নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম সম্মেলন, প্রথম সভাপতি ও সম্পাদক, বিশিষ্ট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ, শ্রমিক আন্দোলন সুস্পষ্ট আকার ধারণ, সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও দক্ষিণ ভারতে শ্রমিকদের ধর্মঘট সম্পর্কে জানবো।
নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস
ঐতিহাসিক ঘটনা | নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯২০ খ্রি: |
প্রথম সম্মেলন | বোম্বাই |
প্রথম সভাপতি | লালা লাজপত রায় |
প্রথম সম্পাদক | দেওয়ান চমনলাল |
ভূমিকা :- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এর পর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে শ্রমিকশ্রেণীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকগণ সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে।
নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা
শ্রমিকশ্রেণীর সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টার ফলে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।
নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা
এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন বি. পি. ওয়াদিয়া, লোকমান্য তিলক, এন. এম. যোশি, যোসেফ বাপতিস্তা প্রমুখ।
নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়নের প্রথম সভাপতি ও সম্পাদক
এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন লালা লাজপত রায় এবং প্রথম সম্পাদক হন দেওয়ান চমনলাল।
নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন
বোম্বাইয়ে এই সংগঠনের প্রথম সম্মেলনে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সারির কিছু নেতা, যেমন – লালা লাজপত রায়, মতিলাল নেহরু, বিটলভাই প্যাটেল, অ্যানি বেসান্ত প্রমুখ।
নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা
এই সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ভারতীয় শ্রমিকগণও সর্বভারতীয় ভিত্তিতে একটি সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে।
বিশিষ্ট নেতাদের নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সাথে যোগাযোগ
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, লালা লাজপত রায় প্রমুখ জাতীয় কংগ্রেসের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দও নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করেন।
শ্রমিক আন্দোলন সুস্পষ্ট আকার ধারণ
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত-এর শ্রমিক আন্দোলনের গতি ছিল মন্থর এবং বিচ্ছিন্নভাবেই এই আন্দোলন পরিচালিত হত। কিন্তু পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই এই আন্দোলন সুস্পষ্ট আকার ধারণ করে।
নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয় এবং পঁয়তাল্লিশটি ইউনিয়নের মোট দেড় লক্ষের উপর শ্রমিক এই সংস্থার সদস্য পদ গ্রহণ করে। এই সময় থেকেই ভারতের শ্রমিক আন্দোলন সংগ্রামী চরিত্র গ্রহণ করে।
সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
ভারতে সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। অপরদিকে শ্রমিক আন্দোলনে ইতিমধ্যে বামপন্থী ও সাম্যবাদী আদর্শ বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলন আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের অংশ
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ১লা মে বোম্বাইয়ে শ্রমিক দিবস পালিত হয়। এই ঘটনা থেকে মনে হয় যে, তখন থেকেই ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলন আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে পরিগণিত হতে থাকে।
সমগ্র ভারতে শ্রমিক ধর্মঘট ব্যাপক আকার ধারণ
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে শ্রমিক ধর্মঘট ব্যাপক আকার ধারণ করে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০৩টি ধর্মঘট হয় এবং পাঁচ লক্ষের উপর শ্রমিক এই সব ধর্মঘটে যোগ দেয়।
সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় শ্রমিক আন্দোলন
এই সময়ের সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় শ্রমিক আন্দোলন হল বোম্বাইয়ের সুতাকল ধর্মঘট। এই ধর্মঘটে প্রায় দেড় লক্ষ শ্রমিক ছ’মাস ধরে দীর্ঘ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে। কমিউনিস্ট পার্টি প্রস্তাবিত গিরনি কামগার ইউনিয়ন এই ধর্মঘট পরিচালনা করে।
দক্ষিণ ভারতে শ্রমিকদের ধর্মঘট
দক্ষিণ ভারতীয় রেলপথ এবং মাদ্রাজ ও দক্ষিণ মহারাষ্ট্র রেলপথের কর্মীরাও ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে।
উপসংহার :- নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলনে জাতীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নিতেন এবং তারা চাইতেন যাতে শ্রমিক শ্রেণি জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। রাজনীতি সচেতন শ্রমিক শ্রেণিও মহাত্মা গান্ধী পরিচালিত আন্দোলনে অংশগ্রহণে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল।
(FAQ) নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে।
বোম্বাইয়ে।
লালা লাজপত রায়।
দেওয়ান চমনলাল।