১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত তিন সম্রাটের লিগ প্রসঙ্গে পটভূমি হিসেবে ফ্রান্সকে মিত্রহীন করা, রাশিয়া-অস্ট্রিয়া বিরোধ, দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের মৃত্যু, তিন সম্রাটের লিগ স্থাপন, ড্রেইকাইজারবুন্ড, ড্রেইকাইজারবুন্ডনিস, টেলরের মন্তব্য, লিগের শর্তাবলী ও তিন সম্রাটের লিগের দুর্বলতা সম্পর্কে জানবো।
তিন সম্রাটের লিগ
ঐতিহাসিক ঘটনা | তিন সম্রাটের লিগ |
সময়কাল | ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দ |
স্বাক্ষরকারী | জার্মানি, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া |
উদ্যোক্তা | বিসমার্ক |
জার দ্বিতীয় আলেকজাণ্ডার -এর মৃত্যু | ১৩ মার্চ, ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দ |
ভূমিকা:- অস্ট্রিয়ার সঙ্গে দ্বিশক্তি চুক্তি সম্পন্ন করলেও বিসমার্ক রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিলেন। সেই আগ্ৰহ থেকেই অস্ট্রিয়া, জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে তিন সম্রাটের লিগ স্থাপিত হয়।
তিন সম্রাটের লিগ স্থাপনের পটভূমি
১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে তিন সম্রাটের লিগ স্থাপনের পটভূমি ছিল নিম্নরূপ। –
(১) ফ্রান্সকে মিত্রহীন করা
জার্মানির সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি কোনও সংঘাত ছিল না তবে রাশিয়াকে দূরে সরিয়ে রাখলে ফ্রান্স -এর সঙ্গে তার মৈত্রীর সম্ভাবনা ছিল। এই কারণে বিসমার্ক রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির সুসম্পর্ক স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন।
(২) রাশিয়া-অস্ট্রিয়া বিরোধ
রাশিয়া কেবলমাত্র জার্মানির সঙ্গেই মৈত্রী স্থাপনে আগ্রহী ছিল, অস্ট্রিয়ার সঙ্গে নয়। আবার অন্যদিকে রাশিয়ার ‘সর্ব-শ্লাভবাদ’-এর নীতি অস্ট্রিয়ার পছন্দ ছিল না।
(৩) দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের মৃত্যু
১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই মার্চ আততায়ীর গুলিতে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার-এর মৃত্যু হলে তৃতীয় আলেকজান্ডার সিংহাসনে বসেন।
তিন সম্রাটের লিগ স্থাপন
শেষ পর্যন্ত ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই জুন জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে তিন সম্রাটের লিগ স্থাপিত হয়। এই লিগ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
ড্রেইকাইজারবুন্ড
১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত তিন সম্রাটের চুক্তি বা প্রথম তিন সম্রাটের জোট-এর নাম ছিল জার্মান ভাষায় ড্রেইকাইজারবুন্ড।
ড্রেইকাইজারবুন্ডনিস
১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত দ্বিতীয় তিন সম্রাটের জোট-এর নাম ছিল ‘ড্রেইকাইজারবুন্ডনিস’ বা তিন সম্রাটের লিগ।
টেলরের মন্তব্য
অধ্যাপক টেলর বলেন যে, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের মৈত্রীর সঙ্গে এই নতুন লিগের খুব কমই সাদৃশ্য ছিল। প্রথম চুক্তিটি ছিল একটি আদর্শবাদী ঘোষণা এবং দ্বিতীয় চুক্তিটি ছিল একটি কার্যকর ব্যবস্থা।
তিন সম্রাটের লিগের শর্তাবলী
এই সন্ধির শর্তানুসারে স্থির হয় যে,
- (১) তিন শক্তির মধ্যে কোনও শক্তি অপর কোনও চতুর্থ শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হলে, অপর দুই মিত্র নিরপেক্ষ থাকবে। এখানে চতুর্থ শক্তি হিসেবে তুরস্কের কথা ভাবা হয়।
- (২) নিকট প্রাচ্যে তুরস্ক সাম্রাজ্য-এর অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলগুলি রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার প্রভাবাধীন অঞ্চল বলে ঘোষিত হয়।
- (৩) অস্ট্রিয়ার ভাগে পড়ে বসনিয়া, হারজেগোভিনা ও সানজাক। রাশিয়া পায় রুমানিয়া ও বুলগেরিয়া।
তিন সম্রাটের লিগের দুর্বলতা
- (১) দ্বিতীয় চুক্তিটি প্রথম চুক্তির (১৮৭৩ খ্রিঃ) মতো মজবুত ছিল না। পরস্পরের স্বার্থগত বিরোধ এই চুক্তিকে দুর্বল করে দেয়।
- (২) আবার ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের দ্বিশক্তি চুক্তি-র চেয়েও এটি দুর্বল ছিল। কারণ, ‘দ্বিশক্তি চুক্তি’ ছিল একটি সামরিক চুক্তি, কিন্তু ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের তিন সম্রাটের লিগ ছিল একটি বন্ধুত্বের ঘোষণামাত্র।
উপসংহার:- ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে বুলগেরিয়া সংকট শুরু হলে বিসমার্ক রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াকে সমর্থন করেন। এর ফলে এই চুক্তি ভেঙে যায়। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে ক্ষুদ্ধ রাশিয়া এই চুক্তি নবীকরণে অস্বীকৃত হয়।
(FAQ) তিন সম্রাটের লিগ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৮ জুন, ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া।
বিসমার্ক।
১৩ মার্চ, ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে।