প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ

পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ -এর জন্ম, শিক্ষা, কর্মজীবন, রাজনীতিতে যোগ, স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ, বাংলা পরিভাষা গঠন, শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা, তার রচিত গ্ৰন্থ ও তার মৃত্যু সম্পর্কে জানবো।

স্বাধীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ প্রসঙ্গে প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের জন্ম, প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের পিতামাতার নাম, প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের শিক্ষা, প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের কর্মজীবন, স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের যোগদান, পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ, প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের মুখ্যমন্ত্রী পদ ত্যাগ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের যোগদান, প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের গ্ৰন্থ, প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের শেষ জীবন ও প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের মৃত্যু।

পশ্চিমবঙ্গের প্রথম প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ

ঐতিহাসিক চরিত্রপ্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ
জন্ম২৪ ডিসেম্বর ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দ
মৃত্যু১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ (বয়স ৯১)
প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী১৫ আগস্ট ১৯৪৭ – ১৪ জানুয়ারি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ
দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী২ নভেম্বর ১৯৬৮ – ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দ
তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী২ এপ্রিল ১৯৭১ – ২৮ জুন ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ
প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ

ভূমিকা :- একজন ভারতীয় বাঙালি রাজনীতিবিদ ও  স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ। তিনি স্বাধীন ভারত -এর পশ্চিমবঙ্গ -এর প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের জন্ম

১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে ডিসেম্বর অবিভক্ত বাংলার বর্তমানে বাংলাদেশ -এর তৎকালীন ঢাকা জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম মালিকান্দার এক যাদব পরিবারে প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ  জন্ম গ্রহণ করেন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের পিতা ও মাতা

তাঁর পিতা পূর্ণচন্দ্র ঘোষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন এবং মাতা বিনোদিনী দেবী ছিলেন গৃহবধূ। তারা দুজনেই ছিলেন সহজ সরল ও ধার্মিক মানুষ।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের শিক্ষা

ছেলেবেলা থেকেই প্রফুল্লচন্দ্র অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো ফল করতেন এবং স্কলারশিপ পেতেন। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর পরীক্ষাতেও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ১৯২০ সালে তিনি ডি.এসসি ডিগ্রী অর্জন করেন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের কর্মজীবন

প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা করেন অল্প সময়ের জন্য। পরে তিনি কলকাতার টাঁকশালে ডেপুটি অ্যাসেস মাস্টার নিযুক্ত হন। এই পদে তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয়।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান

প্রফুল্লচন্দ্র ১৯২১ সালে টাঁকশালের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি মোট আট বছর কারারুদ্ধ ছিলেন।

  • (১) মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে প্রভাবিত হয়ে তিনি অভয় আশ্রম নির্মাণ করেন এবং ঢাকার বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের সংস্পর্শে আসেন।
  • (২) ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সমিতির সম্পাদক হন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে লবণ সত্যাগ্রহ -এ যোগ দেন।
  • (৩) ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে প্রফুল্লচন্দ্র কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় যুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহে যোগ দেন।

পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী (১৫ আগস্ট ১৯৪৭ – ১৪ জানুয়ারি ১৯৪৮) হয়ে প্রশাসন-কার্যের উৎকর্ষের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্নীতি দমনের চেষ্টা এবং দুর্নীতি রোধে অর্ডিন্যান্স জারি করেছিলেন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের শিক্ষাবিস্তারে ভূমিকা

প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারের ব্যাপক পরিকল্পনা এবং দু-বছরের মধ্যে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষারূপে পশ্চিমবঙ্গে প্রবর্তিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের উদ্দ্যোগে বাংলা পরিভাষা কমিটি গঠন

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের উদ্যোগে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই অক্টোবর রাজশেখর বসু, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ শিক্ষাব্রতীদের নিয়ে বাংলা পরিভাষা কমিটি গঠিত হয়।

রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি

সুরেশচন্দ্র মজুমদারের উদ্যোগে এবং তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর জোড়াসাঁকোর বাড়িটি রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির হাতে অর্পণ করা হয়।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের মন্ত্রীপদ ত্যাগ

কংগ্রেসের উপর মহলের সঙ্গে মতবিরোধের জন্য তিনি মন্ত্রীপদ থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই জানুয়ারি ডা. বিধানচন্দ্র রায় পশ্চিমবঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদে কংগ্রেস দলের নেতা নির্বাচিত হন এবং ড. প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়।

কৃষক মজদুর প্রজা পার্টির সম্পাদক প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ

তিনি কংগ্রেস থেকে সরে এসে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে নবগঠিত কৃষক মজদুর প্রজা পার্টি-র সম্পাদক হন। এই দল পরে ‘প্রজাসমাজতন্ত্রী দল’ নামে পরিচিত হয়।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের মন্ত্রীসভায় যোগদান

১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহিষাদল থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে আবার তিনি বিধানসভার সদস্য হন। অজয় মুখোপাধ্যায় -এর নেতৃত্বে প্রথম অ-কংগ্রেসি যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হলে, তিনি মন্ত্রিসভায় যোগ দেন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের পি. ডি. এফ গঠন

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২রা নভেম্বর মন্ত্রীসভার পদ ত্যাগ করে ‘প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ (পি. ডি. এফ) নামে এক নতুন ফ্রন্ট গঠন করেন।

দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ

পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২১শে নভেম্বর তার নেতৃত্বে পি.ডি.এফ মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ করান। তিনি দ্বিতীয় বারের (২ নভেম্বর ১৯৬৮ – ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮) জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু তিন মাস পরেই মন্ত্রী সভার পতন ঘটে।

তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ

২ এপ্রিল ১৯৭১ – ২৮ জুন ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি তৃতীয় বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়েছিল।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের প্রখ্যাত ব্যক্তির সান্নিধ্য লাভ

আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্ট ওপেনহেইমার, অটো হান প্রমুখ বিশ্বের বিজ্ঞান জগতে বহু যুগন্ধর ব্যক্তির তিনি সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন।

গ্রামীণ শিল্প পরিষদের সদস্য প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ

সারা ভারত গ্রামীণ শিল্প পরিষদের প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের রচিত গ্ৰন্থ

ফ্রম নাগপুর টু লাহোর, ওয়েস্ট টু-ডে, প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাস, বিজ্ঞানের কথা, জীবনস্মৃতি, মহাত্মা গান্ধী, জগৎগুরু বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দ ঘোষ প্রভৃতি গ্ৰন্থ তিনি রচনা করেন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের শেষ জীবন

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ নিঃসঙ্গ অবস্থায়, শ্রী অরবিন্দচর্চায় এবং গ্রন্থ রচনায় তাঁর শেষজীবন কাটিয়েছেন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের মৃত্যু

১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ পরলোক গমন করেন।


প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমাদের এই “প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ” পোস্টটি পড়ার জন্য। এই ভাবেই adhunikitihas.com ওয়েবসাইটের পাশে থাকুন। যে কোনো প্রশ্ন উত্তর জানতে এই ওয়েবসাইট টি ফলো করুণ এবং নিজেকে তথ্য সমৃদ্ধ করে তুলুন।

সবশেষে আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে Comment ও Share করে দিবেন, (ধন্যবাদ)।

(FAQ) প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ।

২. বাংলা পরিভাষা কমিটি কে গঠন করেন?

পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ।

৩. ‘ফ্রম নাগপুর টু লাহোর’ গ্ৰন্থটি কার লেখা?

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের।

৪. স্বাধীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ।

৫. পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে?

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ।

৬. পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ।

Leave a Comment