চরমপন্থী আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা বা ব্যর্থতার কারণ হিসেবে রাজনীতি ও ধর্মের সংমিশ্রণ, সংকীর্ণ গণভিত্তি, ঐক্যের অভাব, সংকীর্ণ স্থানে আবদ্ধ, সাংগঠনিক ত্রুটি ও নবজাগ্ৰত শক্তিকে কাজে লাগাতে অক্ষমতা সম্পর্কে জানবো।
চরমপন্থী আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ প্রসঙ্গে চরমপন্থী আন্দোলনে রাজনীতি ও ধর্মের সংমিশ্রণ, চরমপন্থী আন্দোলনের সংকীর্ণ গণভিত্তি, চরমপন্থী আন্দোলনের সাংগঠনিক ত্রুটি, চরমপন্থী আন্দোলনে ঐক্যের অভাব ও নবজাগ্ৰত শক্তিকে কাজে লাগাতে অক্ষমতায় চরমপন্থী আন্দোলনের ব্যর্থতা সম্পর্কে জানব।
চরমপন্থী আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ
ঐতিহাসিক ঘটনা | চরমপন্থী আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ |
নেতৃবৃন্দের পরিচিতি | চরমপন্থী |
নেতৃবৃন্দ | বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপৎ রায়, বিপিন চন্দ্র পাল, অরবিন্দ ঘোষ |
লক্ষ্য | ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতা |
ভিত্তি | হিন্দু ধর্ম, অতীত ইতিহাস ও পূর্ণ স্বাদেশিকতা |
ভূমিকা :- ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে চরমপন্থী পর্ব এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। নরমপন্থী রাজনীতির দুর্বলতার প্রতিবাদে চরমপন্থীরা ভারত-এ এক বলিষ্ঠ আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁদের কার্যকলাপ ব্রিটিশ সরকারকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল।
চরমপন্থী আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ
প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে শুরু হলেও, শেষ পর্যন্ত চরমপন্থী আন্দোলন ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার মূলে নানা কারণ ছিল।
(১) রাজনীতি ও ধর্মের সংমিশ্রণ
চরমপন্থী নেতৃবৃন্দ রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে জড়িয়ে জাতীয় আন্দোলনের বনিয়াদকে দুর্বল করে দেন। হিন্দুধর্ম, প্রাচীন ঐতিহ্য, দুর্গাপূজা ও কালী-বন্দনা, মোগলদের বিরুদ্ধে শিবাজি ও রাজপুতদের যুদ্ধের কথা বারংবার বলায় সাম্প্রদায়িকতাই বৃদ্ধি পায় এবং মুসলিম সমাজ আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায়।
(২) সংকীর্ণ গণভিত্তি
মুখে গণমুখী আন্দোলনের কথা বললেও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে তাঁরা পৌঁছতে পারেন নি। তাঁদের সমর্থন মূলত শহরের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। শিক্ষক, ছাত্র, করণিক, ছোট দোকানদার, শিক্ষিত বেকার — এই সব মানুষরাই ছিল তাঁদের সমর্থক। জাতির প্রকৃত মেরুদণ্ড শ্রমিক-কৃষকদের মধ্যে তাঁরা প্রবেশ করতে পারেন নি।
(৩) ঐক্যের অভাব
চরমপন্থীদের মধ্যে ঐক্যের অভাব ছিল এবং একটি সুসংবদ্ধ গোষ্ঠী হিসেবে তাঁরা সর্বদা কাজ করতে পারেন নি। ‘স্বরাজ’, ‘স্বদেশী‘ ও ‘বয়কট‘-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য ছিল।
(৪) সংকীর্ণ স্থানে আবদ্ধ
এই আন্দোলন মূলত বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ – ছিল এবং এই তিনটি প্রদেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যেও বোঝাপড়ার যথেষ্ট অভাব ছিল।
(৫) সাংগঠনিক ত্রুটি
চরমপন্থী নেতৃবৃন্দ দেশবাসীকে কোনও সুস্পষ্ট পথে পরিচালিত করতে পারেন নি বা আন্দোলন পরিচালনার জন্য কোনও সক্রিয় সংগঠন গড়ে তুলতে পারেন নি।
(৬) নবজাগ্ৰত শক্তিকে কাজে লাগাতে অক্ষমতা
তাঁরা জনগণের মধ্যে অবশ্যই রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন, কিন্তু নবজাগত শক্তিকে সংহত করে তারা তাকে কাজে লাগাতে পারেন নি।
উপসংহার :- আসলে চরমপন্থী আন্দোলনের কোনও দৃঢ় সাংগঠনিক কাঠামো ছিল না। ফলে তিলকের কারাদণ্ড এবং বিপিন চন্দ্র পাল ও অরবিন্দ ঘোষের সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার ফলে আন্দোলন একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়ে।
(FAQ) চরমপন্থী আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
পূর্ণ স্বাধীনতা।
হিন্দু ধর্ম, অতীত ইতিহাস ও পূর্ণ স্বাদেশিকতা।
অরবিন্দ ঘোষ, বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায়, বিপিন চন্দ্র পাল