আইন অমান্য আন্দোলন স্থগিত রাখার কারণ প্রসঙ্গে করাচি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত, দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে গান্ধীজীর যোগদান, ভারতের বিভিন্ন স্থানে অশান্তি, সরকারের কঠোর নীতি, গান্ধীজীর গ্ৰেপ্তার, সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার বিরোধিতায় গান্ধীজী, আন্দোলন স্থগিত রাখার নির্দেশ ও যুক্তি সম্পর্কে জানবো।
আইন অমান্য আন্দোলন স্থগিত রাখার কারণ
ঐতিহাসিক ঘটনা | আইন অমান্য আন্দোলন স্থগিত রাখার কারণ |
গান্ধী আরউইন চুক্তি | ১৯৩১ খ্রি: |
পুনা চুক্তি | ১৯৩২ খ্রি: |
আন্দোলন বন্ধের নির্দেশ | ১৯৩৪ খ্রি: |
ভূমিকা :- আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হওয়ার এক বছর পরে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে মহাত্মা গান্ধীর সাথে ভাইসরয় আরউইনের একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তি অনুসারে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে স্বীকৃত হন, তার বিনিময়ে জাতীয় কংগ্রেস আইন অমান্য আন্দোলন স্থগিত রাখতে প্রস্তুত হয়।
আইন অমান্য আন্দোলন কালে করাচি কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে করাচিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাবের প্রতি পুনরায় সমর্থন জানান হয় এবং লণ্ডনের গোলটেবিল বৈঠকে ভারত-এর এই দাবি উত্থাপন করার দায়িত্ব গান্ধীজীর উপর অর্পণ করা হয়।
আইন অমান্য আন্দোলন কালে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে গান্ধীজীর যোগদান
গান্ধীজী দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক-এ যোগদান করেন। কিন্তু জিন্নাহর কঠোর মনোভাবের জন্য তাঁর পক্ষে ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে কোনো সুযোগ আদায় করা সম্ভব হয় নি। ১৯৩১ খ্রীস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে গান্ধীজী স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
আইন অমান্য আন্দোলন কালে ভারতের বিভিন্ন স্থানে অশান্তি
ইতিমধ্যে যুক্ত প্রদেশ, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও বাংলাদেশ-এ নানারূপ রাজনৈতিক অশান্তি দেখা দেয়। ব্রিটিশ সরকারের নির্যাতনমূলক নীতিই ছিল এই অশান্তির মূল কারণ।
আইন অমান্য আন্দোলন কালে ব্রিটিশ সরকারের কঠোর নীতি
এই সময় লর্ড আরউইনের কার্যকাল শেষ হওয়ায় লর্ড উইলিংডন ভারতের ভাবী ভাইসরয় নিযুক্ত হন। নতুন ভাইসরয়ের সাথে ভারতের ব্রিটিশ সরকারের চিঠিপত্রের আদান-প্রদান থেকে জানা যায় যে, ভারত সরকার আইন অমান্য আন্দোলন দমন করার জন্য আরও কঠোর নীতি গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
আইন অমান্য আন্দোলন কালে গান্ধীজীর গ্ৰেপ্তার
ব্রিটিশ সরকারের নীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবর্গ পুনরায় আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করতে হুমকি দিলে ব্রিটিশ সরকার গান্ধীজীকে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারী মাসে গ্রেপ্তার করে কারান্তরালে প্রেরণ করে এবং আইন অমান্য আন্দোলন দমন করার জন্য কয়েকটি অরডিনান্স জারী করে।
আইন অমান্য আন্দোলন কালে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার বিরোধিতায় গান্ধীজী
গান্ধীজী বন্দী থাকাকালে ব্রিটিশ সরকার সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়কে দ্বিখণ্ডিত করার জন্য উদ্যোগী হয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্্যামসে ম্যাকডোনাল্ডের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে গান্ধীজী ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২০শে সেপ্টেম্বর আমৃত্যু অনশন শুরু করেন।
আইন অমান্য আন্দোলন কালে পুনা চুক্তি
গান্ধীজীর প্রতিবাদে এবং তফসিলি নেতা ডক্টর আম্বেদকর-এর সাথে গান্ধীজীর পুনা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ায় ব্রিটিশ সরকার তখনকার মতো তফসিলিদের জন্য পৃথক আসন রক্ষার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে। ১৯৩৩ খ্রীস্টাব্দের মে মাসে গান্ধীজী হরিজনদের স্বার্থরক্ষার জন্য পুনরায় অনশন শুরু করেন।
আইন অমান্য আন্দোলন কালে রাজনৈতিক অচল অবস্থা দূরীকরণ
১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃস্থানীয় অনেকেই ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচারমূলক এবং অর্ডিন্যান্সের দ্বারা পরিচালিত শাসনতন্ত্রের হাত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। অপরদিকে রাজনৈতিক অচল অবস্থা দূর করার উদ্দেশ্যে আইন সভায় প্রবেশের প্রয়োজনীয়তাও তাঁরা উপলব্ধি করেন।
আইন অমান্য আন্দোলন কালে স্বরাজ্য দলকে পুনর্গঠিত করার প্রস্তাব
এই সময় ডক্টর আনসারীর নেতৃত্বে নিখিল ভারত স্বরাজ্য দলকে পুনর্গঠিত করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। গান্ধীজী ব্যক্তিগতভাবে কংগ্রেসের সদস্যদের আইন সভায় প্রবেশের নীতিকে সমর্থন না করলেও, ইচ্ছুক ব্যক্তিদের প্রবেশের উপর বাধানিষেধ আরোপ করতে অসম্মত হন।
আইন অমান্য আন্দোলন বন্ধ রাখার জন্য গান্ধীজীর নির্দেশ
গান্ধীজী এই সময় কংগ্রেসের সদস্যপদ ত্যাগ করেন এবং সম্পূর্ণরূপে সাংগঠনিক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে তিনি সমস্ত কংগ্রেস সদস্যকে আইন অমান্য আন্দোলন বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেন।
আইন অমান্য আন্দোলন বন্ধ রাখার জন্য গান্ধীজীর নির্দেশনামা
তাঁর এই নির্দেশে বলা হয়, “I must advise all congressmen to suspend civil resistance for swaraj as distinguished from specific grievances. They should leave it to me alone. It should be resumed by others in my life time only under my direction. I give this opinion as the author and initiator of Satyagraha”
আইন অমান্য আন্দোলন বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে গান্ধীজীর যুক্তি
এইরূপ সিদ্ধান্তের কারণ হিসাবে তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, সত্যাগ্রহের প্রকৃত অর্থ জনসাধারণের নিকট সুস্পষ্ট নয় – বাণী প্রেরণের ত্রুটি-বিচ্যুতিই এই অবস্থার জন্য মূলতঃ দায়ী।
আইন অমান্য আন্দোলন বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে গান্ধীজীর বক্তব্য
গান্ধীজীর বক্তব্য অনুসারে, “I feel that masses have not received the full message of Satyagraha owing to its adulteration in the process of transmission. It has become clear to me that spiritual instruments suffer in their potency when their use is taught through non spiritual media “
উপসংহার :- তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি, সর্বান্তকরণে অনুসন্ধান এবং ঈশ্বর -এর ইচ্ছার উপর নির্ভর করেই গান্ধীজী উপরিউক্ত বক্তব্য পেশ করেন এবং আইন অমান্য আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
(FAQ) আইন অমান্য আন্দোলন স্থগিত রাখার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে।
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে।
দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক।
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে।
এপ্রিল ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে।