হিটলারের অভ্যন্তরীন নীতি

জার্মানির একচ্ছত্র নেতা হিটলারের অভ্যন্তরীন নীতি প্রসঙ্গে বিরোধী দলের অবলুপ্তি, এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা, নাৎসিকরণ, বেকার সমস্যার সমাধান, কৃষির উন্নতি, শিল্পোন্নয়ন ও ইহুদি বিদ্বেষ সম্পর্কে জানবো।

হিটলারের অভ্যন্তরীন নীতি

ঐতিহাসিক ঘটনা হিটলারের অভ্যন্তরীন নীতি
সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কাল
স্থান জার্মানি
উপাধি ফ্যুয়েরার
পতন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে
হিটলারের অভ্যন্তরীন নীতি

ভূমিকা:- ক্ষমতা দখলের পর হিটলার জার্মানির অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন। তিনি কোনোপ্রকার বিরোধিতা বা সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন না। তাঁর লক্ষ্য ছিল সমগ্র জার্মানির উপর তাঁর নিজের এবং নাৎসি দলের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা।

এলান বুলকের মন্তব্য

হিটলারের জীবনীকার এলান বুলক লিখছেন যে, হিটলারের একমাত্র কর্মসূচি ছিল ক্ষমতা দখল – প্রথমে জার্মানির উপর নিজের ক্ষমতা স্থাপন, এবং তারপর ইউরোপ -এর উপর জার্মানির একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা।

বিরোধী দলের অবলুপ্তি

জার্মানিতে নাৎসি দল -এর একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অন্য দলগুলির উপর কঠোর দমননীতি গ্রহণ করা হয়। যেমন –

(১) সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ

জার্মানিতে কমিউনিস্ট, সোস্যাল ডেমোক্রাট প্রভৃতি নাৎসি-বিরোধী সব রাজনৈতিক দলগুলি নিষিদ্ধ হয়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই জুলাই এক জরুরি আইন দ্বারা একমাত্র নাৎসি দলকেই বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

(২) আলোকপ্রাপ্ত দল

তিনি স্পষ্টই বলেন যে, অন্য কোনও রাজনৈতিক দল গঠিত হলে তা দেশদ্রোহিতার নামান্তর বলে বিবেচিত হবে। দেশজুড়ে প্রচার চালানো হয় যে, নাৎসি দলই একমাত্র আলোকপ্রাপ্ত দল এবং একমাত্র এই দলের দ্বারাই জার্মানির উন্নতি সম্ভব। এই দলের প্রভাব ছিল সর্বাত্মক। ব্যক্তি-জীবন, পারিবারিক জীবন, বিদ্যালয়, অফিস, কারখানা, গ্রাম—সর্বত্রই এই দলের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়।

(৩) দমন-পীড়ন

তাঁর নির্দেশে সোস্যাল ডেমোক্রাট ও কমিউনিস্টদের উপর নানা দমন-পীড়ন চলতে থাকে। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়, অনেককে হত্যা করা হয় এবং অনেককে বন্দি শিবিরে পাঠানো হয়।

(৪) হত্যা

সামান্যতম মতপার্থক্য ঘটলে তিনি নিজ দলের সদস্যদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে কুণ্ঠিত হতেন না। দলে সংস্কার আনার নামে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে জুন তিনি তাঁর অনুগত সহকর্মী রোয়েম এবং ভূতপূর্ব চ্যান্সেলার শ্লাইখার সহ অসংখ্য ব্যক্তিকে হত্যা করেন।

এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা

সমগ্র শাসনব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে জার্মানির প্রচলিত কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। যেমন –

(১) প্রতিনিধি সভার বিলোপ সাধন

তিনি ১৯৩৪ সালে ‘বুন্দেসরাথ’ (আইনসভার ঊর্ধ্বকক্ষ) এবং ‘রাইখস্ট্যাগ’ (আইনসভার নিম্নকক্ষ) নামক দুই প্রতিনিধি সভার বিলোপ ঘটান।

(২) স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ

জার্মানির অঙ্গরাজ্যগুলির স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়। এইসব অঙ্গরাজ্যের সরকার বাতিল করে কেন্দ্রের কাছে দায়বদ্ধ গভর্নরদের নিয়োগ করা হয়।

