চুয়াড় বিদ্রোহ

চুয়াড় বিদ্রোহ -এর নাম, দুটি পর্যায়, প্রথম পর্বের বিদ্রোহের কারণ, সূচনা, প্রসার, ব্যর্থতা, দ্বিতীয় পর্বের বিদ্রোহের সূচনা, ব্যাপক আকার ধারণ, কারণ, প্রসার, অবসান, চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।

চুয়াড় বিদ্রোহ প্রসঙ্গে চুয়াড় বিদ্রোহের সময়কাল, চুয়াড় বিদ্রোহের স্থান, চুয়াড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব, চুয়াড় বিদ্রোহের সূচনা, চুয়াড় বিদ্রোহের প্রসার, চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য, চুয়াড় বিদ্রোহের প্রকৃতি, প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ, দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ, রানী শিরোমণি, চুয়াড় বিদ্রোহের অবসান, চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা অচল সিংহ, গোবর্ধন দিকপতি, জগন্নাথ ধল, চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব ও ফলাফল, জঙ্গলমহল গঠন।

১৭৬৯ – ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের চুয়াড় বিদ্রোহ

ঐতিহাসিক ঘটনাচুয়াড় বিদ্রোহ
সময়কাল১৭৬৮-৬৯ থেকে ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দ
স্থানমেদিনীপুর, বাঁকুড়া, সিংভূম, মানভূম ও ধলভূম অঞ্চলে
নেতৃত্বরাজা জগন্নাথ সিং, রানী শিরোমনি, গোবর্ধন দিকপতি, দুর্জন সিংহ, রঘুনাথ সিংহ, অচল সিংহ
ফলাফলজঙ্গলমহল গঠন
চুয়াড় বিদ্রোহ

ভূমিকা :- ব্রিটিশ ভারত -এর অন্যতম বৃহৎ কৃষক বিদ্রোহ হল চুয়াড় বিদ্রোহ। মেদিনীপুর জেলার উত্তর পশ্চিম অঞ্চল, বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল,মানভূমের পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ এলাকায় ১৭৬৮-৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৯৮-৯৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ বছর ধরে দুটি পর্বে বিদ্রোহ হয়েছিল।

পাইকান জমি

জঙ্গলমহল এর অধিবাসীরা অর্থাৎ মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, সিংভূম, মানভূম ও ধলভূমের স্থানীয় জমিদারদের অধীনে নায়েক বা পাইকের কাজ করতেন। কাজের বিনিময়ে তাদের জমি ভোগ করার অধিকার ছিল, যাকে পাইকান জমি বলা হত।

চুয়াড়দের পেশা

চুয়াড় বা চোয়াড়রা ছিল বাংলার মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলের ভূমিজ অধিবাসী। চাষবাস ও পশুশিকারের সঙ্গে জড়িত থাকলেও যুদ্ধবিগ্রহ ছিল তাদের প্রধান পেশা।

চুয়াড় বিদ্রোহের নাম

বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলের জমির ওপর চড়া ভূমিরাজস্ব ধার্য করে ফলত তার বিরুদ্ধে জমিদারদের সাথে তাঁদের পাইক চুয়াড়গণও সমগ্র জঙ্গলমহল জুড়ে বিদ্রোহ করেন। ইংরেজরা আদিম ও অন্ত্যজ জনজাতির এই কৃষকবিদ্রোহকে ঘৃনাভরে চূয়াড় বিদ্রোহ নাম দেয়।

চুয়াড় বিদ্রোহের দুটি পর্ব

চুয়াড় বিদ্রোহ অন্তত তিন দশক ধরে চলেছিল। এই বিদ্রোহ দুটি পর্বে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যেমন –

(১) চুয়াড় বিদ্রোহের প্রথম পর্ব

প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ ১৭৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়।

(২) চুয়াড় বিদ্রোহের দ্বিতীয় পর্ব

দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু হয় ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দে।

