সুলতানি যুগের অর্থনীতি

সুলতানি যুগের অর্থনীতি প্রসঙ্গে কৃষি জমি, কৃষিজ ফসল, কৃষি পণ্যের বাজার দর, সেচ নীতি, রাজস্ব, পশুপালন, রেশম শিল্প, বস্ত্র শিল্প, ধাতু শিল্প, নগর ও পরিবহণ, বন্দর, অন্তর্বাণিজ্য, বহির্বাণিজ্য, আমদানি ও রপ্তানি দ্রব্য ও ধনবন্টনের অভাব সম্পর্কে জানবো।

সুলতানি যুগের অর্থনীতি

ঐতিহাসিক ঘটনাসুলতানি যুগের অর্থনীতি
সাম্রাজ্যসুলতানি সাম্রাজ্য
কৃষিজ ফসলধান, গম, আলু, ভুট্টা
নগরদিল্লি, আগ্ৰা, লাহোর, বারাণসী
বন্দরকালিকট, কোচিন, সপ্তগ্ৰাম
সুলতানি যুগের অর্থনীতি

ভূমিকা :- সুলতানি যুগের অর্থনীতি বেশ স্বচ্ছল। সুলতানি যুগের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তস্ত ছিল কৃষি। সুলতান ও শাসক অভিজাতদের স্বচ্ছলতার মূলে ছিল কৃষি জমির আয় থেকে পাওয়া কর।

সুলতানি যুগে কৃষি জমি

  • (১) ডঃ ইরফান হাবিবের মতে, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতকে লোকসংখ্যার অনুপাতে ভূমির অভাব ছিল না। গাঙ্গেয় উপত্যকার বহু অংশ তখনও ছিল অকর্ষিত, জঙ্গলময় জমি। বহু অতিরিক্ত জমি যে অনাবাদী থাকত তার প্রমাণ বিভিন্ন সুলতানদের ফর্মান থেকে পাওয়া যায়।
  • (২) যাদের হাতে অর্থবল ও জনবল ছিল সেইসব উদ্যমী লোকেদের সুলতানরা এই অনাবাদী জমি কর্ষণযোগ্য করার জন্য দায়িত্ব দিতেন। ইসলামীয় পরিভাষায় এই অকর্ষিত জমিগুলিকে বলা হত “মৃত জমি”।
  • (৩) এই জমিগুলিকে ফলনশীল করার জন্য মহম্মদ বিন তুঘলক উদ্যমী লোকদের সরকার থেকে অগ্রিম দাদন হিসেবে অর্থ সাহায্য দিতেন। অবশ্য সরকারী কর্মচারীরা এই অর্থের একাংশ নিয়ে নিত।
  • (৪) ফিরোজ শাহ তুঘলক সেচব্যবস্থা চালু করে অনাবাদী জমিকে আবাদী জমিতে পরিণত করার নীতি নেন। তাছাড়া দোয়াব প্রভৃতি অঞ্চলের জমি ছিল দু-ফসলী, ভীষণ উর্বরা। বৃষ্টিপাত বা সেচের ব্যবস্থা থাকলে প্রচুর ফসল ফলত।

সুলতানি যুগের ফসল

  • (১) সুলতানি আমলে জমিতে নানারকম ফসল ফলত। ইবন বতুতার বিবরণ থেকে জানা যায় যে শরৎকালীন ফসল বা ‘খারিফ’ এবং বসন্তকালীন ফসল বা ‘রবি’ চাষ হত। ঠাককুরা ফেরুর (Thakkura Pheru) বিবরণ থেকে জানা যায় যে, প্রায় ২৫ রকম ফসলের উৎপাদন চাষীরা বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন অঞ্চলের জমিতে করত।
  • (২) প্রধান কৃষিজাত পণ্য ছিল গম, ধান, কলাই, ভুট্টা, আলু, বাদাম, তামাক, আখ, তৈলবীজ, যব, মশলা, নারকেল, পান, সুপারি, আদা, বিভিন্ন প্রকার ফল। এছাড়া বিক্রির জন্য আফিম, নীল প্রভৃতির চাষ হত।
  • (৩) মালাবারে প্রচুর মশলা উৎপন্ন হত। এই মশলা বিদেশেও রপ্তানি হত। কাশ্মীরে জাফরান এবং বাংলায় আখ উৎপন্ন হত। ইবন বতুতা সরসূতি, সাগর অঞ্চলে প্রচুর সরু ধান, ধার অঞ্চলে গম ও পান এবং সেচ বা গোয়ালিয়র অঞ্চলে ভাল জাতের গমের উৎপাদন দেখেন।
  • (৪) বাংলার ধানের ফলন দেখে তাঁর মিশর দেশের কথা মনে পড়েছিল। এছাড়া বাংলাতে তিনি আম ও নারকেল সহ নানারকম ফল ফলতে দেখেন।

