আধুনিক ভারত ইতিহাসের উপাদান

আধুনিক ভারত ইতিহাসের উপাদান প্রসঙ্গে ব্রিটিশ সরকারী কাগজপত্র, অন্যান্য ইউরোপীয় কোম্পানীর দলিলপত্র, ভারতীয় ভাষায় লিখিত বিবরণ, সংবাদপত্র, রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যাবলীর বিবরণী ও অন্যান্য উপাদান সম্পর্কে জানবো।

আধুনিক ভারত ইতিহাসের উপাদান

ঐতিহাসিক বিষয়আধুনিক ভারত ইতিহাসের উপাদান
History of British Indiaজেমস মিল
History of the Marathasগ্ৰান্ট ডাফ
Indian Struggleসুভাষচন্দ্র বসু
Discovery of Indiaজওহরলাল নেহরু
আধুনিক ভারত ইতিহাসের উপাদান

ভূমিকা :- ভারতীয় ইতিহাস সম্বন্ধে অনুসন্ধিৎসুগণ যখন আধুনিক যুগের ইতিহাসে হাত দেন তখন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ঘটনাবলী সম্বন্ধে উপাদানের প্রাচুর্যে তাঁরা অভিভূত হয়ে পড়েন।

ভারতের আধুনিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্রিটিশ সরকারী কাগজপত্র

  • (১) আধুনিক যুগের ইতিহাসের উপাদানকে যে সকল বিভাগে ভাগ করা যায় তাহাদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হইল সরকারী কাগজপত্র, অর্থাৎ বিভিন্ন স্তরের সরকারী দপ্তরের নথিপত্র।
  • (২) অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ভারত-এ এবং ইংল্যান্ড-এ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাগজপত্রে বাণিজ সংক্রান্ত বিষয়েরই বেশী উল্লেখ থাকত। ভারতে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের পর রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক বিষয়ের গুরুত্ব বাড়তে লাগল।
  • (৩) কোম্পানীয় শাসনের শেষের দিকে এই সকল বিষয়ই কোম্পানীর মনোযোগ সম্পূর্ণ অধিকার করল। এই সকল কাগজপত্র থেকে ডিরেক্টর সভা (Court of Directors) বোর্ড অব কন্ট্রোলের (Board of Control) কাজকর্ম ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকার থেকে জেলা স্তর পর্যন্ত শাসন ব্যবস্থার সকল স্তর সম্বন্ধে বিস্তৃত বিবরণ জানা যায়।
  • (৪) এদের মধ্যে আছে চিঠিপত্র, রিপোর্ট এবং বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের মন্তব্য (Minutes) ও স্মারকলিপি (Memoranda) ইত্যাদি। এদের বৈচিত্র্য প্রায়ই বিভ্রান্তিকর, এবং এদের সংখ্যা বিপুল ও ভয়োদ্রেককারী। উৎসাহী গবেষক এদের মধ্যে তথ্যের এক অফুরন্ত ভাণ্ডার পাবেন।
  • (৫) সরকারী দলিল সংরক্ষণের এই ঐতিহ্য ব্রিটিশ রাজশক্তি কর্তৃক কোম্পানীর কাছ থেকে ভারতবর্ষের শাসনভার প্রত্যক্ষভাবে গ্রহণ করার পরও অক্ষুন্ন থাকে। শাসন ব্যবস্থার এবং বৈদেশিক নীতির জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাগজপত্রের বৈচিত্র্য এবং সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
  • (৬) যত্ন সহকারে পাঠ করলে এই সকল দলিল থেকে প্রতিটি ঘটনার বিভিন্ন স্তর অনুধাবন করা যায়, কিভাবে সরকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হত তাও জানা যায়। ব্রিটিশ ভারতের সাথে তার প্রতিবেশীদের সম্পর্ক সম্বন্ধে জানতে হলে ফ্রান্স এবং রাশিয়ার সরকারী মহাফেজখানায় সংরক্ষিত দলিলগুলি দেখা প্রয়োজন।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে অন্যান্য ইউরোপীয় কোম্পানীর দলিলপত্র

