বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নগরায়ন প্রসঙ্গে প্রদেশের রাজধানী শহর, বিখ্যাত তীর্থস্থান, শহর, বিজয়নগর শহর, ইক্ষেরী শহর, বিদনুর শহর, সাগর শহর ও জারসোপ্পে নগর সম্পর্কে জানবো।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নগরায়ন
বিষয় | বিজয়নগর সাম্রাজ্যে নগরায়ণ |
সাম্রাজ্য | বিজয়নগর সাম্রাজ্য |
সময়কাল | ১৩৩৬-১৬৪৬ খ্রি: |
শহর | শ্রীরঙ্গপত্তন, তাঞ্জাভুর, মাদুরাই |
রাজধানী শহর | বিজয়নগর |
ভূমিকা :- মধ্যযুগে দক্ষিণ ভারত সমুদ্র ও স্থল বাণিজ্যে যেভাবে সম্প্রসারিত হয় তার ফলে বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কেন্দ্র বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে এবং বাণিজ্যের প্রয়োজনে জলপথ ও স্থলপথের সূত্র ধরে বিভিন্ন স্থানে শহর ও নগরের উৎপত্তি ঘটে।
বৈদেশিক বিবরণ থেকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নগরায়নের তথ্য
বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ, লিপি, সমকালীন ও প্রায় সমকালীন সাহিত্য থেকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে যে নগরগুলি গড়ে উঠেছিল তার বিবরণ পাওয়া যায়। বৈদেশিক বিবরণ থেকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী শহর বিজয়নগর সহ ছোটো-বড়ো অনেকগুলি শহরের পরিচয় পেয়েছি।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশের রাজধানী শহর
বিভিন্ন প্রদেশের রাজধানী শহরের পরিচয় পেয়েছি। যেমন – আরগা (Araga), ইক্ষারী (lkkari), বডনুর (Badnur), শ্রীরঙ্গপত্তন (Srirangapatna), পেনুকোণ্ডা (Penukonda), উদয়গিরি (Udayagiri), কোন্দাভিডু ( Kondaveedu ), মাদুরাই (Madurai ), তাঞ্জাভুর ( Thanjavur)।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যে বিখ্যাত তীর্থস্থান
কতকগুলি বিখ্যাত তীর্থস্থানের পরিচয় পেয়েছি, যেমন – (Kollur), কনভাসি ( Banavasi), শ্রীশৈলম (Srisailam), কালহস্তী ( Kalahasti ), তিরুপতি (Tirupati ), চিদাম্বরম (Chidambaram ), শ্রীরঙ্গম (Srirangam ) এবং রামেশ্বরম (Rameswaram)।
দক্ষিণের বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শহর
কয়েকটি শহরের পরিচয় পাওয়া যায়, যেমন – বঙ্কাপুর (Bankapur), জারসোপ্পে (Gersoppe) এবং সাগর (Sagar)
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী বিজয়নগর শহর
- (১) বিজয়নগর শহরটি ছিল বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী। আবদুর রাজ্জাক হলেন প্রথম বিদেশি যিনি ১৪৪৩ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর শহর পরিদর্শন করেন। এবং তিনি বিজয়নগর শহরের একটা সুন্দর বিবরণ দিয়েছেন।
- (২) তিনি বিজয়নগর শহর সম্পর্কে বলেছেন, “is such that the pupil of the eye has never seen a place like it, and the ear of intelligence has never been informed that there existed any thing to equal it in the world.”
- (৩) শহরটিতে অসংখ্য বাজার ও দোকান ছিল। শহরটি ছিল লোকে-লোকারণ্য। শহরটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। শহরের মধ্যস্থলে ছিল রাজাদের বসবাসের প্রাসাদ। প্রাসাদের সম্মুখে চারটে বাজার ছিল। তিনি বলেছেন এখানে দেশ-বিদেশের বণিকরা আসত এবং বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য বেচা-কেনা করত।
- (৪) তিনি বলেছেন, “The Jeweller sold publicly in the bazar pearls, rubies, emeralds and diamonds.” এমনকি তিনি সুন্দর গন্ধ ও টাটকা গোলাপ বিক্রি হতে দেখেছিলেন। তিনি বিজয়নগরে একটি টাঁকশালও দেখেছিলেন।
- (৫) বারবোসা দ্বিতীয় কৃষ্ণদেব রায়ের রাজত্বকালে বিজয়নগর পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি লিখেছেন বিজয়নগর শহরটি সমতলভূমিতে অবস্থিত ছিল ও প্রাকার দ্বারা ঘেরা ছিল এবং চারদিক নদী ও পর্বত দ্বারা বেষ্টিত ছিল।
- (৬) নিকোলো কন্টি বলেছেন, বিজয়নগর শহরের পরিধি ছিল ষাট মাইল দীর্ঘ এবং পর্বতমালার পাদদেশ পর্যন্ত প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। শহরে অস্ত্র ধারণ করার মতো নব্বই হাজার লোক ছিল। ভারতের অন্য কোনো নরপতি বিজয়নগরের থেকে শক্তিশালী ছিলেন না।