দিল্লি সুলতানি যুগে কৃষিপণ্যের বাজার দর

  • (১) খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের বাজার দর সব সময় সমান থাকত না। আলাউদ্দিন খলজির আমলে বাজার দর সম্পর্কে বরণী যে তালিকা দিয়েছেন তা পরীক্ষা করে, গবেষক ডঃ ইরফান হাবিব অভিমত দিয়েছেন যে, সেচ-সেবিত জমির ফসলের দর, অসেচ জমির ফসল অপেক্ষা বেশী ছিল।
  • (২) ফিরোজ তুঘলকের আমলেও খাদ্যশস্যের দাম অন্তত কোনো কোনো অঞ্চলে কম ছিল। তারিখ-ই-দাউদ থেকে জানা যায় যে, ইব্রাহিম লোদীর আমলে সুলতানি যুগে সর্বাপেক্ষা শস্তাদরে খাদ্য-শস্য বিক্রি হত। এজন্য সরকার থেকে কোনো বলপ্রয়োগ করা হত না।
  • (৩) গম, ধান, যব প্রভৃতি খাদ্যশস্য অসেচ যুক্ত জমিতে ফলত। বর্ষার জলের ওপরেই এই শস্যগুলির উৎপাদনের জন্য নির্ভর করতে হত।

সুলতানি যুগের সেচ নীতি

  • (১) দিল্লী সুলতানরা মধ্য এশিয়ার আদর্শে উত্তর ভারতে সেচখাল খোদাইয়ের কাজে হাত দেন। ফিরোজ তুঘলকের আমলে বহু সেচখাল ও কূপ খোদাই হয়। তাঁর দুটি বিখ্যাত খাল ছিল “রাজাব-ওয়া” ও “উলুখখানি” খাল। এই দুটি খাল যমুনা থেকে হিসার ও ঘর্ঘরা পর্যন্ত খোদাই করা হয়।
  • (২) খাল ও কূপ থেকে “ফার্সী চাকার” দ্বারা সেচের জল তোলা হত। কৃষকদের সেচের জন্য আলাদা কর দিতে হত। ইসলামীয় তত্ত্ব অনুযায়ী ভূসম্পত্তির মালিকানা ছিল সুলতানের হাতে। যাদের যে স্বত্বই থাকুক না কেন স্বৈরাচারী সুলতানের এক কলমের খোঁচায় এই স্বত্ব লোপ পেয়ে যেত।
  • (৩) মোরল্যাণ্ড বলেছেন যে, আলাউদ্দিন খলজি ওয়াকফ ও ইনামের জমির স্বত্ত্ব এভাবেই কেড়ে নেন। কিন্তু কৃষকদের ক্ষেত্রে সুলতানরা সর্বদাই গঠনমুখী নীতি নেন। তারা সর্বদাই কৃষকদের জমিতে স্বত্ব রক্ষা করতেন। চিরাচরিত নিয়ম ভাঙ্গতে তারা রাজী ছিলেন না। কারণ কৃষকরাই ছিল সুলতানি সম্পদের উৎস।

দিল্লি সুলতানি যুগের রাজস্ব

সুলতানি রাজস্ব প্রধানত কৃষি জমি থেকেই আসত। আলাউদ্দিন ফসলের কর ১/২ ভাগ হিসেবে নেন। অন্যান্য সুলতানরা সর্বদাই অনেক কম হারে কর আদায় করতেন।