প্রথম পর্বে চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ

প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল নিম্নরূপ-

(১) জীবিকা সমস্যা

ব্রিটিশ কোম্পানি চুয়াড়দের অধিকাংশ জমিজমা কেড়ে নিলে তাদের জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ে।

(২) রাজস্ব বৃদ্ধি

ব্রিটিশ কোম্পানি চুয়াড়দের কৃষিজমির ওপর রাজস্বের হার যথেষ্ট বাড়িয়ে দেয়।

(৩) অত্যাচার

রাজস্ব আদায়কারী ও অন্যান্য সরকারি কর্মচারীরা চুয়াড়দের ওপর চরম অত্যাচার চালাতে শুরু করে। ফলে আদিবাসী চুয়াড় সম্প্রদায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

প্রথম পর্বে চুয়াড় বিদ্রোহের সূচনা

ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ প্রথম কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। চুয়াড়রা এই বিদ্রোহে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয়।

প্রথম পর্বে চুয়াড় বিদ্রোহের প্রসার

জগন্নাথ সিংহের নেতৃত্বে চুয়াড়রা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। এরপর ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে চুয়াড়রা ধাদকার শ্যামগঞ্জনের নেতৃত্বে আবার বিদ্রোহ শুরু করে।

প্রথম পর্বে চুয়াড় বিদ্রোহের ব্যর্থতা

চুয়াড়দের প্রথম পর্বের বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও চুয়াড়দের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন ধিকিধিকি জ্বলতেই থাকে। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে এই আগুন চুয়াড়দের দ্বিতীয় পর্বের বিদ্রোহের সময় দাবানলের চেহারা নেয়।

দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের সূচনা

ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ চুয়াড়দের নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে পরবর্তীকালে ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু হয়।

চুয়াড় সম্প্রদায়ের প্রবল আন্দোলন

প্রায় ১৫০০ অনুগামী নিয়ে প্রবল আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং চুয়াড়রা প্রায় ৩০টি গ্রামে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন।

চুয়াড় বিদ্রোহের ব্যাপক আকার ধারণ

১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহ সবচেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল, কিন্তু কোম্পানির সেনাদল নির্মম অত্যাচার করে এই বিদ্রোহ দমন করে।

মেদিনীপুরের লক্ষ্মীবাঈ

চুয়াড় বিদ্রোহে অসামান্য অবদানের জন্য রানি শিরোমণি ‘মেদিনীপুরের লক্ষ্মীবাই’ নামে পরিচিত হন।

দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ

দ্বিতীয় পর্যায়ের চুয়াড় বিদ্রোহের (১৭৯৮-৯৯ খ্রি.) বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন –

(১) নির্যাতন

ব্রিটিশ সরকার ও তাদের কর্মচারীরা আদিবাসী চুয়াড় এবং স্থানীয় জমিদারদের ওপর নির্যাতন শুরু করে।

(২) জমি থেকে উৎখাত

প্রথম পর্যায়ের চুয়াড় বিদ্রোহীদের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে ইংরেজরা দরিদ্র চুয়াড়দের জমির মালিকানা বাতিল করে তাদের জমি থেকে উৎখাত করে।

(৩) পেশা থেকে বিতাড়ন

সরকার বহু চুয়াড়কে তাদের পাইকের পেশা থেকে বিতাড়িত করে।

(৪) রাজস্ব বৃদ্ধি

জমিদারদের ওপর রাজস্বের পরিমাণ যথেষ্ট বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব কারণে জমিদার ও চুয়াড় কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়।

চুয়াড় বিদ্রোহের প্রসার

  • (১) জঙ্গলমহল-সহ মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চুয়াড় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহে নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিলেন বাঁকুড়ার রাইপুর -এর জমিদার দুর্জন সিং, মেদিনীপুরের রানি শিরোমণি প্রমুখ।
  • (২) তাঁরা বিভিন্ন জমিদার ও আদিবাসী চুয়াড়দের বিদ্রোহে শামিল করতে সক্ষম হন।
  • (৩) দুর্জন সিং প্রায় ১৫০০ জন অনুগামী নিয়ে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং প্রায় ৩০টি গ্রামে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেন। বিদ্রোহীরা সরকারি দপ্তরেও আক্রমণ চালায়।

চুয়াড় বিদ্রোহের অবসান

বিদ্রোহীদের চাপে ইংরেজ পুলিশ ও কর্মচারীরা বিদ্রোহের মূল কেন্দ্র রায়পুর ছেড়ে পালিয়ে গেলেও শীঘ্রই সশস্ত্র ব্রিটিশ সেনা এসে বিদ্রোহী জমিদার ও আদিবাসী চুয়াড়দের পরাজিত করে। রানি শিরোমণিকে হত্যা এবং দুর্জন সিংকে গ্রেফতার করা হয়। এর ফলে বিদ্রোহ থেমে যায়।

চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য

চুয়াড় বিদ্রোহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন –

(১) সশন্ত্র উপজাতি বিদ্রোহ চুয়াড় বিদ্রোহ

চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল সশস্ত্র আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ।

(২) চুয়াড় বিদ্রোহে ব্রিটিশ-বিরোধিতা

চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল মূলত ব্রিটিশ-বিরোধী একটি বিদ্রোহ। ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে চুয়াড় সম্প্রদায় গর্জে উঠেছিল।

(৩) চুয়াড় বিদ্রোহে জমিদার-কৃষক ঐক্য

চুয়াড় বিদ্রোহ দেশীয় জমিদারদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়নি। বরং দেশীয় জমিদাররা ব্রিটিশ-বিরোধী এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়ে আদিবাসী চুয়াড় কৃষকদের নিজেদের পক্ষে শামিল করেছিল।

(৪) চুয়াড় বিদ্রোহের দীর্ঘস্থায়িত্ব

চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল একটি দীর্ঘস্থায়ী বিদ্রোহ। ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অর্থাৎ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ-বিরোধী এই বিদ্রোহ চলে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন।

(৫) চুয়াড় বিদ্রোহের দুটি পর্যায়

দীর্ঘস্থায়ী চুয়াড় বিদ্রোহে দুটি পর্যায় লক্ষ্য করা যায়। প্রথম পর্যায়টি শুরু হয়েছিল ১৭৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে এবং দ্বিতীয় পর্যায়টি চলেছিল ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে।

চুয়াড় বিদ্রোহের প্রকৃতি

  • (১) বাংলায় বিভিন্ন পর্যায়ে চুয়াড় বিদ্রোহ ঘটে। এই বিদ্রোহ ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলে বিভিন্ন নেতার হাত ধরে।
  • (২) ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে ঘাটশিলায় ধলভূমের ভূমিজ রাজা জগন্নাথ সিংহ প্রথম ধল বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। চুয়াড়রা এই বিদ্রোহে সক্রিয় ভাবে অংশ নেয়।
  • (৩) ১৭৭১ সালে ধাদকার শ্যামগঞ্জনের নেতৃত্বে চুয়াড়রা বিদ্রোহ ঘোষণা করে ও ব্যর্থ হয়। ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দে আবার দুর্জন সিংহ নিজেকে স্বাধীন তালুকদার ঘোষণা করেন ও কোম্পানির খাজনা দিতে অস্বীকার করেন ফলত তাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেয় সরকার।
  • (৪) ১৭৯৮ সালের মার্চ মাসে রাইপুর পরগনায় শুরু হয় চুয়াড় বিদ্রোহ। ক্রমে তা অম্বিকানগর, সুপুর, বাঁকুড়ার দক্ষিণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে এই বিদ্রোহ সবচেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল।
  • (৫) কোম্পানির সেনাদল নির্মম অত্যাচার করে এই বিদ্রোহ দমন করেছিল। নৃসংশভাবে বিদ্রোহীদের হত্যা করে তারা। গাছের ডালে তাদের ফাঁসি দিয়ে মৃতদেহ ঝুলিয়ে রেখে ত্রাস সৃষ্টি করে গ্রামের সাধারণ মানুষদের মধ্যে।
  • (৬) রাণী শিরোমণির আমলেও চুয়াড় বিদ্রোহ ঘটে এবং নাড়াজোলের রাজা ত্ৰিলোচন খানের দ্বারা চুয়াড়রা পরাজিত হয়। দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহের সময় ইংরেজ সরকার রাণী শিরোমণিকে ১৭৯৯ খ্রীস্টাব্দে বন্দী করে।

