পুনা চুক্তির সময়কাল, স্বাক্ষরকারী দুই পক্ষ, চুক্তির প্রেক্ষাপট, পুনা চুক্তি স্বাক্ষর, পুনা চুক্তির শর্ত ও পুনা চুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো।
পুনা চুক্তি প্রসঙ্গে পুনা চুক্তির সময়কাল, পুনা চুক্তির স্থান, পুনা চুক্তি স্বাক্ষরকারী গান্ধীজি ও আম্বেদকর, পুনা চুক্তির ইতিহাস, পুনা চুক্তির শর্ত, পুনা চুক্তি সম্পর্কে তথ্য, পুনা চুক্তি সম্পর্কে টীকা, পুনা চুক্তির পটভূমি, পুনা চুক্তির বৈশিষ্ট্য, পুনা চুক্তির গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানব।
পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.)
ঐতিহাসিক ঘটনা | পুনা চুক্তি |
সময়কাল | ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ |
স্থান | পুনার জারবেদা জেল |
স্বাক্ষরকারী | মহাত্মা গান্ধী ও বি. আর. আম্বেদকর |
সিদ্ধান্ত | যৌথ নির্বাচন পদ্ধতির স্বীকৃতি |
ভূমিকা :- বিশ শতকের শুরু থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে দলিত সমস্যা গুরুত্ব লাভ করে এবং ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতিতে তা স্বীকৃতি লাভ করে। দলিতদের রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.)।
পুনা চুক্তির প্রেক্ষাপট
- (১) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডােনাল্ড ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘােষণা করেন।
- (২) এই নীতি অনুসারে ভারত-এর মুসলিম, খ্রিস্টান, ইউরােপীয় প্রভৃতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়।
- (৩) এরই সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু’ ও ‘দলিত হিন্দু’– এই দুটি ভাগে ভাগ করে পৃথক নির্বাচনের কথা বলা হয়। এর প্রতিবাদে গান্ধিজি আমরণ অনশন করলে গান্ধিজির প্রাণ সংশয় দেখা দেয়।
পুনা চুক্তিস্বাক্ষর
এই পরিস্থিতিতে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে অনুন্নত সম্প্রদায়ের নেতা ড. বি. আর. আম্বেদকর ও গান্ধিজির মধ্যে ‘পুনা চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়।
পুনা চুক্তির শর্ত
এই চুক্তির শর্তগুলি হল-
- (১) উন্নত ও অনুন্নত হিন্দু সম্প্রদায় যৌথভাবে ভােট দেবে অর্থাৎ অনুন্নত ‘হরিজন’ শ্রেণি-সহ সব হিন্দুদের যৌথ নির্বাচক মণ্ডলীর নীতি স্বীকৃত হবে।
- (২) হরিজন সম্প্রদায় হিন্দু সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এ কথা স্বীকার করা হবে।
- (৩) হরিজনদের জন্য আইনসভায় আসন সংখ্যার বরাদ্দ দ্বিগুণ করার সঙ্গে সঙ্গে তা সংরক্ষিত করা।
- (৪) সরকারি চাকরিতে অনুন্নত শ্রেণির যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব দান করা।
- (৫) দশ বছর পর সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থার অবসান করা হবে।
- (৬) স্থানীয় সংস্থাগুলির কোনও নির্বাচন বা সরকারি পরিষেবাগুলিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলিত শ্রেণীর সদস্য হওয়ার কারণে কারও সাথে কোনও অক্ষমতা যুক্ত থাকবে না।
- (৭) শিক্ষাগত অনুদানের মধ্যে প্রতিটি প্রদেশে দলিত শ্রেণীর সদস্যদের শিক্ষাগত সুবিধা প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হবে।
- (৮) কেন্দ্রীয় আইনসভায় ব্রিটিশ ভারতের জন্য সাধারণ ভোটারদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনের ১৮ শতাংশ দলিত শ্রেণীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
- (৯) দলিত শ্রেণীর কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক আইনসভার জন্য ভোটাধিকার লোথিয়ান কমিটির রিপোর্টে নির্দেশিত হিসাবে হবে।
পুনা চুক্তির গুরুত্ব
ভারতের ইতিহাসে পুনা চুক্তির গুরুত্ব ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন –
(১) যৌথ নির্বাচন ব্যবস্থা
এই চুক্তি অনুসারে অনুন্নত সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং হিন্দুদের যৌথ নির্বাচনের সূত্র মেনে নেওয়া হয়।
(২) আসন সংরক্ষণ
অনুন্নত শ্রেণির আসন বরাদ্দ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায় এবং এই আসনগুলি তাদের জন্য সংরক্ষিত হয়।
(৩) গান্ধির গুরুত্ব বৃদ্ধি
পুনা চুক্তি গান্ধিজির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে এবং তার প্রচেষ্টায় হিন্দু সমাজে বিভেদনীতি অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
উপসংহার :- পুনা চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজি অনশন ত্যাগ করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে যৌথ নির্বাচন স্বীকৃতি লাভ করলে ভারতে হিন্দুদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা রোধ হয়।
(FAQ) পুনা চুক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর।
মহাত্মা গান্ধী ও বি. আর. আম্বেদকর।
হিন্দুদের যৌথ নির্বাচন নীতির স্বীকৃতি।