আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব, স্বরাজ্য দলের ব্যর্থতা, কংগ্রেসের গঠনমূলক কার্যাবলী,হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়িকতা, হরিজন আন্দোলন, কৃষকদের দুর্দশা, শ্রমিক আন্দোলন, যুব আন্দোলন, বিপ্লবী আন্দোলন, সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন ও নেহরু রিপোর্ট সম্পর্কে জানবো।

মহাত্মা গান্ধী পরিচালিত আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ

ঐতিহাসিক ঘটনাআইন অমান্য আন্দোলনের কারণ
সময়কাল১৯৩০-৩২ খ্রিস্টাব্দ
লক্ষ্যপূর্ণ স্বরাজ
নেতামহাত্মা গান্ধী
পন্থাঅহিংস
আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ

ভূমিকা :- ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা ভারতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনের শোচনীয় ব্যর্থতার পর সমগ্র ভারতব্যাপী আবার এক গণ-আন্দোলনের সূচনাকরে তিনি ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিমূলে প্রবল আঘাত হানেন।

আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ

আইন অমান্য আন্দোলনের পশ্চাতে বেশ কিছু কারণ ছিল। যেমন –

(ক) অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব

  • (১) অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হলেও ভারতীয় জন-জাগরণের ইতিহাসে এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এই আন্দোলন দেশের অভ্যন্তরে এক প্রবল রাজনৈতিক জাগরণের সূচনা করে। এবং দেশবাসীর অন্তরেও প্রবল আশার সঞ্চার হয়।
  • (২) জনসাধারণ যে কোনো মূল্যে তাদের আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য প্রস্তুত ছিল‌।নেতৃমণ্ডলীর পক্ষেও এই অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার প্রতি উদাসীন থাকা সম্ভব ছিল না। সুতরাং বলা চলে যে, অসহযোগ আন্দোলনের গর্ভেই নতুন আন্দোলনের বীজ নিহিত ছিল।

(খ) স্বরাজ্য দলের ব্যর্থতা

  • (১) গান্ধীজির অসহযোগ নীতির বিরুদ্ধে সরকার-বিরোধী মানসিকতা নিয়েই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে ‘স্বরাজ্য দল‘ গঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল আইনসভায় প্রবেশ করে সরকারি কাজে ‘নিরন্তর বাধার সৃষ্টি করেসরকারকে অচল করে দেওয়া।
  • (২) বাস্তবে কিন্তু তা হয় নি। গভর্নর ও গভর্নর জেনারেল বিশেষ ক্ষমতাবলে ঐ সব বাধা অতি সহজেই অতিক্রম করে যান।
  • (৩) দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর ‘স্বরাজ্য দল’-এ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে, স্বরাজীরা নানা প্রলোভনের শিকার হন এবং অনেকেই আবার কংগ্রেসের মূল স্রোতে ফিরে আসেন। ‘স্বরাজ্য দল’ জাতির আশা পূরণে ব্যর্থ হয়।

(গ) কংগ্রেসের গঠনমূলক কার্যাবলী

  • (১) অসহযোগ আন্দোলনের পর কট্টর গান্ধীবাদীরা গ্রাম সংগঠন, হরিজন আন্দোলন, খাদির প্রচার, মাদক বর্জন প্রভৃতি গঠনমূলক কাজ চালিয়ে যান। তাঁদের উদ্যোগে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয় বিদ্যালয়, খাদি প্রতিষ্ঠান ও গান্ধী আশ্রম গড়ে ওঠে।
  • (২) এইভাবে গান্ধীজির ভাবধারা ভারতের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ে। কৃষক-মজুর ও হরিজন সম্প্রদায় গান্ধীবাদীদের কাছের মানুষে পরিণত হয়। এইভাবে জাতীয় কংগ্রেস জনসাধারণের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়।

