আফগানিস্তানের কম্বোজ রাজ্য প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠা, কম্বোজ বংশ, জয়বর্মন, দ্বিতীয় জয়বর্মন, যশোবর্মন, যশোধরপুর নগরী, আঙ্কোরথম, সূর্যবর্মন, দ্বিতীয় সূর্যবর্মন, আঙ্কোরভাট মন্দির ও সপ্তম জয়বর্মণ সম্পর্কে জানবো।
কম্বোজ রাজ্য
বিষয় | কম্বোজ রাজ্য |
অবস্থান | আফগানিস্থান |
প্রতিষ্ঠাতা | কৌণ্ডিল্য |
বিখ্যাত রাজা | যশোবর্মন |
আঙ্কোরথমের মন্দির | যশোবর্মন |
আঙ্কোরভাট মন্দির | দ্বিতীয় সূর্যবর্মন |
ভূমিকা :- ভিয়েতনাম বা ইন্দোচীন-এর অপর অংশে কম্বোডিয়া নামে কম্বোজ রাজ্য স্থাপিত হয়। চীনারা এই রাজ্যের নাম দেয় ফু-নান।
কম্বোজ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা
চীনা কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, কৌন্ডিল্য নামে এক ব্রাহ্মণ কম্বোজ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। ভারত থেকে তিনি কম্বোডিয়ায় এসে জনসাধারণকে খুবই আদিম সভ্যতার মধ্যে বসবাস করতে দেখেন। তিনি সোমা নামে এক নাগ বংশীয় কন্যাকে বিবাহ করেন এবং কম্বোজ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
কম্বোজ বংশ
দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দে সমগ্র কম্বোডিয়া কম্বোজ রাজবংশের অধীনে আসে। কোচিন চীন ও শ্যামদেশও এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। কম্বোজের রাজারা ভারত ও চীনের সঙ্গে নিয়মিত সম্পর্ক রাখতেন।
কম্বোজরাজ জয়বর্মন
কম্বোজরাজ জয়বর্মণের রাণী ছিলেন কুলপ্রভাবতী এবং তাদের পুত্র ছিলেন রুদ্রবর্মণ। সপ্তম খ্রিস্টাব্দে সমগ্র ভিয়েতনাম কম্বোজ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
কম্বোজরাজ দ্বিতীয় জয়বর্মন
দ্বিতীয় জয়বর্মণ ছিলেন খুবই শক্তিশালী রাজা (৮০২-৮৫৪ খ্রি)। তিনি আঙ্কোর অঞ্চলে তাঁর রাজধানী স্থানান্তর করেন। এই নগরকে তিনি সুন্দর প্রাসাদ ও উদ্যান দ্বারা সুশোভিত করেন। তিনি তন্ত্রধর্মকে তাঁর রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেন।
কম্বোজরাজ যশোবর্মন
প্রাচীন কম্বোজের বিখ্যাত রাজা ছিলেন যশোবর্মণ। তিনি শ্যাম ও লাওস জয় করেন। তিনি শাস্ত্র, শস্ত্র এবং কাব্যে সুপণ্ডিত ও পারদর্শী ছিলেন। পতঞ্জলীর মহাভাষ্যের তিনি একটি টীকা রচনা করেন।
যশোধরপুর নগরী
- (১) যশোবর্মণ যশোধরপুর নামে এক নগরী নির্মাণ করেন। এই নগরীর স্থাপত্য শিল্পের জন্য তিনি অমরতা পেয়েছেন। এই নগরটি ছিল চারকোণা এবং চারদিকে ছিল ৩৩০ ফিট চওড়া পরিখা। নগরীর চারদিকে ছিল পাথরের দেওয়াল।
