শাহজাহানের ধর্মীয় নীতি

শাহজাহানের ধর্মীয় নীতি প্রসঙ্গে গোঁড়া লোকেদের ক্ষোভ, মৌলবাদকে প্রশ্রয়, মৌলবাদের প্রতি আগ্রহ, ফরমান জারি, ঈশ্বরী প্রসাদের অভিমত, ধর্মীয় গোঁড়ামির যুগ নয়, উদার ধর্ম সহিষ্ণু নীতি, দারাশিকো ও তার গোঁড়া রক্ষণশীল মন সম্পর্কে জানবো।

শাহজাহানের ধর্মীয় নীতি

ঐতিহাসিক ঘটনাশাহজাহানের ধর্মীয় নীতি
সম্রাটশাহজাহান
সাম্রাজ্যমুঘল সাম্রাজ্য
ফর্মান জারি১৬৩২ খ্রি
উদার ভাবধারা প্রচারদারাশিকো
শাহজাহানের ধর্মীয় নীতি

ভূমিকা :- আকবরজাহাঙ্গীর-এর রাজত্বকালে যে উদার ধর্মীয় নীতি অনুসৃত হয়, শাহজাহানের রাজত্বকাল-এ তাতে ভাঁটা পড়ে।

আকবরের ধর্মনীতিতে গোঁড়া লোকেদের ক্ষোভ

আকবরের উদার ধর্মসহিষ্ণু নীতির বিরুদ্ধে দরবারে একশ্রেণীর গোঁড়া লোকেদের মনে চাপা বিক্ষোভ ছিল।

শাহজাহানের ধর্মীয় নীতিতে মৌলবাদকে প্রশ্রয়

মুঘল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে আকবরের উদারনীতির গুরুতর বিচ্যুতি ঘটে। যদিও শাহজাহানকে গোঁড়ামির অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায় না, কিন্তু তাঁর দরবারে মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় এতে সন্দেহ নেই।

শাহজাহানের ধর্মীয় নীতিতে মৌলবাদের প্রতি আগ্রহ

সিংহাসনে বসার পর সিজদা প্রথা রদ ও মুদ্রায় প্রথম ৪ জন খলিফার নামাঙ্কন শাহজাহানের মৌলবাদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। তাঁর ঐতিহাসিক আবদুল হামিদ লাহোরী তাকে ‘ইসলামের রক্ষক’ বলে অভিহিত করেছেন।

শাহজাহানের ফর্মান জারি

১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি অকস্মাৎ একটি ফর্মান জারী করেন যে, “তার পিতার আমলে যে সকল হিন্দু মন্দিরের নির্মাণ আরম্ভ হয় তা ভেঙে ফেলতে হবে।”

শাহজাহানের ধর্মীয় নীতি সম্পর্কে ঈশ্বরী প্রসাদের অভিমত

ড. ঈশ্বরীপ্রসাদ মন্তব্য করেছেন যে, “ঔরঙ্গজেব-এর আমলে যে গোঁড়া ধর্মীয় নীতি রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রিত করে, শাহজাহানের সময় তার সূচনা হয়।”

ধর্মীয় ক্ষেত্রে শাহজাহানের উদ্দেশ্য

অবশ্য কোনো কোনো লেখক বলেন যে, শাহজাহানের এই ফর্মানটিকে তাঁর ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রমাণ হিসেবে দেখা উচিত নয়। বারাণসীর ধনী লোকেরা, যারা মন্দির তৈরির জন্য অর্থ ব্যয় করছিল, তাদের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যেই শাহজাহান এই কাজ করেন।

শাহজাহানের রাজত্বকাল ধর্মীয় গোঁড়ামির যুগ নয়

সাধারণভাবে তিনি হিন্দুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতি নিয়ে চলেন এমন কথা বলা যায় না। “তাঁর রাজত্বকালকে ধর্মীয় নির্যাতন, গোঁড়ামির যুগ বলা চলে না” (His reign was, by no means, an era of general religious persecution, bigotry and intolerance Tripathy)।

শাহজাহানের উদার ধর্মসহিষ্ণু নীতি

শাহজাহান তাঁর রাজত্বের গোড়ার দিকে কিছুটা ধর্মীয় অনুদারতা দেখালেও, ক্রমে তিনি উদার ধর্মসহিষ্ণু নীতিতে ফিরে যান। কারণ পরবর্তীকালে তিনি মন্দির নির্মাণের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেন নি বা ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করেন নি। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি শিক্ষা নেন।

শাহজাহানের উদার ধর্মসহিষ্ণু পুত্র দারাশিকো

তাঁর রাজত্বকালে আকবরের আলোকপ্রাপ্ত নীতি মোটামুটি অক্ষুণ্ণ ছিল। নতুবা তার পুত্র দারাশিকো তার উদার ধর্মসহিষ্ণু ভাবধারা প্রচার করতে পারতেন না এবং তিনি শাহজাহানের প্রিয়পাত্র হতে পারতেন না।

শাহজাহান গোঁড়া বা রক্ষণশীল নন

তবে শাহজাহান একেবারে গোঁড়া ধর্মীয় নীতি অনুসরণ করেন নি। তা না হলে হিন্দুরা তাঁর দরবারে উচ্চপদ ও ক্ষমতা ভোগ করতে পারত না এবং হিন্দু রাজারা তার সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য দেহের রক্ত ঢেলে দিত না।

উপসংহার :- একথা বলা দরকার যে, বহু শতাব্দীতে ইতিহাস মাত্র একজন আকবর সৃষ্টি করে। শাহজাহানের পক্ষে আকবর হওয়া সম্ভব ছিল না। তবে আকবরের সঙ্গে তুলনা না করলেও তাকে যথেষ্ট উদার বলা চলে।

(FAQ) শাহজাহানের ধর্মীয় নীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আবদুল হামিদ লাহোরি ইসলামের রক্ষক বলেছেন কাকে?

শাহজাহান।

২. কার রাজত্বকালে আকবরের ধর্মসহিষ্ণুতা নীতির বিচ্যুতি ঘটে?

শাহজাহান।

৩. কখন ফর্মান জারি করে হিন্দু মন্দির ভাঙার নির্দেশ দেন?

১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে।

৪. শাহজাহানের কোন পুত্র ধর্মসহিষ্ণু ভাবধারা প্রচার করতেন?

দারাশিকো।

Leave a Comment