(ঘ) হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা

  • (১) অসহযোগ আন্দোলনের পর সারা দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপক প্রসার ঘটে এবং দেশের নানা স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কোহাটের দাঙ্গায় ১৫৫ জন অ-মুসলিম নিহত হয়। ১৯২৫-এ ১৬টি এবং ১৯২৬-এ ২৫টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়।
  • (২) ১৯২৬-এ এক ধর্মান্ধ মুসলিমের হাতে স্বামী শ্রদ্ধানন্দ নিহত হন। ধর্মান্ধ হিন্দুরাও বসে ছিল না। তারা ‘শুদ্ধি’, ‘সংগঠন’, গোহত্যা-বিরোধী আন্দোলন, উর্দুর বিরোধিতা প্রভৃতির মাধ্যমে নিজেদের কর্মধারা অব্যাহত রাখে।
  • (৩) ইংরেজ সরকারও এই বিরোধে নানা ভাবে উস্কানি দিতে থাকে। উত্তরপ্রদেশের ছোটলাট হারকুট বাটলার বড়লাট লর্ড রিডিং-কে লেখেন যে, “হিন্দু মুসলিমরা পরস্পরকে ঘৃণা করতে এত ব্যস্ত যে, আমাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের মত সময় তাদের হাতে নেই।”
  • (৪) জাতীয় জীবনের এই অন্ধকারময় দিনে গান্ধীজি উপলব্ধি করেন যে, পরস্পরকে ঐক্যবদ্ধ করে গঠনমূলক কর্ম বা জাতীয় আন্দোলনে সামিল করতে না পারলেএই হিংসাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িকতা বন্ধ হবে না। এই উদ্দেশ্যে তিনি একুশ দিন অনশন করেন (১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৯২৪)।

(ঙ) হরিজন আন্দোলন

  • (১) হিন্দু সমাজের নিম্নবর্ণের লোকদের প্রতি উচ্চবর্ণের অবিচার ও অনাচারের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ ওঠে। বিহারের যাদব সম্প্রদায় উচ্চবর্ণের ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
  • (২) বিখ্যাত কৃষক নেতা স্বামী সহজানন্দ ভূমিহার ও ব্রাহ্মণ বিরোধী সংগঠন গড়ে তোলেন। মহারাষ্ট্রের সত্যশোষক আন্দোলন -ও ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও ব্রাহ্মণ-বিরোধী।
  • (৩) ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর হরিজন ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মুখপাত্র হিসেবে আইনসভায় হরিজন ও অস্পৃশ্য শ্রেণীর জন্য আসনসংরক্ষণ ও পৃথক নির্বাচনের দাবি জানান। এছাড়াহরিজনদের জন্য পানীয় জলের কূপ, পুষ্করিণী ব্যবহার এবং মন্দিরে প্রবেশের অধিকার দাবি করা হয়।
  • (৪) মানবতার প্রতীক গান্ধীজি হরিজনদের পক্ষে এগিয়ে আসেন। তিনিই তাদের ঈশ্বরের সন্তান বা ‘হরিজন’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন যে, হরিজনদের প্রতি অবহেলা করলে হিন্দুধর্ম ধ্বংস হয়ে যাবে।
  • (৫)  হরিজনদের প্রতি গান্ধীজির মনোভাব তাদের আস্থা অর্জনে সাহায্য করে এবং আইন অমান্য আন্দোলনে গান্ধীজি তাদের ব্যাপক সহায়তা পান। গান্ধীজি উপলব্ধি করেন যে, ভারতে যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ চলেছে তা বন্ধ করার জন্য এক্ষুনি সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রাম শুরু করা উচিত।

(চ) কৃষকদের দুর্দশা

  • (১) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে যে বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দেয় তার ফলে ভারতীয় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মন্দার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় কৃষিজাত পণ্যের চাহিদা ও মূল্য বিপুল পরিমাণে হ্রাস পায়, কিন্তু ভারতে আমদানিকৃত শিল্পজাত পণ্যের মূল্য সে তুলনায় হ্রাস পায় নি।
  • (২) এর প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে শুভপ্রদ হয় নি। এই সময় ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও শিল্পজাত পণ্যের তুলনায় কৃষি-পণ্যের মূল্য প্রবলভাবে হ্রাস পায়। কৃষক তার পণ্য বিক্রি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় শিল্পজাত দ্রব্যাদি ক্রয় করত।
  • (৩) এছাড়া, কৃষককে আবার সরকারের কর, জমিদারের খাজনা এবং মহাজনের সুদ মেটাতে হত। এই সব কারণে কৃষককে এক সংকটাপন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এই অবস্থায় বিভিন্ন কৃষক সভাগুলি এবং কমিউনিস্টরা কৃষকদের পক্ষে আন্দোলনে নামে। কৃষকদের শোচনীয় দুর্দশা আইন অমান্য আন্দোলনের অন্যতম কারণ।

(ছ) শ্রমিক আন্দোলন

  • (১) বেতন হ্রাস, শ্রমিক ছাঁটাই, লক আউট প্রভৃতির প্রতিবাদে ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যেও তখন প্রবল অসন্তোষ দেখা দেয়। ভারতে তখন এমন কোনো শিল্প ছিল না, যাতে শ্রমিক সংগঠন গড়ে ওঠে নি।
  • (২) ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে কমিউনিস্ট পার্টির অংশগ্রহণের ফলে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের তীব্রতা বহু গুণে বৃদ্ধি পায়। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে খড়্গাপুর রেল কারখানায় ধর্মঘট, ১৯২৮-এ লিলুয়ায় রেল ধর্মঘট, বাংলার পাটশিল্প এবং বোম্বাই-এর বস্ত্রশিল্পে ধর্মঘট অতি উল্লেখযোগ্য।
  • (৩) সরকারি অত্যাচার, এমনকী গুলিচালনা সত্ত্বেও ধর্মঘটীরা তাদের দাবিতে অবিচল ছিল। এক কথায়, এই সময় দেশে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার আমদানি, কমিউনিস্ট ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দলের নেতৃত্বে শ্রমিক-মজুর ও কিষাণদের সংঘবদ্ধ আন্দোলন এবং কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে নানা দমন-পীড়ন দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
  • (৪) কেবলমাত্র এই নয়, ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণীও সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। সরকারের অসম বাণিজ্যনীতিতে তারা গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। তারা উপলব্ধি করে যে, প্রকৃত ‘স্বরাজ’ ব্যতীত ইংরেজ পুঁজিপতিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পারা যাবে না।

(জ) যুব আন্দোলন

  • (১) ভারতীয় যুব সমাজও সেদিন চঞ্চল ও অশান্ত হয়ে উঠেছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন যুব সংগঠন, যুব লীগ ও যুব সমিতি। তরুণ জওহরলাল নেহরুসুভাষচন্দ্র বসু সেদিন যুব সমাজের আদর্শে পরিণত হয়েছেন।
  • (২) তাঁদের কণ্ঠে সেদিন ধ্বনিত হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ, ধনতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্র বিরোধী বক্তব্য। সারা ভারত জুড়ে বিভিন্ন যুব সম্মেলনে তাঁরা ভাষণ দিচ্ছেন। লাহোরে প্রতিষ্ঠিত হয় নওজোয়ান ভারত সভা।
  • (৩) জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ ভারতীয় জাতীয়তা বাদী আন্দোলনের লক্ষ্য হিসেবে ‘ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস’-এর কথা বললে জওহরলাল ও সুভাষচন্দ্র ‘ইণ্ডিয়ান ইন্ডিপেণ্ডেস লীগ’ গঠন করে ‘পূর্ণ স্বাধীনতার’ পক্ষে প্রচারে নামেন। গান্ধীজি উপলব্ধি করেন যে, আর দেরি করলে যুব সমাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না।

