩. দীন-ই-ইলাহী কে প্রবর্তন করেন?

আকবর।

৪. দীন-ই-ইলাহী কবে প্রবর্তিত হয়?

১৫৮২ খ্রিস্টাব্দ।

৫. দীন-ই-ইলাহী গ্ৰহণকারী হিন্দু কে ছিলেন?

বীরবল।

Leave a Reply

Translate »