মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে কান্দাহার সমস্যা প্রসঙ্গে কান্দাহারের বাণিজ্যিক গুরুত্ব, জাহাঙ্গীরের পূর্বে কান্দাহারের অবস্থা, খোরাসানীদের কান্দাহার অবরোধ, জাহাঙ্গীরের সেনাদল প্রেরণ, পারস্যের শাহের আয়োজন, কান্দাহারে পারসিক আধিপত্য স্থাপন, খুররমের অভিযানে অস্বীকার, পারসিকদের কান্দাহার দখল ও কান্দাহার হাতছাড়া হওয়ার ফলাফল সম্পর্কে জানবো।
মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে কান্দাহার সমস্যা
ঐতিহাসিক ঘটনা | কান্দাহার সমস্যা |
সম্রাট | জাহাঙ্গীর |
সাম্রাজ্য | মুঘল সাম্রাজ্য |
সময়কাল | ১৬২২ খ্রি |
ভূমিকা :- মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর কান্দাহার সম্পর্কিত সমস্যায় জড়িত হন। কান্দাহার ছিল উত্তর-পশ্চিমে ভারত-এর অন্যতম প্রবেশ পথ। এজন্য কান্দাহারের বিশেষ গুরুত্ব ছিল।
কান্দাহারের বাণিজ্যিক গুরুত্ব
কান্দাহারের পথে বছরে অন্তত ১৪ হাজার উটের কাফিলা ভারত থেকে মাল পারস্যে নিয়ে যেত। এজন্য কান্দাহারের বাণিজ্যিক গুরুত্বও বিশেষ ছিল।
জাহাঙ্গীরের সময় কান্দাহারের অবস্থা
বাণিজ্যিক গুরুত্বের জন্য পারস্যের শাহ কান্দাহার অধিকার করতে আগ্রহ দেখান। বাবর-এর আমলে কান্দাহার মুঘলের অধিকারে ছিল। আকবরও কান্দাহার অধিকার করেন।
জাহাঙ্গীরের আমলে খোরাসানীদের কান্দাহার অবরোধ
আকবর-এর মৃত্যুর পর জাহাঙ্গীরের সিংহাসন লাভের বিরুদ্ধে খসরুর বিদ্রোহের সুযোগে পারস্যের শাহ আব্বাসের প্ররোচনায় খোরাসানীরা কান্দাহারে মুঘল সেনাপতিকে অবরোধ করে।
জাহাঙ্গীরের কান্দাহারে সেনাদল প্রেরণ
সম্রাট জাহাঙ্গীর অবরুদ্ধ মুঘল সেনাপতির সাহায্যে নতুন সেনাদল পাঠালে পারসিকরা অবরোধ তুলে নেয়। শাহ আব্বাস এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
জাহাঙ্গীরের নিকট পারস্যের শাহের আয়োজন
পারস্যের শাহ আসলে কান্দাহার জয়ের ইচ্ছা ছাড়েন নি। তিনি জাহাঙ্গীরের দরবারে দূত পাঠিয়ে সম্রাটকে সন্তুষ্ট রাখেন, কিন্তু গোপনে কান্দাহার দখলের আয়োজন করেন।
জাহাঙ্গীরের সময় কান্দাহারে পারসিক আধিপত্য স্থাপন
আগ্রায় বেগম নূরজাহান ও যুবরাজ খুররমের (পরবর্তীতে শাহজাহান) মধ্যে বিরোধের ফলে মুঘল শক্তি কিছুটা স্তিমিত হলে, সেই সুযোগে শাহ আব্বাস ১৬২২ খ্রিস্টাব্দে কান্দাহার দুর্গ অবরোধ করেন।
জাহাঙ্গীরের আমলে খুররমের কান্দাহার অভিযানে অস্বীকার
জাহাঙ্গীর যুবরাজ খুররমকে কান্দাহার উদ্ধারে যাত্রার আদেশ দিলে দরবারে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তের জন্য তিনি আগ্রা ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেন।
জাহাঙ্গীরের সময় পারসিকদের কান্দাহার অধিকার
এই পরিস্থিতিতে পারসিকরা কান্দাহার অধিকার করে। শাহ আব্বাস আগ্রায় দূত পাঠিয়ে জাহাঙ্গীরকে জানান যে, কান্দাহারের ওপর পারস্যের নায্য অধিকার কায়েম করা হয়েছে। জাহাঙ্গীর নিষ্ফল ক্রোধে পারস্যের শাহকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
জাহাঙ্গীরের আমলে কান্দাহার হাতছাড়া হওয়ার ফলাফল
- (১) কান্দাহার হাতছাড়া হওয়ায় সাম্রাজ্যের মুঘল সীমান্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে এই পথে আক্রমণকারীরা ভারতে ঢুকে। কান্দাহারে মুঘলের পরাজয়ে মুঘলের সামরিক মর্যাদার ক্ষতি হয়।
- (২) এর সুযোগে বালখের উজবেগী অধিপতি নজর মহম্মদ খান কাবুল আক্রমণ করলে, মুঘল সেনাপতি খানাজাদ খান তাকে পরাস্ত ও বিতাড়িত করেন।
জাহাঙ্গীরের সময় রৌশনিয়া আন্দোলন
- (১) জাহাঙ্গীরের আমলে পাঞ্জাবের শিরহিন্দে আহমদ শিরহিন্দির গোড়া মৌলবাদী সুফী আন্দোলনের পাশাপাশি আফগানিস্তান-এ বাঙ্গাশ উপজাতির মধ্যে রৌশনিয়া আন্দোলন দেখা দেয়।
- (২) রৌশনিয়া সম্প্রদায়ের গুরু আদাদ ছিলেন সুন্নী মুঘলদের বিরোধী। তিনি কাবুল আক্রমণ করেন। মুঘল সেনাপতি মহাব্বত খান ও তাঁর পরে জাফর খান নিষ্ঠুরভাবে রৌশনিয়া বিদ্রোহ দমন করেন।
উপসংহার :- সম্রাট বাবর ও আকবরের আমলে কান্দাহার মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। আকবরের মৃত্যুর পর কান্দাহার মুঘলদের হাতছাড়া হয়ে যায়। সম্রাট জাহাঙ্গীর আর তা পুনরুদ্ধার করতে পারেন নি।
(FAQ) মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে কান্দাহার সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
আকবর।
১৬২২ খ্রি।
সেনাপতি মহাব্বত খান ও তাঁর পরে জাফর খান।