শিবাজীর পরবর্তী বংশধরগণ

শিবাজীর পরবর্তী বংশধরগণ প্রসঙ্গে সুবাদারদের উপর নির্ভরশীল, জয়সিংহের সামরিক চাতুর্য, দাক্ষিণাত্যের পরিস্থিতি বদল, ঔরঙ্গজেবের রাজনৈতিক কর্মকেন্দ্র দাক্ষিণাত্য, শম্ভুজি, অদূরদর্শী শম্ভুজি, শম্ভুজির মৃত্যু, রাজারাম, দ্বিতীয় শিবাজী, সম্পর্কে জানবো।

শিবাজীর পরবর্তী বংশধরগণ

বিষয়শিবাজির পরবর্তী বংশধরগণ
মারাঠা নেতাশিবাজি
মৃত্যু১৬৮০ খ্রি
উত্তরসূরিশম্ভুজি
পুরন্দরের সন্ধি১৬৬৫ খ্রি
শিবাজীর পরবর্তী বংশধরগণ

ভূমিকা :- ঔরঙ্গজেব ১৬৫৮ থেকে ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উত্তর ভারত-এর রাজনীতিতে, বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের উপজাতিদের বিদ্রোহ ও মারোয়াড়ের সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে বিব্রত হওয়ায়, দাক্ষিণাত্যের দিকে নজর দেওয়ার সময় পান নি।

সুবাদারদের উপর নির্ভরশীল

এই সময়ে সুবাদারদের ওপর নির্ভর করেই সম্রাট তাঁর দাক্ষিণাত্য নীতি পরিচালনা করতেন।

জয়সিংহের সামরিক চাতুর্য

১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সেনাপতি জয়সিংহের সামরিক চাতুর্য ও কূটনীতির দ্বারা তিনি শিবাজিকে পর্যুদস্ত করতে সমর্থ হন এবং পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষর করতে শিবাজিকে বাধ্য করেন।

দাক্ষিণাত্যের পরিস্থিতি বদলে

দাক্ষিণাত্যের ব্যাপারে ঔরঙ্গজেব নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু মারাঠাদের সঙ্গে দাক্ষিণাত্যের প্রধান শক্তিগুলি বিজাপুর ও গোলকুন্ডার সদ্ভাবের ফলে এবং মারোয়াড়ের রাজপুতদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় বিদ্রোহী যুবরাজ আকবর শিবাজির পুত্র শম্ভুজির কাছে আশ্রয় গ্রহণ করার ফলে, দাক্ষিণাত্যের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায়।

শিবাজীর পরবর্তী মারাঠা নেতা শম্ভুজি

১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে শিবাজির মৃত্যু হলে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র শম্ভুজি সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন আরামপ্রিয় ও দুশ্চরিত্র। মারাঠাদের সংঘবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা তিনি উপলব্ধি করেন নি এবং মুঘলদের শক্তি সম্পর্কেও তিনি অবহিত ছিলেন না।

ঔরঙ্গজেবের রাজনৈতিক কর্মকেন্দ্র দাক্ষিণাত্য

তখন ঔরঙ্গজেব দ্রুত ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দে রাজপুতদের সঙ্গে সন্ধি করে, দাক্ষিণাত্যের দিকে যাত্রা করেন এবং ১৬৮২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ, অর্থাৎ তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যকেই তিনি তাঁর রাজনৈতিক কর্মকেন্দ্রের সদর দপ্তরে পরিণত করেন।

শম্ভুজির সাহায্যের প্রত্যাশায় আকবর

যুবরাজ আকবর শম্ভুজির সাহায্যের প্রত্যাশায় প্রায় ছ’বছর তাঁর রাজদরবারে ছিলেন। যথাসময়ে যুবরাজ আকবরকে শম্ভুজি সাহায্য করলে, তৎকালীন ইতিহাসের গতি অন্যরকম হতে পারত।

আকবরের পারস্যে পলায়ন

কিন্তু শম্ভুজি ঔরঙ্গজেবের ভয়ে যুবরাজ আকবরকে নিরাশ করেন এবং যুবরাজ আকবর পারস্যে পলায়ন করেন।