- (২) নগরের মাঝখানে ছিল পিরামিডের আকৃতি বিরাট মন্দির যার চূড়াটি ছিল ৪০টি উঁচু গম্বুজ দ্বারা শোভিত। সম্ভবত এটি ছিল শিব মন্দির। নগরে প্রবেশের পাঁচটি সিংহদ্বার ছিল। সিংহ দরজায় ওপরে ছিল প্রহরীদের কক্ষ। নগরের প্রধান রাস্তা ছিল ১০০ ফিট চওড়া। নগরের ভেতর পুষ্করিণী খোদাই করে সুশোভিত করা হয়।
কম্বোজ রাজ্যে নির্মিত আঙ্কোরথম
আঙ্কোরথম কম্বোজ রাজ্যের সমৃদ্ধির পরিচয় দেয়। আঙ্কোরথম নির্মাণের ক্ষেত্রে পল্লব স্থাপত্যের প্রভাব দেখা যায়।
কম্বোজরাজ সূর্যবর্মণ
যশোবর্মণের পর কম্বোজের সিংহাসনে নতুন এক বংশ (১০০১ খ্রি) অধিকার স্থাপন করে। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সূর্যবর্মণ।
কম্বোজরাজ দ্বিতীয় সূর্যবর্মন
এরপর দ্বিতীয় সূর্যবর্মণ দক্ষিণ ব্রহ্ম ও মালয় জয় করেন। তিনি ১১১৩-৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
কম্বোজ রাজ্যে নির্মিত আঙ্কোরভাট মন্দির
- (১) দ্বিতীয় সূর্যবর্মণ আঙ্কোরভাট মন্দির নির্মাণ করে অক্ষয় যশ লাভ করেন। আঙ্কোরভাট ছিল একটি বিষ্ণু মন্দির। পাহাড় কেটে ধাপে ধাপে এই মন্দিরটি তৈরি করা হয়। মন্দিরের ছিল অসংখ্য চূড়া ও গম্বুজ। মন্দিরটি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত এবং এই প্রাচীরের গায়ে গ্যালারী আছে যা ১/২ মাইল লম্বা, ১/৩ মাইল চওড়া।
- (২) মূল মন্দিরটি তিনটি মঞ্চের পর শেষ মঞ্চের ওপর স্থাপিত। প্রতি মঞ্চ হতে পরের মঞ্চ উঠার জন্যে সারকরা সিঁড়ি আছে। মঞ্চগুলির গায়ে বহু মূর্তি খোদাই করা এবং তাতে উন্নত ভাস্কর্যের পরিচয় পাওয়া যায়।
কম্বোজরাজ সপ্তম জয়বর্মণ
এই কম্বোজের শেষ বিখ্যাত রাজা ছিলেন সপ্তম জয়বর্মণ। তিনি চম্পা আক্রমণ করে সেখানকার রাজা ইন্দ্রবর্মণকে বন্দী করেন। চম্পা তাঁর সামন্ত রাজ্যে পরিণত হয়। তিনি দক্ষিণ ব্রহ্ম জয় করেন।
আঙ্কোরথমের নির্মাণ কাজ
সপ্তম জয়বর্মণ আঙ্কোরথমের বিশ্ববিখ্যাত মন্দিরের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। এর আগে যশোবর্মণ আঙ্কোরথম নগর ও মন্দির তৈরি করেছিলেন। সপ্তম জয়বর্মণ তাতে নতুন নির্মাণ কাজ যোগ করেন। এই মন্দির নির্মাণের জন্য তিনি বহু অর্থ ও ভূমি দান করেন। তাঁর সাম্রাজ্য-এ ৭৯৮টি মন্দির, ১০২টি চিকিৎসালয় ছিল।
উপসংহার :- সপ্তম জয়বর্মণের মৃত্যুর পর কম্বোজ রাজ্যের পতন আরম্ভ হয়। থাই ও আনামি আক্রমণে কম্বোজের চূড়ান্ত পতন ঘটে।
(FAQ) কম্বোজ রাজ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
রাজা যশোবর্মন।
কম্বোজ রাজা যশোবর্মন।
কম্বোজ রাজা দ্বিতীয় সূর্যবর্মন।
কম্বোজ রাজা যশোবর্মন।