জার্মান সম্রাট ফেডারিক বারবারোসা

জার্মান সম্রাট ফেডারিক বারবারোসা প্রসঙ্গে জার্মানির গোষ্ঠী বিভাগ, শ্রেষ্ঠ শাসক, ফ্রেডারিক বারবারোসা সম্পর্কে ডেভিসের মন্তব্য, Welf-দের প্রতি ফ্রেডারিক বারবারোসার শান্তিপূর্ণ নীতি, চার্চের সঙ্গে ফ্রেডারিক বারবারোসার সম্পর্ক, চার্চের সঙ্গে ফ্রেডারিক বারবারোসার সম্পর্ক, চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব, নীতি, নীতি, রোমান্টিক চিন্তাধারা, ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে ফ্রেডারিক বারবারোসার ভূমিকা, ফ্রেডারিক বারবারোসার প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ইতালি অভিযান, কনস্টানস্ -এর চুক্তি ও ইতালিতে সমস্যা সম্পর্কে জানবো।

সম্রাট ফেডারিক বারবারোসা প্রসঙ্গে জার্মানির শ্রেষ্ঠ শাসক ফেডারিক বারবারোসা, ফ্রেডারিক বারবারোসার চরিত্র, ফ্রেডারিক বারবারোসার ব্যক্তিত্ব, ফ্রেডারিক বারবারোসার ইতালি অভিযান ও ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে ফ্রেডারিক বারবারোসার ভূমিকা সম্পর্কে জানব।

সম্রাট ফেডারিক বারবারোসা

ঐতিহাসিক চরিত্রফ্রেডারিক বারবারোসা
পরিচিতিজার্মানির সম্রাট
রাজত্বকাল১১৫২-৯০ খ্রি
উপাধিপবিত্র সম্রাট
উত্তরসূরিষষ্ঠ হেনরি
সম্রাট ফেডারিক বারবারোসা

ভূমিকা :- ১১৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ফ্রেডারিক জার্মানির সম্রাট হয়েছিলেন। তিনি ফ্রেডারিক বারবারোসা নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর লালচে দাড়ি ছিল অন্যতম শারীরিক বৈশিষ্ট্য।

ফেডারিক বারবার উসার সময় জার্মানির গোষ্ঠী বিভাগ

জার্মানি এই সময় দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। – ওয়েলফস গোষ্ঠী ও ওয়েবলিং গোষ্ঠী। হোহেনস্টাউফেন সম্রাটরা ওয়েবলিং গোষ্ঠীর ছিলেন। তাদের আবাসস্থলগুলিও একই নামে পরিচিত ছিল। তাদের বিপক্ষ গোষ্ঠী ছিল Welfs। এদের নাম ইতালিতে ত্রয়োদশ শতকে গুয়েল্প এবং ঘিবেলাইনস নামে পরিচিতি পায়। গুয়েল্প ছিল সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী এবং ঘিবেলাইনস ছিল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী পোপতান্ত্রিক গোষ্ঠীর সমর্থক।

শ্রেষ্ঠ শাসক ফ্রেডারিক বারবারোসা

  • (১) “Frederick Barbarossa” গ্ৰন্থে পিটার মুঞ্জ ফ্রেডারিক বারবারোসার কৃতিত্বের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। হোহেনস্টাউফেন বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক হিসাবে প্রথম ফ্রেডারিক বারবারোসার নাম করা যায়। তিনি সোনালি কোঁকড়ানো চুল এবং সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। অত্যন্ত সুদর্শন পুরুষ ফ্রেডারিক বারবারোসা মধ্যযুগের জার্মান সম্রাটদের আদর্শ ছিলেন।
  • (২) ইতিহাস সম্বন্ধে তাঁর কৌতুহল ছিল এবং রোমান আইনবিশারদদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলেন। তিনি নিজেকে কনস্টানটাইন, জাস্টিনিয়ান এবং শার্লামেন-এর উত্তরাধিকারী বলে পরিচয় দিতেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল রোমান সাম্রাজ্যের বিজয় গৌরবকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