অদূরদর্শী শম্ভুজি

ঔরঙ্গজেব যখন তাঁর সমস্ত শক্তি গোলকুন্ডা ও বিজাপুরের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেন, তখন অদূরদর্শী শম্ভুজি বিজাপুর ও গোলকুন্ডাকে কোনোরকম সাহায্য দেন নি। বিজাপুর ও গোলকুন্ডার পতনের পর ঔরঙ্গজেব মারাঠাদের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপ করেন।

শম্ভুজির মৃত্যু

মুঘল বাহিনীর হাত থেকে শম্ভুজি আত্মরক্ষা করতে অসমর্থ হন এবং তিনি অকস্মাৎ মন্ত্রী কবি কৈলাস সহ ধৃত হন। ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে শম্ভুজির প্রাণদণ্ড হয়। বহু দুর্গসহ বিখ্যাত রায়গড় মুঘলদের হস্তে পতিত হয়। তাঁর শিশুপুত্র শাহু মুঘলদের হস্তে বন্দি হন।

শিবাজীর পরবর্তী কালে মারাঠা নেতা রাজারাম

  • (১) শম্ভুজির মৃত্যুর পর শিবাজির দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান রাজারাম মারাঠা রাজ্যের রাজা বলে ঘোষিত হন। কিন্তু মারাঠাদের রাজধানী মুঘলদের হস্তে পতিত হওয়ায়, প্রকৃতপক্ষে তাদের কোনো কেন্দ্রীয় সরকার ছিল না।
  • (২) তা সত্ত্বেও শিবাজির দ্বারা অনুপ্রাণিত মারাঠা জাতি মুঘলশক্তিকে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কৌশলে পর্যুদস্ত করে তোলে। আট বছর অবরোধ করার পর ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সেনাপতি জুলফিফার খান জিঞ্জি অধিকার করেন।
  • (৩) রাজারাম জিঞ্জি থেকে পলায়ন করে সাতারা দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং পুনরায় নতুন করে মারাঠা সৈন্য গঠন করেন। ঔরঙ্গজেব একে একে মারাঠা দুর্গগুলি দখল করেন। অবশেষে ঔরঙ্গজেব স্বয়ং সাতারা দুর্গসহ কয়েকটি দুর্গ দখল করেন।

শিবাজীর পরবর্তী অন্যতম বংশধর দ্বিতীয় শিবাজী

  • (১) ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে রাজারামের মৃত্যুর পর তাঁর শিশুপুত্র দ্বিতীয় শিবাজি সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং রাজারামের বিধবা স্ত্রী তারাবাঈ পুত্রের অভিভাবিকা নিযুক্ত হয়ে রাজকার্য পরিচালনা করেন।
  • (২) তারাবাঈ প্রখর বুদ্ধিসম্পন্না ছিলেন এবং রাজারামের শাসনকালে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। তাঁর বুদ্ধিকৌশলে মারাঠারা সুসংবদ্ধ হয় এবং মুঘল সুবায় আক্রমণ চালায়।
  • (৩) দাক্ষিণাত্য ও মধ্য ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে মারাঠাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ঔরঙ্গজেব সর্বশক্তি নিয়োগ করেও, মারাঠাদের চিরতরে নির্মূল করতে সমর্থ হন নি।

উপসংহার :- ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর, ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মারাঠারা প্রবল শক্তিরূপে আত্মপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

(FAQ) শিবাজীর পরবর্তী বংশধরগণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. শিবাজীর পর কে মারাঠা সিংহাসনে আরোহণ করেন?

শম্ভুজি।

২. শম্ভুজির প্রাণদণ্ড হয় কবে?

১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে।

৩. ঔরঙ্গজেবের মৃত্যু হয় কখন?

১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে।

৪. দ্বিতীয় শিবাজীর অভিভাবিকা কে ছিলেন?

মাতা তারাবাঈ।

Leave a Comment