ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ প্রসঙ্গে প্রথম ক্রুসেডের বিভিন্ন দিক, দ্বিতীয় ক্রুসেডের বিভিন্ন দিক, তৃতীয় ক্রুসেডের বিভিন্ন দিক, চতুর্থ ক্রুসেডের বিভিন্ন দিক, পঞ্চম ক্রুসেডের বিভিন্ন দিক, ষষ্ঠ ক্রুসেডের বিভিন্ন দিক, সপ্তম ক্রুসেডের বিভিন্ন দিক, অষ্টম ক্রুসেডের বিভিন্ন দিক ও ক্রুসেডের অবসান ঘোষণা সম্পর্কে জানবো।
ধর্মযুদ্ধ বা ক্রুসেড প্রসঙ্গে ক্রুসেড কী, ক্রুসেডের বিভিন্ন দিক, প্রথম ক্রুসেড, দ্বিতীয় ক্রুসেড, তৃতীয় ক্রুসেড, চতুর্থ ক্রুসেড, পঞ্চম ক্রুসেড, ষষ্ঠ ক্রুসেড, সপ্তম ক্রুসেড, অষ্টম ক্রুসেড ও ক্রুসেডের অবসান সম্পর্কে জানব।
ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ
ঐতিহাসিক যুদ্ধ | ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ |
সময়কাল | ১০৯৬-১২৯১ খ্রি |
বিবাদমান পক্ষ | খ্রিস্টান ও মুসলিম সমাজ |
প্রথম ক্রুসেড | ১০৯৬-৯৯ খ্রি |
দ্বিতীয় ক্রুসেড | ১১৪৭-৪৮ খ্রি |
তৃতীয় ক্রুসেড | ১১৮৭-৯২ খ্রি |
চতুর্থ ক্রুসেড | ১২০২-১২০৪ খ্রি |
পঞ্চম ক্রুসেড | ১২১৭-২১ খ্রি |
ষষ্ঠ ক্রুসেড | ১২২৮-২৯ খ্রি |
সপ্তম ক্রুসেড | ১২৪৮-৫৪ খ্রি |
অষ্টম ক্রুসেড | ১২৭০ খ্রি |
ভূমিকা :- জিশুখ্রিস্টের স্মৃতিবিজড়িত স্থান জেরুজালেম দখলের উদ্দেশ্যে পোপ দ্বিতীয় আরবানের (১০৮৮-১০৯৯ খ্রি.) আহ্বানে ইউরোপ-এর খ্রিস্টান জগৎ সর্বপ্রথম ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ শুরু করে। ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় দুশো বছরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মোট আটটি ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে প্রথম চারটি ক্রুসেড বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রথম ক্রুসেড (১০৯৬-৯৯)
এই প্রথম ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) আলেক্সিয়াস ও দ্বিতীয় আরবানের আবেদন
বাইজানটাইন সম্রাট প্রথম আলেক্সিয়াস ১০৯৫ খ্রিস্টাব্দে পোপ দ্বিতীয় আরবানের কাছে জেরুজালেম দখলকারী সেলজুক তুর্কি মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক সহায়তার আবেদন জানান। এর কিছুদিনের মধ্যেই পোপ দ্বিতীয় আরবান ফ্রান্স-এর ক্লেরমন্ট শহরে একটি সভা ডেকে সেখানে উপস্থিত ফ্রাঙ্ক নাইটদের কাছে জেরুজালেম থেকে শুরু করে এশিয়ার সকল খ্রিস্টান গির্জাগুলি মুসলিমদের হাত থেকে মুক্ত করার আহ্বান জানান। এই আহ্বানে বিপুল সাড়া মেলে এবং প্রায় এক বছর ধরে ক্রুসেডের প্রস্তুতি চলে।
(খ) অভিযান
- (১) প্রায় ৬০ হাজার খ্রিস্টান ক্রুসেডার বা ধর্মযোদ্ধা ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাস নাগাদ পশ্চিম ইউরোপ থেকে ৩০০০ মাইল দূরে অবস্থিত জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে তাদের অভিযান শুরু করে। এজন্য এই ক্রুসেডটি জনগণের ক্রুসেড নামে পরিচিত। যোদ্ধাদের অধিকাংশই স্থলপথে কনস্ট্যান্টিনোপলে এবং জলপথে তুরস্ক-এ পৌঁছোয়।
- (২) ফ্রান্সের এমিয়েন্স শহরের সন্ন্যাসী পিটার দ্য হারমিটের নেতৃত্বে সৈন্যরা সর্বপ্রথম তুরস্কে পৌঁছোয়। এই বাহিনী তুর্কি সৈন্যদের কাছে পরাজিত হলেও এরপর নাইটদের বাহিনী তুরস্কে পৌঁছে তুর্কি বাহিনীকে পরাস্ত করে। নাইটদের বাহিনী ১০৯৮ খ্রিস্টাব্দে অ্যান্টিয়োক দখল করে সেখানকার ৬০ জন বন্দি মুসলিমকে পুড়িয়ে হত্যা করে। খ্রিস্টান যোদ্ধারা অ্যান্টিয়োক এ একটি স্বাধীন খ্রিস্টীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।
(গ) জেরুজালেম দখল
এরপর তারা প্যালেস্টাইনে পৌঁছে তীব্র লড়াইয়ের মাধ্যমে ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে রাজধানী জেরুজালেম দখল করে এবং সেখানে গণহত্যা চালায়। ফলে জেরুজালেমে ৪৬১ বছরের মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। ফ্রাঙ্ক সামন্তপ্রভু গডফ্রে জেরুজালেমে একটি স্বাধীন খ্রিস্টীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
(ঘ) অন্যান্য খ্রিস্টান রাজ্য প্রতিষ্ঠা
অন্যান্য ক্রুসেডারদের নেতৃত্বে আরও কয়েকটি স্বাধীন খ্রিস্টীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল এডেসা, ত্রিপোলি প্রভৃতি। কিন্তু পোপ দ্বিতীয় আরবান মৃত্যুর (২৯ জুন, ১০৯৯ খ্রি.) পূর্বে জেরুজালেম দখলের খবর শুনে যেতে পারেন নি।
দ্বিতীয় ক্রুসেড (১১৪৭-৪৮)
১১৪৭-৪৮ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত দ্বিতীয় ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) এডেসা দখলের প্রতিক্রিয়া
সেলজুক তুর্কি শাসক ইমামুদ্দিন জেঙ্গির নেতৃত্বে মুসলিম সেনাবাহিনী ১১৪৪ খ্রিস্টাব্দে ক্রুসেডারদের পরাজিত করে তাদের রাজ্য এডেসা দখল করে নেয়। মুসলিমদের আক্রমণে এডেসার পতনের খবর ইউরোপে ছড়িয়ে পড়লে কিছুদিনের মধ্যেই খ্রিস্টান যোদ্ধারা পরবর্তী ক্রুসেডের প্রস্তুতি শুরু করে দেয়।
(খ) ক্রুসেড ঘোষণা
১১৪৭ খ্রিস্টাব্দে পোপ তৃতীয় ইউজিন (১১৪৫-১১৫৩ খ্রি.) দ্বিতীয় ক্রুসেড ঘোষণা করেন। ক্রুসেড ঘোষণার পর জার্মানির রাজা তৃতীয় কনরাড এবং ফ্রান্সের রাজা সপ্তম লুই তাঁদের অধীনস্থ সামন্তপ্রভুদের নিয়ে ১১৪৭ খ্রিস্টাব্দে পৃথকভাবে এডেসার উদ্দেশে অভিযান শুরু করেন।
(গ) ধর্মযোদ্ধাদের ব্যর্থতা
- (১) কিন্তু তুরস্কে প্রবেশের পর এই বাহিনী তুর্কিদের আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা কোনোক্রমে খ্রিস্টান রাজ্য অ্যান্টিয়োক-এ এসে পৌঁছোয়। তারা আর এডেসা দখলের চেষ্টা না করে জেরুজালেমের পথে যাত্রা শুরু করে। ক্রুসেডাররা এরপর জেরুজালেমের ধর্মযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে তুর্কি মুসলিমদের অধীনস্থ দামাস্কাস আক্রমণ করে।
- (২) শেষপর্যন্ত দামাস্কাসের যুদ্ধে তুর্কিবাহিনীর হাতে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়ে খ্রিস্টান ক্রুসেডাররা জেরুজালেমে ফিরে আসে। এভাবে ক্রুসেড-যোদ্ধাদের এডেসা অভিযান ব্যর্থ হয়। এবং তাদের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ে।
তৃতীয় ক্রুসেড (১১৮৭-৯২ খ্রি.)
