আকবরের বাংলা অভিযান

মুঘল সম্রাট আকবরের বাংলা অভিযান প্রসঙ্গে সোলেমান কররানি, দাউদ খাঁ, মুনিম খানের অভিযান, আকবরের অভিযান, তুকরাইয়ের যুদ্ধ, খান-ই-খানানের মৃত্যু, মুঘল সেনাদলে অন্তর্বিরোধ, আকবরের নির্দেশ ও রাজমহলের যুদ্ধ সম্পর্কে জানবো।

মুঘল সম্রাট আকবরের বাংলা অভিযান

ঐতিহাসিক ঘটনাআকবরের বাংলা অভিযান
সময়কাল১৫৭৪-১৫৭৬ খ্রি
মুঘল সম্রাটআকবর
বাংলার সুলতানদাউদ কররানি
তুকরাইয়ের যুদ্ধ১৫৭৫ খ্রি
রাজমহলের যুদ্ধ১৫৭৬ খ্রি
মুঘল সম্রাট আকবরের বাংলা অভিযান

ভূমিকা :- পশ্চিমে গুজরাট জয়ের পর, পূর্ব ভারত-এ বাংলা-বিহারের দিকে আকবর দৃষ্টি দেন। বাংলায় পাঠান বা আফগান শক্তি মুঘলের দীর্ঘকাল শিরঃপীড়ার কারণ ছিল।

আকবরের অভিযানের সময় বাংলার শাসক সুলেমান কররানি

শূর বংশের পতন-এর পর সুলেমান কররানি বাংলায় আধিপত্য স্থাপন করেন। তিনি আকবরের প্রতি বশ্যতা জানিয়ে স্বায়ত্ব শাসন ভোগ করেন।

বাংলার শাসক দাউদ খাঁর মুঘল বশ্যতা স্বীকার

সুলেমানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দাউদ কররানি বা দাউদ খাঁ মুঘলের অধীনতা অস্বীকার করেন। তিনি নিজ নামে খুৎবা পাঠ করেন ও মুদ্রা ছাপান। তিনি উত্তর প্রদেশের সীমান্তে মুঘলের জামানিয়া দুর্গ আক্রমণ করেন।

আকবরের সময় মুনিম খানের বাংলা অভিযান

আকবর প্রথমে দাউদের বিরুদ্ধে সেনাপতি মুনিম খানকে পাঠালে দাউদ পাটনায় আত্মরক্ষা করেন এবং মুঘল বাহিনী পাটনা দখলে ব্যর্থ হয়। সেনাপতি মুনিম খান আকবরকে নিজে এসে পাটনা দুর্গ দখলের জন্য অনুরোধ জানান।

আকবরের বাংলা অভিযান

যেহেতু তখন ছিল বর্ষাকাল আকবর ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে নদীপথে তাঁর বাহিনী সহ পাটনায় চলে আসেন। আকবর পাটনার নিকটে হাজীপুর দুর্গ অধিকার করলে দাউদ, মনোবল হারিয়ে ফেলেন। তিনি পাটনা ছেড়ে রাজমহল হয়ে উড়িষ্যার দিকে চলে যান।

আকবরের সময় তুকরাইয়ের যুদ্ধ

দাউদের পিছু নিয়ে মুনিম খানঁ ও টোডরমল বালেশ্বরের তুকরাই বা তুর্কার যুদ্ধে (১৫৭৫ খ্রি) দাউদকে পরাস্ত করেন। কিন্তু টোডরমলের পরামর্শ না শুনে মুনিম খান এক সন্ধি দ্বারা দাউদকে বাংলায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেন।

বাংলায় খান-ই-খানানের মৃত্যু

এদিকে খান-ই-খানান মুনিম খাঁ তাণ্ডা বা গৌড়-এ ফিরে এসে তাঁর শাসনকেন্দ্র স্থাপন করেন। কিছুদিনের মধ্যে ম্যালেরিয়ার আক্রমণে তিনি দেহত্যাগ করেন।

বাংলা অভিযানে মুঘল সেনাদলে অন্তর্বিরোধ

খান-ই-খানানের মৃত্যুর পর মুঘল সেনাদলে অন্তর্বিরোধ ও হতাশা দেখা দেয়। সেই সুযোগে দাউদ সন্ধি ভেঙে পুনরায় বিভিন্ন স্থান অধিকার করে শেষ পর্যন্ত তাণ্ডা দখল করেন। মুঘল বাহিনী বিহারের দিকে পালায়।

আকবরের নির্দেশ

সম্রাট আকবরের নির্দেশে মুজাফফর খান তুরবতী ও খান-ই-জাহান এসে টোডরমলের সঙ্গে যোগ দিলে মুঘল সেনার মনোবল ফিরে আসে।

আকবরের আমলে রাজমহলের যুদ্ধ

১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে রাজমহলের যুদ্ধে দাউদ পরাজিত হন। তার ধর্মান্তরিত সেনাপতি ‘কালা পাহাড়’ যুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হন। টোডরমল দাউদকে বন্দী করেন এবং মুঘল শিবিরে তাকে নিহত করা হয়।

উপসংহার :- দাউদের পতনের ফলে বাংলার কেন্দ্রীয় শাসন মুঘলের হাতে আসে। কিন্তু স্থানীয় সামন্ত রাজা বিশেষত বারভূঁইয়াদের দমন করতে আরও বহু সময় লাগে। মান সিংহ প্রমুখ সেনাপতিদের চেষ্টায় বাংলায় মুঘল শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

(FAQ) মুঘল সম্রাট আকবরের বাংলা অভিযান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বাংলার কোন সুলতান আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেন?

সুলেমান কররানি।

২. আকবরের অভিযানের সময় বাংলার সুলতান কে ছিলেন?

দাউদ কররানি।

৩. আকবর বাংলা অভিযান করেন কখন?

১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে।

৪. কালা পাহাড় কার সেনাপতি ছিলেন?

বাংলার সুলতান দাউদ কররানি।

Leave a Comment