(৩) আইন তৈরির অধিকার বাতিল

প্রদেশগুলির আইন তৈরির অধিকার অবলুপ্ত করা হয়। এর ফলে সমগ্র শাসনব্যবস্থা হিটলারের হাতে চলে যায়।

নাৎসিকরণ

সরকারি কর্মচারীদের পূর্ণ সহযোগিতা ছাড়া হিটলারের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব ছিল না। এজন্য তিনি কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যেমন –

(১) কর্মচারীর নাৎসিকরণ

সমস্ত সরকারি কর্মচারীর নাৎসিকরণ করা হয়। নাৎসি দলের আদর্শ-বিরোধী বা এই আদর্শ সম্পর্কে নির্লিপ্ত সকল সরকারি কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়। হিটলারের প্রতি অনুগত এবং নাৎসি দলের প্রতি আস্থাভাজন ব্যক্তিদেরই সরকারি একরিতে নিয়োগ করা হয়। যে সব পরিবারের অ-জার্মান ও ইহুদিদের সঙ্গে বিবাহ-সম্পর্ক ছিল, তাদের সরকারি চাকরির অনুপযুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়।

(২) বিচার বিভাগের নাৎসিকরণ

বিচার বিভাগ ঢেলে সাজানো হয়। অ-নাৎসি বিচারকরা বিতাড়িত হন। রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র প্রভৃতি অপরাধের বিচারের জন্য পৃথক আদালত গঠিত হয়। এর নাম হয় গণ-আদালত বা পিপলস্ কোর্ট। এই আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আইনজীবীর সাহায্য নিতে চাইলে সরকারের অনুমতি নিতে হত।

(৩) নাৎসি ছাঁচ

জার্মানি থেকে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা, ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়। সমগ্র জাতিকে নাৎসি ছাঁচে ঢেলে ফেলা হয়। নাৎসি গুপ্ত পুলিশ বা ‘গেস্টাপো’ এবং ঝটিকা বাহিনী (S.A.) যে কোনও ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে এবং বিনা বিচারে বন্দি করে তাদের উপর অত্যাচার চালাতে পারত।

(৪) নাৎসি গির্জা

হিটলারের লক্ষ্য ছিল নাৎসি দলের অনুগত জাতীয় গির্জা গঠন করা। এই উদ্দেশ্যে তিনি গির্জার প্রতি দমন-পীড়নের নীতি গ্রহণ করেন এবং যাজকদের বন্দি শিবিরেও পাঠান।

(৫) প্রচার মাধ্যমে নাৎসিকরণ

তিনি জনমত ও সংবাদ মাধ্যমের উপর নানাপ্রকার নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে রাইখ প্রেস আইন পাস করে তিনি সংবাদপত্রের অ-জার্মান সম্পাদক নিয়োগ নিষিদ্ধ করেন। জার্মান বেতারকে নাৎসি প্রচারযন্ত্রে পরিণত করা হয়। দর্শনের অধ্যাপক ডঃ যোসেফ গোয়েবলস্ তাঁর প্রচার দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন। চলচ্চিত্র-সহ সমস্ত প্রচার মাধ্যমগুলির উপর নাৎসি দলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

(৬) যুব সম্প্রদায়ের উপর কর্তৃত্ব

জার্মানির যুব সম্প্রদায়ের উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা গঠিত হয়। বিভিন্ন যুব সংগঠনের উপর এই সংস্থার কর্তৃত্ব আরোপিত হয়। এই সংস্থার অনুমতি ব্যতীত কোনও যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ ছিল। এইভাবে ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জার্মান যুব সম্প্রদায়ের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

(৭) সাংস্কৃতিক জগতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা

জার্মানির শিক্ষা-সংস্কৃতির উপর নাৎসি দলের সর্বাত্মক প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। সাহিত্য, বিজ্ঞান, কলা, নাটক, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, রেডিও – অর্থাৎ জার্মানির সমগ্র সাংস্কৃতিক জগৎ নাৎসি দলের কুক্ষিগত হয়।

(৮) শিক্ষাক্ষেত্রে নাৎসিকরণ

জার্মান শিক্ষাব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হয় ছাত্রদের নাৎসিবাদে উদ্বুদ্ধ করা। পাঠ্যপুস্তকগুলি নাৎসি ভাবাদর্শেই রচিত হত। সরকার অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তক ছাড়া অন্য পাঠ্যপুস্তক নিষিদ্ধ ছিল। ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক ঢেলে সাজানো হয়। জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব এবং ইহুদি-বিদ্বেষকে ইতিহাসের বিষয়বস্তু করা হয়।

