বেলিয়াতোড়

বেলিয়াতোড় শহরটি প্রসঙ্গে ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, পঞ্চায়েত বেলিয়াতোড়, বিভিন্ন শহরের সাথে সংযুক্ত, ঐতিহাসিক দিক, যামিনী রায়, মেচা সন্দেশ, শিক্ষা ও যোগাযোগ সম্পর্কে জানবো।

বেলিয়াতোড় শহর

স্থানবেলিয়াতোড়
জেলাবাঁকুড়া
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
প্রসিদ্ধম্যাচা সন্দেশ
বেলিয়াতোড় শহর

ভূমিকা :- ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার একটি শহর হল বেলিয়াতোড়। বাঁকুড়া শহর থেকে এই শহরের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিমি।

বেলিয়াতোড় শহরের ভৌগোলিক অবস্থান

২৩.৩৩° উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৭.২২° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বেলিয়াতোড় শহরটি অবস্থিত। শহরটি সমুদ্র সমতল থেকে ৭৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।

বেলিয়াতোড় শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা

বেলিয়াতোড় শহরটির আয়তন ১.৫২ বর্গকিমি। বর্তমানে শহরটির জনসংখ্যা ৬ হাজারেরও বেশি। এখানে সাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ।

পঞ্চায়েত বেলিয়াতোড়

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া সদর মহকুমার বরজোড়া সিডি ব্লকের একটি পঞ্চায়েত এলাকার হল বেলিয়াতোড়।

বিভিন্ন শহরের সাথে সংযুক্ত

বেলিয়াতোড় শহরটি শালী নদীর তীরে অবস্থিত। শহরটি দুর্গাপুর থেকে ২৩ কিমি, বাঁকুড়া শহর থেকে ২১ কিমি এবং সোনামুখী থেকে ২৩ কিমি দূরে অবস্থিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সাথে খুব ভালভাবে সংযুক্ত।

বেলিয়াতোড় শহরের ঐতিহাসিক দিক

  • (১) ঐতিহাসিক বিনয় ঘোষ ১৯৬৮ সালে বেলিয়াতোড়ে গিয়েছিলেন আষাঢ় পূর্ণিমা উপলক্ষে ধর্মঠাকুরের গাজন ও মেলায় যোগ দিতে। তিন দেবতা ধর্মরাজ, স্বরূপনারায়ণ, মদনকে বড় কাঠের ঘোড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাউরি, খয়রা, লোহার এবং অন্যান্য নিম্নবর্ণের ভক্তদের দ্বারা বান ফোড়ার আচার করা হয়েছিল।
  • (২) গ্রামটি পূর্ববর্তী দিনে প্রধানত নিম্নবর্ণের লোক বিশেষ করে বাউরিদের দ্বারা অধ্যুষিত ছিল। কিছু সচ্ছল ব্যবসায়ী পরিবার এসে সেখানে বসতি স্থাপন করে এবং প্রায় দুশ বছর আগে উচ্চবর্ণের জমিদার ও রায় পরিবার আসে।
  • (৩) জমিদার ও ব্যবসায়ী পরিবার স্বপ্ন দেখার পর ধর্মঠাকুরের পূজা বর্তমান রূপে বেলিয়াতোড়ে শুরু হয়। নিম্নবর্ণের একটি জনপ্রিয় লোকদেবতার পূজা উচ্চবর্ণের লোকেরা স্বপ্নের ইচ্ছানুযায়ী গ্ৰহণ করেছিল, যা এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণীকরণের প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে মনে করা হয়।
  • (৪) সময়ের সাথে সাথে এখানে উচ্চবর্ণের লোকের অনুপাত বেড়েছে এবং নিম্নবর্ণের মানুষের সংখ্যা কমে এসেছে। এখানে মনসা পূজা ও ভাদু উৎসব ব্যাপকভাবে পালিত হয়। আগের দিনগুলিতে, বেলিয়াতোড়ে জীবন্ত সাপ প্রদর্শনের সাথে ঝাপান উৎসব উদযাপিত হত। বর্তমানে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
  • (৫) কচু রায় এসে প্রথমে জগন্নাথপুরে বসতি স্থাপন করেন এবং তারপর বিনয় ঘোষের সফরের প্রায় ২০০ বছর আগে বেলিয়াতোড়ে চলে আসেন। কচু রায়ের তিন পুত্র আত্মারাম, বাঞ্ছারাম ও পঞ্চানন।
  • (৬) প্রখ্যাত শিল্পী যামিনী রায় ছিলেন পঞ্চানন রায়ের নাতি। বসন্ত রঞ্জন রায় বিদ্বদবল্লভ, যার নাম শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের সাথে যুক্ত, তিনি ছিলেন যামিনী রায়ের খুড়তুতো ভাই। উভয়েই বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।

