বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের কারণ

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের কারণ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে বিরোধ, তালিকোটার যুদ্ধ, শক্তি ক্ষয়, উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব, সামরিক সংগঠনের ত্রুটি, ভাড়াটিয়া সেনার ব্যবহার, শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা, যোগ্য শাসকের অভাব, প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের বিদ্রোহ, অর্থনীতির ভিত্তি দুর্বল ও বাণিজ্যিক দুর্বলতা সম্পর্কে জানবো।

বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের কারণ

বিষয়বিজয়নগর রাজ্যের পতনের কারণ
তালিকোটার যুদ্ধ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ
শ্রেষ্ঠ রাজাকৃষ্ণদেব রায়
বংশচারটি
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের কারণ

ভূমিকা :- ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগে দক্ষিণ ভারতে ইসলামি আক্রমণ প্রতিহত করে বিজয়নগর সাম্রাজ্য নিজস্ব প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়। ১৬৪৬ সাল পর্যন্ত এই সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। তবে ১৫৬৫ সালে তালিকোটার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে এই সাম্রাজ্যের পতনের সূত্রপাত ঘটে।

প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে বিরোধ

বিজয়নগরের পতনের কারণের মধ্যে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সঙ্গে বিরোধের উল্লেখ করা দরকার। বাহমনী-বিজয়নগর সংঘর্ষ দীর্ঘকাল ধরে চলে। বাহমনী রাজ্য পরে ৫টি ভাগে হলেও তাদের সঙ্গে বিজয়নগরের প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান হয়নি।

তালিকোটার যুদ্ধ

প্রতিবেশী মুসলিম রাজ্যগুলি সম্মিলিতভাবে ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালিকোটার যুদ্ধে বিজয়নগরকে পরাস্ত করে, বিজয়নগরের রাজধানী লুন্ঠন করে।

শক্তি ক্ষয়

এছাড়া উড়িষ্যা ও পাণ্ড্য রাজ্যের সঙ্গে নিরন্তর সংঘাতে বিজয়নগরের শক্তি ক্ষয় হয়।

উত্তরাধিকার দ্বন্দ্ব

বিজয়নগরের সিংহাসনে উত্তরাধিকারের গণ্ডগোল প্রশাসনকে দুর্বল করে ফেলে। সিংহাসন নিয়ে রাজার বিরুদ্ধে রাজপরিবারের লোকেরা এবং মন্ত্রীরা সর্বদাই চক্রান্ত করত। এরই ফলে ঘন ঘন রাজবংশের পরিবর্তন হয়। তালিকোটার যুদ্ধের পর আরবিডু বংশ সিংহাসন অধিকার করলেও বিজয়নগরের পূর্ব গৌরব ফিরে আসে নি।

সামরিক সংগঠনের ত্রুটি

  • (১) বিজয়নগরের সামরিক সংগঠনের ত্রুটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য। বিজয়নগর বাহিনীতে আগ্নেয়াস্ত্র তেমন কিছু ছিল না। পর্তুগীজদের সঙ্গে বিজয়নগরের মিত্রতা থাকলেও কামান ও অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জার দিকে বিজয়নগরের রাজারা নজর দেন নি।
  • (২) কিছু আগ্নেয়াস্ত্র বিজয়নগর রাজাদের থাকলেও বাহমনী ও বাহমনীর উত্তরাধিকারী সুলতানিগুলির তুলনায় তা হীন ছিল। তালিকোটের যুদ্ধে মুসলিম সুলতানিগুলির কামানের আক্রমণ ছিল বাহমনীর পক্ষে মারাত্মক।

ভাড়াটিয়া সেনার ব্যবহার

বিজয়নগরের রাজারা কিছুকাল ভাল আরবী ঘোড়া ও তুর্কী তীরন্দাজ নিয়োগ করে সেনাদলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভাড়াটিয়া সেনাদের দ্বারা বিজয়নগরের শক্তি বাড়ান যায় নি। স্থানীয় লোকেদের নতুন সামরিক কৌশলে সুশিক্ষিত করে বাহিনী গঠন না করায় বিজয়নগর দুর্বল হয়ে পড়ে।

শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা

বিজয়নগরের শাসনব্যবস্থার মূলে গভীর দুর্বলতা ছিল। সামন্ত ও প্রাদেশিক শাসনকর্তারা ছিল খুবই ক্ষমতাশালী। এই সামন্তশ্রেণীর আনুগত্যের ওপরেই বিজয়নগরের নিরাপত্তা নির্ভর করত।

সামন্ত শ্রেনীর ঔদ্ধত্য

এদিকে সিংহাসনে সকল সময় যোগ্য লোক না থাকলে সামন্ত শ্রেণীকে বশে রাখা সম্ভব ছিল না।

যোগ্য শাসকের অভাব

কৃষ্ণদেব রায়ের পর বিজয়নগরের সিংহাসনে কোনো যোগ্য রাজা না থাকায় সামন্তশ্রেণীর প্রভাব বেড়ে যায়।

প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের বিদ্রোহ

আরবিডু বংশের আমলে প্রাদেশিক শাসনকর্তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে নিজ নিজ অঞ্চলে স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করে।

অর্থনীতির ভিত্তি দুর্বল

ডঃ বৈদ্যের মতে, বিজয়নগরের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না। কারণ, সাম্রাজ্যের ভূমি-রাজস্বের একটি বড় অংশ প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও সমর নায়করা ভোগ করত।

বাণিজ্যিক দুর্বলতা

বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য সকল রাজা সমান উৎসাহ দেখাতেন না। কৃষ্ণদেব রায় বাণিজ্যে উৎসাহী হলেও অন্য রাজারা তা ছিলেন না। তাছাড়া পর্তুগীজদের পশ্চিম উপকূলে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুযোগ দিয়ে বিজয়নগরের রাজারা ভুল করেন।

আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাণে অনুৎসাহ

ইরানী যুদ্ধের ঘোড়া খরিদের জন্য তাঁরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন। তুলনামুলকভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাণের জন্য তারা যত্ন নেন নি।

উপসংহার :- বর্তমান কর্ণাটক রাজ্যের হাম্পিতে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ একটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থল। মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় পর্যটক ডোমিনগো পায়েজ, ফার্নাও নূনিজ, নিকোলো কন্টি প্রমুখের রচনা এবং স্থানীয় সাহিত্য থেকে এই সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়।

(FAQ) বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পতনের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বিজয়নগর রাজ্যের বিখ্যাত রাজার নাম কি?

কৃষ্ণদেব রায়।

২. কোন যুদ্ধে বিজয়নগর চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত হয়?

তালিকোটার যুদ্ধ।

৩. বিজয়নগর রাজ্যে আগত দুজন পর্যটকের নাম লেখ।

ডোমিনিগো পায়েজ ও নিকলো কন্টি।

৪. বিজয়নগর রাজ্যের কোন বংশের আমলে প্রাদেশিক শাসনকর্তারা বিদ্রোহ করে?

আরবিডু বংশ।

Leave a Comment