(৯) ছাত্র-ছাত্রীদের উপর কর্তৃত্ব

ছাত্র-ছাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে নাৎসি দলের সদস্য হতে হয়। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ জার্মানির সর্বত্র ঘোষণা করা হয় যে, ‘জার্মানি একটি জাতি, একটি দল ও একটি নেতার’ আদর্শে বিশ্বাসী।

বেকার সমস্যার সমাধান

যুদ্ধোত্তর জার্মানির অর্থনৈতিক দুরবস্থা নাৎসি অভ্যুত্থানের পথ সুগম করেছিল। এই কারণে তিনি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দেশকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে উদ্যোগী হন। ভয়াবহ বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যেমন –

(১) শিফট প্রথা

জার্মানির কলকারখানা ও স্কুল-কলেজে তিনি শিফট বা পালা প্রথা চালু করেন। এর ফলে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

(২) নারী জাতির প্রতি নির্দেশ

স্ত্রীলোকদের গৃহকর্ম ছাড়া অন্য কাজ নিষিদ্ধ হয়। বলা হয় যে সন্তান পালন, ধর্মচর্চা ও রন্ধনই তাঁদের একমাত্র কাজ। কর্মে নিযুক্ত অবিবাহিতা জার্মান নারীদের বিবাহের জন্য ঋণ দেওয়া হয়। শর্ত থাকে যে, বিবাহের পর তাঁরা চাকরি ছেড়ে দেবেন। এইসব শূন্য পদে নাৎসি যুবকদের নিয়োগ করা হয়।

(৩) খনিতে অতিরিক্ত লোক নিয়োগ

কাজের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়। কয়লা খনিগুলিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোক নিয়োগের জন্য খনিমালিকদের বাধ্য করা হয়।

(৪) নির্মাণ কাজ

কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তিনি জার্মানিতে বিরাট বিরাট নির্মাণকার্য – মোটর, বাস, বাসস্থান, রাস্তাঘাট, বিমান বন্দর, বন্দর, সরকারি অফিস-আদালত প্রভৃতি নির্মাণ শুরু করেন। শহরে বাসগৃহের মালিকদের গৃহ-সংস্কারের জন্য ঋণ দেওয়া হয়। অতিরিক্ত লোক নিয়োগের শর্তে খামার মালিকদের ঋণ দেওয়া হয়।

(৬) সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি

ভার্সাই সন্ধি ভঙ্গ করে সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি ও অস্ত্রনির্মাণ শুরু হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। ১৩ লক্ষ যুবক অস্ত্রনির্মাণ কারখানায় নিযুক্ত হয়। ভার্সাই সন্ধি দ্বারা জার্মানির সৈন্যসংখ্যা ১ লক্ষে বেঁধে দেওয়া হয়। হিটলার ক্ষমতায় আসার কয়েক বছরের মধ্যেই (১৯৩৮ সালের মধ্যে) তা ২০ লক্ষে দাঁড়ায়।

(৭) বেকারের সংখ্যা হ্রাস

এইভাবে জার্মানিতে বেকার সমস্যার সমাধান হতে থাকে। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে নাৎসি বিপ্লবের পূর্বে জার্মানিতে বেকারের সংখ্যা ছিল ৬০ লক্ষ। ১৯৩৮ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার।

কৃষির উন্নতি

কৃষির উন্নতির জন্যও তিনি বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

  • (১) ব্যাপক পরিমাণ পতিত, অনাবাদি ও জলাভূমিকে চাষের অধীনে আনা হয় এবং সেখানে যাতে ভালোভাবে চাষবাস কৃষির উন্নতি হয়, সেদিকে তিনি নজর দেন।
  • (২) কৃষিজমিতে সার প্রয়োগ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হতে থাকে।
  • (৩) কৃষকদের সুবিধার জন্য শস্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হয় এবং সেই সঙ্গে শ্রমিকদের মজুরিও বৃদ্ধি করা হয়। এর ফলে কৃষিকার্যে উৎসাহ বৃদ্ধি পায় এবং কৃষকদের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।

শিল্পোন্নয়ন

দেশের সমস্ত শিল্পোৎপাদনের উপর নাৎসিদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন –

(১) ধর্মঘট নিষিদ্ধ

১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পূর্বতন ট্রেড ইউনিয়নগুলি ভেঙে দেন এবং সারা দেশে ধর্মঘট নিষিদ্ধ হয়।

(২) শ্রমিকদের অছি

শ্রমিক সঙ্ঘ ও মালিক সঙ্ঘ প্রভৃতি সংস্থাগুলি ভেঙে দিয়ে তার স্থলে শ্রমিক ও মালিকদের নিয়ে এক যৌথ প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। সমগ্র জার্মানিকে তেরোটি ভাগে বিভক্ত করে এই ধরনের তেরোটি ‘ট্রাস্টি অব লেবার’ বা “শ্রমিকদের অছি” গঠিত হয়। এর দায়িত্ব ছিল শ্রমিকদের মজুরি ও কাজের সময়-সীমা নির্ধারণ, শ্রমিক অসন্তোষ দূরীকরণ এবং তাদের অবস্থার উন্নতি করা।

(৩) রপ্তানি বৃদ্ধির উপার জোর

বড়ো বড়ো শিল্পগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য ‘সুপারভাইজার’ পদ সৃষ্টি করা হয়। দেশীয় শিল্পের উন্নতির জন্য আমদানি হ্রাস ও রপ্তানি বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়। আমদানিকৃত পণ্যের উপর শুল্কের হার বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

(৪) চতুর্থ বার্ষিকী পরিকল্পনা

দেশের আর্থিক পুনরুজ্জীবনের জন্য হিটলার ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ বার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কৃত্রিম উপায়ে পেট্রোল, রবার, পশম, খাদ্যদ্রব্য প্রভৃতি তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়।

ইহুদি বিদ্বেষ

হিটলারের অভ্যন্তরীণ নীতির অন্য অঙ্গ ছিল ইহুদি নিধন। এক্ষেত্রে তার পদক্ষেপ গুলি হল –

(১) দমন-পীড়ন ও লুঠ

ইহুদিদের উপর তিনি প্রচণ্ড দমন-পীড়ন শুরু করেন। তাদের জমি-জনা, দোকান-পাট, ধর্ম-প্রতিষ্ঠান – সব কিছু লুঠ করা হয়।

(২) সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত

সরকারি চাকরি থেকে তাদের বিতাড়িত করা হয় এবং জীবিকার্জনের সব সুযোগ থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়। অসংখ্য ইহুদিকে বন্দি শিবিরে চরন লাঞ্ছনা ও অত্যাচারের মধ্যে জীবন-নির্বাহ করতে হত।

(৩) ইহুদিদের বিরুদ্ধে আইন

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের এক আইন দ্বারা ইহুদি ও জার্মানদের বিবাহ নিষিদ্ধ হয়। পঁয়তাল্লিশ বছরের নিম্নবয়স্কা কোনও জার্মান নারী কোনও ইহুদি পরিবারে কাজ করতে পারত না। জার্মানির বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে ইহুদিরা বসবাস করতে পারত না, বা বিশেষ বিশেষ রাস্তা দিয়ে তাদের হাঁটার অধিকার ছিল না।

(৪) ইহুদি সংখ্যা হ্রাস

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কোনও জার্মান বিদ্যালয়ে কোনও ইহুদি ছাত্রের ভর্তি নিষিদ্ধ হয়। এই বছরের শেষে জার্মানিতে কোনও ইহুদি ডাক্তার, শিক্ষক, বিচারক বা কেরানি ছিল না বললেই হয়।

উপসংহার:- হিটলারের অত্যাচারে হাজার হাজার ইহুদি দেশত্যাগে বাধ্য হয়। বিশ্ববন্দিত বৈজ্ঞানিক অ্যালবার্ট আইনস্টাইনও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

(FAQ) হিটলারের অভ্যন্তরীন নীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. জার্মানির একচ্ছত্র নেতা হিসেবে হিটলার কি উপাধি ধারণ করেন?

ফ্যুয়েরার।

২. হিটলার কবে জার্মানির ক্ষমতা দখল করেন?

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে।

৩. হিটলারের লেখা গ্ৰন্থের নাম কি?

মেঁই ক্যাম্ফ বা মেইন ক্যাম্ফ বা আমার সংগ্ৰাম।

৪. জার্মানিতে বসবাসকারী বিশ্ববন্দিত ইহুদি বৈজ্ঞানিক কে ছিলেন?

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন।

Leave a Comment