১১৮৭ ৯২ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত তৃতীয় ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) ক্রুসেডের ডাক
মিশর ও সিরিয়ার মুসলিম সুলতান সালাদিন জেরুজালেমের খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধাদের পরাজিত করে ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম ও তার প্রতিবেশী অঞ্চল দখল করে নেন। ফলে পোপ অষ্টম গ্রেগরি (১১৮৭ খ্রি.) মুসলিমের বিরুদ্ধে পরবর্তী অর্থাৎ তৃতীয় ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ডাক দেন।
(খ) সর্ববৃহৎ সেনাবাহিনী
তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট ফ্রেডারিক বারবারোসা, ‘লায়নহার্ট’ বা ‘সিংহ হৃদয়’ নামে পরিচিত ইংল্যান্ড-এর রাজা প্রথম রিচার্ড এবং ফ্রান্সের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ তাঁদের সৈন্যবাহিনী নিয়ে তৃতীয় ক্রুসেডের অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন ক্রুসেডে অংশ- গ্রহণকারী খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধাদের বাহিনীর মধ্যে তৃতীয় ক্রুসেডের সৈন্যবাহিনী ছিল সবচেয়ে বড়ো।
(গ) অনৈক্য ও প্রতিকূলতা
- (১) তৃতীয় ক্রুসেডে অংশগ্রহণকারী তিন খ্রিস্টান রাজা বারবারোসা, রিচার্ড ও ফিলিপের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ ছিল। ফলে রোমান সম্রাট ফ্রেডারিক বারবারোসা ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বাহিনীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ না হয়েই আলাদাভাবে অভিযান শুরু করেন।
- (২) এরপর ১১৯০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বাহিনী একসঙ্গে অভিযান শুরু করলেও যাত্রাপথে বিরোধের ফলে তারা আলাদা আলাদা ভাবে ক্রুসেডে যান। এরপর ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার ডিউক লিওপোল্ড ক্রুসেডে অংশ নিলে তার সঙ্গেও উক্ত বাহিনী গুলির মতভেদ দেখা দেয়।
- (৩) ইতিমধ্যে রোমান সম্রাট ফ্রেডারিক তুরস্কে একটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালে রোমান বাহিনীর বেশিরভাগ সৈন্য ইউরোপে ফিরে আসে। তা ছাড়া ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বহু সৈন্য সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। সুলতান সালাদিনের বাহিনীও ক্রুসেড-যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাফল্য লাভ করে।
(ঘ) আংশিক সাফল্য
এরূপ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ডের সীমাহীন বীরত্ব এবং অস্ট্রিয়ার ডিউক লিওপোল্ডের যুদ্ধে যোগদানের ফলে ক্রুসেডাররা প্যালেস্টাইনের বেশ কিছুটা অঞ্চল দখল করতে সক্ষম হয়। তবে জেরুজালেম দখল করতে তারা ব্যর্থ হন। শেষপর্যন্ত ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে সুলতান সালাদিন ও ক্রুসেড-যোদ্ধাদের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে বলা হয় যে, জেরুজালেম মুসলমানদের দখলেই থাকবে, তবে খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীরা জেরুজালেমে তীর্থ করতে আসতে পারবে।
চতুর্থ ক্রুসেড (১২০২-১২০৪ খ্রি.)
তৃতীয় ক্রুসেডের পরবর্তীকালে পশ্চিম ইউরোপে ক্রুসেডের বিষয়ে মানুষের উৎসাহ কমে যায়। চতুর্থ ক্রুসেডের বিভিন্ন দিক গুলি হল –
(ক) পোপের উদ্যোগ
পোপ তৃতীয় ইনোসেন্ট (১১৯৮-১২১৬ খ্রি.)-এর উদ্যোগে ১২০২ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধারা চতুর্থ ক্রুসেড-অভিযান শুরু করে। পোপের উদ্যোগে চতুর্থ ক্রুসেডে ইউরোপের বিভিন্ন সামন্তপ্রভু, ইতালির, বিশেষত ভেনিসের বিভিন্ন বণিক সম্প্রদায়, ফ্রান্সের বীর নাইট ও বৃহৎ সামন্তপ্রভুরা সক্রিয় ভূমিকা নেয়। এ ছাড়া ছিল ইতালির পিডমন্ট, বেলজিয়ামের ফ্ল্যান্ডার্স অঞ্চল ও জার্মানির কিছু কিছু এলাকার যোদ্ধারা।
(খ) কনস্ট্যান্টিনোপল দখল
তবে যোদ্ধারা শেষপর্যন্ত প্যালেস্টাইন পর্যন্ত পৌঁছোনোর চেষ্টাই করেন নি। বরং তারা বাইজানটাইন সাম্রাজ্য আক্রমণ করে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল দখল করে এবং সেখানে ব্যাপক লুঠতরাজ চালায়। গ্রিস-এর কিছু এলাকাতেও ক্রুসেড যোদ্ধারা নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
পঞ্চম ক্রুসেড (১২১৭-১২২১ খ্রি.)
- (১) খ্রিস্টানদের পবিত্র ভূমি উদ্ধারের উদ্দেশ্যে ল্যাটেরানের চতুর্থ সম্মেলনে (১২১৫ খ্রি.) আরও একটি ক্রুসেড অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই অনুসারে জেরুজালেম অধিকারের উদ্দেশ্যে অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও অন্যান্য দেশের ৩২ হাজার খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধা ১২১৭ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চম ক্রুসেডে অংশ নেয়।
- (২) তারা মিশরের শক্তিশালী আইয়োবিদ রাজ্য আক্রমণ করে। কিন্তু মিশরের সুলতান আল কামিলের বাহিনী রাতের অন্ধকারে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ক্রুসেড যোদ্ধাদের বিধ্বস্ত করে। ফলে ক্রুসেডাররা তাদের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। শেষপর্যন্ত মিশরের সঙ্গে ক্রুসেড যোদ্ধাদের ৮ বছরের শান্তি স্থাপিত হয়।
ষষ্ঠ ক্রুসেড (১২২৮-১২২৯ খ্রি.)
- (১) পঞ্চম ক্রুসেডের ব্যর্থতার মাত্র ৭ বছর পর ১২২৮ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ভুক্ত ইউরোপ ষষ্ঠ ক্রুসেডে অংশ নেয়। এই ক্রুসেডে অংশগ্রহণে পোপ বিরত থাকেন। তথাপি রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের (১২২০-১২৫০ খ্রি.) উদ্যোগে খ্রিস্টান যোদ্ধারা তাদের পবিত্রভূমি দখল করার উদ্দেশ্যে ১২২৮ খ্রিস্টাব্দে অভিযান শুরু করে।
- (২) তারা ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম, নাজারিথ ও বেথেলহেম দখল করতে সক্ষম হন। সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিক নিজেকে জেরুজালেমের সম্রাট বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু ১২৪৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিমরা পুনরায় জেরুজালেম দখল করে নিলে আরও একটি ক্রুসেডের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
সপ্তম ক্রুসেড (১২৪৮-১২৫৪ খ্রি.)
ফ্রান্সের সম্রাট নবম লুইয়ের (১২২৬-১২৭০ খ্রি.) পরিচালনায় ১২৪৮ খ্রিস্টাব্দে সপ্তম ক্রুসেড শুরু হয়। এই যুদ্ধে মিশরের সৈন্যদের সহায়তা করে বাহরী, মামলুক, বাইবার, কুতুজ, আইবাক, কুলওয়ান প্রভৃতি গোষ্ঠী। যুদ্ধে রাজা নবম লুই মিশরীয় মুসলিম সৈন্যদের হাতে পরাজিত ও বন্দি হন। লুইয়ের মুক্তির জন্য ফ্রান্সের কাছ থেকে ৫০,০০০ স্বর্ণমুদ্রা (তৎকালীন ফ্রান্সের এক বছরের আয়ের সমান অর্থ) আদায় করা হয়।
অষ্টম ক্রুসেড (১২৭০ খ্রি.)
সম্রাট নবম লুই আবার ১২৭০ খ্রিস্টাব্দে অষ্টম ক্রুসেডের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি আরবের টিউনিসিয়া ও উত্তর আফ্রিকা আক্রমণ করেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে এবং সংক্রামক রোগে তাঁর বাহিনী ধ্বংস হয়। সম্রাট নবম লুইও টিউনিসিয়ায় মারা যান। এই ক্রুসেডে পরাজয়ের ফলে সিরিয়ায় খ্রিস্টান শাসনের অবসান ঘটে।
উপসংহার :- মধ্যযুগের ইউরোপের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ। প্রায় দুশো বছর ধরে আটটি ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ হয়েছিল। এর মধ্যে প্রথম চারটি ক্রুসেড ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক হিট্টি বলেছেন, “ক্রুসেড ছিল মুসলিম প্রাচ্যের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান প্রতীচ্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ।”
(FAQ) ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?
১০৯৬ থেকে ১২৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছর ধরে।
আটটি।
দ্বিতীয় আরবান।
তৃতীয় ইউজিন।