  • (১) পর্তুগিজ, ওলন্দাজ ও ফরাসী কোম্পানীর দলিলপত্র সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অর্থনৈতিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রেই এদের মূল্য অধিক।
  • (২) কিন্তু এই সকল কাগজপত্রে অনেক সময় রাজনৈতিক ইতিহাস সম্বন্ধে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। যেমন – ফরাসি কোম্পানীর কাগজপত্রগুলি রাজনৈতিক ইতিহাস, বিশেষতঃ দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়।

ভারতের আধুনিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ভারতীয় ভাষায় লিখিত বিবরণ

  • (১) অষ্টাদশ শতাব্দীর ইতিহাস রচনার জন্য ফারসি ইতিবৃত্ত গুলির গুরুত্ব ক্রমশ ক্ষীয়মান হয়ে এসেছে। এদের মধ্যে গোলাম হোসেন তবাতবাই রচিত ভারতবর্ষের সাধারণ ইতিহাস ‘সিয়র-উল-মুতাখরিন’ গ্রন্থটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এতে বাংলা সুবার ইতিহাসও সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে।
  • (২) রাজওয়াড়ে, খারে, সরদেশাই এবং অন্যান্যদের সম্পাদিত মারাঠি সরকারী সংবাদ লিপিগুলি ফার্সী ইতিবৃত্তগুলির তুলনায় অনেক বেশী নির্ভরযোগ্য। মারাঠা শক্তির জয়-পরাজয় এবং মারাঠা রাজনীতির ঘটনা-প্রবাহ এই ভাগগুলিতে হুস্পষ্টভাবে চিত্রিত হয়েছে।
  • (৩) দুপ্লের দোভাষী আনন্দ রঙ্গ পিল্লাইয়ের রচিত তামিল রোজনামচা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গ্রন্থ। দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে রাজনৈতিক শক্তিগুলির উত্থান-পতন এতে প্রতিকশিত হয়েছে।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সংবাদপত্র

উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় ও ইয়োরোপীয়গণ কর্তৃক সম্পাদিত বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে এই দেশে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক মতবাদ এবং ঘটনা সম্বন্ধে জানা যায়।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যাবলীর বিবরণী

জনসাধারণের রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গে আইনসভাগুলি ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েসন, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েসন বা ভারত সভা, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ প্রভৃতি রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যাবলীর বিবরণীর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের অন্যান্য উপাদান

  • (১) ইংরাজগণের রচিত নানা রকম সমসাময়িক গ্রন্থ, স্মৃতি, জীবনী, ভ্রমণ ইত্যাদি অষ্টাদশ শতাব্দী ও উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের ইতিহাস অনেক কৌতূহলোদ্দীপক ও প্রয়োজনীয় তথ্যের সন্ধান দেয়। এই সকল লেখকদের মধ্যে অনেকেই ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার সাথে জড়িত ছিলেন।
  • (২) এই সময়ে রচিত কয়েকটি ইতিহাস গ্রন্থ পুরাতন হলেও সম্পূর্ণ মূল্যহীন হয় নি। যেমন, জেমস মিল-এর History of British India, ম্যালকমের Central India, উইলসের (Wilkes) History of Mysore, গ্ৰান্ট ডাফের History of the Marathas এবং কানিংহামের History of the Sikhs
  • (৩) খুঁটিনাটি বহু তথ্য ছাড়াও এই গ্রন্থগুলিতে যে দৃষ্টিভঙ্গী দেখা যায় তাহা বিবেচনার যোগ্য। রাজপুতগণের সহিত ব্রিটিশ সরকারের সম্পর্ক আলোচনার জন্য টডের Annals -এর কোনো কোনো অংশ প্রয়োজনীয়।

উপসংহার :- সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত A Nation in Making, মহাত্মা গান্ধীর My Experiments with Truth, জওহরলাল নেহরুর আত্মজীবনী এবং Discovery of India, সুভাষচন্দ্র বসুর Indian Struggle প্রভৃতি আত্মজীবনী থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্বন্ধে জাতীয়তাবাদীগণের মনোভাব জানা যায়।

(FAQ) আধুনিক ভারত ইতিহাসের উপাদান সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনীর নাম কি?

My Experiments with Truth.

২. সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর নাম কি?

A Nation in Making.

৩. জেমস মিলের লেখা গ্ৰন্থের নাম কি?

History of British India.

Leave a Comment