দ্বিশক্তি চুক্তি

১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত দ্বিশক্তি চুক্তি প্রসঙ্গে চুক্তির পটভূমি হিসেবে অস্ট্রিয়ার সম্রাটের ওপর চাপ সৃষ্টি, অস্ট্রিয়ার মন্ত্রীর মন্তব্য, বিসমার্কের লক্ষ্য, চুক্তির শর্তাবলী, আত্মরক্ষামূলক চুক্তি, জার্মানির বৈদেশিক নীতির প্রধান স্তম্ভ, চুক্তির গুরুত্ব হিসেবে অস্ট্রিয়ার সাথে সুদৃঢ় মৈত্রী,জার্মান জাতির ঐক্য, হ্যাপসবার্গ সাম্রাজ্যের উজ্জীবন ও চুক্তির সমালোচনা সম্পর্কে জানবো।

দ্বিশক্তি চুক্তি

ঐতিহাসিক ঘটনাদ্বিশক্তি চুক্তি
সময়কাল১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দ
স্বাক্ষরকারী দেশজার্মানিঅস্ট্রিয়া
উদ্যোক্তাবিসমার্ক
দ্বিশক্তি চুক্তি

ভূমিকা:- ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত বার্লিন কংগ্রেস -এর পর তিন সম্রাটের চুক্তি ভেঙে গেলে জার্মানির নিরাপত্তার স্বার্থে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সঙ্গে দ্বিশক্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

দ্বিশক্তি চুক্তির পটভূমি

দ্বিশক্তি চুক্তির পটভূমি ছিল নিম্নরূপ–

(১) অস্ট্রিয়ার সম্রাটের ওপর চাপ সৃষ্টি

দ্বিশক্তি চুক্তি সম্পাদনের জন্য অস্ট্রিয়ার মন্ত্রী কাউন্ট আন্দ্রেসি অস্ট্রিয়ার হ্যাপসবার্গ-বংশীয় সম্রাট ফ্রান্সিস যোসেফ-এর উপর চাপ দেন।

(২) অস্ট্রিয়ার মন্ত্রীর মন্তব্য

অস্ট্রিয়ার মন্ত্রী কাউন্ট আন্দ্রেসি বলেন যে, ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের পরাজয়ের গ্লানি ভুলে গিয়ে অস্ট্রিয়ার উচিত জার্মানির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া। এর ফলে অস্ট্রিয়া বলকান অঞ্চলে তার কাঙ্ক্ষিত আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।

বিসমার্কের লক্ষ্য

বিসমার্কের লক্ষ্য ছিল অস্ট্রিয়াকে ফ্রান্স -এর মিত্রতা থেকে দূরে রাখা। এইভাবে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৭ই অক্টোবর জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে দ্বিশক্তি চুক্তি বা ভিয়েনা সন্ধি সম্পন্ন হয়।

দ্বিশক্তি চুক্তির শর্তাবলী

এই দ্বিশক্তি চুক্তি দ্বারা স্থির হয় যে,

  • (১) জার্মানি ও অস্ট্রিয়া – এই দুই স্বাক্ষরকারী দেশের মধ্যে কেউ (অস্ট্রিয়া) যদি রাশিয়া কর্তৃক আক্রান্ত হয়, তবে অপরপক্ষ আক্রান্ত মিত্রকে সবরকম সাহায্য করবে।
  • (২) যদি দুই স্বাক্ষরকারীর মধ্যে কেউ (জার্মানি) রাশিয়া ব্যতীত অপর কোনও তৃতীয় শক্তির (ফ্রান্স) সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তবে অপরপক্ষ (অর্থাৎ অস্ট্রিয়া) নিরপেক্ষ থাকবে।
  • (৩) যদি এই আক্রমণকারীর সঙ্গে রাশিয়া যোগ দেয়, তবে অপরপক্ষ (অর্থাৎ অস্ট্রিয়া) নিরপেক্ষ না থেকে মিত্র রাষ্ট্রের পক্ষ অবলম্বন করবে।
  • (৪) এই সন্ধির শর্তাবলী গোপন থাকবে।