ফ্রেডারিক বারবারোসা সম্পর্কে ডেভিসের মন্তব্য

R. H. C. Davis, ফ্রেডারিক বারবারোসা সম্বন্ধে বলেছেন যে, “ফ্রেডারিক বারবারোসা হলেন মধ্যযুগের সম্রাটদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্রাট যাকে আধুনিক জার্মানির ‘জাতীয় বীর’ বলে অভিহিত করা যায়।”

জার্মান সম্রাট ফ্রেডারিক বারবারোসা সময় দুটি গোষ্ঠীর বিরোধ

তিনি জার্মানির ইতিহাসের মুখ্য চরিত্র হলেও ইতালির ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ফ্রেডারিক বারবারোসার সিংহাসনে বসার সময় সম্রাটের ক্ষমতা ছিল পলকা বা দুর্বল। দুটি গোষ্ঠী দেখতে পাওয়া যায় গুয়েল্প ও ঘিবেলাইনস। গুয়েল্পরা হল পোপের সমর্থক গোষ্ঠী বা পোপপন্থী, যারা Welf বংশের সমর্থক ছিল। ঘিবেলাইনসরা হল সাম্রাজ্যবাদী, যারা হোহেস্টাউফেন বংশের সমর্থক ছিল। গুয়েল্প এবং ঘিবেলাইনসদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল।

Welf-দের প্রতি ফ্রেডারিক বারবারোসার শান্তিপূর্ণ নীতি

ফ্রেডারিক বারবারোসা কেবলমাত্র হোহেনস্টাউফেনই ছিলেন না, তিনি তাঁর মাতার দিক থেকে Henry the Lion-এর সঙ্গে রক্তের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। তিনি Welfsদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ নীতিতে চলবার পক্ষপাতি ছিলেন। Welfsদের প্রতি শান্তিপূর্ণ নীতি গ্রহণ করে ফ্রেডারিক বারবারোসা জার্মানিকে নতুনভাবে এবং জার্মান রাজতন্ত্রকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।

চার্চের সঙ্গে ফ্রেডারিক বারবারোসার সম্পর্ক

  • (১) ফ্রেডারিক বারবারোসা ‘Sacrum’ বা পবিত্র সম্রাট উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। চার্চের সঙ্গেও তিনি সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন এবং সফলতাও অর্জন করেছিলেন। চার্চের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি ম্যাগডুবার্গের আর্চবিশপও নির্বাচিত হয়েছিলেন। পোপের অনুমতি ছাড়াই তাঁকে আর্চবিশপ নির্বাচিত করা হয়েছিল।
  • (২) ফ্রেডারিক বারবারোসা চার্চের সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনরকম সমস্যা দেখা দিলে তাঁর নিজের পছন্দসই প্রার্থীকে নির্বাচিত করতেন। তিনি চার্চের ধর্মনিরপেক্ষতার দিকটির প্রতি নজর দিয়েছিলেন। রাজতন্ত্র শক্তিশালী হলেও বিশপরাও কিন্তু যথেষ্টই মার্জিত এবং পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। যেমন – Rainald এবং Christianএর নাম করা যায়।

জার্মান সম্রাট ফ্রেডারিক বারবারোসার চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব

  • (১) ফ্রেডারিক বারবারোসা ১১৫৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই জার্মানিতে তাঁর পূর্ণ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছিলেন। তাঁর মধ্যে বিচক্ষণতা এবং কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব ছিল। ভালো শাসক হতে গেলে যে গুণগুলি থাকা প্রয়োজন তা তাঁর ছিল। চার্চের ক্ষেত্রে তাঁর মনোভাব ছিল স্বাধীন। তিনি ধর্মের ক্ষেত্রে বিশেষ সচেতন ছিলেন।
  • (২) ব্যক্তিগত জীবনেও নিষ্কলঙ্ক এবং স্বচ্ছ ছিলেন ও সত্যকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। তিনি সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবাপন্ন হলেও অপরাধীকে ক্ষমা করে দেওয়ার মতো মানসিকতাও দেখিয়েছিলেন। সম্রাট বলতে যে ধরনের ব্যক্তিকে আমরা চিন্তা করি তিনি সেই ধরনের শক্তিশালী, দৃঢ় মনোভাবাপন্ন, সুন্দর স্বভাব ও দৈহিক সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন।

ফ্রেডারিক বারবারোসার নীতি

সম্রাট ফেডারিক বারবারোসার দুটি প্রধান নীতি ছিল। প্রথমটি হল জার্মানির সম্রাট হওয়া এবং দ্বিতীয়টি হল বিশ্বের সম্রাট হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। নিজের সাম্রাজ্যে তিনটি নীতিকে সফল করতে চেয়েছিলেন।

  • (i) Welfs দের সঙ্গে সমঝোতাপূর্ণ নীতি,
  • (ii) ব্যক্তিগত যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের অবসান ঘটানো,
  • (iii) জার্মান চার্চের উপরে পুনরায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রেও তিনি সফল হয়েছিলেন।

জার্মান সম্রাট ফ্রেডারিক বারবারোসার রোমান্টিক চিন্তাধারা

তাঁর মধ্যে রোমান্টিক চিন্তাধারাও লক্ষ্য করা যায়। পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের রোমান্টিক আদর্শের বিষয়টি চিন্তা করে তিনি বিশ্ব শাসন করবার কথা চিন্তা করেছিলেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই ধরনের রোমান্টিক চিন্তাভাবনা ও বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। কিন্তু ফ্রেডরিক বারবারোসা হাল ছেড়ে দেন নি। তিনি এই রোমান্টিক চিন্তাকেই বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন।

ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে ফ্রেডারিক বারবারোসার ভূমিকা

১১৮৮ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় ক্রুসেড-এর সময় তিনি ক্রুশ তুলে নিয়েছিলেন। পুণ্যভূমি জেরুজালেম উদ্ধারের অঙ্গীকার করে তিনি তৃতীয় ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১১৯০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তৃতীয় ক্রুসেডে সংগঠন ও কর্তৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।

ফ্রেডারিক বারবারোসার প্রথম ইতালি অভিযান

  • (১) J. W. Thompson এবং E. N. Johnson এর ভাষায় কনস্টানটাইন, জাস্টিনিয়ানের উত্তরসূরি হিসাবে ফ্রেডারিক বারবারোসা প্রত্যক্ষ শাসনের ধারা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। জার্মানি রাজতন্ত্রের ক্ষেত্রে দ্বাদশ শতকে ইতালি ছিল একটি জটিল ও সমস্যাপূর্ণ স্থান।
  • (২) দক্ষিণ ইতালিতে সম্রাট নরম্যাদের দ্বারা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত ছিল। মধ্য ইতালির উত্তরদিকের অংশ রাজতন্ত্র বা সম্রাটের অধীনতা থেকে সমস্ত দিকেই মুক্ত ছিল। ১১৫৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রেডারিক বারবারোসার ইতালিতে এসেছিলেন। ইতালিতে সেই সময় নানারকম সমস্যার সমাধানের প্রয়োজন ছিল।
  • (৩) এই সমস্যা গুলি হল (i) পোপতন্ত্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক, (ii) লম্বার্ড শহর দখল, (iii) দক্ষিণ ইতালির নরম্যানদের প্রতিহত করা। নরম্যানরা ফ্রেডারিক বারবারোসার সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় নি। ফলে আরও সমস্যা বেড়ে যায়। লম্বার্ডিকে তিনি অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ১১৫৪-১১৫৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রেডারিক বারবারোসা প্রথম ইতালি অভিযান করেছিলেন।