(ঝ) বিপ্লবী আন্দোলন

  • (১) ভারতীয় বিপ্লবীরাও তখন যথেষ্ট সক্রিয়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার কুখ্যাত পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা করে গোপীনাথ সাহা ফাঁসিতে প্রাণ দেন।
  • (২) ১৯২৫ সালের আগস্ট মাসে উত্তরপ্রদেশের বিপ্লবীরা কাকোরীতে ট্রেন ডাকাতি করে সরকারি টাকা লুঠ করেন। এই উপলক্ষে শুরু হয় কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলা।
  • (৩) ১৯২৫-এর ১০ই নভেম্বর পুলিশ দক্ষিণেশ্বর -এর একটি বাড়িতে বিরাট বোমার কারখানা আবিষ্কার করে। ১৯২৬-এর মে মাসে পুলিশের স্পেশাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ভূপেন চ্যাটার্জী আলিপুর জেলের অভ্যন্তরে দক্ষিণেশ্বর বোমার মামলার আসামিদের হাতে নিহত হন।
  • (৪) ভগৎ সিং -এর নেতৃত্বাধীন হিন্দুস্থান সোসালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের বিপ্লবীরা লালা লাজপৎ রায় -এর হত্যাকারী পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন (১৭ই ডিসেম্বর, ১৯২৮)।
  • (৫) ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লীর কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের অধিবেশনে বোমা নিক্ষেপ করেন (৮ই এপ্রিল, ১৯২৯)। দীর্ঘ ৬৩ দিন অনশনের পর কারাভ্যন্তরে প্রাণত্যাগ করেন লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি যতীন দাশ (১৩ই সেপ্টেম্বর, ১৯২৯)।
  • (৬) ১৯২৯-এর ডিসেম্বরে বিপ্লবীরা বোমা ফেললেন বড়লাটের স্পেশাল ট্রেনের ওপর। এই সময়েই কলকাতার মেছুয়া বাজারে আবিষ্কৃত হল একটি বোমার কারখানা (১৮ই ডিসেম্বর, ১৯২৯)। এই সব ঘটনা জাতির প্রাণে আগুন জ্বেলে দেয়।
  • (৭) যুব সমাজ তখন যে-কোন ত্যাগের জন্য প্রস্তুত ছিল। গান্ধীজি উপলব্ধি করেন যে অগ্নিকুণ্ড ভারতকে যুব সম্প্রদায়ের হিংসাশ্রয়ী রাজনৈতিক কবল থেকে সরিয়ে আনতে গেলে পুনরায় একটি অহিংস আন্দোলন শুরু করা ভিন্ন গত্যন্তর নেই।

(ঞ) সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন

  • (১) ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ভারতের সাংবিধানিক অগ্রগতি সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য ‘শ্বেতাঙ্গ-সর্বস্ব’ সাইমন কমিশন নিয়োগ করলে ভারতীয় রাজনীতি প্রাণচঞ্চল হয়েওঠে।
  • (২) যুব সমাজ অতি সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সারা দেশে এক অভূতপূর্ব উন্মাদনা দেখা দেয়। সাইমন কমিশনকে কেন্দ্র করে লাহোরে পুলিশের লাঠি চালনায় শ্রদ্ধেয় প্রবীণ নেতা লালা লাজপৎ রায় মারা যান। এইভাবে কংগ্রেসের সামনে এক বৃহত্তর গণ-আন্দোলন গড়েতোলার সুযোগ আসে।

(ট) নেহরু রিপোর্ট

  • (১) ভারত সচিব লর্ড বার্কেনহেড পর পর দু’বার ভারতীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি ব্যঙ্গ করে বলেন যে, তাঁরা কখনই সর্বদলের গ্রহণযোগ্য একটি সংবিধান রচনা করতে পারবেন না। এই ব্যঙ্গের উপযুক্ত জবাব দেবার জন্য মতিলাল নেহরুর সভাপতিত্বে একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠিত হয়।
  • (২) এই কমিটি ‘নেহরু কমিটি’ নামে পরিচিত। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর এই কমিটি ভারতীয় সংবিধানের একটি খসড়া প্রকাশ করে, যা নেহরু রিপোর্ট নামে পরিচিত।
  • (৩) এই রিপোর্টে ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের লক্ষ্য হিসেবে ‘ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস’ বা ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়।
  • (৪) জওহরলাল-সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন যুবগোষ্ঠী এর বিরোধিতা করে ‘পূর্ণ স্বরাজ’ বা স্বাধীনতার দাবি করে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে এই ব্যাপারে প্রবল বিতণ্ডা হয়।

কলকাতা কংগ্রেস

শেষ পর্যন্ত গান্ধীজির মধ্যস্থতায় স্থির হয় যে, আগামী এক বছরের মধ্যে সরকার ‘ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস’-এর দাবি মেনে না নিলে জাতীয় কংগ্রেস ‘পূর্ণ স্বরাজ’-কেই তাদের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করবে।

উপসংহার :- ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে সভাপতি জওহরলাল নেহরু আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব দেন এবং আন্দোলন পরিচালনার সকল দায়িত্ব গান্ধীজির ওপর অর্পণ করা হয়।

(FAQ) আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয় কখন?

১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে।

২. আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্বপালন করেন কে?

মহাত্মা গান্ধী।

৩. আইন অমান্য আন্দোলনের লক্ষ্য কি ছিল?

পূর্ণ স্বরাজ বা স্বাধীনতা অর্জন।

Leave a Comment