- (৭) বিজয়নগরের অধিবাসীদের অবস্থা ছিল সচ্ছল এবং বহু সংখ্যক বণিক এখানে বসবাস করত। বহু বিদেশি বণিক নিয়মিত এখানে যাতায়াত করতেন এবং নিজের ইচ্ছামতো থাকতে পারতেন ও চলে যেতে পারতেন। প্রত্যেকের নিজ ধর্মপালনের স্বাধীনতা ছিল। এখানে কোনো রকম ধর্মীয় বাধা ছিল না। সকলে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারতেন।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নগরায়ন সম্পর্কে বারবোসার মন্তব্য
পর্যটক বারবোসা স্বয়ং সন্তুষ্ট চিত্তে মন্তব্য করেছেন, “Great equity and justice is observed to all, not only by the rulers. but by the people one to another.” বিজয়নগর শহরে ও শহরের নিকট হীরকের খনি ছিল। তিনি বলেছেন বিজয়নগর ছিল হীরক, মুক্তা, চীনাংশুক, কর্পূর, মৃগনাভি ও চন্দনকাঠ প্রভৃতি পণ্যদ্রব্যের শ্রেষ্ঠ বাণিজ্য কেন্দ্র।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নগরায়ন সম্পর্কে পায়েসের মন্তব্য
- (১) পায়েস সম্ভবত ১৫২০ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর শহর সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন। তার মধ্যে সবথেকে যে মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ তা হল, তিনি বলেছেন, “This city as large as Rome and very beautiful to the sight”. তাঁর মতে it was the best provided city in the world”.
- (২) তিনি বলেছেন এই শহর ছিল জনাকীর্ণ এবং বাজার সব সময় জম-জমাটি ছিল। বিজয়নগর শহরটি ফলে-ফুলে পরিপূর্ণ ছিল। ফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আঙুর, কমলালেবু, লেবু, ডালিম, কাঁঠাল ও আম এবং এগুলি অত্যন্ত সস্তা ছিল।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের ইক্ষেরী শহর
রাজধানী শহর বিজয়নগরের পর ইক্ষেরী (Ikkeri) শহরটি ছিল খুবই উন্নত। চৌদাপ্পা এই শহরে একটি বাজার ও একটি শস্য ভাণ্ডার নির্মাণ করেছিলেন। পিটার মান্ডি বলেছেন, “The town or city of Icarree is very great, with many spacious streets, bazars, etts places”.
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের বিদনুর শহর
- (১) পশ্চিম কর্ণাটকে অবস্থিত বিদনুর শহরটি ধনী ও জনাকীর্ণ। Wilks বলেছেন যে এই শহরটি ছিল “rather the most opulent commercial town of the East.” বিদনুর শহরের রাস্তার দুধারে কারিগর ও পেশাদার শিল্পী বসবাস করত।
- (২) তাদের স্বয়ংশাসিত ‘অ্যাসোসিয়েশন’ ছিল। The History of Hyder Shah-এর লেখক বিদনুর শহর সম্পর্কে বলেছেন যে, “it was one of the largest and the best peopled cities of India.”
দক্ষিণের বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শহর সাগর
- (১) এর পর স্থল-বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে যে শহরটি গুরুত্ব অর্জন করেছিল সেটি হল সাগর। সাগর ছিল পরিকল্পিত শহর এবং বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে এর সততার খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে এই শহরে দলে দলে মানুষ পণ্য কেনা-বেচা করতে সমবেত হত।
- (২) কিছু ধনী ব্যবসায়ী এখানকার উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য দেশের দূরবর্তী স্থানে রপ্তানি করত। সাগর শহরটি থেকে যেসব পণ্যদ্রব্য রপ্তানি হত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গোলমরিচ, বস্ত্র, লোহা ও দানাশস্য প্রভৃতি। এগুলি ছাড়াও চন্দনকাঠ ছিল দক্ষিণ ও পূর্বের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পণ্য।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের জারসোপ্পে নগর
জারসোপ্পে ছিল আর একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর এবং এই শহরের নামকে অক্ষয় করে রেখেছে বিখ্যাত সরাবতী জলপ্রপাত। এখানে পর্যাপ্ত গোলমরিচ উৎপাদিত হত এবং এই শহরটি ছিল গোলমরিচ ব্যবসার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই শহরটিকে বিদেশিরা ‘Pepper Queen’ বলে অভিহিত করেছিল।
উপসংহার :- এই নগরগুলিকে কেন্দ্র করে একদিকে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়েছিল, অপরদিকে তেমনি শহরগুলি বিজয়নগরের এক উন্নত নাগরিক জীবনের সুত্রপাত ঘটিয়েছিল।
(FAQ) বিজয়নগর সাম্রাজ্যের নগরায়ন সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৩৩৬-১৪৪৬ খ্রিস্টাব্দ।
বিজয়নগর।
শ্রীরঙ্গপত্তন, তাঞ্জাভুর, মাদুরাই ইত্যাদি।
তিরুপতি, শ্রীরঙ্গম, রামেশ্বরম ইত্যাদি।