সম্রাট ফ্রেডারিক বারবারোসার দ্বিতীয় ইতালি অভিযান

  • (১) লম্বার্ডের শহরের মধ্যে মিলান ছিল উল্লেখযোগ্য। তাই ১১৫৮ খ্রিস্টাব্দে মিলান দখলের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় ইতালি অভিযান করা হয়েছিল। ইতালিতে অনেকগুলি কমিউন তিনি দখল করেছিলেন। এইখানে রাজকীয় অধিকার স্থাপন করা হয়েছিল। তাঁর সময়ে “Diet of Roncaglia” উল্লেখযোগ্য ছিল।
  • (২) এই প্রতিবেদনের ‘regalia’ তে সম্রাটের অধিকারগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এগুলি ছিল রাজকীয় অধিকার। কমিউনগুলির মধ্যে যেগুলির শাসনক্ষেত্রে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন সেখানকার শাসনকর্তা নির্বাচন তিনিই করেছিলেন। ১১৫৮ খ্রিস্টাব্দে মিলানের দ্বারা Consuls নির্বাচিত হয়েছিল। ফ্রেডারিক বারবারোসা তা মেনেও নিয়েছিলেন।
  • (৩) ১১৬২ খ্রিস্টাব্দে পিসা জেনোয়া, পাভিয়া প্রভৃতিতেও এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। ইতিলিতে পোপতন্ত্র এবং সিসিলি ও মিলানের জোট রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ফ্রেডারিক বারবারোসাকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু ১১৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি মিলান দখল করে ধ্বংস করেন।
  • (৪) G. Barraclough ফ্রেডারিক বারবারোসার ইতালি অভিযান প্রসঙ্গে ইতালির কমিউনগুলি অধিকারের কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে সেখানে পুরাতন প্রশাসন বা শাসনব্যবস্থা কায়েম করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি এই কমিউনগুলি দখল করে সম্রাটের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

ফ্রেডারিক বারবারোসার তৃতীয় ইতালি অভিযান

  • (১) তাঁর তৃতীয় ইতালি অভিযান লম্বার্ড শহরের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল। যেমন Cremona, Brescia, Piacenza প্রভৃতি। জেনোয়া ও পিসার নৌবাহিনীর সঙ্গে তিনি সমঝোতাপূর্ণ নীতি নিয়েছিলেন। ১১৫৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ চতুর্থ হাডরিয়ান-এর মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গোষ্ঠী তৃতীয় আলেকজান্ডারকে পোপ নির্বাচিত করে।
  • (২) অপরদিকে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী অক্টাভিয়ানকে নির্বাচিত করে। পাভিয়াতে এক সম্মেলনে যেখানে অধিকাংশ ক্লার্জির উপস্থিতিতে অক্টাভিয়ানকে হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। এই ক্লার্জিরা ছিল সাম্রাজ্যবাদ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তৃতীয় আলেকজান্ডারকে গির্জা থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ফ্রেডারিক বারবারোসার চতুর্থ ইতালি অভিযান

সম্রাট ফ্রেডারিক বারবারোসার চতুর্থ অভিযান ইতালির মিউনিসিপ্যাল শহরগুলিকে কেন্দ্র করে ছিল না। এই অভিযান রোম এবং তৃতীয় আলেকজান্ডার-এর বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু ভেরোনা লিগ ও অন্যান্যদের বিরোধিতার সামনে পড়ে তিনি জার্মানি ফিরে গিয়েছিলেন।

ফ্রেডারিক বারবারোসার পঞ্চম ইতালি অভিযান ও ব্যর্থতা

  • (১) ফ্রেডারিক বারবারোসার পঞ্চম অভিযান ছিল আলেকজান্দ্রিয়া আক্রমণ করা। এখানে তিনি সফলতা অর্জন করতে পারেন নি। ফ্রেডারিক বারবারোসার সামরিক দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। বাস্তব পরিস্থিতিও তাঁকে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছিল। তিনি বিরোধী গোষ্ঠীর কাছে শাস্তি স্থাপনের প্রস্তাব দিলেও কেউই মেনে নেন নি।
  • (২) তাঁর সামরিক বাহিনী ১১৭৬ খ্রিস্টাব্দে লেগনানোর যুদ্ধে লম্বার্ড লিগের কাছে পরাজিত হয়েছিল। লম্বার্ড লিগের কাছে তিনি উদারনৈতিকভাবে শাস্তি স্থাপনের আর্জি জানালে লম্বার্ড লিগ তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিল। ফ্রেডারিক বারবারোসা এরপর তৃতীয় আলেকজান্ডারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ও তাকে পোপ হিসাবে মেনে নেন।

কনস্টানস্ -এর চুক্তি

  • (১) তৃতীয় আলেকজান্ডারের সহায়তায় ফ্রেডারিক বারবারোসা এবং নরম্যান সম্রাট বা লম্বার্ড লিগের মধ্যে ৬ বছরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ৬ বছর পার হবার পর ১১৮৩ খ্রিস্টাব্দে “Peace of Constance” বা কনস্টানস্ এর শান্তিচুক্তি স্থাপিত হয়েছিল। এই শান্তিচুক্তির সাহায্যে লম্বার্ড লিগের শহরগুলি ‘কনসাল’ নির্বাচনের অধিকার লাভ করেছিল।
  • (২) G. Barraclough বলেন, এই শান্তিচুক্তির দ্বারা ফ্রেডারিক বারবারোসা কিছুটা লাভবান হয়েছিলেন। লম্বার্ডিতে তাঁর শক্তি সামান্য হলেও বজায় ছিল। সামন্ততান্ত্রিক অধিকারও বজায় ছিল। ‘Diet of Roncaglia‘ এর শর্ত অনুসারে regalia দ্বারা অধিকার ভোগ করার অধিকার পেয়েছিল লম্বার্ড লিগ।

ফ্রেডারিক বারবারোসার সময়ে ইতালিতে সমস্যা

  • (১) উত্তর ইতালিতে ফ্রেডারিক বারবারোসা সফলতা অর্জন করতে না পারলেও দক্ষিণ ইতালিতে কিছুটা সফল হয়েছিলেন। মধ্য ইতালিতেও তিনি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সংগঠনের কাজ করেছিলেন। ১১৮১ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় আলেকজান্ডারের মৃত্যু হবার ফলে তিনি লাভবান হয়েছিলেন।
  • (২) ১১৮৪ খ্রিস্টাব্দে পোপ তৃতীয় লুসিয়াসের সাহায্যে সিসিলির সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন। মধ্য ইতালিতে প্রশাসন ব্যবস্থাকে সুগঠিত করার কাজেও সফল হয়েছিলেন। তিনি ইতালিতে নতুন ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুললেও ইতালিতে অনেক সমস্যা থেকে গিয়েছিল।

উপসংহার :- ১১৯০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ফেডারিক বারবারোসার রাজত্বকালের অবসান ঘটে। এরপর তার সন্তান ষষ্ঠ হেনরি সিংহাসনে আরোহন করেছিলেন।

(FAQ) ফেডারিক বারবারোসা সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. ফেডারিক বারবারোসা কে ছিলেন?

জার্মানির হোহেনস্টাউফেন বংশের সম্রাট।

২. ফেডারিক বারবারোসা কি উপাধি গ্রহণ করেছিলেন?

পবিত্র সম্রাট।

৩. ফেডারিক বারবারোসার রাজত্বকাল কত?

১১৫২-৯০ খ্রিস্টাব্দ।

৪. ফেডারিক বারবারোসার পর কে সিংহাসনে আরোহণ করেন?

তার পুত্র ষষ্ঠ হেনরি।

Leave a Comment