আত্মরক্ষামূলক চুক্তি

বস্তুত ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কোনও দেশই এই সন্ধির কথা জানত না। এটি ছিল একটি আত্মরক্ষামূলক চুক্তি-আক্রমণাত্মক চুক্তি নয়।

জার্মানির বৈদেশিক নীতির প্রধান স্তম্ভ

আপাতত পাঁচ বছরের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এর পুনর্নবীকরণ হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই চুক্তি জার্মানির বৈদেশিক নীতির প্রধান স্তস্তে পরিণত হয়।

দ্বিশক্তি চুক্তির গুরুত্ব

ইউরোপ-এর ইতিহাসে দ্বিশক্তি চুক্তির গুরুত্ব ছিল সুদূরপ্রসারী। যেমন –

(১) অস্ট্রিয়ার সাথে সুদৃঢ় মৈত্রী

ঐতিহাসিক লিপসন বলেন যে, দ্বৈত চুক্তি স্বাক্ষর করে বিসমার্ক প্রাশিয়ার চিরাচরিত বিদেশ নীতি থেকে সরে আসেন এবং রাশিয়ার পরিবর্তে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে মৈত্রী সুদৃঢ় করেন।

(২) জার্মান জাতির ঐক্য

বিসমার্ক বিনাযুদ্ধে সমগ্র জার্মান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এক অসাধ্য সাধন করেন। অস্ট্রিয়ার জনমানস তৃপ্তি বোধ করে।

(৩) হ্যাপসবার্গ সাম্রাজ্যের উজ্জীবন

আলব্রেখট রেনে ক্যারির মতে, এই চুক্তি পিছিয়ে পড়া ও ক্ষয়িষ্ণু হ্যাপসবার্গ সাম্রাজ্যকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করে।

(৪) ফ্রান্সের মিত্রতা থেকে অস্ট্রিয়ার দূরত্ব বজায়

সর্বোপরি এর মাধ্যমে বিসমার্ক ফ্রান্সের মিত্রতা থেকে অস্ট্রিয়াকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হন।

দ্বিশক্তি চুক্তি নীতির সমালোচনা

অধ্যাপক টেলর বিসমার্কের এই নীতির কঠোর সমালোচন করেছেন। যেমন –

  • (১) তাঁর মতে, এই চুক্তি দ্বারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মান নিরাপত্তা আদৌ বৃদ্ধি পায় নি – বরং এর ফলে জার্মান নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ হয়।
  • (২) এই সময় রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির বিরোধের কোনও তাৎক্ষণিক কারণ ছিল না।
  • (৩) এই সময় রাশিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সেরও মৈত্রীর কোনও সম্ভাবনা ছিল না। বরং বলা যায় যে, অস্ট্রিয়ার সাথে মৈত্রী স্থাপন করে বিসমার্ক এই ধরনের সম্ভাবনার পথ প্রশস্ত করে দেন।

উপসংহার:- বিসমার্ক এইভাবে গোপন ও সামরিক চুক্তির যে যান্ত্রিক উৎপাদন শুরু করেন ক্রমে ইউরোপের বৃহৎ ও ক্ষুদ্র শক্তিগুলি তাতে সন্নিবিষ্ট হয়। বলা বাহুল্য, পরবর্তী ত্রিশ বছরের মধ্যে সমগ্র ইউরোপ দুটি বৃহৎ শক্তিজোটে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

(FAQ) দ্বিশক্তি চুক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. কখন, কাদের মধ্যে দ্বিশক্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে, জার্মানি ও অস্ট্রিয়া।

২. কার উদ্যোগে দ্বিশক্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

বিসমার্ক।

৩. বার্লিন কংগ্রেস কখন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?

১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির বার্লিন শহরে।

Leave a Comment