বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রসঙ্গে নিকলো কন্টির বিবরণ, পায়েজের বিবরণ, নুনিজের বিবরণ, বারবোসার বিবরণ, কৃষি, কৃষকদের অবস্থা, শিল্প, বাণিজ্য, বাণিজ্যিক সম্পর্ক, আমদানি ও রপ্তানি দ্রব্য, সংঘ ও মুদ্রা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানবো।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা
বিষয় | বিজয়নগরের অর্থনৈতিক অবস্থা |
প্রধান ভিত্তি | কৃষি |
শিল্প | ধাতু ও গন্ধদ্রব্য |
মুদ্রা | সোনা ও তামা |
ভূমিকা :- বৈদেশিক ভ্রমণকারীদের বিবরণ থেকে বিজয়নগর রাজ্যের বিরাট অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা জানা যায়। এই সকল পর্যটকদের বিবরণ অনেকাংশে সত্য।
নিকলো কন্টির বিবরণ
১৪২০ খ্রিস্টাব্দে ইতালীয় পর্যটক নিকলো কন্টি বিজয়নগরে আসেন। তিনি বলেছেন যে, “বিজয়নগর শহরে প্রায় ৯০ হাজার যোদ্ধা ছিল। ভারতের যে কোনো রাজা অপেক্ষা তিনি শক্তিশালী ছিলেন।”
আবদুর রজ্জাকের বিবরণ
১৪৪২ খ্রিস্টাব্দে আবদুর রজ্জাক বিজয়নগরে আসেন। তিনি বলেছেন যে, “রাজার কোষাগারে ঢালাই সোনা জমা থাকত। ধনী দরিদ্র সকলেই বিভিন্ন অঙ্গে গহনা পরত।”
পায়েজের বিবরণ
পর্তুগীজ পর্যটক ডোমিনিগো পায়েজ বলেছেন যে, “রাজার অধীনে ছিল বহু হাতি, সেনা ও ধনরত্ন …. বিজয়নগরে সকল জাতির লোক দেখা যেত। বিজয়নগরে দামী পাথর, হীরকের লোভে এরা আসত। শহরের বাজারে চাউল, গম, খাদ্যশস্য, যব, কলাই, ডাল মজুত থাকত এবং খাদ্যদ্রব্যের দাম ছিল খুব সস্তা।”
বারবোসার বিবরণ
বারবোসা নামে এক ভ্রমণকারী বলেছেন যে, বিজয়নগর শহরটি ছিল বিস্তৃত, জনবহুল এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে সদাই চঞ্চল। এখানে মালাবার থেকে আসত চন্দন, অগুরু, রান্নার মশলা, পেগু থেকে আসত মুক্তা এবং চীন থেকে রেশম।
কৃষি
বিজয়নগরের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি ছিল কৃষি। অন্ধ্র ও তামিলনাডুর জমি সেচ সেবিত ছিল। কিন্তু বিজয়নগরে জমির মালিকানা ক্রমে কৃষকদের হাত থেকে জমিদার শ্রেণীর হাতে চলে যায়। নুনিজ একথা স্বীকার করেছেন যে, সাধারণ কৃষকরা তাদের উৎপন্ন ফসলের ৯/১০ ভাগ অমরনায়কদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হত।
কৃষকদের অবস্থা
- (১) বৈদেশিক পর্যটকরা গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক খবর জানতেন বলে মনে হয় না। তারা বিজয়নগরের সমৃদ্ধি দেখে মুগ্ধ হন। কিন্তু কৃষকের দুর্দশা বিশেষভাবে লক্ষ্য করেন নি।
- (২) কৃষকরা শীতকালে কুরুভয়ি বা ধানের ১/৩ ভাগ রাজস্ব দিত। তিল, ছোলা প্রভৃতি রবি ফসলের ১/৪ ভাগ দিত। সেচবিহীন জমিতে জোয়ার, বাজরা ফলালে ১/৬ ভাগ দিত। এছাড়া অঞ্চল ভেদে রাজস্বের হ্রাস বৃদ্ধি হত।
- (৩) কৃষকরা সামরিক কর, বিবাহ কর পেশা কর দিত। তারা খড়ের চালার নীচে দারিদ্রের মধ্যে জীবন কাটাত। মন্দির, মঠ ও অমরনায়করা সরকার থেকে জমি বন্দোবস্ত পায়। এদিকে গ্রামীণ কৃষকরা ভাড়াটিয়া প্রজায় বা ‘পায়কারিতে’ পরিণত হত।
- (৪) কৃষক বা পায়কারিরা মন্দিরের মোহান্ত বা অমরনায়কদের কাছে ঋণে আবদ্ধ থাকত। ঋণ পরিশোধে অসমর্থ হলে তাদের জমি সামন্ত বা মন্দিরগুলি অধিগ্রহণ করে কৃষককে পায়কারি বা ভূমিদাসে পরিণত করে। এজন্য বিজয়নগরে মাঝে মাঝে কৃষক বিদ্রোহ হত।
বিশেষ শ্রেণীর হাতে সম্পদ সীমাবদ্ধ
বৈদেশিক পর্যটকরা বিজয়নগরের যে সম্পদ ও সমৃদ্ধির কথা বলেছেন তা একটি বিশেষ শ্রেণীর হাতে সীমাবদ্ধ ছিল।
শিল্প
বিজয়নগরের খনি, ধাতুশিল্প ও গন্ধদ্রব্যের শিল্প বিখ্যাত ছিল। বিজয়নগরের বস্ত্রশিল্পও উন্নত ছিল। এছাড়া কর্মকার, ছুতার প্রভৃতির কাজও লোকে করত।
বাণিজ্য
- (১) বিজয়নগরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্য চলত। গরুর গাড়ি, বলদ বা ঘোড়ার পিঠে বা মাথায় করে মাল পরিবহন করা হত। বিজয়নগরের ৩০০ বন্দর ছিল বলে আবদুর রজ্জাক বলেছেন। প্রধান বন্দরগুলি থেকে বৈদেশিক বাণিজ্য চলত।
- (২) বহির্বাণিজ্য থেকে বিজয়নগরের বহু অর্থসম্পদ আসত। জলপথে মাল পরিবহনের জন্য জাহাজগুলি মালদীভ থেকে আনা হত। পর্তুগীজরা আসার পর বিজয়নগরের বৈদেশিক বাণিজ্য, প্রধানত তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
বাণিজ্যিক সম্পর্ক
বিজয়নগরের সঙ্গে চীন, মালয়, ব্রহ্ম, আরবদেশ, পারস্য, পর্তুগাল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় বাণিজ্য চলত।
আমদানি ও রপ্তানি দ্রব্য
আরবী ঘোড়া, প্রবাল, মুক্তা, চীনা রেশম ও ভেলভেট বিজয়নগরে আমদানি হত। কাপড়, চাউল, লোহা, গন্ধক, চিনি, মশলা প্রভৃতি রপ্তানি করা হত।
সংঘ
শিল্পী ও বণিকদের আলাদা সঙ্ঘ ছিল। বণিক সঙ্ঘগুলি ছিল প্রভাবশালী। এর সাহায্যে বিজয়নগরের স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় বণিকরা তাদের প্রভাব খাটাত। বণিকদের প্রভাব বাড়লেও, বন্দর এবং নগরগুলির কর ও শুল্ক আদায় সামন্ত ভূস্বামীদের হাতে থাকায় বণিকদের অসুবিধা হত। এজন্য বণিকরা সঙ্ঘের মাধ্যমে তাদের প্রভাব খাটাত।
মুদ্রা ব্যবস্থা
বিজয়নগরে সোনার ও তামার মুদ্রা চলত। রূপার মুদ্রারও প্রচলন ছিল। মুদ্রায় দেব-দেবীর ও জন্তুর প্রতিকৃতি ছাপা থাকত।
উপসংহার :- বিজয়নগরে উচ্চবিত্ত ও শাসকশ্রেণীর জীবন সুখে, সম্পদে, বিলাসে ও বৈভবে পূর্ণ হলেও সাধারণ লোক ছিল করভাবে জর্জরিত।
(FAQ) বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
কৃষি।
সোনা ও তামা।
আরবি ঘোড়া।
চীন, মালয়, পারস্য, পোর্তুগাল।