বেলিয়াতোড়ের চিত্রশিল্পী যামিনী রায়

বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী যামিনী রায়ের জন্ম এই বেলিয়াতোড় শহরে। বাংলার পটচিত্র ও বিদেশী রং-এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় তার আঁকা চিত্রকর্মে। কালিঘাটের “পট” শিল্পকে বিশ্ববন্দিত করে তোলেন যামিনী রায়।

শহর বেলিয়াতোড়ের ম্যাচা সন্দেশ

পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার এক জনপ্রিয় মিষ্টি হল ম্যাচা বা মেচা। একে ম্যাচা সন্দেশও বলা হয়। বেলিয়াতোড়ের ম্যাচা সন্দেশ অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও সব চেয়ে উৎকৃষ্ট বলে গণ্য করা হয়। ছাতু, ছানা, খোয়া, চিনি ও ঘি দিয়ে এই সন্দেশ প্রস্তুত করা হয়।

বেলিয়াতোড় শহরের যোগাযোগ

  • (১) বেসরকারী এবং সরকারী বাস পরিষেবার মাধ্যমে বেলিয়াতোড় কাছাকাছি ও দূরবর্তী শহরগুলির সাথে ভালভাবে সংযুক্ত৷ ৮ নং ও ৯ নং রাজ্য সড়ক বেলিয়াতোড়ের মধ্য দিয়ে যায়। বেলিয়াতোড় দুর্গাপুর রেল স্টেশন থেকে ২৩ কিমি, বাঁকুড়া শহর থেকে ২২ কিমি এবং সোনামুখী থেকে ২৩ কিমি দূরে অবস্থিত।
  • (২) বেলিয়াতোড় থেকে কলকাতা, বিষ্ণুপুর, আসানসোল, বরাকর, মালদা, শিলিগুড়ি, খড়গপুর, পুরুলিয়া, টাটা, ভুবনেশ্বর এবং আরও অনেক জায়গায় সহজেই সংযোগকারী বিভিন্ন বাস এবং ট্রেন পরিষেবা রয়েছে।
  • (৩) দক্ষিণ পূর্ব রেলের অন্তর্গত আদ্রা রেলওয়ে বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি রেল স্টেশন হল বেলিয়াতোড়। এই রেল স্টেশন বাঁকুড়া-মসাগ্রাম লাইনে অবস্থিত। এছাড়া বেসরকারি বাস পরিবহনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়।

শহর বেলিয়াতোড়ের শিক্ষা

  • (১) ছেলেদের জন্য একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি গার্লস হাই স্কুল এবং যামিনী রায় কলেজ নামে একটি স্নাতক ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। ১৯৮৬ সালে যামিনী রায় কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত এই কলেজে বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত এবং ইতিহাস অনার্স কোর্সের পঠন পাঠন হয়।
  • (২) বেলিয়াতোড় উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের সুবিধা রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে একটি লাইব্রেরি এবং একটি খেলার মাঠ রয়েছে।
  • (৩) শ্রী সারদা দেবী বালিকা বিদ্যামন্দির বাংলা মাধ্যমের মেয়েদের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যা ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের সুবিধা রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে একটি লাইব্রেরি এবং একটি খেলার মাঠ রয়েছে।

উপসংহার :- বেলিয়াতোড়ে জনপ্রিয় মিষ্টি মেচা প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। শক্তিগড়ের ল্যাংচা বা বর্ধমান-এর সীতাভোগ-মিহিদানার মতোই এটি জনপ্রিয়। কয়েকশো বছর ধরে মিষ্টিপ্রেমীদের রসনা তৃপ্তি করে আসছে বেলিয়াতোড়ের মেচা।

(FAQ) বেলিয়াতোড় শহর সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য?

১. বিখ্যাত চিত্রশিল্পী যামিনী রায়ের জন্মস্থান কোথায়?

বেলিয়াতোড়।

২. বেলিয়াতোড় কোন জেলায় অবস্থিত?

বাঁকুড়া জেলা।

৩. বেলিয়াতোড়ের জনপ্রিয় মিষ্টি কি?

মেচা সন্দেশ।

৪. কালীঘাটের পট শিল্পকে বিশ্ববন্দিত করেন কে?

যামিনী রায়।

Leave a Comment