আমীর খসরুর মন্তব্য

আমীর খসরু বলেছেন যে, “সুলতানি মুকুটের প্রতিটি মুক্তা ছিল আসলে কৃষকের চোখের জলের জমে যাওয়া ফোঁটা”। অনেকে এই মতকে অতিশয়োক্তি বলে মনে করেন।

সুলতানি যুগে পশুপালন

  • (১) কৃষি ছাড়া পশুপালন ছিল অন্যতম প্রধান জীবিকা। সুলতানি যুগে পশুচারণের জন্য জমির অভাব ছিল না। গৃহপালিত পশুগুলি গ্রামের কাছাকাছি জমিতে চরান হত। এছাড়া অকর্ষিত জমি ও অরণ্যে পশু চারণের ব্যবস্থা ছিল।
  • (২) গরু ও মহিষ ছিল মূল্যবান গৃহপালিত পশু। এই পশুগুলির দ্বারা জমিতে লাঙ্গল টানা, মাল বহনের গাড়ি টানার জন্য ব্যবহার করা হত। গরু ও ঘোড়ার পিঠে মাল বহনের কাজ করা হত।
  • (৩) গরু ও মহিষের দুধ এবং দুধ থেকে জাত ঘি, ছানা প্রভৃতি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হত। এছাড়া ঘোড়া, ভেড়া, ছাগল প্রভৃতি পশুও পালন করা হত। ফিরোজ শাহ হিসার অঞ্চলে বহু “খরক” বা “পশুশালা” স্থাপন করেন।

সুলতানি যুগে কৃষির উপজাত পণ্য

বাংলার আখ, গুড় ও চিনি, দক্ষিণ ভারতের ও পাঞ্জাবের সরু চাউল, দোয়াবের গমের খুবই চাহিদা ছিল। দিল্লীর বাজারে শিরসুতী চালের খুব নাম ছিল। এছাড়া আম, কলা, কাঠাল প্রভৃতি ফলের বিশেষ উৎপাদন হত। ফিরোজ শাহ দিল্লীর নিকটে প্রায় ১২০০ ফলের বাগান স্থাপন করেন। সুলতানি যুগে আমের খুব চাহিদা থাকলেও কলমের আম গাছের প্রচলন ছিল না।

সুলতানি যুগে শিল্প ব্যবস্থা

  • (১) কৃষিজাত দ্রব্যের সাহায্যে কারিগর শ্রেণী নানা ধরনের শিল্পদ্রব্য তৈরি করত। কে. এম. আশরফের মতে, সুলতানি যুগের যন্ত্রপাতি ও কলা-কৌশল ছিল নিম্নমানের। সুতরাং শিল্পদ্রব্যের মান খুব উঁচু ছিল না। তবে বহু কারিগর ও শিল্পী বংশানুক্রমে নিজ নিজ পেশায় নিযুক্ত থাকত।
  • (২) চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে রেশম শিল্পের বিশেষ প্রচলন হয়। তসর, মুগা, খাজ রেশম তৈরি হত। চীনা রেশমের ভারতে তেমন প্রচলন ছিল না। বাংলার বিখ্যাত রেশম শিল্পের উল্লেখ ইবন বতুতার রচনায় পাওয়া যায় নি।
  • (৩) পঞ্চদশ শতকের চীনা পর্যটক মাহুয়ান বাংলায় রেশম শিল্প ও গুটিপোকার বিশেষ উল্লেখ করেছেন। তারিখ-ই-রশিদি গ্রন্থে কাশ্মীরে রেশম শিল্পের কথার উল্লেখ পাওয়া যায়। কৃষিজাত দ্রব্য থেকে সুলতানি যুগে নানা শিল্পদ্রব্য তৈরি করা হত। আখ থেকে চিনি, গুড় তৈরি হত। বাংলার চিনির সারা ভারতে খ্যাতি ও চাহিদা ছিল।

সুলতানি যুগে বস্ত্র শিল্প

  • (১) তুলা থেকে বস্ত্র শিল্প গড়ে উঠেছিল। তুলা থেকে প্রথমে সূতা তৈরি হত এবং এই সুতার দ্বারা কাপড় বোনা হত। চরকা দ্বারা সুতা কাটা হত। ইসামি তার ইতিহাসে চরকার কথা বলেছেন। এছাড়া ধুনুকি তার যন্ত্রে তুলাকে ধূনত। তাতে কাপড় বোনা হত।
  • (২) অত্যন্ত মোটা সুতার কাপড়ের নাম ছিল “কামিনা”। দরিদ্র লোকেরা এই কাপড় পরত। মাঝারি সুতার কাপড়ের নাম ছিল “কিরপাস” বা “কালিকো”। মিহি সুতার কাপড়ের নাম ছিল “বারিফ”। এছাড়া ছিল মিহি রেশমের কাপড় বা মসলিন। বাংলার মসলিনের সুনাম ছিল।
  • (৩) দিল্লী ও আলিগড়ে মোটা রেশম, মুগার কাপড় বোনা হত। সুতা ও রেশম মিশিয়ে “মাশরু নামে এক ধরনের কাপড় তৈরি হত। গুজরাটে খুব মিহি সুতার রেশমের কাপড় তৈরি হত। এই কাপড়ের নাম ছিল “পাটোলা”।
  • (৪) আলাউদ্দিন গুজরাট জয় করে বহু উৎকৃষ্ট “পাটোলা” অধিকার করেন। এছাড়া কাশ্মীরের শাল, কার্পেট ও পশমের জিনিসের নাম ছিল। বস্ত্রশিল্প গ্রাম ও শহরে সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিল। গুজরাটে বহু দামী তসর পাওয়া যেত।

দিল্লির সুলতানি যুগে ধাতু শিল্প

  • (১) সুলতানি যুগে ধাতু শিল্পের মধ্যে লৌহ শিল্পের খুবই চাহিদা ছিল। কর্মকাররা অস্ত্র-শস্ত্র, চাষের যন্ত্রপাতি ও গৃহস্থালীর দ্রব্য তৈরি করতে ব্যস্ত থাকত। এ যুগে খুব উচ্চমানের ইস্পাত তৈরি হত যার বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ছিল।
  • (২) কচ্ছের লোহা ছিল খুব উন্নত মানের। রাজপুতানার সম্বর হ্রদের জল থেকে লবণ তৈরি হত। দাক্ষিণাত্যের খনিতে হীরা ও দামী পাথর পাওয়া যেত। তুতিকোরিণে মুক্তার চাষ হত।

সুলতানি যুগে অন্যান্য শিল্প

এছাড়া রঞ্জন শিল্প, চিনি, বিভিন্ন ধাতুর তৈরি শিল্পদ্রব্য বিশেষত সোনা, রূপা, পিতল, কাঁসার শিল্প। চামড়া শিল্প, কাগজ, সুরা শিল্পও বেশ উন্নত ছিল।

সুলতানি যুগে নগর ও পরিবহণ

  • (১) দিল্লী নগর ছিল বাণিজ্যের এক বড় কেন্দ্র। সুলতানি যুগের বড় শহরগুলির মধ্যে ছিল দিল্লী, দেবগিরি, লাহোর, আগ্রা, বারাণসী, ক্যাম্বে, লখনৌতি। মুদ্রা অর্থনীতি ও নগরের বিস্তারের ফলে বাণিজ্যের বিস্তার ঘটেছিল।
  • (২) নগরের লোকদের খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য সরবরাহের জন্য গ্রামাঞ্চল থেকে খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য সরবরাহ আসত। নায়েক ও মূলতানি বণিকরা বাণিজ্যে পারদর্শী ছিল। সুলতানি আমলে বড় সড়কগুলি বিভিন্ন নগরকে যুক্ত করত। বাংলায় গিয়াসুদ্দিন আইওয়াজ খলজি বহু রাস্তা তৈরি করেন, যেগুলি একাধারে নদী বাঁধ ও রাস্তার কাজ করত।

সুলতানি যুগের বন্দর

বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য ভারতের উপকূলের বন্দর ও উত্তর-পশ্চিমের স্থলপথের ব্যবহার হত। ভারতের পশ্চিম উপকূলে বহু বন্দর থেকে বৈদেশিক বাণিজ্য চলত। বারবোসা, ইবন বতুতা প্রভৃতি পর্যটক এই বন্দরগুলির নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন গোয়া, দিউ, কালিকট, কোচিন, ক্যাম্বে ও পূর্ব উপকূলে সপ্তগ্রাম। স্থলপথে মূলতান ছিল এক সীমান্ত বাণিজ্যকেন্দ্র।