চুয়াড় বিদ্রোহের নেতৃবৃন্দ

রাজা জগন্নাথ সিং, রানী শিরোমনি, গোবর্ধন দিকপতি, দুর্জন সিংহ, রঘুনাথ সিংহ, অচল সিংহ প্রমুখেরা বিভিন্ন সময় এই চুয়াড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব প্রদান করেন।

চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব

ব্যর্থ হলেও চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব ও ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। যেমন –

(১) চুয়াড় বিদ্রোহে দমনপীড়ন

চুয়াড় বিদ্রোহ দমনের জন্য ইংরেজ পুলিশবাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন চালায়। তারা রানি শিরোমণিকে হত্যা করে এবং দুর্জন সিংকে গ্রেফতার করে।

(২) ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহের পথপ্রদর্শক চুয়াড় বিদ্রোহ

ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে পশ্চাৎপদ চুয়াড়রা বিদ্রোহ শুরু করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এবং ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে। কারণ, নিরক্ষর চুয়াড়রা অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ শুরু করেছিল তা ভারতের শিক্ষিত সম্প্রদায় শুরু করে আরও অন্তত এক শতাব্দী পরে।

(৩) চুয়াড় বিদ্রোহে জমিদার ও কৃষকদের ঐক্য

চুয়াড় বিদ্রোহ জমিদারদের বিরুদ্ধে নয়, অত্যাচারী ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। জমিদার ও চুয়াড় কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ব্রিটিশ-বিরোধী বিদ্রোহে শামিল হয়।

(৪) চুয়াড় বিদ্রোহের ফলে জঙ্গলমহল গঠন

চুয়াড়দের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার উদ্দেশ্যে সরকার এখানকার শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটায়। বিষ্ণুপুর শহরটিকে কেন্দ্র করে দুর্গম বনাঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল নামে একটি পৃথক জেলা গঠন করা হয়।

উপসংহার :- চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষকবিদ্রোহ। সেদিনের দুর্গম ‘জঙ্গলমহল‘ অর্থাৎ আজকের বাঁকুড়ার একাংশের কৃষক-সম্প্রদায় আজও চুয়াড় বিদ্রোহের স্মরণে গর্ববোধ করেন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “চুয়াড় বিদ্রোহ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. চুয়াড় বিদ্রোহ প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল?

১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ প্রথম চুয়াড় বিদ্রোহের সূচনা করেন।

২. কোন বিদ্রোহের ফলে জঙ্গলমহল জেলা গঠিত হয়?

চুয়াড় বিদ্রোহ।

৩. চুয়াড় বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল?

জঙ্গলমহল সহ মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।

৪. চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা কারা ছিলেন?

রাজা জগন্নাথ সিং, রানী শিরোমনি, গোবর্ধন দিকপতি, দুর্জন সিংহ, রঘুনাথ সিংহ, অচল সিংহ প্রমুখ।

৫. চুয়াড় বিদ্রোহ কবে হয়েছিল

১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে।

৬. চুয়াড় কারা?

বাংলার মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলের ভূমিজ অধিবাসী ছিল চুয়াড় বা চোয়াড় সম্প্রদায়। চাষবাস ও পশুশিকারের সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাদের প্রধান পেশা ছিল যুদ্ধবিগ্রহ।

অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি

Leave a Comment