সুলতানি যুগের রপ্তানি দ্রব্য

মধ্য এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়া থেকে ঘোড়া ও দাস আমদানি হত। এছাড়া সোনা, রূপা, জাফরান আমদানি করা হত। ভারত থেকে মশলা, সুগন্ধি মশলা, কাপড়, চিনি, চাউল, নীল, রেশম, দামী পাথর রপ্তানি করা হত।

সুলতানি যুগে বহির্বাণিজ্য

ভারতের বহির্বাণিজ্য চলত প্রধানত পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে। এই বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল প্রধানত আরব ও পারসিক বণিকদের হাতে। ভারতীয় বণিকরাও বৈদেশিক বাণিজ্যে অংশ নিত।

সুলতানি যুগে অন্তর্বাণিজ্য

  • (১) ইবন বতুতার বিবরণ থেকে সুলতানি যুগে ভারতের অন্তর্বাণিজ্যের চিত্র পাওয়া যায়। গাঙ্গেয় উপত্যকা, মালব, গুজরাট, বাংলা, দাক্ষিণাত্য, মালাবারের মধ্যে অন্তর্বাণিজ্য চলত। প্রধান নগরগুলি ছিল অন্তর্বাণিজ্যের কেন্দ্র।
  • (২) বিভিন্ন নগরের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ছিল। এই রাজপথ ধরে মাল চলাচল করত। সুলতানি যুগে শিল্প উৎপাদনের জন্য বণিকদের হাতে কোনো বড় কারখানা ছিল না। রাজপরিবার ও অভিজাতদের নিত্য প্রয়োজনীয় শিল্প ও বিলাসদ্রব্যের যোগানের জন্য কিছু কারখানা চালান হত।
  • (৩) কারখানায় ৪ হাজার কারিগর কাজ করত। দিল্লীতে বিরাট দাস ও ঘোড়ার বাজার ছিল। আমরোহা থেকে খাদ্যশস্য, আলিগড় থেকে মদ, ধার থেকে পান, অযোধ্যা থেকে কাপড়, দেবগিরি ও লখনৌতি থেকে মসলিন দিল্লীতে আসত।

সুলতানি যুগে ধনবন্টনের অভাব

  • (১) মূলতানী শাহ সম্প্রদায় ছিল ধনী বণিক। মূলতানী বণিকরা সরকার ও শাসকশ্রেণীকে সুদে টাকা ধার দিত। ডঃ ইরফান হাবিবের মতে, কৃষকরা ছিল অর্থ দাস (Semi-Serf)।
  • (২) গ্রামের প্রধান খুৎ ও মুকাদ্দমরা ছিল সম্পদশালী। তাদের গ্রামীণ অভিজাত বলা চলে। নগরে শাসকশ্রেণী বসবাস করত। তারাও ছিল ধনী ও বিলাসী। সাধারণ কৃষক ও কারিগরের অবস্থা ভাল ছিল না।

উপসংহার :- সুলতানি যুগে অর্থের স্বচ্ছলতা থাকলেও সমাজে ধনবণ্টন ছিল না। ফলে গরীব গরীবই থাকত। কৃষকরা খুবই দুর্দশাগ্রস্থ ছিল। জীর্ণ পোষাক ও অর্ধাশন ছিল তাদের জীবনের অঙ্গ। কৃষকদের ওপর প্রচুর করের বোঝা চাপত।

(FAQ) সুলতানি যুগের অর্থনীতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. সুলতানি যুগের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ কি ছিল?

কৃষি।

২. সুলতানি যুগের প্রধান কৃষিজ ফসল কি ছিল?

ধান, গম, আলু, ভুট্টা।

৩. সুলতানি যুগের দুটি নগরের নাম লেখ।

দিল্লি, আগ্ৰা।

৪. সুলতানি যুগের দুটি বন্দরের নাম লেখ।

কালিকট, কোচিন, সপ্তগ্ৰাম।

Leave a Comment